Inqilab Logo

সোমবার, ০৮ জুলাই ২০২৪, ২৪ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ মুহাররম ১৪৪৬ হিজরী

এক সময়ের অভিশপ্ত জাহাইজ্যার চর এখন আশীর্বাদ

মেঘনা তীরে স্বর্ণদ্বীপ

| প্রকাশের সময় : ২৮ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আনোয়ারুল হক আনোয়ার, নোয়াখালী থেকে : উত্তাল ঢেউ ও খরস্রোতা মেঘনা তীরবর্তী এক সময়ের অভিশপ্ত জাহাইজ্যার চর এখন আশির্বাদে পরিণত হয়েছে। দেশ প্রেমিক সেনা বাহিনীর হাতের ছোঁয়ায় ক্রমান্বয়ে দৃশ্যপট পাল্টে যাচ্ছে। ১২/১৩ বছর পূর্বে জাহাইজ্যার চরের নাম শুনলে আতঁকে উঠত উপকূলীয় ও দ্বীপাঞ্চলের লাখ লাখ অধিবাসী। জলদস্যু ও বনদস্যু বাহিনীর অভয়ারণ্য জাহাইজ্যার চর ‘স্বর্ণদ্বীপ’ নাম ধারন করে দেশ বাসীর জন্য আশির্বাদে পরিণত হয়েছে। আশির দশকে এ পথ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মালবাহী কার্গো জাহাজ ও ভারী ট্রলার চলাচল করত। নব্বইয়ের দশকে নদীর ¯্রােত পরিবর্তন ঘটলে মেঘনা তীরে একখন্ড চর জেগে ওঠে। এরপর চরটির আয়তন বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে দুইটি বৃহৎ উপজেলা আয়তনের সমান স্বর্ণদ্বীপ। স্বর্ণদ্বীপের পশ্চিম পার্শ্বে রয়েছে চানন্দী ইউনিয়ন। স্বর্ণদ্বীপের আয়তন এক হাজার বর্গকিলোমিটার। ২০১৩ সালে সেনাবাহিনী আনুষ্ঠানিকভাবে জাহাইজ্যার চরের দায়িত্ব গ্রহন করে। এটি ৩৩ পদাতিক ডিভিশন ও কুমিল্লা এরিয়ার হাতে ন্যস্ত রয়েছে ।
সেনাবাহিনী স্বর্ণদ্বীপকে আধুনিক সামরিক প্রশিক্ষন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলেছে। সামরিক বাহিনী স্বর্ণদ্বীপে প্রশিক্ষন গ্রহন করছে। স্বর্ণদ্বীপে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপ নদীভাঙ্গন থেকে রক্ষাকল্পে অচিরেই বøকসিসি বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরু হবে। এছাড়া ৬০ হাজার ঝাউগাছ, ভিয়েতনাম থেকে উন্নত জাতের ১৫শ’ নারিকের চারা, ২ হাজার ফলদ গাছ, গরু, মহিষ, হাঁস, ভেড়া, মুরগি ও মৎস খামার রয়েছে। এখানে মহিষের দুধ থেকে উৎপাদিত পনির বাজারজাত করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনায় ইতিমধ্যে ৬ হাজার ঝাউগাছ চারা রোপন এবং হেলিকপ্টার থেকে সিড বোম্বিংয়ের মাধ্যমে ২টন কেওড়া বীচ ছিটানো হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপ রক্ষায় ১শ’ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। এছাড়া ৭ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ২টি মাল্টিপারপাস সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হয়েছে। আরো ৩ টি শেল্টার নির্মিত হবে। ইতিমধ্যে নির্মিত ২টি সাইক্লোন শেল্টারের প্রতিটিতে ২০ হাজার গ্যালন ধারন ক্ষমতা সম্পন্ন রেইন ওয়াটার হার্ভেস্টিং এবং সোলার বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। দূর্যোগকালীন সময় প্রতিটি শেল্টারে ৫শ’ মানুষ আশ্রয় নিতে পারবে।
