Inqilab Logo

শুক্রবার, ১০ মে ২০২৪, ২৭ বৈশাখ ১৪৩১, ০১ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

ভারতের নিকট থেকে ক্রমেই নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে নেপাল

চীনের ওপর অতিনির্ভরতার বিরুদ্ধে হুঁশিয়ারি

ডি ডব্লিউ | প্রকাশের সময় : ৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

নেপাল ক্রমেই শক্তিশালী প্রতিবেশি ভারতের কাছ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিচ্ছে এবং চীনের দিকে এগোচ্ছে। কিন্তু ডি ডব্লিউর ফ্রাংক সিয়েরেন বলেন, বেইজিংয়ের উপর অধিক নির্ভরশীলতা উন্নয়নশীল দেশটির জন্য কতিপয় ঝুঁকি সৃষ্টি করতে পারে। নেপালের প্রধানমন্ত্রীর পূর্ণ নাম খড়গ প্রসাদ শর্মা অলি। তবে তাকে কে.পি. অলি বলা হয়। কম্যুনিস্ট পার্টি অব নেপালের (মার্ক্সিস্ট-লেনিনিস্ট)৬৬ বছর চেয়ারম্যান এবার দ্বিতীয় বারের মত প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। ২০১৫ সালে তিনি প্রথমবার প্রধানমন্ত্রী হন। কিন্তু তার দল ও পুষ্প কমল দাহালের কম্যুস্টি পার্টি অব নেপালের (মাওয়িস্ট সেন্টার) মধ্যে ক্ষমতার দ্ব›েদ্ব এক বছর পরেই পদত্যাগ করেন। এখন তা পুরনো বিষয়। ফেব্রুয়ারির শেষে দু’দল মত পার্থক্য মিটিয়ে এক হয়। এ মাসের শেষে দু’দল কম্যুনি¯ট পার্টি অব নেপাল নামে একীভ‚ত হবে।। এ ঐতিহাসিক ঘটনা দেশটিতে স্থিতিশীলতা আনতে পারে এবং তা বেইজিংয়ের জন্য ভালো খবর।
নেপালের বৃহৎ প্রতিবেশি ভারত ভৌগোলিক ও সাংস্কৃতিক নৈকট্যের কারণে নেপালের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ ভ‚মিকা পালন করে। দিল্লী নেপালের বহুদলীয় গণতন্ত্রের প্রচেষ্ট সমর্থন করে। ২০১৫-র প্রলয়ংকরী ভ‚মিকম্পের পর ভারতই প্রথম নেপালে সাহায্য পাঠায়। তবে ভারতের সমর্থন কখনোই নিঃশর্ত ছিল না। নেপালের সকল ঘটনা ভারতকে নিয়মিত ভাবে অবহিত করার দাবি করা হয়। নেপালের ‘জন আস্থা জাতীয় দৈনিক’-এর সম্পাদক এ বিষয়ে বলেছিলেন, ভারতের রাষ্ট্রদূত আমাদের সাথে ভাইসরয়ের মত ব্যবহার করেন। আমাদের যেন কোনো সার্বভৌমত্ব নেই।
একপক্ষীয় অংশীদারত্বের ইতি
এখন মনে হচ্ছে ভারত খুব বেশিদূর অগ্রসর হয়েছে। একপক্ষীয় কৌশলগত অংশীদারিত্ব বিলুপ্ত হয়েছে। নেপাল এখন দিল্লীর কাছ থেকে নিজেকে মুক্ত করছে। আসল বিষয় হচ্ছে কে.পি. অলি এ ব্যাপারে সুস্পষ্ট অবস্থান নিয়েছেন যা তার সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সাফল্যের অন্যতম কারণ। নেপাল-ভারত সম্পর্কের অবনতির একটি প্রধান অনুঘটক হল ভারত কর্তৃক নেপালের বিরুদ্ধে অঘোষিত অবরোধ আরোপ। ভারতের এ ব্যবস্থা ছিল ২০১৫ সালে নেপালের সংবিধান প্রণয়নের বিরুদ্ধে যা ভারত দক্ষিণ নেপালে বসবাসরত ভারতীয় বংশোদ্ভ‚তদের স্বার্থবিরোধী বলে মনে করে।
ভারত-নেপাল আস্থা পুনর্গঠন
নেপালের জন্য ভারতের অবরোধ আরোপ মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করে। স্থল বেষ্টিত দেশটিতে খাদ্য, জালানি ও তেলের মত গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যায়। প্রচন্ড শীতের কিছু পূর্বে এবং ভয়াবহ ভ‚মিকম্পের মাত্র কয়েকমাস পর ভারত এ অবরোধ আরোপ করে। নেপাল ভারতের এ পদক্ষেপকে আগ্রাসী কাজ ও ব্ল্যাকমেলের চেষ্টা বলে সমালোচনা করে। কে পি অলির সুস্পষ্ট দিল্লী বিরোধিতাকে দক্ষিণের এক শক্তিমান প্রতিবেশির বিরুদ্ধে গর্বিত উন্নয়নশীল দেশের দন্ডায়মান হওয়াপর প্রতীক হিসেবে দেখা হচ্ছে।
