পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
জাতীয় নির্বাচনের আগের জনতুষ্টির জন্য প্রতিটি সংসদীয় আসনে বিশেষ প্রকল্প নেওয়া হচ্ছে। সরকারের শেষ সময়ে এসে এমপিদের জন্য নতুন নতুন প্রকল্প অনুমোদনের হিড়িক পড়েছে। ইতোমধ্যে দেশের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে মেগা প্রকল্প হাতে নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। স¤প্রতি ৫টি প্রকল্পে পাঁচ হাজার নতুন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণসহ আরো সাড়ে ৪ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে ২৩ হাজার কোটি টাকা উন্নয়ন বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। এছাড়া প্রতিটি উপজেলায় মসজিদ-মন্দিরসহ সামাজিক, ধর্মীয় এবং খেলাধুলা বিষয়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করা হবে। এ জন্য ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। অধিকাংশ ক্ষেত্রে প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয়- উভয়ই বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো প্রকল্পে তিন থেকে চারবার পর্যন্ত সংশোধনী আনা হয়েছে। এতে চার গুণ পর্যন্ত ব্যয় বাড়ছে। ব্যয় বাড়ায় গচ্চা যাচ্ছে বিপুল অঙ্কের সরকারি অর্থ, কাঙ্খিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় বাড়িয়ে বিভিন্ন সুবিধা নিচ্ছে এক শ্রেণীর অসাধু কর্মকর্তা। এছাড়া বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে অতিরিক্ত বরাদ্দ চেয়ে মন্ত্রী-এমপিদের ডিওর (চিঠি) হিড়িক পড়েছে। চলমান উন্নয়ন প্রকল্পে চাহিদা অনুযায়ী অর্থ ছাড় করতে হিমশিম খাচ্ছে সরকার। সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নের মেগা প্রকল্পের ২৩ হাজার কোটি টাকার কাজ বাস্তবায়ন করবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর (ইইডি)। তিন হাজার নতুন ভবন এবং ৩২৫০টি ভবন ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণের জন্য প্রায় ১৬ হাজার কোটি টাকার দুটি প্রকল্প জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়েছে। এছাড়াও ৩২৩টি সরকারি স্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে ৪ হাজার ৬শ কোটি টাকা এবং ২০০ সরকারি কলেজ উন্নয়নের জন্য ১৮০০ কোটি টাকা অর্থ ছাড়ের সরকারি অর্ডার (জিও) অপেক্ষমান রয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন এসব প্রকল্প নির্বাচনকে সামনে রেখে হাতে নেয়া হয়েছে। ফলে বছর না ঘুরতেই আবারও এ প্রকল্পগুলোর বরাদ্দ ও সময় বাড়াতে হবে, যা রাষ্ট্রের সম্পত্তির অপচয় ঘটাবে। তবে সরকার তা মনে করে না। সরকারের চলমান উন্নয়নের ধারাবাহিকতায় এ সব কাজ হচ্ছে।
পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তাফা কামাল ইনকিলাবকে বলেন, সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের মাধ্যমে টাকা বরাদ্দ পাবেন এমপিরা। সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো যেমন-কবরস্থান, শ্মশান, মসজিদ, মন্দির, চার্চ, প্যাগোডা, গুরুদুয়ারা, ঈদগাহ, খেলার মাঠের উন্নয়ন করা হবে। তিনি বলেন, সিটি করপোরেশন ব্যতীত দেশের ৪৯১টি উপজেলায় ১ কোটি করে ৪৯১ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। পরে আরো এক কোটি করে বাড়ানো হবে। এ ছাড়া পূর্ত কাজের বরাদ্দ হিসেবে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। প্রতিটি নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানে কমপক্ষে ৫ লাখ টাকার উন্নয়ন করা হবে।
এ বিষয়ে সাবেক তত্ত¡াবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা ড. মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম ইনকিলাবকে বলেন, এটা সরকারের শেষ সময়, তার পরও বাস্তব বিবেচনা না করে নতুন নতুন অনুমোদন দেয়া হচ্ছে। এ অবস্থা থেকে সরকারকে বেরিয়ে আসতে হবে। বাস্তবতা ও অর্থনৈতিক সক্ষমতা বিবেচনা করে প্রকল্প অনুমোদন দেয়া দরকার। এখন যে গুলো দেয়া হচ্ছে সে গুলো বাস্তবায়ন হবে কি না তাও সন্দেহ আছে।
