Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাড়ছে চিকিৎসা ব্যয়

স্বাস্থ্যসেবায় জনপ্রতি ব্যয়ে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় শীর্ষে বাংলাদেশ

হাসান সোহেল | প্রকাশের সময় : ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দেশে চিকিৎসা ব্যয় বাড়ছেই। ক্রমান্বয়ে চিকিৎসা সেবা নেয়া সাধারণ মানুষের ক্ষমতার বাইরে চলে যাচ্ছে। চিকিৎসকদের অতি মুনাফালোভী মানসিকতা, কমিশন বাণিজ্য, সিন্ডিকেট করে সরবরাহ নেই বলে দফায় দফায় ওষুধের মূল্য বৃদ্ধি, কারণে অকারণে নানা ধরণের পরীক্ষা ইত্যাদিই মূলত এর প্রধান কারণ। ওষুধ রফতানিতে বাংলাদেশ সাফল্য দেখাচ্ছে; অথচ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের মানুষকেই স্বাস্থ্যসেবায় সবচেয়ে বেশি টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যয় করতে গিয়ে বছরে ১৫ শতাংশ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন। আর বছরে গরীব হচ্ছে ৬৪ লাখ মানুষ। অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা, নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা ও ওষুধের বাজারকে দায়ী করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক, ডায়াগনোস্টিক ও প্যাথলজি সেন্টারে চলে শুধু টাকা আদায়ের গলাকাটা বাণিজ্য। রোগীর জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণেও সেবার নামে অপারেশন থিয়েটারে চলে অমানবিক গোপন বাণিজ্য। টাকা ছাড়া তারা কিছুই বোঝেন না। এছাড়া ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা থেকে কমিশন বাণিজ্য, রোগী ভর্তি, নির্দিষ্ট ব্র্যান্ডের ওষুধ প্রেসক্রাইব, অপারেশন নিশ্চিত করা, প্রয়োজনে-অপ্রয়োজনে লাইফ সাপোর্টে পাঠানো, কেবিনে রোগী ধরে রাখাসহ লাশ হস্তান্তর পর্যায়ের নানা ধাপে কমিশন লেনদেন হয়। আর রোগীকে গুনতে হয় বাড়তি টাকা। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কঠোর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো অবাধে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।
‘বিল্ডিং অ্যাওয়ারনেস অব ইউভার্সেল হেলথ কভারেজ বাংলাদেশ : অ্যাডভান্স দি এজেন্ডা ফরওয়ার্ড ২০১৬’ সালের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বাংলাদেশে জনপ্রতি পাবলিকের পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে ৬৩ দশমিক ৩ শতাংশ। যা দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। যদিও বর্তমানে এই ব্যয় ৬৮ শতাংশে পৌঁছেছে। জনপ্রতি ব্যয়ের দিক থেকে ৬১ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে পাকিস্তান। ৫৭ দশমিক ৬ শতাংশ নিয়ে তৃতীয় ভারত, ৪৯ দশমিক ৯ শতাংশ নিয়ে চতুর্থ শ্রীলঙ্কা, ৪৯ দশমিক ২ শতাংশ দিয়ে পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে নেপাল, ৩৫ দশমিক ৬ নিয়ে ষষ্ঠ মালয়েশিয়া ও ১৩ দশমিক ১ শতাংশ নিয়ে সবার নিচে রয়েছে থাইল্যান্ড। অর্থাৎ থাইল্যান্ডে স্বাস্থ্যসেবায় পাবলিকের পকেট থেকে কম টাকা খরচ করতে হচ্ছে।