গত ৭ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর ৩৩ পদাতিক ডিভিশনের সর্বিক ব্যবস্থাপনায় ১১ পদাতিক ডিভিশন কর্তৃক সামরিক মহড়া প্রত্যক্ষ করেন এবং সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে গড়ে ওঠা স্বর্ণদ্বীপে সামরিক প্রশিক্ষন এলাকার সূ-পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনা দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। প্রেসিডেন্ট আবদুর হামিদ গত ২৪ মার্চ স্বর্ণদ্বীপ সফরে এসে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেন, স্বর্ণদ্বীপকে ঘিরে পরিকল্পিত পদক্ষেপ গ্রহন করলে এটি সিঙ্গাপুরের মতো সমৃদ্বশালী হতে পারে। তিনি আরো বলেন, আয়তনের দিক দিয়ে প্রায় সিঙ্গাপুরের সমান এবং সমুদ্রের সন্নিকটে এই দ্বীপটিকে সুন্দরভাবে সাজাতে পারলে ভবিষ্যতে এটি বাংলাদেশের জন্য আরেক সিঙ্গাপুর হতে পারে ।
উল্লেখ্য, স্বর্ণদ্বীপকে কেন্দ্র করে এখানকার যোগাযোগ ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। এছাড়া আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতির পাশাপাশি শত শত মানুষের কর্মসংস্থানের সূযোগ সৃষ্টি হয়েছে। স্বর্ণদ্বীপের ২০ কিলোমিটার মেঘনা পেরিয়ে দক্ষিণে ভাষানচরের অবস্থান। রোহিঙ্গা শরনার্থী পূর্ণবাসনের লক্ষে ভাষানচরে নৌবাহিনীর সার্বিক তত্বাবধানে উন্নয়নমূলক কাজ চলছে। স্বর্ণদ্বীপ ও ভাষানচরের মধ্যবর্তী স্থানে মেঘনার অবস্থান। প্রতিদিন শত শত মালবাহী নৌযান দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলাচল করছে। স্বর্ণদ্বীপ, ভাষানচর, হাতিয়ার মূল ভূখন্ড, নিঝুমদ্বীপ, দমারচর, ঢালচর, মৌলভীরসহ প্রায় কুড়িটি নতুন চরকে নিয়ে ভবিষ্যত দেখছে এতদ্বঞ্চলের অধিবাসীরা। স্বর্ণদ্বীপের পাশাপাশি মেঘনায় কোস্টগার্ড সক্রিয় রয়েছে। এখানে নৌবাহিনীর ঘাঁটি স্থাপনের প্রত্যাশা করছে উপকূলবাসী। নোয়াখালীর দক্ষিণাঞ্চলীয় মেঘনা ও দ্বীপাঞ্চলকে ব্যবহার করে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনের উজ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। ২০১৩ সালে প্রধানমন্ত্রী নোয়াখালী সফরকালে সূবর্ণচরে একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার ঘোষনা দেন। কিন্তু দূর্ভাগ্য যে, কতিপয় ভূমিগ্রাসী কর্তৃক আদালতে মামলা দায়ের এবং স্থান নির্ধারণ করতে গিয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসন দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। অথচ ২০১৩ সাল পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত আরো কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের কাজ দ্রæত এগিয়ে চলছে। ফলে প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাস আদৌ বাস্তবায়িত হবে কিনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। বিশেষ করে মৎস ভান্ডার খ্যাত মেঘনা তীরবর্তী অঞ্চলে একটি মৎস প্রক্রিয়াজাত কারখানা স্থাপিত হলে প্রতি বছর রফতানি খাতে শত কোটি টাকা বৈদেশিক মূদ্রা অর্জিত হবে। উপকূলীয় অঞ্চল তৎসহ প্রকৃতির অপরুপ সম্ভার নিঝুমদ্বীপে পর্যটন সূযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা হলে দেশ বিদেশের লাখ লাখ পর্যটকের পদচারণা ঘটবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চর


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