Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

বাঙলাভাষী জনগোষ্ঠী কেমন আছে আসামে

নির্বাচন এলেই বাঙালি মুসলমান এবং হিন্দুদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা বেড়ে যায়। বারবার এসব মানুষ ব্যবহৃত হন দাবার ঘুঁটি হিসেবে

প্রকাশের সময় : ২ এপ্রিল, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : উত্তর-পূর্ব ভারতের রাজ্য আসামে বিধানসভা নির্বাচন শুরু হতে যাচ্ছে। ৪ এপ্রিল থেকে দুই দফায় ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে ওই রাজ্যে। প্রথম দফায় উত্তর আসামের কিছু এলাকার সাথেই ভোট গ্রহণ করা হবে বাঙালাভাষী অধ্যুষিত বরাক উপত্যকাতেও। বরাক আর ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার নামোনি আসাম অঞ্চলে বাংলাভাষী মুসলমানরা জনসংখ্যার একটা বিরাট অংশ। নির্বাচন এলেই এই বাংলাভাষী মুসলমান, এবং তার সঙ্গে বাঙালিভাষী হিন্দুদের নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর তৎপরতা চোখে পড়ার মতো বেড়ে যায়। বারেবারেই এই বিপুল বাংলাভাষী মানুষ ব্যবহৃত হতে থাকেন রাজনৈতিক দাবার ঘুঁটি হিসেবে। ব্রহ্মপুত্র উপত্যকার যে অঞ্চলটা নামোনি আসাম, সেখানে প্রায় ৫৫% মানুষ মুসলমান, আর তারা মূলত বাংলাভাষী। যদিও আসামীয়া সমাজে মিশে যাওয়ার চেষ্টা করতে গিয়ে খাতা-কলমে মাতৃভাষা বদল করে আসামীয়াকে নিজেদের ভাষা বলে তারা মেনে নিয়েছিলেন একটা সময়ে। নামোনি আসামের গ্রাম বা ব্রহ্মপুত্রের চর এলাকাগুলোতে বাংলাভাষী মুসলমান এবং বাংলাভাষী হিন্দুদেরও একটা অংশের মধ্যে একটা আতঙ্ক থাকে- যদি ‘ডি’ ভোটার, অর্থাৎ ডাউটফুল বা সন্দেহজনক ভোটার করে দেয় বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসী বলে! অথবা যদি বিদেশি চিহ্নিতকরণের ট্রাইব্যুনাল জেলে পাঠিয়ে দেয়। অথবা যদি কোনো সন্ত্রাসী হামলা হয় তাদের গ্রামে! আসামের বাংলাভাষী মুসলমান আর হিন্দুদের স্বার্থরক্ষায় কয়েক দশক ধরে আন্দোলন করে চলা নাগরিক অধিকার সুরক্ষা সমিতির প্রধান উপদেষ্টা হাফিজ রশিদ চৌধুরী বলছিলেন, সাধারণ আসামীয়াদের মাথায় একটা আতঙ্ক ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবে যে বাঙালিদের না তাড়ালে নিজভূমে সংখ্যালঘু হয়ে পড়বেন আসামীয়ারা। শুধু বাংলাভাষী মুসলমান নয়, বাংলাভাষী হিন্দুরাও একই রকমভাবে আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটান আসামে।
