Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাংলাদেশ ফুটবলের ‘কালো চিতা’ মনু আর নেই

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ২১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বাংলাদেশ ফুটবলের ‘কালো চিতা’ খ্যাত জাতীয় দল ও ঢাকা মোহামেডানের সাবেক তারকা উইঙ্গার মনির হোসেন মনু আর নেই। দীর্ঘ ১০ মাস লিভার সিরোসিস রোগে ভুগে গতকাল বেলা ১২টায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যায়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ইন্তেকাল করেন তিনি। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৫৩ বছর।
দেশের ফুটবলে বর্তমান প্রজন্মের কাছে অপরিচিত হলেও একসময় দাপটের সঙ্গেই মাঠে শাসন করেছেন মনু। তবে হঠাৎ করেই খেলা ছেড়ে দিয়ে অনেকটা অভিমানে ফুটবলাঙ্গ থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখেন এই সাবেক ফুটবলার। গত বছরের ১২ জুলাই লিভারের সমস্যায় বিএসএমএমইউতে ভর্তি হন মনু। পরে সুস্থ হয়ে হাসিমুখেই বাসায় ফেরেন। কিন্তু চলতি বছরের শুরুতে ফের অসুস্থ বোধ করায় হাসপাতালে ভর্তি হন। তবে এবার আর সেই হাসি মুখে বাড়ি ফেরা হলো মোহামেডান সমর্থকসহ সারা দেশের ফুটবলপ্রেমীদের ‘কালো চিতা’র। চলে গেলেন না ফেরার দেশে। আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে মোহামেডানে যোগ দিয়ে মাঠে প্রচন্ড গতির মাধ্যমে নিজেকে আলাদা করে চিনিয়েছিলেন এই রাইট উইঙ্গার। ঢাকা আবাহনীর বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক গোল করে মনু চিরস্থায়ী হয়ে আছেন মোহামেডান সমর্থকদের মনে। ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত মোহামেডানের সাদা-কালো জার্সি গায়েই মাতিয়ে বেড়িয়েছেন ঢাকার মাঠ। এই ক্লাবটিতে ‘কালো চিতা’ নামেই পরিচিত ছিলেন তিনি। ১৯৮৬ সালে ঢাকা লিগে মোহামেডানের শিরোপা জয়ের অন্যতম নায়ক ছিলেন মনু। ’৮৭-র প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ ফুটবলে বাংলাদেশ সাদা দলের হয়ে চীন ও কোলকাতার ইষ্টবেঙ্গলের বিপক্ষে মনুর করা দুরপাল্লার শটে দুটো মনমাতানো দর্শনীয় গোল আজও যেন জ্বল জ্বল করছে অনেকেরই স্মতিপটে। ওই আসরে সেরা খেলোয়াড়ের খেতাব পেয়েছিলেন মনু। তার ক্যারিয়ারে ঐতিহ্যবাহী মোহামেডানের চির শক্রু ঢাকা আবাহনীর বড় আতংকের নামই ছিলো মনুৃ। ১৯৮৫ ও ‘৮৬ এ দু’বছরেই আবাহনীর বিপক্ষে গোল করে রীতিমত হৈচৈ ফেলে দেন সাবেক এই উইঙ্গার। ’৮৬ মৌসুমে গুরুত্বপূর্ন মর্যাদার লড়াইয়ে আবাহনীর বিপক্ষে মনুর গোলই পয়েন্টে এগিয়ে থাকা আবাহনীর স্বপ্ন ধুলিসাৎ করে দেয়। তখন মোহামেডানকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি পাইয়ে দিতে অনেকখানি ভূমিকা রেখেছিলেন মনু। ওই বছর পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে থাকা আবাহনী শিরোপা প্রায় নিশ্চিত করতে কোলকাতা মোহামেডান থেকে উড়িয়ে এনেছিলো নাইজেরিয়ান তুখোর ষ্ট্রাইকার চিমা এবং ষ্টপার ব্যাক মনোরঞ্জন ও গোলরক্ষক ভাস্কর গাঙ্গুলীকে। প্রায় ৩০ গজ দূর থেকে চোখ ধাধানো শটে গোল