Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঝড়ের দিনে আবাহনীর রেকর্ড

স্পোর্টস ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ৩১ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

দুপুরের পর থেকেই খানিকটা মেঘলা ঢাকার আকাশ। বিকেল চারটা বাজতে না বাজতেই যেন নেমে এলো সন্ধ্যা, কমে এলো আলো। ঢাকার এই অন্ধকার নেমে এলো স্টেডিয়ামগুলোতেও, প্রভাব পড়লো ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগে। মিরপুর, ফতুল্লা এবং সাভারে হতে চলা লিগের সুপার সিক্সের তিনটি খেলাই হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত, ফলেও প্রড়েছে প্রভাব। গতকাল হঠাৎ ধেয়ে আসা এই কালবৈশাখী ঝড়ে সবচেয়ে বড় ক্ষতিটা বুঝি হয়ে গেল প্রাইম দোলেশ্বরের। আবাহনীর রেকর্ড রান তাড়ায় বেশ এগিয়ে থেকেও বৃষ্টি আইনে হেরে শিরোপা লড়াই থেকে এক রকম ছিটকেই গেছে দলটি।
বিকেএসপির তিন নম্বর মাঠে বাস্তব ঝড়ের আগে বয়ে গেছে ক্রিকেটীয় ঝড়। আবাহনীর দুই ব্যাটসম্যান সেঞ্চুরি করেছেন। দুজন আবার গড়েছেন দুইশ রানের জুটিও। পাল্টা জবাবে জোড়া সেঞ্চুরি এলো দোলেশ্বরের ইনিংসেও। সেই দুজনও গড়লেন দুইশ রানের জুটি। তবে শেষ হাসি হাসলেন আবাহনীর দুই সেঞ্চুরিয়ান এনামুল হক বিজয় ও নাজমুল হোসেন শান্ত। বৃথা গেছে দোলেশ্বরের ফজলে মাহমুদ ও মার্শাল আইয়ুবের সেঞ্চুরি। চার সেঞ্চুরির ম্যাচটি ডাকওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে ২০ রানে জিতেছে আবাহনী।
সাভারে আগে ব্যাট করতে নেমে ৪ উইকেটে ৩৯৩ রান করেছিল আবাহনী। প্রিমিয়ার লিগে তো বটেই, বাংলাদেশের মাটিতে লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ রান এটি। দলীয় রেকর্ডের আগে হয়েছে জুটির রেকর্ডও। উদ্বোধনী জুটিতে ২৩৬ রান যোগ করেন বিজয় ও শান্ত। প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটির রেকর্ড এটি। যেকোনো উইকেটে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।
এবারের ওয়ালটন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে শান্ত পেয়েছেন তৃতীয় সেঞ্চুরি। ১০৬ বলে ১২ চার ও ২ ছক্কায় ১২১ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পাওয়া বিজয় ১২৬ বলে ৭ চার ও ৬ ছক্কায় খেলেন ১২৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। এ ছাড়া হানুমা বিহারীর ৫৪ বলে ৬৬ ও মোহাম্মদ মিথুনের ২৪ বলে ৪৭* রানের ঝোড়ো ইনিংসে রানের পাহাড় গড়ে আবাহনী।
