চরিত্র মানুষের শ্রেষ্ঠতম অলঙ্কার
সৃষ্টির সেরা জীব আশরাফুল মাখলুকাত- মানবজাতি। এ শ্রেষ্ঠত্ব মানুষ তার চরিত্র দিয়ে অর্জন করে নেয়।
\ শেষ \
উক্ত হাদীস দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত-কোরআন হাদীসে সরাসরি নেই এমন বিষয়ে ইজতিহাদ করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে হবে। তবে যিনি ইজতেহাদ করবেন তাকে অবশ্যই ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তাসাউফে অগাধ পাÐিত্যের অধিকারী মুজতাহিদ আলেম হতে হবে। (যার মধ্যে ইলমে শরীয়ত ও ইলমে তাসাউফ উভয় প্রকার ইলম আছে তাকেই আলেম বলে।)। মুজতাহিদ পর্যায়ের আলেম ইজতেহাদ করে যে মাসআলা বের করবেন- তার উপর আমল করা যে ফরজ তা উক্ত হাদীসগুলো দ্বারা দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত। উল্লেখ্য,যে, যেসকল বিষয়ে আগেকার মুজাতহিদ উলামায়ে কেরামগণ চুড়ান্ত ফায়সালা দিয়ে গেছেন সেসব বিষয়ে আর ইজতেহাদ করার কোন প্রয়োজন নেই। কারণ আগেকার আলেমগণ ছিলেন তীক্ষè মেধার অধিকারী, ইলম ও আমলে ছিলেন শ্রেষ্ট ত্বের অধিকারী। তাদের ফতোয়াই ছিল সঠিক ও নির্ভুল। তারাই অগ্রগণ্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হচ্ছে- “আর অগ্রবর্তীগণই তো অগ্রবর্তী, উহারাই নৈকট্যপ্রাপ্ত (সূরা ওয়াকিয়া : আয়াত- ১০-১১)।
ইসলামে মাজহাব মানার গুরুত্ব অপরিসীম। মাজহাব মানার বিষয়টি কোরআন হাদীস দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণিত। যারা মাজহাব মানে না তারা পথভ্রষ্ট হতে বাধ্য। কেউ কেউ বলতে পারেন- আমরা সরাসরি কোরআন হাদীস থেকে মাসআলা বের করে আমল করবো। কিন্তু কোন ইমামের মাজহাব মানবো না। আমি এর জবাবে বলবো- যারা ইসলাম সম্পর্কে গভীর জ্ঞানের অধিকারী মনে করলাম তারা কিছুটা মাসআলা বের করে আমল করলো কিন্তু যারা জাহিল বা অজ্ঞ তারা কি কোরআন হাদীস থেকে মাসআলা বের করতে পারবে? তারা তো কোনক্রমেই তা পারবে না। প্রশ্ন হল এরা কিভাবে ইসলামী জীবনযাপন করবে? আজ যারা নিজেদেরকে আলেম দাবী করে মাজহাব অস্বীকার করছেন- মাজহাব মানছেন না। তারা কি কখনও চার মাজহাবের চার ইমামের কারো মতো আলেম হতে পেরেছেন? বা কখনও এরূপ আলেম হতে পারবেন? আমি এর জবাবে বলবো- আজকে যে যত বড় আলেম দাবী করেন না কেন তিনি কখনও সেই চার মাজহাবের ইমামের কারো মত আলেম হতে পারবেন না। তাই আমি বলবো- আলেম হোক বা জাহিল হোক সবাইকে অবশ্যই মাজহাব মানতে হবে। মাজহাব মানা সকলের জন্য অতি জরুরী। সকলের জন্য ফরজ।
মাজহাব মানে পথ, মত ও নীতি। একজন মুজতাহিদ আলেম আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের নীতি অনুসারে যে নীতি প্রণয়ন করেন- সেটাই হচ্ছে মাজহাব। যারা মাজহাব মানে না তারা মাজহাব বিরোধী নানা ধরণের অবান্তর প্রশ্ন করে থাকেন। তারা যেসব প্রশ্ন করে থাকেন তা হচ্ছে- রাসূল (সা.) এর মাজহাব কি ছিল? সাহাবায়ে কেরামের মাজহাব ছিল কোনটি? চার মাজহাবের চার ইমাম কোন মাজহাবের অনুসারী ছিলেন? আমি এর জবাবে বলবো- রাসূল (সা.) ছিলেন স্বয়ং শরিয়ত প্রণেতা ও শরিয়তের মূল ব্যাখ্যাদাতা। তিনি তো সর্ববিষয়ে আল্লাহর অনুসরণ করেছেন। সাহাবায়ে কেরামগণ সরাসরি রাসূল (সা.) এর অনুসরণ করেছেন। রাসূল (সা.) এর আদর্শই ছিল সাহাবায়ে কেরামের মাজহাব। আর চার মাজহাবের চার ইমাম বড় বড় সাহাবী ও তাবেয়ীদের সাহচর্য লাভ করত: তাদের অনুসরণ করেছেন। এভাবে চার মাজহাব সৃষ্টি হওয়ার আগে যারা মারা গিয়েছেন তারা কোন না কোন মুজতাহিদ আলেমের অনুসারী ছিলেন। আমাদের মধ্যে অনেকে মাজহাব মানেন কিন্তু তারা মাজহাব মানতে ভুল করে থাকেন। যেমন তারা নামাজের ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফার মাসআলা গ্রহণ করেন কিন্তু রোজার ক্ষেত্রে ইমাম আবু হানিফার মাসআলার বিরোধীতা করে থাকেন। এরূপ যারা করেন তাদের মাজহাব মানা হবে না। এরূপ করা মাজহাব অস্বীকার করার নামান্তর। মাজহাব মানার ক্ষেত্রে কখনও সুবিধাবাদী হওয়া যাবে না। যে ইমামের মাজহাব অনুসরণ করবেন সকল মাসআলার ক্ষেত্রে সেই ইমামের ফতোয়া অবশ্যই মেনে নিতে হবে। মাজহাব মানা আমার মতে ফরজ। সত্য ও সঠিক পথে চলতে হলে চার মাজহাবের যে কোন ইমামের মাজহাব মেনে নেয়া উচিত।
লেখক- শিক্ষক ও নিবন্ধকার।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।