আবার আসব
আমরা ফিরে যাচ্ছি ক্যাম্পে। আবার আসব- আসতে হবে আমাদের। আগে বাড়া- পিছু হঠা- এটাই আমাদের
কবি আবদুল কাদির (১৯০৬-১৯৮৪) অন্তত তিনটি কারণে বাংলা সাহিত্যে অমর হয়ে থাকবেন : তাঁর খাঁটি কবিসত্তা, বাংলা ছন্দের উপর অসাধারণ পাÐিত্য ও সাহিত্য-সম্পাদনার ক্ষেত্রে অনন্যতা। মাত্র দুটি কাব্যগ্রন্থ দিলরুবা ও উত্তর বসন্ত বাংলা ভাষায় তাঁকে স্থায়ী আসন এনে দেয়। তাঁর কবিতা পাঠ করে রবীন্দ্রনাথ পর্যন্ত তাঁর উচ্ছ¡সিত প্রশংসা করেন। ছিলেন বিখ্যাত মাহে নও পত্রিকার সম্পাদক। অত্যন্ত আন্তরিকতার সঙ্গে সম্পাদনা করেছেন নজরুল রচনাবলি, যা এ দেশে নজরুল সাহিত্য সুপ্রতিষ্ঠিত হতে সাহায্য করেছে। এ ছাড়া সম্পাদনা করেছেন রোকেয়া রচনাবলি, শিরাজী রচনাবলি ও কাজী ইমদাদুল হক রচনাবলি, যার সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক মূল্য অপরিসীম। সাহিত্যে অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ পেয়েছেন একুশে পদক (১৯৭৬) ও স্বাধীনতা দিবস পদক (১৯৮৩)। কিন্তু যে-কারণে তিনি সর্বজন নমস্য, সেটি তাঁর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকর্ম ছন্দ-সমীক্ষণ (১৯৭৯)।
বাংলা ছন্দ শাস্ত্রে আবদুল কাদিরের শ্রেষ্ঠত্ব হলো, তিনিই সর্বপ্রথম বাংলা ছন্দকে আধুনিক ও স্থায়ী নামে প্রতিষ্ঠিত করেন। প্রবোধচন্দ্র সেনের স্নেহধন্য ছন্দগবেষক আবদুল কাদির বাংলা ভাষার প্রাচীন ও নতুন ছন্দের পুস্তকসমূহ অধ্যয়ন করে বাংলা ছন্দের নতুন গ্রহণযোগ্য নামকরণে সক্ষম হন। বাংলা ভাষার মূল তিনটি ছন্দের নাম নিয়ে ছান্দসিকদের মধ্যে ছিল প্রচুর মতভেদ। অক্ষরবৃত্তকে রবীন্দ্রনাথ বলতেন সাধুরীতির পয়ার-জাতীয় ছন্দ; সত্যেন্দ্রনাথ বলতেন, গাঙ্গিনীতরণ পদ্ধতি; মোহিতলাল মজুমদার বলতেন, সাধুভাষার পাদ-ভ‚মক ছন্দ; প্রবোধচন্দ্র সেন বলতেন, বিশিষ্ট কলামাত্রিক বা মিশ্রকলাবৃত্ত। মাত্রাবৃত্তকে রবীন্দ্রনাথ বলতেন, ব্রজবুলি-ভাঙা তিন মাত্রার ছন্দ; সত্যেন্দ্রনাথ বলতেন, গঙ্গা-যমুনা পদ্ধতি; মোহিতলাল মজুমদার বলতেন, সাধুভাষার গীতিচ্ছন্দ বা পর্বভ‚মক ছন্দ; প্রবোধচন্দ্র সেন বলতেন, যথার্থ কলামাত্রিক বা সরল কলাবৃত্ত। স্বরবৃত্তকে রবীন্দ্রনাথ বলতেন, বাংলার প্রাকৃত ছন্দ বা ছড়ার ছন্দ; সত্যেন্দ্রনাথ বলতেন, ঝরনা-ঝামর পদ্ধতি; মোহিতলাল মজুমদার বলতেন, প্রাকৃত ভাষার পর্বভূমক ছন্দ; প্রবোধচন্দ্র সেন বলতেন, বিশিষ্ট