প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, স্বাস্থ্যখাতে অর্থায়নের বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে, এ খাতে অপর্যাপ্ত ব্যয়, সরকারি ব্যয় কমে যাওয়া, বাজেটে কম বরাদ্দ, বরাদ্দ অনুযায়ী সঠিকভাবে বণ্টন না করা, অতিরিক্ত পকেট মানি, সরকারি ও পকেট মানির বিস্তর ব্যবধান, নিয়ন্ত্রণহীন বেসরকারি স্বাস্থ্য খাত, স্বাস্থ্যবীমায় অনিহা, দাতাগোষ্ঠীর সহায়তা কমে যাওয়া ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর স্বল্প অংশগ্রহণের কারণে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ব্যয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি। অপরদিকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্যখাতে সরকারি বরাদ্দের দিক থেকেও বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে। স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা স্বাস্থ্য ব্যয় কমাতে বেশকিছু পদক্ষেপের কথা বলেছেনÑবেসরকারি স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানগুলোকে আইনের মাধ্যমে দ্রæত সরকারের নিয়ন্ত্রণে আনা, সব ধরণের ওষুধের মান উন্নত করা, চিকিৎসকদের কমিশন বাণিজ্য ও অপ্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা বন্ধ করা, চিকিৎসকদের ফি নির্ধারণ করে দেয়া, রেফারেল পদ্ধতি চালু করা, কাঠামো অনুযায়ী, উপজেলা স্বাস্থ্য ব্যবস্থা সচল রাখা, ঢাকামুখি আসার প্রবণতা কমানো, ওষুধ কোম্পানীর আগ্রাসী বাণিজ্য বন্ধ করা ও দালালের উৎপাত বন্ধ করা গেলে বাংলাদেশে পাবলিকের পকেটের ব্যয় কমে যাবে।
বাংলাদেশ ন্যাশনাল হেলথ অ্যাকাউন্টের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে বছরে ৬৪ লাখ মানুষ গরীব হয়ে যাচ্ছে। এর অন্যতম কারণ এখানে স্বাস্থ্য ব্যয়ের অধিকাংশই পাবলিকের পকেট থেকে ব্যয় করতে হচ্ছে। আর এই ব্যয়ের মধ্যে ৬৭ শতাংশই হচ্ছে ওষুধপত্রে। ফলে বাংলাদেশে পাবলিকের পকেট থেকে বেশি ব্যয় হচ্ছে। যা বিশ্বের অন্য কোনো দেশে নেই।
লাগামহীন চিকিৎসক পরামর্শ ফি
রাজধানীতে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে বেশির ভাগ বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এক হাজার টাকা বা তার বেশি নেন রোগী দেখার ফি বাবদ। নামিদামি হাসপাতাল বা ক্লিনিকে যাঁরা বসেন তাঁদের ফি ১২০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে। ঢাকার বাইরেও অনেক চিকিৎসকই এখন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা পর্যন্ত ফি নেন। ফলে চিকিৎসার প্রয়োজন হলে রোগীরা প্রথমেই চিন্তায় পড়ে চিকিৎসকের ফি নিয়ে। ফি বেশি হওয়ায় বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের চিকিৎসকরা নিম্ন আয়ের মানুষের নাগালের বাইরে। তাঁদের ভরসা একমাত্র সরকারি হাসপাতাল। কিন্তু বেশির ভাগ কর্মজীবী মানুষের পক্ষে কাজ ফেলে দিনের বেলা সরকারি হাসপাতালে যাওয়াও কঠিন হয়ে পড়ে। যদিও সেখানে বর্তমানে দালালদের উৎপাত ও ঘুষ বাণিজ্যের কারণে নানাভাবে অর্থ ব্যয় করতে হয় রোগীদের।
