Inqilab Logo

শক্রবার ০৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ কার্তিক ১৪৩১, ০৬ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

নরসিংদীতে শুকনো বীজতলা প্রযুক্তিতে সাফল্য

সরকার আদম আলী, নরসিংদী থেকে | প্রকাশের সময় : ১ এপ্রিল, ২০১৮, ১২:০০ এএম

প্রবাদ আছে, “যত কুশি তত ধান, কুশি হচ্ছে ধানের প্রাণ”। পলিথিনে মোড়ানো শুকনো বীজতলা থেকে উৎপাদিত এক মাস বয়সী ধানের চারা রোপন করে চলতি বোরো মৌসুমে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছে নরসিংদীর কৃষি বিভাগ। নরসিংদী সদর উপজেলার আমদিয়া ও পাইকারচরসহ কয়েকটি ব্লকের ৮ শত হেক্টর জমিতে এই চারা রোপন করা হয়েছে। চারা রোপনের ১৫ দিনের মধ্যেই চারায় চারায় ব্যাপকভাবে কুশি গজিয়েছে। বর্তমানে এসব চারায় গজানো কুশির গড় সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫ টিতে। কোন কোন চারায় সর্বোচ্চ কুশি গজিয়েছে ৪৮ টি পর্যন্ত। বোরো মৌসুমে নরসিংদীর কৃষি বিভাগ উদ্ভাবিত পলিথিনের মোড়ানো শুকনো বীজতলা প্রযুক্তির এই সাফল্য বোরো চাষীদের মধ্যে ব্যাপক আশার সঞ্চার করেছে। ক্ষেতে ক্ষেতে বোরো ধানের সবুজ কচি পত্রপল্লবেরা লক লক করছে। চারিদিকে সবুজের এই হাতছানি কৃষকদেরকে নতুন করে উজ্জীবিত করেছে। নরসিংদীর কৃষি বিভাগ ও বোরো চাষীরা জানিয়েছে, বোরো মৌসুম হচ্ছে বাংলাদেশের সবচে বড় চাষাবাদের মৌসুম। প্রতিবছর সারাদেশে কমবেশী ৪৮ লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের চাষাবাদ হয়ে থাকে। বছরের পর বছর ধরে এত বিপুল পরিমাণ জমিতে বোরো ধান চাষাবাদ করেও কাঙ্খিত ফলন পাচ্ছে না চাষীরা। প্রতিবছরই উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধানের ঘাটতি ফলন হচ্ছে দেশে। যার ফলে সারাবছরই দেশে খাদ্য ঘাটতি থেকে থাকছে। এর কারণ হচ্ছে উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষাবাদে এর নির্ধারিত প্রযুক্তি অনুসরণ না করা বা বোরো মৌসুমে কর্দমাক্ত বীজতলা থেকে চারা উৎপাদন করে অধিক বয়সী চারা রোপন করা। তারা জানিয়েছে, উফশী জাতের ধানের চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে ক্ষেতের রোপন করার সময় হলো এক মাস। অর্থাৎ এক মাস বয়সী চারা বীজতলা থেকে উঠিয়ে ক্ষেতে রোপন করতে হবে। কিন্তু কর্দমাক্ত বীজতলা থেকে এক মাস বয়সী চারা ক্ষেতে রোপন করা কৃষকদের পক্ষে কখনোই সম্ভব হয় না।
দেড় মাস, দুই মাস, আড়াই মাস বয়সের চারা রোপন করার কারণে ধানের উৎপাদন ২৫-৩০ ভাগ কমে যায়। বীজতলা থেকে এসব অতি বয়সী ও রোগাক্রান্ত চারা তুলে নিয়ে ক্ষেতে রোপন করার ফলে ধানের উৎপাদন ৩০ ভাগ কমে যায়। কোন কোন জাতের ধানের উৎপাদন অর্ধেকে নেমে যায়। যার ফলে ধান গবেষণা ইন্সটিটিউট উফশী জাতের ধানের উদ্ভাবন করলেও কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগ ধানের উৎপাদন কাঙ্খিত পর্যায়ে বৃদ্ধি করতে পারেনি। এই বিষয়টিকে সামনে নিয়ে নরসিংদী উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন, ইব্রাহিম হোসেন ও মোতাহার হোসেন নামে কয়েকজন কৃষি কর্মকর্তা উর্ধতন কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে শুকনো বীজতলা তৈরীর চিন্তাভাবনা করতে থাকে। পরে তারা বোরো চাষীদের সাথে আলোচনাক্রমে সদর উপজেলার আমদিয়া, নুরালাপুর, শীলমান্দী ও পাঁচদোনা ইউনিয়নে পাইলটিং আকারে পলিথিন আবৃত করে শুকনো বীজতলা তৈরীর উদ্যোগ গ্রহণ করে। উল্লেখিত কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শ নিয়ে বোরো চাষীরা পলিথিনে আবৃত শুকনো বীজতলা তৈরী করে এক মাস বয়সী ধানের চারা ক্ষেতে রোপন করে। এসব চারা রোপন করার মাত্র ৪৮ ঘন্টার মধ্যেই জিয়ল ধরে। ১৫ দিনের মধ্যেই কুশি গজাতে শুরু করে। নরসিংদী সদর উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোহাম্মদ আব্দুল হাই ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন জানান, তাদের এই পলিথিন মোড়ানো শুকনো বীজতলার প্রযুক্তি অভাবিত সাফল্যের ইঙ্গিত দিয়েছে। ইতোমধ্যেই নরসিংদী সদর উপজেলার ৮ শত হেক্টর জমিতে ধান হু হু করে বেড়ে উঠছে। কর্দমাক্ত বীজতলার চারায় যেখানে ১৫/২০ টির বেশী কুশি গজায় না এবং সব কুশিতে ধান ফলে না, সেখানে শুকনো পদ্ধতির বীজতলায় উৎপাদিত ধানের চারায় সর্বোচ্চ ৪৮ টি পর্যন্ত কুশি গজিয়েছে এবং প্রতিটি কুশির ডিগপাতাই বেশ সতেজভাবে বেড়ে উঠছে। এতে ধারণা করা হচ্ছে যে, ধানের ফলনও অন্যান্য জমির তুলনায় অনেক বেশী হবে। সারাদেশে যদি পলিথিন মোড়ানো শুকনো বীজতলা প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় তবে বোরো ধানের ঘাটতি উৎপাদন কমে আসবে। ধানের কাংখিত ফলন নিশ্চিত হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রযুক্তি

১৪ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৮ মার্চ, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