বাংলাভাষী মুসলমানদের ওপরে ক্রমাগত বিষোদগারের জবাব দিতে প্রখ্যাত আতর ব্যবসায়ী বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বে বছর দশেক আগে তৈরি হয় অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউডিএফ)। আজমল বলছিলেন, আসাম গণপরিষদতো দশ বছর ক্ষমতায় ছিল। অবৈধ অভিবাসীদের কতজনকে চিহ্নিত করতে পেরেছে তারা? বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের ইস্যুটা ভোটের আগেই সুযোগ বুঝে তোলা হয় বারবার। তাতে ভোট পাওয়া যায় যে। এখন বিজেপি-ও সেই একই কায়দা নিয়েছে। আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক চার্বাক অবশ্য ব্যাখ্যা করছিলেন, বাংলাভাষী মুসলমানদের একটা ছাতার তলায় নিয়ে আসার যে প্রচেষ্টা বদরুদ্দিন আজমল করেছিলেন, সেটা অন্তত বরাক উপত্যকায় আর কাজ করছে না কংগ্রেসের সংসদ সদস্য আর দলের অন্যতম জাতীয় মুখপাত্র সুস্মিতা দেবের কথায়, অবৈধ অভিবাসীদের বিষয়টা তো শুধু আসামের সমস্যা নয়, অন্য রাজ্যেও এই সমস্যা আছে। কিন্তু বিজেপি এটা নিয়ে সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করছে। ধর্মীয় আর জাতিগত বিভাজন আসামের ভোট প্রচারের একটা প্রায় অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে থেকেছে সব সময়েই। ধুবরির কালারহাট গ্রামের একটা মোড়ে দাঁড়িয়ে কয়েকজন বাসিন্দার সামনে ধর্মীয় বিভাজনের কথাটা তুলতে রীতিমতো তর্ক বেঁধে গিয়েছিল। হাইলাকান্দি আর করিমগঞ্জের বিভিন্ন গ্রামের সাধারণ মানুষ আরো বলছিলেন যে হিন্দু আর মুসলমান মিলে মিশে তারা খুব শান্তিতেই থাকেন। করিমগঞ্জ জেলার দৈনিক নববার্তা প্রসঙ্গের সম্পাদক হবিবুর রহমান চৌধুরী অবশ্য বলছিলেন, যে বরাকে হিন্দু-মুসলমান উভয়ই ভাষার জন্য প্রাণ দিয়েছে, লড়াই করেছে, সেখানেও ধর্মীয় বিভাজনের রাজনীতি শুরু হয়েছে ইদানিং। তবে বিজেপির আসাম রাজ্য নেতৃত্বে একমাত্র মুসলমান মুখ আমিনুল ইসলাম লস্কর বলছিলেন যে তারা ধর্মীয় ভেদাভেদ করেন না, তাদের লড়াই বাংলাভাষী মুসলমানদের বিরুদ্ধে নয়, বাংলাদেশ থেকে আসা অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে। তারা যদি ক্ষমতায় আসতে পারেন, তাহলে ভারতীয় হিন্দু-মুসলমানরা নিরাপদেই থাকবেন। অবৈধ অভিবাসীদের তাড়িয়ে দেয়ার ডাক দুইবছর আগে লোকসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে আসামে গিয়ে বারে বারেই দিয়েছিলেন লস্করের নেতা নরেন্দ্র মোদি। এবারেও ভোটের প্রচারে মোদি গিয়েছিলেন বরাক উপত্যকার বেশ কয়েকটি জায়গায়। মোদি যখন বরাকের কাটাখাল চরকিআলাবন্দের মাঠে ভাষণ দিচ্ছিলেন, গত রবিবার, সেখান থেকে কিলোমিটার ত্রিশেক দূরে এক বাড়িতে শ্রাদ্ধ চলছিল বুলু শব্দকরের। স্থানীয় সংবাদমাধ্যমের খবর, ৮৫ বছরের বুলু শব্দকর একজন ভারতীয়। তবুও ভিক্ষা করে দিন চালানো এই বৃদ্ধকে বাংলাদেশি বলে সন্দেহ হওয়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। জেলেই তার মৃত্যু হয় কয়েকদিন আগে, যে জেলগুলোতে বন্দী হয়ে রয়েছেন আরো বহু বাংলাভাষী মুসলমান, এবং হিন্দু নিছক সন্দেহের বশে যে তারা অবৈধ অভিবাসী। বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বাঙলাভাষী জনগোষ্ঠী কেমন আছে আসামে
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