Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১১ আশ্বিন ১৪৩১, ২২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

মরে গেছে ৪২ নদী

ভারত পানির হিস্যা না দেয়ায় খুলনাঞ্চলের নদ-নদী অস্তিত্ব সঙ্কটে

আবু হেনা মুক্তি | প্রকাশের সময় : ২০ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

হুমকির মুখে পশুসম্পদসহ প্রতিবেশ//
“কাজীর গরু কিতাবে আছে গোয়ালে নেই” প্রতিবেশী দেশ ভারতের পানির হিস্যা নিয়ে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের মানুষের প্রতিক্রিয়া এমনই। উপকূল কন্যা বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের কৃষি মৎস্য পশু যেন প্রকৃতির এক অনবদ্য সম্পদ। অথচ নদীগুলো মৃত্যু যন্ত্রণায় কাঁদলেও বন্ধু প্রতিম দেশ ভারত আজও পানির হিস্যা বুঝিয়ে দেয়নি। গত ৯ বছরে শাসক দলের বন্ধুত্বের নানা কারিশমা দেখা গেলেও পানির প্রশ্নে দৃশ্যমান কিছু দেখা যায়নি। গত দু’দিন মহামান্য রাষ্ট্রপতিও পানি নিয়ে ভারত সরকার বাহাদুরের সাথে দূতিয়ালী করছেন। তথাপি অতীত অভিজ্ঞতায় এ অঞ্চলের মানুষ হতাশ। তবুও বুক বাঁধছে আশার আলোয়। সূত্রমতে, সুন্দরবনের নদী বাদে অন্য নদীগুলোর ৮০ শতাংশই এখন কার্যত অস্তিত্বের সংকটে কাতর। ফলে কৃষি মৎস্যের পাশাপাশি হুমকির মুখে পশুসম্পদসহ প্রতিবেশ ও পরিবেশ। একদিকে মানব সৃষ্টি কৃত্রিম সংকট আর অন্যদিকে ফারক্কাার প্রভাবে নদ নদীগুলো ক্রমেই যৌবন হারাচ্ছে। নদী শাসনের নামে চলছে অপশাসন। দীর্ঘ মেয়াদী পরিকল্পনার পরিবর্তে বাস্তবায়িত হচ্ছে তাৎক্ষণিক আইওয়াশ প্রকল্প। দু’একটি মেগা প্রকল্পেও চলছে প্রভাবশালীদের লুটপাট। ফলে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের অর্ধশত নদ-নদী এখন মৃত প্রায়। যত্রতত্র বাঁধ, ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে নদী শাসন ও অপ্রয়োজনীয় স্থানে তড়িঘড়ি করে প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে এ অঞ্চলের নদ-নদীর গভীরতা আজ বিপন্ন। আর লবনাক্ততা উপকুলের সবুজ বেষ্টনীকে কুরে কুরে খাচ্ছে। স্রোত নেই বললেই চলে এসব নদ নদীতে। খুলনা অঞ্চলের ছোট-বড় মোট ১৮৯টি নদীর জিওমরফিফোলজি, ইকোলজি এবং মাছ উৎপাদনের অবস্থা সম্পর্কে এক গবেষণায় দেখা গেছে, মধ্যে শতভাগ নদীরই গভীরতা কমে গেছে। ১৮০টি নদীর মাছের প্রজাতি কমে গেছে, ১৬৮টি নদীর মাছ চলাচলের রাস্তা ধ্বংস হয়েছে, ৪২টি নদী মরে গেছে, ১৭৭টি নদীতে নদী ভাঙ্গনের তীব্রতা রয়েছে। ১৭০টি নদী ভরাট হয়ে গেছে, বিভাগের ১৮৯টি অর্থাৎ শতভাগ নদীতেই লবনাক্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১৮২টি নদীর স্রোত কমে গেছে। ১৮২টি নদীর মাছ কমে গেছে ও ৩৪টি নদীর মুখ ভরাট হয়ে গেছে। সূত্রমতে, জলবায়ু পরিবর্তন এবং ভারতের বৈষম্যপূর্ণ পানি নীতির কারণে উপকূলের কৃষি, মৎস, পশুসম্পাদ আজ চরম প্রশ্নবিদ্ধ। আর নদীর সাথে সম্পৃক্ত কলকারখানা ও জলজ জীবের পরিবেশ সম্পূর্ণ বিপন্ন ও বিপর্যস্থ। শুধু সেমিনার আর টকশোতেই সমস্যা আর সমাধানের পারদ ওঠানামা করছে। যে কারণে ধীরে ধীরে বৃহত্তর খুলনাঞ্চলের নদীর জলধারা ক্রমান্বয়ে সংকুচিত হচ্ছে। হয়তো অদূর ভবিষ্যতে এই মিষ্টিপানির প্রবাহ চরম ভাবে বাধাগ্রস্থ হতে পারে। আবার ভূগর্ভস্থ পনির প্রাপ্যতায় সীমাহীন অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে ইতোমধ্যে। পানির স্তর নেমে যাচ্ছে। গভীর নদ-নদী পলি পড়ে পড়ে চর হয়ে যাচ্ছে। নদীতে এখন আর আগের মত স্রোত নেই।