রাজধানীর মোহাম্মদপুর ইকবাল রোডে নিজস্ব প্রতিষ্ঠান কেয়ার হাসপাতালে প্রসূতি ও বন্ধ্যত্বের চিকিৎসা করেন প্রপেসর ডা. পারভীন ফাতেমা। তিনি নতুন রোগীর কাছ থেকে ফি নেন ১২০০ টাকা। দ্বিতীয়বার দেখাতে গেলে নেন ৭০০ টাকা। তাঁর চেম্বারে গিয়ে সব রোগী ও স্বজনকে দেখেই বোঝা যায় তাঁরা ধনী পরিবারের লোক। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রোগী বলেন, ডাক্তার ম্যাডাম (পারভীন ফাতেমা) প্রথমেই জানতে চেয়েছেন ‘টাকা আছে তো’।
ধানমন্ডিতে আনোয়ার খান মডার্ন হাসপাতালের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. মোহাম্মদ এহতেশামুল হক। তিনি দিনে দুই দফা (সকাল ও বিকেল) রোগী দেখেন ওই হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, নতুন রোগীর ক্ষেত্রে ডা. এহতেশামুল হকের ফি ১২০০ টাকা এবং এক মাসের মধ্যে পুনরায় গেলে তখন ফি নেওয়া হয় ৮০০ টাকা।
ওই দুই চিকিৎসক ছাড়াও এখন ঢাকার অনেক চিকিৎসকই ফি নেন ১২০০ থেকে ১৬০০ টাকা। আর বেশির ভাগ চিকিৎসকের ফি এক হাজার টাকা। তবে ব্যাতিক্রমও আছেÑ দেশ সেরা মেডিসিন বিশেষজ্ঞ প্রফেসর ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ এখনও ৩০০টাকা পরামর্শ ফি নেন। একই সঙ্গে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি প্রফেসর ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত এখনও ৫০০টাকা ফি নেন। এই দুই খ্যাতিমান চিকিৎসক গরীব রোগীদের ফ্রি পরামর্শও দেন।
টেস্ট বাণিজ্য
বরিশাল থেকে কামাল হোসেন বক্ষব্যাধির চিকিৎসা হাজির হন ধানমÐির এক পাঁচ তারকা হাসপাতালে। সেখানে কেবিন নিয়ে টানা দুই দিনের ভাড়া বাবদ আট হাজার ৬০০ টাকা পরিশোধের পরই কেবল বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে সামনে পান। অসুস্থতার বর্ণনা শুনেই প্রেসক্রিপশনের নামে ৯ ধরনের টেস্ট (শারীরিক পরীক্ষা) সংক্রান্ত ¯িøপ দিয়ে জরুরিভাবে ওই হাসপাতাল থেকে তা করানোর নির্দেশ দেন চিকিৎসক। বাধ্য হয়েই কামাল হোসেন তড়িঘড়ি করে চিকিৎসকের পরামর্শ মোতাবেক ৯ ধরনের শারীরিক পরীক্ষা করান। এ জন্য তাঁর কাছ থেকে ৫২ হাজার টাকা আদায় করা হয়। পরদিন যথারীতি বিশেষজ্ঞ ডাক্তার টেস্ট রিপোর্টগুলো দেখে ‘বড় ধরনের কোনো অসুস্থতার আশঙ্কা নেই’ বলে তাকে আশ্বস্ত করা হয় এবং সামান্য কিছু ওষুধ নিয়মিত সেবনের পরামর্শ দিয়ে বিদায় করে দেন। ওই হাসপাতাল থেকে বের হয়ে যাত্রাবাড়ীর এক আত্মীয়ের বাসায় উঠতে না উঠতেই তাঁর শারীরিক অবস্থা জটিল আকার ধারণ করে। রাতে অবস্থার চরম অবনতি হওয়ায় আত্মীয় স্বজন দ্রæত তাকে গুলশানের অপর একটি অভিজাত হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে আরেক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক আরও সাত ধরনের পরীক্ষার নির্দেশ দেন। আগের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কাগজপত্রের ফাইল বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে তুলে দিলে তিনি তা ছুড়ে ফেলে দেন। চিকিৎসক স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেন, অন্য কোনো ল্যাব বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টে হবে না। উপায়ন্তরহীন কামাল হোসেন নতুন করে একই ধরনের টেস্ট কারণ। এবার তাঁর খরচ হয় ৬৫ হাজার ২৫০ টাকা। পরদিন সেসব টেস্ট রিপোর্ট দেখে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সংশ্লিষ্ট হাসপাতালে অন্তত ১০ দিন ভর্তি থেকে জরুরি চিকিৎসা গ্রহণের সিদ্ধান্ত দেন।