দলবৃত্ত বা দলমাত্রিক। আবদুল কাদির এ প্রেক্ষাপটে বলেন, ‘আমি এ সকল পরিভাষা-ভেদ পরিহার করে, অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত, এই তিন সহজবোধ্য ও সর্বত্রচলিত নামই গ্রহণ করেছি। কেননা, আমার ধারণা যে, অন্যথা সাধারণ পাঠকেরা পরিভাষাগত জটিলতা ও বিভ্রান্তির আবর্তে পড়ে হতচকিত হতে পারেন।’ সেই থেকে বাংলা ভাষার প্রধান তিন ছন্দের সর্বজনস্বীকৃত নাম হয়ে গেল : অক্ষরবৃত্ত, মাত্রাবৃত্ত ও স্বরবৃত্ত ছন্দ।
ছন্দ সম্পর্কিত জ্ঞান যে কেবল কবিদের জন্য অপরিহার্য, তা নয়; কবিতার পাঠকদের জন্যও তা অত্যন্ত জরুরি। কারণ ছন্দের জ্ঞান না থাকলে পাঠকের পক্ষে কবিতা পাঠ করে প্রকৃত আনন্দ লাভ করা সম্ভবপর হয় না। অত্যন্ত ছন্দ-সচেতন কবিরাই যেমন খাঁটি কবি, অত্যন্ত ছন্দ-সচেতন পাঠকরাও তেমনি কবিতার খাঁটি পাঠক। কবি আবদুল কাদির এসব কারণে অমর হয়ে থাকবেন নতুন নতুন কবি ও নতুন নতুন পাঠকদের মাঝে। কবি আবদুল কাদির বাংলা ছন্দের উপর ৪৫ বছরে মোট ৮০টি প্রবন্ধ রচনা করেছিলেন। সেগুলো থেকে বাছাই করে সাতটি প্রবন্ধ দিয়ে প্রকাশ করেছিলেন তাঁর অমর গ্রন্থ ছন্দ-সমীক্ষণ। পরবর্তীতে বাংলা একাডেমি থেকে প্রকাশিত তাঁর রবীন্দ্রনাথের ছন্দ বাংলা ছন্দের উপর আরেকটি উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ। তাঁর ৮০টি প্রবন্ধ একত্রিত করে যদি আলাদা একটি গ্রন্থ প্রকাশ করা যেত, তাহলে সেটা হতো একটা বিস্ময়কর পাওয়া, কবি ও সাধারণ পাঠক উভয়েরই জন্য, বলা যায়।
তরুণ বাঙালি কবিদের জন্য ছন্দের যে গ্রন্থগুলো পাঠ করা অত্যাবশ্যক, তার মধ্যে রবীন্দ্রনাথের ছন্দ, প্রবোধচন্দ্র সেনের ছন্দ-পরিক্রমা, আবদুল কাদিরের ছন্দ-সমীক্ষণ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর কবিতার ক্লাস উল্লেখযোগ্য। তবে যে গ্রন্থটি আদ্যোপান্ত পাঠ করতে পারলে বাংলা ছন্দের সমস্ত শাখা-প্রশাখা বিস্তারিত জানা সম্ভব এবং পাঠ না করলে বাংলা ছন্দ সম্পর্কে অপূর্ণতাই রয়ে যায়, সেটি আবদুল কাদিরের ছন্দ-সমীক্ষণ। আবদুল কাদিরের ছন্দ-সমীক্ষণ বাংলা ভাষার তরুণ কবিদের জন্য বাইবেলস্বরূপ।
