নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সুপার লিগে উঠেছিল আবাহনী লিমিটেড, ছয়ে থেকে কোনমতে জায়গা পেয়েছিল গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের। মাঠের খেলাতেও দেখা গেল এমন বিস্তর ব্যবধান। গাজীকে ৭৮ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়েছে আবাহনী।
গতকাল মিরপুর শেরে বাংলা ক্রিকেট স্টেডিয়ামে হনুমা ভিহারিরর সেঞ্চুরিতে আবাহনীর দেওয়া ২৭৯ রানের লক্ষ্যে মাত্র ২০৫ রানে গুটিয়ে যায় গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্স। ৫০ রানে ৪ উইকেট নিয়ে গাজীকে ভুগিয়েছেন বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল ইসলাম।
সকালে টস জিতে আবাহনীকেই ব্যাট করতে পাঠিয়েছিল গাজী গ্রæপ। শুরুটাও পেয়েছিল তারা দারুণ। একমাত্র পেসার আবু হায়দার রনি চতুর্থ ওভারেই এনে দেন সাফল্য। এক ছক্কা মেরেই রনির বলে স্টাম্প উড়ে যায় এনামুল হক বিজয়ের। অফ স্পিনার মেহেদী হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩ রান করা নাজমুল হোসেন শান্ত। আরেক ওপেনার সাইফ হাসান এক প্রান্তে টিকে থেকেও ছিলেন আড়ষ্ট। শম্ভুক গতির ব্যাট করে বাড়ান চাপ। তার ৬৩ বলে ৩০ রানের ইনিংস শেষ হতে যেন হাঁফ ছেড়ে বাঁচে আবাহনী। পাঁচে নামা নাসির হোসেন ৯ রান করে ফেরার পর বিপাকে পড়া আবাহনীর ঘুরে দাঁড়ানো শুরু।
ভারতীয় ক্রিকেটার হানুমা ভিহারি নিজের প্রথম ম্যাচেই চিনিয়েছেন নিজেকে। মোহাম্মদ মিঠুনকে নিয়ে পঞ্চম উইকেটে ১৩৬ রানের জুটি গড়েন। মন্থর রানের চাকায় দেন গতি। ১২৪ বলে ১০ চার আর ১ ছক্কায় ১০৯ রান করে যখন ভিহারি ফিরছে ততক্ষণে লড়াইয়ের পুঁজি পেয়ে গেছে আবাহনী। জুটির অপরজন মিঠুন আর আউটই হননি। ৬১ বলে ৬ চার আর ১ ছক্কায় অপরাজিত থাকেন ৭১ রান করে। মাশরাফি মর্তুজার ব্যাট থেকে আসে ১১ বলে ১৪ রান। ফর্ম হারিয়ে আত্মবিশ্বাস নড়বড়ে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন সৈকতকে নামানো হয় আটে। তবে শেষের ঝলকটা তারই। ইনিংসের শেষ তিন বলেই মেরেছেন ছক্কা। এক্সট্রা কাভার, লঙ অন আর লঙ অফ দিয়ে মারা বিশাল তিনটি ছক্কা মিলেছে তার ফিরে আসার আভাস। মাত্র ৬ বলে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন জাতীয় দলে জায়গা হারানো এই ব্যাটসম্যান।
