নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
একই রাতে দুটি হাইভোল্টেজ ম্যাচ। হোক না ম্যাচ দুটি সম্প্রীতির। পরস্পরের প্রতিপক্ষ যখন ব্রাজিল-জার্মানি ও স্পেন-আর্জেন্টিনা তখন তা শুধুই প্রীতি ম্যাচের ফ্রেমে আটকে থাকে না। বিশেষ করে বিশ্বকাপকে সামনে রেখে তো নয়-ই। ফুটবল মহাজজ্ঞে নামার আগে এই ম্যাচই হয়ে থাকলো জনপ্রিয় দুই দল আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের বিপরীত অবস্থানের প্রতীক হয়ে। ব্রাজিল যেখানে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের ১-০ গোলে হারিয়ে নিয়েছে ‘প্রতিশোধ’, সেখানে আর্জেন্টিনা ডুবেছে ৬-১ গোলের লজ্জায়।
ইনজুরির কারণে ছিলেন না মেসি-আগুয়েরো। ছিলেন না আক্রমণের আরেক সারথী ডি মারিয়াও। কিন্তু এর কোন কিছুই কি আর্জেন্টিনার এমন লজ্জাজনক পরাজয়ের কারণ হতে পারে। ইস্কোর হ্যাটট্রিকে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্টদের শ্রেফ উড়িয়ে দিয়েছে স্পেন। এই আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আশাহত হতেই পারেন ফুটবল ভক্তরা। হতচ্ছাড়া রক্ষণ আর আক্রমণভাগের ধারাবাহিক ব্যর্থতার কি ব্যখ্যা আছে কোচ জর্জ সাম্পাওলির কাছে। এদিনের পর গঞ্জালো হিগুয়েইনকে যদি জাতীয় দল থেকে স্থায়ীভাবে বাদ দেয়ার চিন্তাও করেন সাম্পাওলি তাতে অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না।
আসলে আর্জেন্টিনা শুধু যে স্ট্রাইকারদের ব্যর্থতার আবর্তে ঘুরছে তা নয়। ডিফেন্সে মার্কাস রোহোর আগের সেই ধার নেই। ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডে মাচেরানো যেন বয়সের ভারে ন্যুজ্ব। মিডফিল্ডে বিগলিয়াকে সহায়তা করার মত খেলোয়াড়ের বড্ড অভাব। গোলরক্ষক রোমেরোর পারফর্ম্যান্সেও মরচে ধরেছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের সাইডলাইনে বসে থেকে থেকে। এমন একটা দল নিয়ে বিশ্বকাপে মেসির কাজটা যে বড়ই কঠিন হবে সে কথা বলা যেতেই পারে। এদিন তো দলের এমন হতাশাজনক পারফর্ম্যান্স দেখে ভিআইপি গ্যালারি ছেড়ে চলে যান মেসি। আর একটি গোল খেলেই যে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় হারের লজ্জায় পড়ত আর্জেন্টিনা! মেসিও যেন সেদিন আসল সত্যটাই প্রকাশ করনে, ‘বিশ্বকাপে ফেভারিট আর্জেন্টিনা নয়, ব্রাজিল।’
ম্যাচ শেষে সাম্পাওলিও হতবাক দলের এমন পরাজয় দেখে। প্রতিপক্ষ যে এভাবে তাদের চেপে ধরবে সেটাও ছিল তার ভাবনার বাইরে, ‘স্পেন আমাদের চপেটাঘাত করেছে। আমরা প্রতিপক্ষের কাছ থেকে এতটা শক্তি আশা করিনি।’ তবে বিশ্বকাপের আগে দল গঠনে এই ম্যাচ থেকে শিক্ষা নিতে হবে বলে জানান তিনি, ‘এই ম্যাচের দায়ীত্ব আমাদের নিতে হবে। বিশ্বকাপের দল গড়ে এই ম্যাচটাকে আমাদের মূল্যায়ন করতে হবে। পরিশ্রম চালিয়ে যেতে হবে। বিশ্বকাপে এমনটা ঘটতে দেয়া যাবে না।’
আর্জেন্টিনার ব্যর্থতাকে বড় করে দেখলে অবশ্য স্পেনের অর্জনকে খাটো করা হয়। প্রকৃতপক্ষে আসল ব্যপারটা ছিল ঠিক এর উল্টো। আক্রমণে যেমন নিখুঁত ছিলেন ইস্কো-আসপাস-কস্তারা, তেমনি মিডফিল্ডে আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা ছিলেন অসাধারণ। আর পিকে-রামোসদের রক্ষণ নিয়ে তো আলাদাভাবে বলার কিছু নেই। তবে বল এদিন যতবারই পিকের পায়ে গেছে ততবারই পড়েছেন দর্শক বিদ্রæপের মুখে। কারণ? কাতালুনিয়ার স্বাধীনতার পক্ষে বার্সেলোনা ডিফেন্ডারের বজ্রকন্ঠ। কিন্তু মাঠে তার পারফর্ম্যান্সে এর কোন প্রতিফলন পড়েনি।