এদিকে, এ অঞ্চলের নদীগুলোর মুখ ক্রমেই পলিতে বন্ধ হচ্ছে। কারণ হিসেবে তারা ব্যাখ্যা করেছেন, যদি কোন নদী কম স্র্ােত বিশিষ্ট বা স্রোতহীন সমুদ্রে পড়ে তাহলে ঐ সমস্ত তলানী নদীর মূখে জমতে জমতে নদী মূখ প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে নদীর মুখ সমুদ্রের পানির চেয়ে বেশি উচ্চতা হয়ে যায়। তখন বিপত্তি দেখা দেয়। বৃহত্তম খুলনার নদ-নদীগুলো গঙ্গানদীর তথা হিমালয়ের পার্বত্য জলপ্রবাহ পায় মাথাভাঙ্গা গড়াই ইছামতী ও মধুমতী বলেশ্বরের মাধ্যমে। কিন্তু এই নদী গুলোর পানি প্রবাহ প্রধানত ফারাক্কা বাঁধের কারণে আগের মত নেই। বরং শাখা ও উপ-নদীগুলোকে পানি সরবরাহে বদলে এরা নিজেরাই এখন অনেক স্থানের মত প্রায় মৃত ও স্রোতশূন্য অর্থৎ অস্তিত্ব সমস্যায় উপনিত। সুতরাং এগুলোর মধ্যমে গঙ্গা নদীর মিষ্ট পানি খুলনা অঞ্চলের নদ-নদীগুলো আর তেমন পায় না। এই কারণে খুলনাঞ্চলের নদ-নদীগুলো এখন মৃত্যুর কোলে ঢোলে পড়েছে। নদীগুলো যেন এখন কাঁদছে। অপরদিকে খুলনা বাগেরহাট ও সাতক্ষীরা জেলর প্রধান প্রধান নদীগুলো পরিচয়ের ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা থাকলেও ছোট-বড় মিলিয়ে উল্লেখযোগ্য যে নদীগুলোর এখানে রয়েছে সেগুলো হলো- শিবসা, পেসা, বলেশ্বর, পগুর, আড়পাঙ্গাসিয়া, খোলপেটুয়া, আগুনমুখা, ভদ্রা, আঠারোবাকী, আলাইপুর, গাসিয়াখালী, দড়াটানা, ইছামমতী, খোলপটুয়া, রায়মঙ্গল, নমুদ সমুদ্র সোনাগাঙ্গ, ভাঙ্গরাকুঙ্গ, মালঞ্চ, সাতক্ষীরা, সুতেরখালী, মারজাতী, হারিণভাঙ্গা, মহাগঙ্গ, গলাঙ্গী, হরিপুর, সোনাই বুধহাটার গাঙ্গ, ঢাকি, গলাঘেমিয়া, উজীরপুর, কাটাখাল, গুচিয়াখালী, খাল আকরার, খাল মংলা, সোলপায়ারা আগুরমুখ মহুরী মোদলাম হাডুয়াভাঙ্গা পানগুছি, মেয়ার গাং, কাজিবাছা, কাকশিয়ালি, বলেশ্বর মরাভোলা। সূত্র মতে উল্লেখিত নদীগুলোর মধ্যে একমাত্র সুন্দরবনের নদী বাদে অন্য নদীগুলোর ৮০ শতাংশই এখন কার্যত অস্তিত্বের সংকটে কাতর। এই নদীগুলোর মধ্যে ৮০ শতাংশই আগের মত স্রোতস্বিনী বিপুলদেহী উচ্ছল ও ক্ষিপ্রগামী নেই। জায়গায়-জয়গায় শুকিয়ে ভরাট হয়ে গেছে। অনেকগুলো আবার দেখলে বুঝবার উপায় নেই যে, একসময়ে এখানে কোনো তীব্র স্রোতবাহী নদী ছিল। আবার কোনো কোনোটা ধীরে ধীরে পরিণত হয়েছে সরু খালে। অনেকগুলোর গতিপথ পরিবর্তিত বা স্থায়ীভাবে রুদ্ধ হয়ে গেছে। তবে যেসব নদী এখনও জীবিত ও গতিশীল এবং বর্ষকালে প্রচন্ড বেগবান, বস্তত সমুদ্র দক্ষিণে বলে তার অধিকাংশই উত্তর থেকে দক্ষিণদিকে প্রবাহিত।



 

Show all comments
  • Mohosin Shemul ২০ মার্চ, ২০১৮, ১:১৬ পিএম says : 0
    ..........ভাবে ক্ষমতায় থাকলে হিস্যা আনবে কিভাবে? ...........ভাবে ক্ষমতায় থাকার মূল্য পরিশোধ করতে হবেনা??
    Total Reply(0) Reply
  • Md Rony ২০ মার্চ, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    ভাববেননা বর্ষা আসলেই খুলে দেয়া হবে।
    Total Reply(0) Reply
  • Helal Ahmed ২০ মার্চ, ২০১৮, ১:১৭ পিএম says : 0
    সরকার আসে সরকার যায় কিন্ত এইসব গুরুত্পুর্ন বিষয়গুলির কেন সমাধান হয় না। নাকি ধরে নিতে হবে ভারত-বাংলাদেশ পানির এই সমস্যা কোনদিনই শেষ হবে না। এই সমস্যায় কি সোনার বাংলা দিনেদিনে তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে হারিয়ে ফেলবে না ?
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