ভারতের সুরে আর যাতে গলা মেলাতে না হয় সে জন্য নেপাল তখন থেকেই চীনের সাথে সম্পর্ক জোরদার করে। অবরোধের এক মাস পর কে পি অলি বেইজিং সফর করেন । তিনি চীনের প্রধানমন্ত্রীী লি কিকেয়াং-এর সাথে অনেকগুলো অর্থনৈতিক চুক্ত স্বাক্ষর করেন। এর মধ্যে একটি চুক্তিতে নেপালকে চীনের বন্দর ও বাণিজ্য পথগুলোতে প্রবেশাধিকার দেয়া হয়। এর ফলে নেপালের কাছে ভারতের কৌশলগত গুরুত্ব অনেকতটা হ্রাস পায়। চীন নেপালের জনপ্রিয় পর্যটন শহর পোখরায় একটি আর্ন্তাতিক বিমান বন্দর নির্মাণের জন্য ২১ কোটি ৬০ লাখ ডলার ঋণ অনুমোদন করেছে।
চীনা বিনিয়োগ
সর্বশেষ কূটনৈতিক পরিবর্তনের আগেই নেপালে বেইজিংয়ের অর্থনৈতিক আগ্রহ বৃদ্ধি পেয়েছিল। ২০১৪ সালে চীন নেপালের সর্ববৃহৎ বিনিয়োগকারী হয়ে ওঠে। হুয়াবেই ও জেডটিইর মত বিশাল চীনা টেলিকম কোম্পানি বা চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনালের মত বৃহত্তম উদ্যোক্তা ও বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানগুলো বহু অর্থনৈতিক ক্ষেত্র এবং রাষ্ট্রীয় অর্থে পরিচালিত ভাষা শিক্ষা স্কুল ও নেপাল পানি বিদ্যুত কেন্দ্রে তারা উপস্থিত। ২০১৭ সালের দ্বিতঅর্ধে চীন নেপালে ৮০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করে যা ছিল মোট বিদেশী বিনিয়োগের ৬০ শতাংশ।একই সময়কালে ভারত নেপালে এর অর্ধেকও নিয়োগ করেনি। চীন নেপালে পর্যটকও পাঠাচ্ছে, শুধু ২০১৭ সালেই ১ লাখ পর্যটক নেপাল ভ্রমণ করেছে। এ বছর চীনা পর্যটকের সংখ্যা দেড়লাখ হতে পারে। নেপালি ছাত্ররা ভারতের পরিবর্তে চীনে যেতে পছন্দ করছে।
২০১৭ সালের মে মাস থেকে নেপাল ভারতের ইচ্ছার বিরুদ্ধে চীনের বিশাল নিউ সিল্ক রোড প্রকল্পকে আনুষ্ঠানিক ভাবে সমর্থন করেছে।
আলোচনার জন্য ভালো অবস্থানে আছে নেপাল
বেইজিংয়ের দিকে ঘোরার নেপালের এ সিদ্ধান্ত তাকে আলোচনা করার আদর্শ অবস্থানে স্থাপন করেছে। দিল্লী এক সময় একতরফা বলে বিবেচিত চুক্তিগুলোর ব্যাপারে আলোচনার অধিকতর আগ্রহ প্রকাশ করেছে। ভারত এখন তৃতীয় দেশ থেকে নেপালকে অস্ত্র রপ্তানির অনুমতি দিতে প্রস্তুত যাতে চীনের কাছে নেপালকে হারাতে না হয়। দু’দিকেই সীমান্া আরো উন্মক্ত করে দেয়ার কথাও তারা ভাবছে।
নেপালে বাম ধারার সরকারের নেতৃত্বে নেপাল-চীন সম্পর্ক আরো জোরদার হওয়ার প্রেক্ষাপটে এখন ভারতের জন্য বেশি দেরি হয়ে গেছে। দিল্লীকে মেনে নিতে হবে যে চীন সেখানে থাকতে এসেছে। তবে এটা নিশ্চিত করতে হবে যে চীন যেন সেখানে বেশি মাত্রায় প্রভাবশালী না হয়ে ওঠে। বেইজিং তা জানে এবং সেজন্য এ অঞ্চলে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার প্রস্তাব দিয়েছে। ভারত তাতে আগ্রহ দেখায়নি।
নেপালের জন্য এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে যে সে যেন তপ্ত কড়াই থেকে জ¦লন্ত আগুনে না পড়ে। তার চীনের উপর অর্থনৈতিক ভাবে অতি নির্ভরশীল হয়ে পড়া উচিত হবেনা যেমন শ্রীলংকা হয়েছে। ঋণ রেয়াতের অংশ হিসেবে বেইজিং শ্রীলংকার দক্ষিণের বন্দরটি ৯৯ বছরের জন্য লিজ নিয়ে ভারত মহাসাগরে কৌশলগত উপস্থিতি সম্প্রসারিত করেছে।
হিমালয়ের হালকা বাতাসে একটি ভারসাম্য সন্ধান হবে চ্যালেঞ্জ, আর তা শুধু নেপালের জন্য নয়-ভারত ও চীনের জন্যও। ফ্রাংক সিয়েরেন ২০ বছরেরও বেশি সময় বেইজিংয়ে বাস করেছেন।



 

Show all comments
  • Mohammad Amzad Hossain ৯ এপ্রিল, ২০১৮, ১০:৩৩ এএম says : 0
    শুধু আমরা পারলাম না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