পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
ফিলিস্তিনী কিশোর বাসেল আল-হিলো হাসপাতালের বিছানায় কাতরাচ্ছে। গাজা-ইসরাইল সীমান্তে বিক্ষোভকারীদের ওপর ইসরাইলি সৈন্যরা গুলি চালালে সে গুরুতর আহত হয়। শুক্রবারের ওই বিক্ষোভ চলাকালে গুলিবিদ্ধ ১৬ বছর বয়সী বাসেলের পুরোপুরি সুস্থ্য হতে কয়েক বছর লেগে যেতে পারে। গুলিতে তার পা গুরুতর জখম হয়েছে। এই অবস্থাতেও রোববার কিশোরটি জানায় সে আবারো বিক্ষোভে অংশ নিতে যাবে। সে বলে, ‘আমার এতে কোন দুঃখ নেই।’ এ সময় দুর্দান্ত সাহসী এই কিশোরের মা তার পাশেই ছিলেন। তিনি স্মিত হেসে সন্তানের মাথায় হাত রাখলেন।
গাজা নগরীর শিফা হাসপাতালে কিশোর-তরুণ ফিলিস্তিনীরা আহত অবস্থায় চিকিৎসা নিচ্ছে। তাদের পাশে চকলেট হাতে আত্মীয়রা বসে আছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, সীমান্তের কাছে ওই বড় ধরনের বিক্ষোভ চলাকালে ১৬ ফিলিস্তিনী নিহত ও আরো কয়েকশ আহত হয়েছে। ২০১৪ সালে ইসরাইলের সঙ্গে যুদ্ধের পর এটাই একদিনে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, শুক্রবার থেকে ইসরাইলি সৈন্যরা এ পর্যন্ত মোট ৮শ’র বেশি গাজাবাসীকে গুলি করেছে।
এদিকে ইসরাইলি সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়, যারা সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইটপাটকেল, বোমা ও জ্বলন্ত চাকা ছুঁড়ে মেরেছে তাদের লক্ষ্য করেই শুধু গুলি চালানো হয়েছে। ইসরাইলি সেনাবাহিনী আরো অভিযোগ করে যে ফিলিস্তিনীরা সীমান্তবেড়া কেটে ফেলে এর ক্ষতি করে এবং গাজা ভূখন্ড অবরুদ্ধ করে রাখে। এছাড়াও বিক্ষোভকারীরা ইসরাইলে অনুপ্রবেশ করে সৈন্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছুঁড়তে চেষ্টা চালায়। কিন্তু ফিলিস্তিনীরা জানায়, বিক্ষোভকারীরা সৈন্যদের প্রতি কোন হুমকি ছিল না। সম্পূর্ণ বিনা উস্কানিতে তাদের ওপর গুলি চালানো হয়। বিক্ষোভকারীদের ওপর গুলি চালানোয় মানবাধিকার সংগঠনগুলো ইসরাইলের ভূমিকা নিয়ে প্রশড়ব তুলেছে। কয়েকজন আহত বিক্ষোভকারী জানান, কেউ কেউ সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছুঁড়েছিল, এটা ঠিক। কিন্তু সৈন্যরা নির্বিচারে তাদের ওপর গুলি চালায়। গাজায় তারা চরম দারিদ্রের সঙ্গে প্রতিনিয়ত লড়ে যাচ্ছে। তাই তাদের হারাবার কিছু নেই। সুস্থ্য হলেই তারা আবার বিক্ষোভ করবে।
সাহসী কিশোর বাসেল জানায়, ‘আমি সীমান্ত থেকে একটু দূরে ছিলাম। হঠাৎ, নির্বিচারে গুলি শুরু হয় এবং আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষগুলো একের পর এক পড়ে যেতে থাকে। এদের মধ্যে আমার একজন বন্ধুও ছিল।’ কিশোরটি আরো জানায়, ‘আমার বন্ধুর সাহায্যে এগিয়ে গেলে আমি গুলিবিদ্ধ হই।’ তার ডান পা গুলিবিদ্ধ হয়। গুলিতে তার হাড় ভেঙে যায়। তার পায়ে ধাতব রড বেঁধে দেয়া হয়েছে। কিশোরটি আরো বলে, ‘আমি সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করতে গিয়েছিলাম। আমি গুলিবিদ্ধ হব এমন আশঙ্কা করিনি।’
গাজা সিটির পূর্বে সে গুলিবিদ্ধ হয়। সে সৈন্যদের লক্ষ্য করে ইট-পাটকেল ছোঁড়েনি বলে জানিয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস এই সহিংসতার ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহবান জানিয়েছেন।
তবে ইসরাইল তাদের এই আহবান প্রত্যাখ্যান করেছে। সেনাবাহিনী দাবি করেছে, নিহত ১৬ জনের অর্ধেকের বেশি চরমপন্থী দলের সদস্য। ইসলামী চরমপন্থী দল হামাস শাসিত গাজায় ২০০৮ সাল থেকে উভয়পক্ষের সংঘাত চলছে। হামাস জানিয়েছে, নিহতদের মধ্যে পাঁচ জন তাদের সশস্ত্র শাখার সদস্য। হাসপাতালে ১৫ বছর বয়সী কিশোর আলি জহির ঘুমিয়ে পড়ে। সে বুকে গুলিবিদ্ধ হয়েছে। তার মা বলেন, তার নয় সন্তানের সবাই এই বিক্ষোভে অংশ নেয়। কিন্তু আলি বেড়ার খুব কাছে চলে যায়। এই বিক্ষোভে হাজার হাজার ফিলিস্তিনী যোগ দেয়। কিশোরটির মা বলেন, ‘এটা ছিলো একটি শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ। আমার ছেলে কোন ইট-পাটকেল ছোঁড়েনি।’
ইসরাইল এক দশক ধরে গাজা অবরুদ্ধ করে রেখেছে। হামাসকে বিচ্ছিনড়ব করার লক্ষ্যেই তারা এ পদক্ষেপ নিয়েছে বলে দাবি করছে। কিন্তু এই দুই পক্ষের মাঝে পড়ে সেখানকার ২০ লাখ বাসিন্দা অত্যন্ত দুর্দশার মধ্যে দিন কাটাচ্ছে। সূত্র : এএফপি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।