জটিল-কঠিন কি সাধারণÑসব রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসার নামে এভাবেই চলছে মহা টেস্ট বাণিজ্য। ‘যত টেস্ট তত টাকা’, এই কমিশন বাণিজ্যের মধ্য দিয়েই চলছে একশ্রেণির চিকিৎসকের অর্থ উপার্জনের বেপরোয়া কর্মকাÐ। প্রেসক্রিপশনে যত বেশি ডায়াগনস্টিক পরীক্ষার বিষয় উল্লেখ থাকবে, ততই কমিশন পাবেন তিনি। ‘ডাক্তারদের কমিশন ছাড়া সিংহভাগই লাভ’ এ মূলমন্ত্র হৃদয়ে ধারণ করে যে-কেউ যেখানে- সেখানে ডায়াগনস্টিক বাণিজ্য ফেঁদে বসেছেন। সরকারি অনুমোদন ছাড়াই দেশজুড়ে ডাযাগনস্টিক সেন্টার, প্যাথলজি ব্যবসার ছড়াছড়ি।
ওষুধ বাণিজ্য
সরবরাহ নেই, অন্য কোম্পানি বাড়িয়েছে তাই বেশি দামে বিক্রি করছি। প্রতিদিনই এ ধরনের অজুহাতে বাড়ছে জীবন রক্ষাকারী ওষুধের দাম। জরুরি সকল ওষুধ এখন সাধারণের ক্রয়-ক্ষমতার বাইরে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের একটি ফার্মেসি থেকে একজন চিকিৎসকসহ হেপাটাইটিস বি এর এনজেরিক্স বি ভ্যাক্সিন চাইলেন এক রোগী। দোকানদার দুটি ভ্যাক্সিনের দাম চাইলো ৩ হাজার ৭০০ টাকা। সঙ্গে থাকা চিকিৎসক ফার্মেসির ওষুধ বিক্রেতাকে জানান, প্রকৃত দাম ৫৫০ টাকা। আপনি কিভাবে তিনগুণেরও বেশি দাম চান? এক লাফে ১৮৫০ টাকা কেন? বিক্রেতা জানান, সাপ্লাই কম। আরেক ভুক্তভোগী রোগী জানান, বহুল প্রচলিত ও নিত্য প্রয়োজনীয় ওষুধ পটাশিয়াম সিরাপ। এর স্বাভাবিক দাম ২৫ টাকা। ফার্মেসিগুলোতে দাম হাকায় ২০০ থেকে ৩০০ টাকা। কখনো বা এরও বেশি। সূত্র মতে, রিফ্রেশ টিয়ার আই ড্রপের দাম শাহবাগের এক ফার্মেসি থেকে চাওয়া হলো ৪শ’ টাকা। অথচ এটা প্রকৃত দাম ২৫০ টাকা।
নগরীর বিভিন্ন ওষুধের দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বর্তমান বাজারে ওষুধের দাম প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে। যেমন- নিউরো-বি ভিটামিন পূর্বের দাম ১৫০ টাকা বর্তমানে ২৪০ টাকা ৯০ টাকা বেড়েছে, ভিটামিন বেক্সিটার্ম গোল্ড পূর্বে ছিল ১৪০ টাকা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ২৪০ টাকা বেড়েছে ১০০ টাকা, হজমের ওষুধ জাইনেট এক বক্সের দাম ছিল ২০০ টাকা এখন সেটি দাম বেড়ে হয়েছে ৩০০ টাকা, সিভিট আগে এক বক্সের দাম ছিল ৩০০ টাকা বর্তমানে বেড়ে হয়েছে ৪৭৫ টাকা অর্থাৎ বক্স প্রতি বেড়েছে ১৭৫ টাকা, কাশির সিরাপ এডোভাস পূর্বের দাম ৫০ টাকা বর্তমানে ৬০ টাকা, ডায়াবেটিস-এর ট্যাবলেট সেকরিন-১ এক বক্সের দাম ছিল ৩০০ টাকা বর্তমানে তা বেড়ে হয়েছে ৩৬০ টাকা অর্থাৎ বক্স প্রতি বেড়েছে ৬০ টাকা, সেকরিন-২ প্রতি বক্সে ৪০ টাকা বেড়েছে, গ্যাসের ট্যাবলেট নিউটেক বক্স প্রতি বেড়েছে ৯০ টাকা, হাঁপানি জনিত রোগের এ্যাজমাসল ইনহেলার দাম ১৬০ টাকা ছিল এখন বেড়ে ১৯৮ টাকা হয়েছে অর্থাৎ পিস প্রতি ৩৮ টাকা বেড়েছে, হার্টের রোগের ওষুধ এনজিটর-১০ বক্স প্রতি বেড়েছে ৬০ টাকা, পেশারের ওষুধ বাইজোরান বক্স প্রতি বেড়েছে ৬০ টাকা। একইভাবে নানান ওষুধের দাম অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। কিছু কিছু ওষুধের গায়ে সর্ব্বোচ মূল্য বৃদ্ধি (এম.