২৭৯ রানের লক্ষ্যটা বেশ বড়ই। তার আরও বড় হয়ে গেল মুমিনুল হকদের বাজে শুরুতে। ২২ রানেই ফেরেন দুই ওপেনার জহুরুল ইসলাম অমি ও ইমরুল কায়েস। ইমরুলের ব্যাটিং ছিল দৃষ্টিকটু। উইকেটে ২৫ বল খেলে ৫ রান করে ক্যাচ দেন। যতক্ষণ ছিলেন রানের জন্য করেছেন হাঁসফাঁস। চারে নেমে মেহেদী হাসান আউট হয়েছে কোন রান না করেই। শেষ পর্যন্ত দলকে টেনেছেন মুমিনুল আর ভারতীয় অনুষ্ঠুপ মজুমদার। ৪৬ রান করে তাসকিনের বলে ক্যাচ তুলে ফেরেন মুমিনুল। ৬৪ রান করা অনুষ্ঠুপকে বোল্ড করেন সানজামুল। শেষ দিকে জাকের আলি অনিকের ব্যাট থেকে আসে ২৯ রান। বাকিরা ছিলেন আশা যাওয়ার মিছিলে। সানজামুলের সঙ্গে হাতঘুরিয়ে ২টি করে উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি, তাসকিন, মিরাজরা। এই হারে শিরোপার দৌড় থেকে অনেকখানি পিছিয়ে গেল গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্স।
বিকেএসপিতেও জ্বলে উঠেছে আরেক ভারতীয়র ব্যাট। এসেই জ্বলে উঠলেন উন্মুক্ত চাঁদ। তার দারুণ সেঞ্চুরিতে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জকে আবার হারাল শেখ জামাল ধানমÐি ক্লাব। লিগের সুপার সিক্সের প্রথম রাউন্ডের ম্যাচে ৭ উইকেটে জিতেছে শেখ জামাল। ২৬১ রানের লক্ষ্য ১২ বল বাকি থাকতে পেরিয়ে যায় নুরুল হাসানের দল। দুই দলের প্রথম দেখায় ৩ রানে জিতেছিল শেখ জামাল। সাভারের তিন নম্বর মাঠে ম্যাচ সেরা চাঁদ ১৩৩ বলে ২০ চারে করেন ১২৭ রান। লিস্ট ‘এ’ ক্যারিয়ারে তার ষষ্ঠ শতক।
তবে দিনের অপর ম্যাচে ফতুল্লায় আলো কেড়েছেন আরেক জাতীয় তারকা ফরহাদ রেজা। তার বিষ্ফোরক এক ইনিংসেই রোমাঞ্চকর এক ম্যাচে ১১ বল হাতে রেখে সুপার লিগের নতুন অতিথি খেলাঘরকে হারায় প্রাইম দোলেশ্বর। খান সাহেব ওসমান আলী স্টেডিয়ামে ২৫৯ রানের লক্ষ্য ৩ উইকেট হাতে রেখেই ছুঁয়ে ফেলে তারা। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো করে খেলাঘর। প্রথম চার ব্যাটসম্যানের তিন জন পান ফিফটি। অমিত মজুমদারের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ৮২ রানের জুটি গড়ে ফিরেন রবিউল ইসলাম রবি। এই ওপেনার ছয় চার ও এক ছক্কা করেন ৬২ রান। অশোক মেনারিয়ার সঙ্গে ৬৬ রানের জুটিতে দলকে ২ উইকেটে ১৮১ রানের দৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করান অমিত। টপ অর্ডারের এই ব্যাটসম্যান ফিরে যান পঞ্চাশ ছুঁয়েই। বাকিদের আসা যাওয়ার মিছিলে লড়াইয়ের পুঁজি পায় খেলাঘর।
