Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুলিশি পদক্ষেপে স্বস্তি ফিরেছে জনমনে

খুন ধর্ষণ ছিনতাই চাঁদাবাজিতে আতঙ্কিত বগুড়া

| প্রকাশের সময় : ৪ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

মহসিন রাজু, বগুড়া থেকে : সরকারি দলের এক ‘গড ফাদারের’ আশ্রয়ে গড়ে ওঠা সন্ত্রাসীদের হত্যা, খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই ও চাঁদাবাজীতে অস্থির এবং আতঙ্কিত বগুড়া জনপদে অতি সাম্প্রতিক পুলিশী পদক্ষেপে কিছুটা স্বস্তি ফিরেছে জনমনে। পুলিশের সাম্প্রতিক বিশেষ অভিযানে হত্যা ধর্ষণ ও খুনের বেশ কয়েকজন আসামী গ্রেফতার হয়েছে, যারা সবাই সরকারি দলের ওই চিহ্নিত গড ফাদারের ক্যাডার। পুলিশের এই অ্যাকশনে জনমনে স্বস্তির ভাব ফিরলেও সরকারি দলের ক্যাডারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট সূত্রে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্প্রতি বগুড়ার শেরপুরে এইচএসসি এক পরীক্ষার্থীকে ধর্ষণের অভিযোগে থানায় মামলা হওয়ার সাথে সাথেই পুলিশ দ্রæত দুই ধর্ষককে গ্রেফতার করেছে। গত সোমবার বিকেলে শেরপুর ও ধুনট থানার পুলিশ যৌথ অভিযান চালিয়ে ধুনট উপজেলার মথুরাপুর ইউনিয়নের চর খাদুলী গ্রামের মাসুদ রানার ছেলে মো: সোহাগ (২০) ও একই এলাকার ভাদাইলহাটা গ্রামের শাজাহান আলীর ছেলে মো: স্বপন শেখকে (২১) নিজ নিজ বাড়ি থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এই ঘটনায় জড়িত আরও এজনকে ধরতে পুলিশী অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানিয়েছেন শেরপুর থানার ওসি (তদন্ত) বুলবুল ইসলাম। তিনি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ধর্ষক, খুনি, চাঁদাবাজদের দলীয় পরিচয় যাই হোক না কেন তাদের কাউকেই ছাড় দেয়ার কোনো সুযোগ নেই। একই দিনে বগুড়ার ডিবি পুলিশ, শহরের জামিল নগর এলাকার একটি ‘মেস বাড়িতে’ অভিযান চালিয়ে মোস্তাক আহম্মেদ নামে এক ছাত্রলীগ নেতাকে একটি রিভলবার ও ১ রাউন্ড গুলিসহ গ্রেফতার করেছে। অভিযানের সময় ওই বাড়িতে সুমি নামের এক তরুনী থাকায় তাকেও আটক করেছে পুলিশ। মোস্তাক গোহাইল ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি বলে জানায় পুলিশ। মেসবাড়িটি একদল ছাত্রলীগ নেতা রঙ্গালয় হিসেবে ব্যবহার করতো বলে জানিয়েছে এলাকাবাসী। এলাকাটি ছাত্রশিবিরের শক্ত ঘাঁটি হলেও কিভাবে সেখানে রঙ্গালয় গড়ে উঠলো তা’ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে খোদ সরকারীদলের মধ্যেই। পুলিশও বিষয়টি তদন্ত করছে বলে জানা গেছে। আরেকটি ঘটনায় পুলিশ বগুড়া শহরের কলোনী এলাকার ত্রাস হিসেবে পরিচিত ৭টি খুনসহ ১৩টি হত্যা মামলার আসামী জালাল আহম্মেদ ঝন্টুকে গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতারের পরে প্রাথমিক ভাবে ঝন্টু ৩টি হত্যাকান্ড নিজের হাতে ঘটিয়েছে বলে স্বীকার করেছে পুলিশের কাছে। এই এলাকায় ঝন্টুসহ ২০-২৫ জনের একদল অবাঙ্গালী (এলাকায় তারা বিহারী যুবলীগ নামে পরিচিত) সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারী ক্যাডারের অত্যাচারে অতিষ্ট বলে অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও বগুড়ার অন্যতম টপটেরর মোস্তাকিম হোসেন কে সম্প্রতি হিলি সীমান্ত পথে ভারতে পালানোর প্রাক্কালে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোস্তাকিম বগুড়া পাসপোর্ট অফিসের এডির কাছে মাসোহারা দাবি করে তা’ না পেয়ে তাকে কুপিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। তার ধারণা ছিল অতিতের মতোই সে সন্ত্রাস পালক সেই গডফাদারের তদ্বিরে মামলা থেকে বেঁচে যাবে, কিছুই হবেনা তার। কিন্তু তার বিরুদ্ধে থানায় মামলা হলে সে ভারতে পালানোর সিদ্ধান্ত ন্য়ে। কারণ, ভারতে ওই গডফাদারের নিরাপদ শেল্টার রয়েছে। বগুড়া আওয়ামীলীগের বেশির ভাগ নেতা কর্মীর কাছে সন্ত্রাসী লালন পালনকারী ওই গড ফাদার একজন ‘ভন্ড পীর’ হিসেবে পরিচিত। কারণ, বিএনপি জামায়াতের সাথে তার রয়েছে গভীর সম্পর্ক। প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে তার বিরুদ্ধে অভিযোগের পাহাড় জমে উঠলেও এতদিন অজ্ঞাত কারণে কিছুই হয়নি। কিন্তু অতি সম্প্রতি তার পালিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে পরিচালিত পুলিশী অ্যাকশানের পিছনে বগুড়ায় নতুন যোগদানকারী কয়েকজন পুলিশ কর্মকর্তার ভূমিকা রয়েছে, যারা সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে অ্যাকশানের ক্ষেত্রে তাদের দলীয় পরিচয়কে গননায় আনতে নারাজ। সরকারি দলের অধীকাংশ নেতা কর্মীও পুলিশের এই ভূমিকায় অখুশি নন বলে দলীয় সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: পুলিশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