Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কাটবে বৈশাখ

ঘূর্ণিঝড়, সিলেট হাওড়ে বন্যা, কালবৈশাখী ও তাপপ্রবাহের আশঙ্কা এ মাসেই

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

চলতি এপ্রিল (চৈত্র-বৈশাখ) মাসে বঙ্গোপসাগরে এক থেকে দু’টি নিম্নচাপ সৃষ্টি হতে পারে। এরমধ্য থেকে শক্তি সঞ্চয় ও ঘনীভূত হয়ে রূপান্তরিত হতে পারে একটি ঘূর্ণিঝড়। এ মাসের দেশের উত্তরাঞ্চল থেকে মধ্যাঞ্চল পর্যন্ত ২ থেকে ৩ দিন মাঝারি থেকে প্রবল আকারে কালবৈশাখী ঝড় (বজ্রঝড়) সংঘটিত হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র ৪ থেকে ৫ দিন হালকা থেকে মাঝারি ধরনের কালবৈশাখী ঝড় হতে পারে। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল তথা সিলেট ও হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কাও রয়েছে। এপ্রিলে দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি তীব্র ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে। এসময় তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সে. অতিক্রম করতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র এক থেকে দু’টি মৃদু (৩৬-৩৮ ডিগ্রি সে.) থেকে মাঝারি (৩৮-৪০ ডিগ্রি সে.) তাপপ্রবাহ বয়ে যেতে পারে।
গতকাল (রোববার) বিকেলে ঢাকায় আবহাওয়া অধিদপ্তরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিশেষজ্ঞ কমিটির সভায় উপরোক্ত পূর্বাভাস প্রদান করা হয়েছে। সভায় সভাপতিত্ব করেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ও বিশেষজ্ঞ কমিটির চেয়ারম্যান মাহ্নাজ খান। বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত কমিটির সভায় আবহাওয়া-জলবায়ুর সর্বশেষ তথ্য-উপাত্ত, উর্ধাকাশের আবহাওয়া বিন্যাস, বায়ুমন্ডলের বিভিন্ন স্তরের বিশ্লেষিত আবহাওয়ার মানচিত্র, জলবায়ু মডেল, বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার তথ্য-উপাত্ত, এল-নিনো/ লা-নিনার সর্বশেষ অবস্থা ইত্যাদি বিশ্লেষণ করা হয়। তাছাড়া স্প্রেসোর উপাত্তসমূহ পর্যালোচনা করা হয়েছে।
এপ্রিল মাসের দীর্ঘমেয়াদী পূর্বাভাসে আরও জানানো হয়েছে, এ মাসে অর্থাৎ চৈত্রের অবশিষ্টাংশ ও বৈশাখের সিংহভাগজুড়ে দেশে সার্বিকভাবে স্বাভাবিকের কিছু বেশি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে বিগত মার্চ মাসে (ফাল্গুন-চৈত্র) সারা দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৫৮.২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। যদিও বিভাগওয়ারী হিসেবে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগ তথা উত্তরাঞ্চলে স্বাভাবিক অপেক্ষা বেশি (যথাক্রমে ৭৩.১ এবং ২৬.৮ শতাংশ) বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। ঢাকা বিভাগে স্বাভাবিকের চেয়ে ৬৫.৬ শতাংশ কম, চট্টগ্রাম বিভাগে ৮৮.৪ শতাংশ কম, বরিশাল বিভাগে ৮৯.২ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে। তাছাড়া বিগত আগস্ট থেকে ফেব্রæয়ারি মাস পর্যন্ত দেশে বৃষ্টিপাতের ক্ষেত্রে অসংগতি পরিলক্ষিত হয়েছে।
চলতি এপ্রিল মাসে নদ-নদীর অবস্থা সম্পর্কে পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে নদ-নদীর প্রবাহ স্বাভাবিক থাকতে পারে। তবে এ মাসের শেষার্ধে তথা বৈশাখ মাসে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পাহাড়ী ঢলের কারণে আকস্মিক বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। এ প্রসঙ্গে একটি বিশেষজ্ঞ সূত্র জানায়, উত্তর-পূর্ব ভারতের আসাম-ত্রিপুরা-মেঘালয়ে ভারী বর্ষণ হলে সে উজান থেকে ধেয়ে আসা ঢলের কারণে বন্যাকবলিত হতে পারে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল অর্থাৎ বৃহত্তর সিলেট-নেত্রকোনাসহ হাওড় অঞ্চল। প্রসঙ্গত গত বছর এপ্রিলে ভারতের উজানের ঢলে দেশের হাওড় অঞ্চলে আকস্মিক বন্যায় ব্যাপক ফসলহানি হয়।
কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাসে বলা হয়, এ মাসে দেশে দৈনিক গড় বাষ্পীভবন এক থেকে ৪ মিমি, এবং গড় উজ্জ্বল সূর্যকিরণকাল ৭ থেকে সাড়ে ৮ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী থাকতে পারে। বিগত মার্চ (ফাল্গুন-চৈত্র) মাসের আবহাওয়া পরিস্থিতি পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞ কমিটির গতকালের সভায় বলা হয়, গত মাসে সারাদেশে স্বাভাবিক হার ও পরিমাণের চেয়ে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়। পশ্চিমা লঘুচাপের সাথে বায়ুপ্রবাহের সংযোগ ঘটার ফলে ১১ থেকে ১৩ মার্চ রংপুর-সিলেট-চট্টগ্রাম ও বরিশাল বিভাগের দু’এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হয়েছে। ১৫ থেকে ১৭ মার্চ ঢাকা-সিলেট-খুলনা-চট্টগ্রাম ও রংপুর বিভাগের কয়েক স্থানে হালকা বৃষ্টি, ২৯ থেকে ৩১ মার্চ ঢাকা-ময়মনসিংহ-সিলেট-রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের অধিকাংশ স্থানে এবং চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় বৃষ্টিপাত হয়। গত মাসে সারাদেশের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৪ মার্চ যশোরে ৩৬.৮ ডিগ্রি সে.। কালবৈশাখী ঝড়, শিলাবৃষ্টিসহ কৃষি আবহাওয়া গত মাসের পূর্বাভাসের সাথে সংগতিপূর্ণ ছিল বলে জানায় আবহাওয়া বিভাগ।
সর্বশেষ আবহাওয়া : বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা
আজ সোমবার সন্ধ্যা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে জানা গেছে, কুমিল্লা ও নোয়াখালী অঞ্চলসহ ঢাকা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী, রংপুর, খুলনা, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের কয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা বা ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আকাশ আংশিক মেঘলাসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে। সারাদেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে। রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী ২ দিনে আবহাওয়া কিছুটা পরিবর্তন এবং এর পরের ৫ দিন বৃষ্টিপাত অথবা বজ্রসহ বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। গতকাল দেশের দু’এক জায়গায় হালকা বৃষ্টি হয়। এরমধ্যে সর্বোচ্চ ছিল রাজশাহী বিভাগের বদলগাছিতে ৬ মিমি। দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল সীতাকুন্ড ও রাজশাহীতে ৩৬ ডিগ্রি সে.। সর্বনিম্ন তেতুলিয়ায় ১৭ ডিগ্রি সে.। ঢাকায় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪ ডিগ্রি, সর্বনিম্ন ২০.৫ ডিগ্রি সে.।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ঘূর্ণিঝড়

২৬ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