সেই লড়াইয়ে পাল্লা নিজেদের দিকে ভারী করে রেখেছিল অনেকটা সময়। ৪০তম ওভার শেষে ৭ উইকেট হারানো দোলেশ্বর যখন পথহারা (১৭২) ঠিক তখনই দলটির ত্রাতা হয়ে দেখা দেন অধিনায়ক রেজা। শাহানুর রহমানের সঙ্গে অবিচ্ছিন্ন অষ্টম উইকেটে ৮.৫ ওভারে ৮৭ রানের জুটিতে দলকে এনে দেন দারুণ জয়। অলরাউন্ডারের ছক্কা বৃষ্টিতে উড়ে যায় খেলাঘরের বোলিং। ছক্কা দলকে জয় এনে দেওয়া রেজা অপরাজিত থাকেন ৬৮ রানে। তার ৩৭ বলের বিস্ফোরক ইনিংসটি গড়া ৭টি ছক্কা ও দুটি চারে। দুর্দান্ত এই ইনিংস তাকে এনে দেয় ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
এই জয়ে পয়েন্ট তালিকায় দুই নম্বরে উঠে এল দোলেশ্বর। ৭ জয় আর এক টাইয়ে দলটির পয়েন্ট ১৫। ১৮ পয়েন্ট নিয়ে সবার ওপরে রয়েছে আবাহনী। তিন থেকে পাঁচ নম্বরে থাকা লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ, শেখ জামাল ও খেলাঘরের পয়েন্ট ১৪ করে। শিরোপার আশা প্রায় শেষ হয়ে যাওয়া গাজী গ্রæপ ক্রিকেটার্সের পয়েন্ট ১২।
সংক্ষিপ্ত স্কোর
আবাহনী-গাজী গ্রæপ
আবাহনী : ৫০ ওভারে ২৭৮/৬ (সাইফ ৩০, এনামুল ৫, শান্ত ৩, বিহারি ১০৯, নাসির ৯, মিঠুন ৭২*, মাশরাফি ১৪, মোসাদ্দেক ২৩*; মেহেদি ২/৪৯, আবু হায়দার ২/৪৫, মুমিনুল ১/৪৭, নাঈম ১/৭৮)।
গাজী গ্রæপ : ৪৩ ওভারে ২০৫ (ইমরুল ৫, মুমিনুল ৪৬, অনুস্তুপ ৬৪, নাদিফ ১৮, আসিফ ২০, জাকের ২৯*; মাশরাফি ২/৩০, সানজামুল ৪/৫০, মিরাজ ২/২৮, তাসকিন ২/৪৯, নাসির ০/৪৫)।
ফল : আবাহনী ৭৩ রানে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : হনুমা বিহারি (আবাহনী)।
খেলাঘর-দোলেশ্বর
খেলাঘর : ৫০ ওভারে ২৫৮/৮ (রবি ৬২, মাহিদুল ২৪, অমিত ৫০, মেনারিয়া ৫৪, রাফসান ১, নাজিম ১০, মাসুম ৩, মইনুল ২১*, সাদ্দাম ৪, তানভীর ১৭*; রেজা ২/৫৬, সানি ৫/৪৫, শরিফউল্লাহ ১/৪৮)।
প্রাইম দোলেশ্বর : ৪৮.১ ওভারে ২৫৯/৭ (ইমতিয়াজ ১৯, লিটন ২৪, মার্শাল ১৫, ফরহাদ ২২, শরিফউল্লাহ ৩০, আব্দুল্লাহ ৩৫, রেজা ৬৮*, শাহানুর ১৯*; মাহমুদ ২/৫৭, মাসুম ১/৪৭, সাদ্দাম ৩/৪০, মইনুল ১/৩৯)।
ফল : প্রাইম দোলেশ্বর ৩ উইকেটে জয়ী।
ম্যাচ সেরা : ফরহাদ রেজা (দোলেশ্বর)।
রূপগঞ্জ-শেখ জামাল
রূপগঞ্জ: ৫০ ওভারে ২৬০/৯ (মজিদ ১৫, নাইম ৪৩, নাঈম ৫১, মুশফিক ৩৯, রসুল ৪৪, তুষার ৪৮*; নাজমুল ১/৫৩, রবিউল ৫/৩৩, সানি ০/৪৮, তানবীর ২/৪৮)।
শেখ জামাল : ৪৮ ওভারে ২৬২/৩ (চাঁদ ১২৭, রাকিন ৫২, তানবীর ৬৬*, নুরুল ১১; রাসেল ২/৫৩, মোশাররফ ০/৪৪, শহীদ ০/৬৭, রসুল ১/৪১, আসিফ ০/৪৬)।
ফল : ৭ উইকেটে জয়ী শেখ জামাল।
ম্যাচ সেরা : উন্মুক্ত চাঁদ (শেখ জামাল)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।