পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
জম্মু-কাশ্মীরে আট বছরের শিশু আসিফাকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় সমগ্র ভারত উত্তাল হয়ে উঠেছে। একই সঙ্গে কাশ্মীর রাজ্যে বিরাজ করছে আতঙ্ক। ভয়-শঙ্কায় গ্রাম ছেড়েছে আসিফার পরিবার। একই সাথে ঘটি-বাটি গুছিয়ে ঘর ছাড়ছে শতাধিক আতঙ্কিত মুসলমান পরিবার। গত বুধবার জম্মু-কাশ্মীর থেকে ৭২ কিলোমিটার দূরে উধামপুরের একটি অস্থায়ী উদ্বাস্তু শিবিরে তল্পিতল্পা নিয়ে এক মুসলিম পরিবারকে বসে থাকতে দেখা গেছে। অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তা মগ্ন দেখা যায় তাদের। আসিফার গ্রামটি এখন মুসলিমশূন্য, মেয়েদের বাইরে যেতে মানা। খবরে বলা হয়, জম্মু ও কাশ্মীরের রাসানা গ্রামে এখন আর কোনো মুসলমান নেই বললেই চলে। দু-একজন যারা কোনো উপায় না পেয়ে সেখানে অবস্থান করতে বাধ্য হচ্ছেন, তারাও ভয় ও শঙ্কা নিয়ে বসবাস করছেন। ধর্ষণ ও হত্যার ভয়ে কন্যাশিশুদের তারা একা বাইরে যেতে দেন না। রাসানা গ্রামেরই বাসিন্দা ছিল আট বছর বয়সী শিশুকন্যা আসিফা বানু। তাকে গ্রামটির একটি মন্দিরের তত্তাবধায়ক ও দুই পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে আটজন মিলে ধর্ষণের পর পাথর ছুড়ে হত্যা করেছে। এ ঘটনার পর ভারতে যে সংকট দেখা দিয়েছে, রাসানার বর্তমান দৃশ্যপটকে এককথায় সেটার প্রতীক হিসেবে দেখা যেতে পারে। ভারতের পুলিশ বলেছে, কাবরাওয়াল মুসলিম যাযাবর স¤প্রদায়কে উচ্ছেদ করতেই ওই শিশুকন্যাকে ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়েছে। গ্রীষ্মের সময় এসব যাযাবর পাহাড়ে গবাদিপশুকে ঘাস খাওয়াতে নিয়ে যান। তবে শেষ পর্যন্ত মুসলিম যাযাবরদের উচ্ছেদের কৌশলে কাজ দিয়েছে। আসিফার পরিবার পুলিশ প্রহরায় কাশ্মীরের পাহাড়ের দিকে চলে গেছে। জানুয়ারির ওই ধর্ষণ ও হত্যাকান্ডের পর অন্য মুসলিম পরিবারগুলো সেখান থেকে একে একে চলে যাচ্ছে। আসিফার পরিবারের বাড়িটি খালি পড়ে থাকতে দেখা গেছে। সেটাতে এখন আর কেউ থাকেন না। পাঁচ সশস্ত্র পুলিশ সেখানে পাহারা দিচ্ছেন। গত বৃহস্পতিবার তাদের দুজনকে চেয়ারে বসে ঘুমাতে দেখা গেছে। পুলিশ জানায়, শিশুটিকে মদ খাইয়ে পাঁচ দিন ধরে হিন্দু মন্দিরে আটকে রাখা হয়েছিল। তাকে হত্যার আগে দফায় দফায় ধর্ষণ করা হয়েছে। জম্মুর মূল শহর থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে কাঠুয়া জেলার একটি গ্রামে আসিফার কবরের অর্ধেকটা ঘাসে ঢাকা পড়েছে। গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, স্থানীয় হিন্দু স¤প্রদায়ের লোকজন তাকে সেখানে কবর দিতে বাধা দিয়েছিল। জম্মু ও কাশ্মীর দেশটির একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজ্য। কিন্তু জম্মু অঞ্চলের দক্ষিণে হিন্দু স¤প্রদায়ের আধিপত্য বেশি। এ ধর্ষণ ও হত্যার আগে সেখানে দুই স¤প্রদায়ের লোকজন শান্তিপূর্ণভাবেই বসবাস করে আসছিলেন। যদিও পুলিশের কাছে পরস্পরের বিরুদ্ধে তারা বিভিন্ন সময় বিচ্ছিন্নভাবে অভিযোগ করেছেন। রাসানা গ্রামে এখন যারা আছেন, তাদের বেশিরভাগ লোকজন বাইরের কারও সঙ্গে কথা বলতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছেন। ৩৯ বছর বয়সী ইয়াশ পল শর্মা বলেন, এই মর্মান্তিক ঘটনার পর গ্রামটি শূন্য হয়ে গেছে। গ্রামটি এখন এক ভয়ঙ্কর দুঃস্বপ্নের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পাঞ্জাব থেকে প্রায় ছয় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে ছয়জনের একটি মুসলিম গ্রুপ এসেছে রাসানায়। তারা আসিফার পরিবারকে সাহায্য করতে চায়। তাদের মধ্যে একজন মুবিন ফারুকি বলেন, হিন্দু জাতীয়তাবাদী সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির উসকানিতে এ ধরনের বৈরিতা ও নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, এ ঘটনার পর ভারতীয়দের মনোভাবে পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। লোকজন এখন এই অসুস্থ মানসিকতার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে শুরু করেছেন। রাসানায় দু-একজন মুসলিম অবস্থান করলেও তাদের মধ্যে মারাত্মক শঙ্কা কাজ করছে। ছয় সন্তানের মা কানিজা বেগম তার ১০ বছরের শিশুকন্যাকে বাইরের মাঠে খেলতে দিতে যেতে ভয় পাচ্ছেন। তিনি বলেন, তাকে এখন বাইরে যেতে দিই না। স্কুলে গেলে তার ভাইকে সঙ্গে দিয়ে দিই। আবার তার ভাই গিয়ে স্কুল থেকে নিয়ে আসে। এএফপি, এনডিটিভি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।