করে মনু আবাহনী ভক্তদের কাদিয়ে ছেড়েছিলেন। তাঁর সেই গোলেই আবাহনীকে হারিয়ে টানা তিন মৌসুম পর লিগ শিরোপা ঘরে তুলে মোহামেডান। মাঠ মাতানো উইঙ্গার মনু ১৯৮৪ থেকে ’৮৮ সাল পর্যন্ত মোহামেডানে খেলেছিলেন। তবে ১৯৮৮ সালে যোগ দেন ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাবে। কিন্তু চোট সমস্যায় আর মাঠ মাতাতে পারেননি এই ফুটবলার। মাঝে ১৯৮৪ থেকে ৮৬ -এই ৩ বছর মনু খ্যাতিমান স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীর সতীর্থ হিসেবে এক সঙ্গে খেলেছিলেন। ১৯৮৬ সালে সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে নিয়েছিলেন লিগ চ্যাম্পিয়নের স্বাদ। এর আগের বছর মনু একবারমাত্র প্রিয় ফুটবলার তুখোর স্ট্রাইকার সালাম মুর্শেদীর সঙ্গে বাংলাদেশ জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের কায়দে আযম ট্রফিতেও খেলেছিলেন। এছাড়া মনু জাতীয় দলের হয়ে ‘৮৬ ও ‘৮৭ দুবার ঢাকার প্রেসিডেন্ট গোল্ড কাপ এবং ‘৮৫-’৮৬-’৮৭ এই তিনবছর জাতীয় দলের হয়ে পাকিস্তানের কায়দে আযম ট্রফিতে খেলেছিলেন।
মনুর মৃত্যুতে বাকরুদ্ধ তখনকার তার সতীর্থ ও বর্তমানে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী। স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে কাল তিনি বলেন,‘ মনু আমাদের মতই মধ্যবর্তী ঘরের সন্তান ছিলেন। তবে তার ফুটবল ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। ছোট হলেও ফুটবলে স্মরনীয় ক্যারিয়ার ছিল তার। খুবই দ্রæতগতির খেলোয়াড় ছিলেন মনু। আমার ধারণা তিনি আমার চেয়ে দ্রæতগতিতে মাঠে দৌড়াতেন। মনে পড়ে আবাহনীর বিপক্ষে ডানপ্রান্ত দিয়ে একটি গোল। গোল করার পর সিনিয়র হিসেবে আদর করে তাকে চুমো খেয়েছিলাম। কষ্ট লাগছে তার চলে যাওয়ায়। একদিন আমাদেরকেও পরপারে পাড়ি জমাতে হবে। তবে আমি মনে করি মনু অনেক আগেই চলে গেলেন। এত অল্প বয়সে চলে যাবে ভাবতে পারিনি। তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।’
বাফুফের সহ-সভাপতি ও মোহামেডানে মনুর সতীর্থ বাদল রায় বলেন,‘ একজন নিন্মমধ্যবিত্ত ঘরের সন্তান হয়ে মোহামেডানে খেলে খ্যাতি পেয়েছেন মনু। ‘৮৬ সালে আমরা আবাহনীকে যে ২-১ গোলে হারিয়েছিলাম তারএকটি মনু ও অন্যটি ইলিয়াস গোল করেছিলেন। ওই বছর আমরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলাম। মাঠে সিনিয়র হিসেবে আমি তাকে দিয়ে খেলিয়ে স্বাচ্ছন্দ পেতাম। সেও আমার সঙ্গে খেলার জন্য পাগল ছিল। মোহামেডানের মনিকোঠায় সে আছে। তার অকাল মৃত্যুতে আমরা শোকাহত।’
মনির হোসেন মনুর মৃত্যুতে বাফুফে, ঢাকা মোহামেডান, ফকিরেরপুল ইয়ংমেন্স ক্লাব, আরামবাগ ক্রীড়া সংঘ, ঢাকা মেরিনার ইয়াংস ক্লাব, দিলকুশা স্পোর্টিং ক্লাব, বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্টস কমিউনিটি, ক্রীড়া লেখক সমিতি, ক্রীড়া সাংবাদিক সংস্থা সহ বিভিন্ন সংগঠন পৃথক পৃথক বার্তায় গভীর শোক প্রকাশ করেছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাংলাদেশ ফুটবলের
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