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ ইনকিলাবকে বলেন, এসব প্রকল্প পুরোপুরি নির্বাচনী প্রকল্প। নির্বাচনে সাংসদদের সহায়তা করা ছাড়া এই প্রকল্প নেওয়ার আর কোনো কারণ দেখি না। এই প্রকল্পের যৌক্তিকতাও নেই। কারণ, চাহিদামতো নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণের মতো প্রকল্প বাস্তবায়নের সংশ্লিষ্ট বিভাগ আছে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তিদের লুটপাটের সুযোগ করে দেওয়া হচ্ছে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রত্যেক এমপি তার নির্বাচনী এলাকায় ১০টি নতুন ভবন করতে পারবে। এ প্রকল্পের আওতায় ৭টি ক্যাটাগরিতে এই ৩০০০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে নতুন একাডেমিক ভবন নির্মাণ ও আসবাবপত্র দেয়া হবে। প্রতিটি ভবনে টানা বারান্দা, ছেলে ও মেয়েদের জন্য পৃথক টয়লেট, সুপেয় পানি সরবরাহ, মেয়েদের জন্য পৃথক কমন রুম, শিক্ষকদের জন্য একটি কক্ষ, বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিক্ষার্থীদের জন্য আলাদা টয়লেট ও র্যাম্পের ব্যবস্থা থাকবে। দেশে চারতলা ভিত বিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে ২১৫০টি, সিটি করপোরেশন এলাকায় ছয়তলা ভিতবিশিষ্ট ছয়তলা ভবন হবে ১০০টি, পাহাড়ি এলাকায় চারতলা ভিতবিশিষ্ট চারতলা ভবন হবে ৫০টি, উপকূলীয় এলাকায় নিচতলা ফাকা রেখে পাঁচতলা ভবন (নিচ তলায় ঘূর্ণিঝড় আশ্রয়কেন্দ্র-কাম- শ্রেণিকক্ষ) হবে ১৫০টি এবং কাঠামোতে হাওড় এলাকায় পাঁচতলা ভবন হবে ৫০টি, লবণাক্ত এলাকায় চারতলা ভিত বিশিষ্ট ভবন হবে ১৭৫টি, নদী-ভাঙনকবলিত এলাকা স্থানান্তরযোগ্য সেমিপাকা স্ট্রাকচারে ২৫টি ভবণ নির্মাণ হবে। এসব ভবন নির্মাণ করতে ব্যয় হবে ১০ হাজার ৬৪৯ কোটি টাকা। ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণ প্রকল্পে ৫টি ক্যাটাগরিতে সারা দেশে আরো ৩২৫০টি বেসরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের ঊর্ধ্বমুখী স¤প্রসারণ ও আসবাবপত্র কেনার জন্য ৫ হাজার ২৩৭ কোটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ৫টি করে নতুন মাদরাসা ভবন নির্মাণের জন্য একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। এটি একনেকে পাস হওয়ার অপেক্ষায়। এই প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ ধরা হয়েছে ৭ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। দেশে ৩২৩টি সরকারি স্কুলের জন্য ৪ হাজার ৬০০ এবং ২০০টি সরকারি কলেজের ভবনের অবকাঠামো নির্মাণের জন্য ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। গত সাড়ে আট বছরে সারা দেশে স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার ১০ হাজার ১১টি নতুন ভবন নির্মাণ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। আরো চলমান রয়েছে দুই হাজার ৪৮৮টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভবন নির্মাণের কাজ।
এ ছাড়া মসজিদ-মন্দিরের উন্নয়নে বরাদ্দও পাচ্ছেন এমপিরা। দেশের প্রত্যেক উপজেলায় মসজিদ-মন্দিরসহ সামাজিক, ধর্মীয় এবং খেলাধুলা বিষয়ক অবকাঠামো উন্নয়ন করবে সরকার। এ লক্ষ্যে ৬৬৫ কোটি ৬১ লাখ টাকা ব্যয়ে সার্বজনীন সামাজিক অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে সরকার।এই প্রকল্পের আওতায় প্রতি উপজেলায় অন্তত ২ কোটি টাকার উন্নয়ন কার্যক্রম এমপির মাধ্যমে পরিচালনা করা হবে। ধর্মীয় অবকাঠামো উন্নয়নসহ মোট ৫ হাজার ১৮০ কোটি ৭৩ লাখ টাকা ব্যয়ে মোট ১০ প্রকল্পের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে। প্রকল্প ব্যয়ের মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ৪ হাজার ৪৬২ কোটি ২৫ লাখ টাকা, সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে ১৯ কোটি ৯৩ লাখ এবং প্রকল্প সাহায্য হিসেবে বৈদেশিক সহায়তা পাওয়া যাবে ৬৯৮ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। স্থানীয় সরকার বিভাগ প্রায় ৯০৩ কোটি টাকায় বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী আসনে পানি সরবরাহ ও স্যানিটেশনের বিশেষ প্রকল্প প্রস্তাব পরিকল্পনা কমিশনে অনুমোদন দিয়েছে। পুরো টাকা সরকার নিজস্ব উৎস থেকে দেবে। জানা গেছে, এমপিরা নিজের নির্বাচনী এলাকায় কোথায় কোথায় নলকূপ ও টয়লেট নির্মাণ করতে হবে, তা প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরকে জানিয়ে দেবেন। ওই অধিদপ্তর সাংসদদের চাহিদামতো নলকূপ ও টয়লেট তৈরি করবে। ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসে বর্তমান সরকারের মেয়াদ শেষ হচ্ছে। এর আগেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ২০১০ সালে ৪ হাজার ৬৯১ কোটি টাকার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প নেওয়া হয়। ওই প্রকল্পে পরের পাঁচ বছরে ২৭৯ জন এমপি প্রত্যেকে ১৫ কোটি টাকার কাজ শেষে করেছেন। এসব কাজ নিয়ে জনমনে অনেক প্রশ্ন রয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।