৩৯৪ রান তাড়া করে দোলেশ্বর হাল ছেড়ে দেয়নি একদমই। শুরুটা অবশ্য ভালো হয়নি। লিটন দাস ১৪ রানে আউট হয়ে গেলেন, ৩৩ রানে ফিরলেন ইমতিয়াজ হোসেনও। সেটা যেন আরও বেশি জাগিয়ে তুলল দোলেশ্বরকে। মার্শাল আইয়ুব ও ফজলে মাহমুদ ১৫.১ ওভারেই পার করে ফেললেন ১০০, পরের ১০০ করলেন মাত্র ১২.২ ওভারে। তারপরও ৩৯৪ রান তো হিমালয়সম, আস্কিং রেটও পাল্লা দিয়ে বাড়ছিলই। এর মধ্যে মার্শাল-মাহমুদ দুজনেই সেঞ্চুরির কাছাকাছি চলে গেলেন। ২০ ওভারে যখন ১৭৭ রান দরকার দোলেশ্বরের, হাতে আছে ৮ উইকেট। লক্ষ্যটা খুব কঠিন, কিন্তু পরিস্থিতি বলছিল একদমই অসম্ভব নয়। এর পরেই বিকেএসপির আকাশ অন্ধকার করে এলো বৃষ্টি।
সেটা থেমে গেল তাড়াতাড়িই। খেলা যখন আবার শুরু হলো, ডিএল মেথডে জয়ের জন্য ৪ ওভারে দোলেশ্বরের দরকার ৫৫ রান। কিন্তু বৃষ্টি যেন ছন্দটা কেড়ে নিল মার্শাল-মাহমুদের, দুজন পরের ৩ ওভারে নিতে পারলেন ২০ রান। শেষ ওভারে দরকার ৩৫, মিরাজের প্রথম বলে এলো ১ রান। এরপর আবার বৃষ্টি শুরু হলো, শেষ পর্যন্ত ডিএল মেথডে ২০ রানে জিতে গেল আবাহনী।
এছাড়া, একমাত্র দল হিসেবে সুপার লিগে তিনটি জয় পেয়েছে শেখ জামাল। টানা তিন ম্যাচে জিতে লিগও জমিয়ে তুলেছে ধানমন্ডি পাড়ার দলটি। ডাক-ওয়ার্থ ও লুইস পদ্ধতিতে তারা ৮ রানে হারিয়েছে লিগের বর্তমান চ্যাম্পিয়ন গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সকে। মিরপুরে গাজী গ্রুপের আমন্ত্রণে ব্যাটিংয়ে নেমে ২৪৮ রানের পুঁজি পায় শেখ জামাল। জবাবে ৪৭ ওভারে ২১৭ রান তোলে গাজী গ্রুপ। জয়ের জন্য ৩ উইকেট হাতে রেখে ১৮ বলে ৩২ রান দরকার ছিল তাদের। কিন্তু এরপরই মিরপুরে শুরু হয় ঝোড়ো হাওয়া। সাথে কালো হয়ে আসে আকাশ। তাতেই আলোকস্বল্পতায় বন্ধ হয়ে যায় খেলা।
শেখ জামালের জয়ের নায়ক জিয়াউর রহমান। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান খাদের কিনারা থেকে দলকে টেনে তুলে দিয়েছেন লড়াকু পুঁজি।
এদিকে, খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির বিপক্ষে জিতে শিরোপার দৌড়ে টিকে রইল দলটি। সুপার লিগে আগের ম্যাচে প্রাইম দোলেশ্বরের বিপক্ষে ৫ উইকেটে জয় পেয়েছিল রূপগঞ্জ। ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে খেলাঘর সমাজ কল্যাণ সমিতির মুখোমুখি হয় রূপগঞ্জ। টস হেরে আগে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২১৬ রান করে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ। জবাবে ব্যাটিংয়ে নেমে ৪৮.৫ ওভারে ২০৪ রান তুলতেই অলআউট খেলাঘর । ফলে এই ম্যাচে ১২ রানে জিতে রূপগঞ্জ।
সুপার লিগের তৃতীয় রাউন্ড শেষে শিরোপার আরও কাছাকাছি আবাহনী। ১৪ ম্যাচে আবাহনীর পয়েন্ট ২০। দোলেশ্বরের শিরোপাস্বপ্ন বড় একটা ধাক্কা খেয়েছে, ১৪ ম্যাচে তাদের পয়েন্ট এখন ১৫। ১৪ ম্যাচে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা আশা বাঁচিয়ে রাখল জামাল। সমান ম্যাচে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে গাজীর আশা খেল বড় ধাক্কা। রূপগঞ্জের পয়েন্ট ১৮, সমান ম্যাচে খেলাঘরের পয়েন্ট ১৪।


লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে দলীয় সর্বোচ্চ

আবাহনী ৩৯৩/৪, প্রতিপক্ষ প্রাইম দোলেশ্বর
আবাহনী ৩৭১/৫, প্রতিপক্ষ মোহামেডান
ইংল্যান্ড একাদশ ৩৭০/৭, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড একাদশ
আবাহনী ৩৬৬/৫, প্রতিপক্ষ মোহামেডান
লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ৩৫৭/৬, প্রতিপক্ষ ওল্ডডিওএইচ
প্রাইম ব্যাংক ৩৫৩/৩, প্রতিপক্ষ কলাবাগান ক্রিকেট ক্লাব

প্রিমিয়ার লিগে সর্বোচ্চ রানের জুটি


মুুমিনুল হক-রোশন সিলভা ২৭৬ (চতুর্থ উইকেট)
এনামুল হক বিজয়-নাজমুল হোসেন শান্ত ২৩৬ (প্রথম উইকেট)
নাঈম ইসলাম-মুশফিকুর রহিম ২২৫ রান (তৃতীয় উইকেট)
মেহেদী মারুফ-রনি তালুকদার ২১৪ (প্রথম উইকেট)
লিটন কুমার দাস-সাদমান ইসলাম ২০৭ (প্রথম উইকেট)
মার্শাল আইয়ুব-মাহমুদউল্লাহ ২০৩ (তৃতীয় উইকেট)
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী-দোলেশ্বর
আবাহনী : ৫০ ওভারে ৩৯৩/৪ (এনামুল ১২৮, শান্ত ১২১, বিহারি ৬৬, মিঠুন ৪৭*, নাসির ৭, মোসাদ্দেক ৬*; সালাউদ্দিন ২/৮১, ফরহাদ রেজা ১/৮০)।
দোলেশ্বর: ৩৪.১ ওভারে ২৪৪/৩ (ইমতিয়াজ ১২, লিটন ১৪, ফজলে মাহমুদ ১০০, মার্শাল ১০৮*; মাশরাফি ০/৩৪, তাসকিন ৩/৬২, নাসির ০/৯)।
ফল : আবাহনী ২০ রানে জয়ী (ডি/এল)।
ম্যাচ সেরা : এনামুল হক (আবাহনী)।

শেখ জামাল-গাজী গ্রুপ
শেখ জামাল: ৪৭.৪ ওভারে ২৪৮ (সৈকত ৫১, তানবীর ৫০, জিয়াউর ৮৬; আবু হায়দার ৪/৫৭, মেহেদি ১/৩৭, মুমিনুল ২/৩৭, রাজা ২/৫৭)।
গাজী গ্রুপ : (৪৭ ওভারে লক্ষ্য ২২৬) ৪৭ ওভারে ২১৭/৭ (জহুরুল ২৯, ইমরুল ৩৬, জাকের ৬১, আসিফ ৫২*; সোহাগ ১/৩১, রবিউল ৩/২৭, তানবীর ১/৩০)।
ফল : শেখ জামাল ৮ উইকেটে জয়ী (ডি/এল)।
ম্যাচ সেরা : জিয়াউর রহমান (শেখ জামাল)।


রূপগঞ্জ-খেলাঘর
রূপগঞ্জ : ৫০ ওভারে ২১৬/৮ (নাঈম ৩৩, মুশফিক ১১, মোশাররফ ২৬, নাজমুল ৬৩*, আসিফ ২০, শহীদ ১৪*; তানভীর ৩/৪৪, সাদ্দাম ৪/৩৯, মেনেরিয়া ১/৩৫)।
খেলাঘর : ৪৮.৫ ওভারে ২০৪ (মাহিদুল ৭৭, অমিত ১৭, নাজিম ৪৫; শহীদ ১/৩২, আসিফ ২/৩৬, রসুল ২/৩৯, মোশাররফ ২/৪১, রাসেল ২/৪৩, নাঈম ১/১২)।
ফল : লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ ১২ রানে জয়ী
ম্যাচ সেরা : নাজমুল হোসেন (রূপগঞ্জ)।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবাহনী

১০ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