মাদ্রিদের ওয়ান্ডা মেট্রপলিটনে প্রথমার্ধেও স্কোরলাইনটা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। ডিয়াগো কস্তা ও ইস্কোর গোলে এসময় ২-১ গোলে এগিয়ে ছিল স্প্যানিশরা। সফরকারীদের হয়ে হেডারের মাধ্যমে একটি গোল শোধ দেন নিকোলাস ওটোমেন্ডি। ১২তম মিনিটে ম্যাচের প্রথম গোল দেয়ার সময় কস্তার সঙ্গে আর্জেন্টাইন গোলরক্ষক সার্জিও রোমেরোর মারাত্মক সংঘর্ষ হয়। এর ১০ মিনিট পর মাঠ ছাড়তে বাধ্য হন রোমেরো। দ্বিতীয়ার্ধে কস্তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন ইগো আসপাস। অথচ ম্যাচে গোলের প্রথম সুযোগ পায় আর্জেন্টিনাই। অষ্টম মিনিটে একেবারে ফাঁকা পোস্ট পেয়েও বল বাইরে মেরে সুযোগ নষ্ট করেন হিগুয়েইন। অমন জায়গা থেকে বরং গোল করতে না পারাটাই ছিল কঠিন কাজ। বিশ্বকাপ ফাইনালের স্মৃতি এদিনও মনে করিয়ে দেন জুভেন্টাস স্ট্রাইকার।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই টালমাটাল আর্জেন্টিনাকে ৩ মিনিটের ব্যবধানে আরো দুই গোলে ডোবান ইস্কো ও থিয়াগো আলকানতারা। ৭৪তম মিনিটে ইস্কো হ্যাটট্রিকপূর্ণ করার ঠিক আগ মুহূর্তে পঞ্চম গোলটি করেন আসপাস। এর পরপরই ইস্কোকে তুলে নেন কোচ হুলেন লোপেতেগুই। স্বস্তির বিষয় হলো শেষ ২৫ মিনিটে কোন গোল হজম করতে হয়নি আর্জেন্টিনাকে। আর আশ্চর্য বিষয় হলো, গোলমুখ বরাবর ছয়টি শট নেয় স্পেন এবং এর সবকটিই চাল খুঁজে নেয়।
এ নিয়ে ২০১০ বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেন টানা ১৮ ম্যাচ অপরাজিত থাকলো। ইউরো ২০১৬এর নকআউট পর্ব থেকে বিদায় নেয়ার পর দায়ীত্বে আসেন লোপেতেগুই। সেই থেকে এখনো হারেনি স্পেন। বিশ্বকাপের আগে সুইজারল্যান্ড ও তিউনিশিয়ার বিপক্ষে আরো দুটি প্রস্তুতি ম্যাচ খেলবে স্পেন। ১৫ জুন বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ ইউরো চ্যাম্পিয়ন পর্তুগাল।
প্রীতি ম্যাচের একই রাতে বার্লিনে জেসুসের গোলে জার্মানিকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়েছে ব্রাজিল। টানা ২২ ম্যাচ অপরাজিত থাকার পর পরাজয়ের তিক্ত স্বাদ পেল জার্মানরা। ঘরের মাঠে ২০১৪ বিশ্বকাপের ফাইনালে জার্মানির কাছে ৭-১ গোলের লজ্জায় ডোবার পর এই প্রথম বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মুখোমুখি হয় ব্রাজিল। সেই হিসেবে একদিক থেকে এটাকে প্রতিশোধের ম্যাচও ভাবতে পারেন অনেকে। কিন্তু বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে হেরে বিদায় নেয়ার দুঃখ কি আর প্রীতি ম্যাচে ঘুঁচে। তবে সেই দুঃখের উপর এটাকে সান্ত¦নার প্রলেপ হিসেবে গন্য করা যেতে পারে।
এক নজরে ফল
রাশিয়া ১ : ৩ ফ্রান্স
সুইজারল্যান্ড ৬ : ০ পানামা
হাঙ্গেরি ০ : ১ স্কটল্যান্ড
জার্মানি ০ : ১ ব্রাজিল
ইংল্যান্ড ১ : ১ ইতালি
স্পেন ৬ : ১ আর্জেন্টিনা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।