আবদুল কাদিরের কবিতা পাঠ করে আমি যতটা না বিস্মিত হতে হই, তার চেয়ে বেশি বিস্মিত হতে হয় তাঁর ছন্দ বিষয়ক যে কোনো প্রবন্ধ পাঠ করে। বাংলা ছন্দ নিয়ে তাঁর যে চুলচেরা বিশ্লেষণ ও গবেষণা, তা অনেকটা বিজ্ঞানীর মতো। তিনি কেবল থিওরি তৈরি করেই ক্ষান্ত হননি, ল্যাবরেটরিতে নিয়ে তা প্রমাণ করতেও প্রস্তুত থাকেন। ‘মুক্তক অক্ষরবৃত্ত ছন্দ’ শীর্ষক প্রবন্ধে তিনি রবীন্দ্রনাথের দুটি কবিতার অংশবিশেষ নিয়ে যে ছন্দের কারুকাজ দেখিয়েছেন, তা এককথায় বিস্ময়কর। মুক্তক ছন্দে রচিত রবীন্দ্রনাথের কবিতা দুটি এই :
হে ভুবন,
আমি যতক্ষণ
তোমারে না বেসেছিনু ভালো
ততক্ষণ তব আলো
খুঁজে খুঁজে পাই নাই তার সব ধন।
ততক্ষণ
নিখিল গগণ
হাতে নিয়ে দীপ তার শূন্যে শূন্যে ছিল পথ চেয়ে।
(বলাকা : ১৭)
কিনু গোয়ালার গলি।
দোতলা বাড়ির
লোহার গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর
পথের ধারেই।
লোনা-ধরা দেয়ালেতে মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি,
মাঝে মাঝে স্যাঁতাপড়া দাগ।
মার্কিন থানের মার্কা একখানা ছবি
সিদ্ধিদাতা গণেশের
দরজার ’পরে আঁটা।
আমি ছাড়া ঘরে থাকে আরেকটা জীব
এক ভাড়াতেই,
সেটা টিকটিকি।
তফাৎ আমার সঙ্গে এই শুধু,
নেই তার অন্নের অভাব।
(পরিশেষ, বাঁশি)
এই দুটো কবিতাকে আবদুল কাদির মুক্তকের কাঠামো ভেঙে রূপান্তরিত করেছেন অমিত্রাক্ষর পয়ারে এভাবে :
হে ভুবন, আমি যতক্ষণ তোমারে না
বেসেছিনু ভালো, ততক্ষণ তব আলো
খুঁজে খুঁজে পায় নাই তার সব ধন।
ততক্ষণ নিখিল গগণ হাতে নিয়ে
দীপ তার শূন্যে শূন্যে ছিল পথ চেয়ে।
(বলাকা : ১৭)
কিনু গোয়ালার গলি। দোতলা বাড়ির
লোহার গরাদে-দেওয়া একতলা ঘর
পথের ধারেই। লোনা-ধরা দেয়ালেতে
মাঝে মাঝে ধসে গেছে বালি, মাঝে মাঝে
স্যাঁতাপড়া দাগ। মার্কিন থানের মার্কা
একখানা ছবি সিদ্ধিদাতা গণেশের
দরজার ’পরে আঁটা। আমি ছাড়া ঘরে
থাকে আরেকটা জীব এক ভাড়াতেই,
সেটা টিকটিকি। তফাৎ আমার সঙ্গে
এই শুধু, নেই তার অন্নের অভাব।
(পরিশেষ, বাঁশি)
আবদুল কাদিরের এ গবেষণাকর্ম দেখলে রবীন্দ্রনাথও বিস্ময়ে অভিভ‚ত না হয়ে পারতেন না।
আবদুল কাদিরের পঠনপাঠন ছিল কত যে গভীর, তার পরিচয় পাওয়া যায় তাঁর ছন্দবিষয়ক প্রতিটি প্রবন্ধের পরতে পরতে। ‘বাংলা সনেটের রূপ ও রীতি’ প্রবন্ধে বাংলা চতুর্দশপদী কবিতার প্রাচীন ও আধুনিক রূপ এবং এর আকার প্রকার নিয়ে যে চিত্র তিনি তুলে ধরেছেন তার তুলনা মেলা ভার। তিনি প্রমাণ করে দেখিয়েছেন, চতুর্দশ পঙক্তির কবিতা বাংলা ভাষায় মধুসূদনের পূর্বেও ছিল। কাহ্নপা, চÐীদাস ও ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত থেকে তিনটি উদাহরণ টেনে তিনি এর সপক্ষে যুক্তি পেশ করেন :