আর.পি) লেখা হয়েছে এবং কিছু কিছু ওষুধের গায়ে সাধারণ স্টিকার মেরে দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি অনুষদের প্রফেসর ড. মুনীর উদ্দীন বলেন, ‘ওষুধের দাম কেবল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই নয়, সরকারেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে। কারণ সরকার কোনোভাবেই এটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।’
বিশিষ্ট স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়ার সাবেক আঞ্চলিক উপদেষ্টা প্রফেসর ডা. মোজাহেরুল হক বলেন, চিকিৎসা ব্যবস্থায় রেফারেল পদ্ধতি চালু করা এবং তাদের চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি উপজেলা হেলথ কাঠামো কার্যকর করা গেলে মানুষের স্বাস্থ্য ব্যয় কমে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের শিক্ষক প্রফেসর সৈয়দ আবদুল হামিদ বলেন, সার্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রি-পেমেন্ট বা হেলথ ইন্স্যুরেন্স ব্যবস্থা চালু করতে হবে। যার নিয়ন্ত্রণ থাকবে সরকারের কাছে। তখন কেউ দূরারোগ্য ব্যধিতে আক্রান্ত হলেও চিকিৎসা ব্যয় নিয়ে চিন্তিত হতে হবে না। হেলথ কার্ড ওই রোগীকে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার নিশ্চয়তা দেবে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য অর্থনীতি ইউনিটের সাবেক মহাপরিচালক আসাদুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা নিতে গিয়ে পকেট থেকে টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। সরকারের জনপ্রতি স্বাস্থ্য ব্যয় কমে আসছে। ১৯৯৭ সালে জনপ্রতি সরকারি স্বাস্থ্য ব্যয় ছিল ১৭ শতাংশ। যা ২০১৫ সালে কমে ১৩ শতাংশে নেমে এসেছে। প্রতি বছর স্বাস্থ্য ব্যয় বাড়ছে। এসব ব্যয়ের অধিকাংশই চলে যাচ্ছে ওষুধপত্রে। ওষুধের দাম ও মান দুটিই ঠিক রাখার প্রতি গুরুত্বারোপ করেন আসাদুল ইসলাম।



 

Show all comments
  • মামুন ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৩:৪৭ এএম says : 0
    ওষুধের দাম কেবল সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরেই নয়, সরকারেরও নাগালের বাইরে চলে গেছে।
    Total Reply(0) Reply
  • নোমান ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ৪:৫৭ এএম says : 0
    সরকার কে এই বিসয়ে কঠোর পদহ্মেপ নিতে হবে
    Total Reply(0) Reply
  • Md.Saju Ahamed ১৮ এপ্রিল, ২০১৮, ২:০১ পিএম says : 0
    At present time very costly health service .Such as Test, compulsory Urin n test.blood test.altra sonogram, ECG, Troponi Test
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চিকিৎসা

২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