১. নগর বাহিরি ডোম্বি তোহোরি কুড়িআ।
ছোই ছোই জাইসই ব্রাহ্মণ নাড়িআ।।
(রাগ দেশাখ, কাহ্নপা)
২. এমন পিরীতি কভু দেখি নাই শুনি।
পরাণে পরাণ বাঁধা আপনি আপনি।।
(সিন্ধুড়া, চÐীদাস)
৩. পরের অহিতকারী নীচ যেই খল
নিজ লাভ বিনা শুধু খুঁজে মরে হল।
(নদ্রাকালে শঠ উপকারী, ঈশ্বরচন্দ্র গুপ্ত)
প্রতি পঙক্তিতে চৌদ্দ অক্ষর বিশিষ্ট (৮+৬=১৪) চৌদ্দ পঙক্তির কবিতা এনারা লিখলেও এগুলোকে সনেট বলা যাবে না একারণে যে, চতুর্দশ পঙক্তির সুনির্ধারিত রূপমÐলে ভাবাবেগ বা রস-প্রেরণাকে দৃঢ়-নিবন্ধ রাখা যে ইটালীয় সনেটের ছাঁচ অষ্টক ও ষষ্টকে বিভক্ত এবং পেত্রার্ক ও শেক্সপিয়ারের সনেটের অন্ত্যমিলের যে প্যাটার্ন, তা এখানে নেই। মধুসূদনই মূলত সনেট বলতে যা বুঝায় তা বাংলা ভাষায় প্রথম রচনা করেন পেত্রার্কের সনেটের আদলে। তাঁর প্রথম সনেটটির নাম ছিলো ‘কবি-মাতৃভাষা’:
নিজাগারে ছিল মোর অমূল্য রতন
অসংখ্য, তা সবে আমি অবহেলা করি’
অর্থলোভে দেশে দেশে করিনু ভ্রমণ,
বন্দরে বন্দরে যথা বাণিজ্যের তরী।
(কবি-মাতৃভাষা, মাইকেল মধুসূদন দত্ত)
ইংরেজি সনেট অবশ্য রচিত হয় আইয়াম্বিক পেন্টামিটারে (১০ সিলেবল বিশিষ্ট পঙক্তি); মধূসূদন সেখানে অনুসরণ করেন চৌদ্দ অক্ষর। তবে বাংলা ভাষায় পরবর্তীকালে চৌদ্দ অক্ষর ছাড়াও ষোলো অক্ষর, আঠারো অক্ষর, বিশ অক্ষর, বারো অক্ষর ও দশ অক্ষরেও পঙক্তি-বিন্যাস করে যে সনেট লেখা হয়েছে তার উদাহরণ তুলে ধরেন আবদুল কাদির। এমনকি অক্ষরবৃত্ত ছাড়াও স্বরবৃত্ত ও মাত্রাবৃত্তেও যে সনেট রচিত হয়েছে বাংলায়, তা তিনি দেখিয়ে দেন, যেটা তাঁর বিপুল পাঠের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে বৈকি।
১. ১০ মাত্রার সনেট :
প্রাণে যার জ্বলে অনির্বাণ
অগ্নিশিখা, সেই শুধু পারে
অগ্নিমন্ত্র শিখাতে সবারে;
প্রাণ দিতে পারে প্রাণবান
তাদেরে যাহারা মুহ্যমান
দাসত্বের শৃঙ্খলের ভারে।
(কামাল, সুরেন্দ্রনাথ মৈত্র)
২. ১২ মাত্রার সনেট:
পূর্ণচন্দ্র-নিভ ফুলচন্দ্র মুখে,
মহিমার হাসি হাসিছে তায়;
গতি-গরবেতে গরবিত বুকে,
গরব-তরঙ্গ খেলিয়া যায়।
(প্রতিকৃতি, নবীনচন্দ্র সেন)
এখানে অবশ্য ১২ মাত্রা পরিলক্ষিত হয়নি সর্বত্র; প্রথম পঙক্তিতে ৬+৬=১২মাত্রা, দ্বিতীয় পঙক্তিতে ৬+৫=১১ মাত্রাÑএই হলো এর চাল।
৩. ১৬ মাত্রার সনেট (৮+৮=১৬):
বৃথা ও-ঘৃণার হাসি, বৃথা ও-কথার ছল;
রবির কিরণ আমি, তুমি মালঞ্চের ফুল!
বৃথা তব উপহাস, শাণিত কথার শূল;
রূপের পতঙ্গ তুমি, আমি শ্যাম দুর্বাদল।
(ভালোবাসার জয়, দেবেন্দ্রনাথ সেন)
৪. মাত্রাবৃত্তে রচিত ১৮ মাত্রার সনেট (৮+১০=১৮):
জরি আর পুঁতি গাঁথা জমকালো চোপা-চাপকানে
জাদরেণ চেহারায় পার্ট করে যাত্রার রাজা:
ঊষ্ণীষ আভরণ সবি আছে আয়োজন যা যা,
রাজসিক হাবভাব, রাজকীয় চাল সবি জানে।
(ছায়ার আল্পনা, অজিতকুমার দত্ত)
৫. ২০ মাত্রার সনেট (১০+১০=২০):
আকাশের দুই দিক হতে দুইখানি মেঘ এল ভেসে,
দুইখানি দিশেহারা মেঘ কে জানে এসেছে কোথা হতে।
সহসা থামিল থমকিয়া আকাশের মাঝখানে এসে,
দোঁহা পানে চাহিল দু’জনে চতুর্থীর চাঁদের আলোতে।
(ক্ষণিক মিলন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর)
৬. স্বরবৃত্তে ১০ মাত্রার সনেট (৪+৪+২=১০):
মাগো আমার গা মুছিয়ে দিয়ে
তাড়াতাড়ি পরাও কাপড়খান,
আজকে আমি ভুলুর সাথে গিয়ে
আসব দেখে কেমন বলিদান।
দেখে বলি কেমন আমোদ হবে!
নাচবে সবাই, বললে ভুলু মোরে,
মা মা বলে ডাকবে যখন সবে
বাজাবে ঢোল খাজজি-মাঝো করে।
শেষে যখন ফিরলো খোকা বাড়ী,
মুখটি মলিন, চোখ যে ছলছল,
জননী তার শুধায় তাড়াতাড়িÑ
কেমন বলি দেখলি বাছা বল।
কেঁদে খোকা বললে: কোথায় বলি?
শুধু আহা কাটছে ছাগলগুলি।।
(বলিদান, কুমুদরঞ্জন মল্লিক)
এগুলো আবদুল কাদিরের দেওয়া উদাহরণ। আধুনিককালে অবশ্য ২২, ২৪, ২৮, ৩০, ৩২ মাত্রার সনেটও রচিত হয়েছে বাংলা ভাষায়। আরেক জন আবদুল কাদিরের আবির্ভাব না ঘটলে তা সব খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে কে বা দেখাবে কবিতার সাধারণ পাঠককে!
অসামান্য এ ছন্দ-গবেষক সম্বন্ধে বিশ্বভারতীর রবীন্দ্র-অধ্যাপক ছন্দবিজ্ঞানী প্রবোধচন্দ্র সেন যথার্থই বলেছিলেন: ‘প্রবীণ কবি-ছান্দসিক আবদুল কাদির একজন বহুবিৎ বিদগ্ধ ব্যক্তি। ইংরেজি ও বাংলা সাহিত্যের আনাচে-কানাচে তাঁর অবাধ বিচরণ। ইংরেজি, সংস্কৃত-প্রাকৃত ও আরবি ছন্দশাস্ত্রেও তাঁর অধিকার সুবিস্তৃত। তাঁর বাংলা ছন্দের জ্ঞান শুধু অধীত বিদ্যালব্ধ নয়; সুদক্ষ ছন্দশিল্পী হিসাবেও তিনি স্বয়ং রবীন্দ্রনাথের সমাদর লাভ করেছেন।’ কেবল ছন্দ-গবেষণার জন্য নয়, তাঁর মৌলিক সাহিত্যকর্মের জন্যেও বাঙালির প্রাণের মানুষ হয়ে থাকবেন কবি আবদুল কাদির, তা নির্দ্বিধায় বলা যায়।
কবি-গদ্যাকার
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।