পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
গত বছর পদ্মাসেতু নির্মাণে মাসিক অগ্রগতি ছিল গড়ে এক শতাংশ। বিদ্যমান গতিতে কাজ চললে পদ্মা সেতু নির্মাণকাজ শেষ হতে আরও ৬ থেকে ৭ বছর সময় লাগবে। পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেন্ডাল লিমিটেড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিবেদনে এটা উল্লেখ করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে পদ্মাসেতু প্রকল্পের প্যানেল অব এক্সপার্টের সভাপতি প্রফেসর ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী গতকাল ইনকিলাবকে বলেন, রেন্ডাল লিমিটেডের প্রতিবেদনটি আমার চোখে পড়েনি। তারা যদি বলে থাকে আরও ৬/৭ বছর সময় লাগবে, তবে সেটা ঠিক না। তিনি বলেন, যে কাজগুলো বাকি আছে সেগুলো চূড়ান্ত করতে পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। দ্রæতই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পদ্মাসেতুর মোট কাজের অগ্রগতিতে এ পর্যন্ত কাজ হয়েছে অর্ধেকের কিছু বেশি। গত ২০ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, পদ্মা সেতু প্রকল্পের সামগ্রিক কাজের ৫৬ভাগ সম্পন্ন হয়েছে। ২০১৪ সালের ২৬ নভেম্বর পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণে চুক্তি সই হয়। চলতি বছর ২৫ নভেম্বর এর কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গত ৫ ফেব্রæয়ারি এক অনুষ্ঠানে বলেন, ২০১৯ সালের মার্চ মাস থেকেই পদ্মা সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল শুরু হতে পারে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-এনবিআর আয়োজিত ভ্যাট সম্মাননা প্রদান ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। অর্থমন্ত্রী এর আগে বলেছিলেন, পদ্মা সেতুর কাজ শেষ হতে আরও দুই বছর সময় লাগবে। এদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় তৃতীয় দফায় আবারও বাড়ছে। এর আগে ব্যয় বেড়েছে দুই দফা। বর্তমানে আরও এক হাজার ৪০০ কোটি টাকা বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। জমি অধিগ্রহণ বাবদ নতুন এ ব্যয় যুক্ত হলে পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যয় দাঁড়াবে ৩০ হাজার ১৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বা ৩৬৮ কোটি ২১ লাখ ডলার। এতে করে পদ্মা সেতু হতে যাচ্ছে বিশ্বের তৃতীয় ব্যয়বহুল সেতু। যদিও ব্যয় নিয়ন্ত্রণের যুক্তিতে সম্ভাব্যতা যাচাইকালে পদ্মা নদীতে টানেলের পরিবর্তে সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সে সময় বলা হয়েছিল, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় হবে বঙ্গবন্ধু (যমুনা) সেতুর চেয়ে কিছুটা বেশি। বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণে ব্যয় হয়েছিল ৬৯ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর পদ্মা সেতু নির্মাণে এর পাঁচগুণেরও বেশি ব্যয় হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গত ২৮ ফেব্রæয়ারি পদ্মা সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপনা পরামর্শক যুক্তরাজ্যভিত্তিক রেন্ডাল লিমিটেড অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের প্রতিবেদন সেতু বিভাগে জমা দেয়া হয়েছে। ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত ২৫ থেকে ২৭ জানুয়ারি পদ্মা সেতুর প্যানেল অব এক্সপার্টের বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। ওই বৈঠকে পদ্মা সেতুর পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কোরিয়ান এক্সপ্রেসওয়ে করপোরেশন অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েশন প্রকল্পটির অগ্রগতি তুলে ধরে। নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার সম্ভাব্য সময়ও একটি প্রাফের মাধ্যমে দেখানো হয়। এতে দেখা যায়, গত বছর স্বাভাবিকভাবে প্রতি মাসে গড়ে এক শতাংশের বেশি কাজ হয়নি। এই গতিতে কাজ চলতে থাকলে প্রকল্পটি সম্পন্ন হতে আরও ৬ থেকে ৭ বছর লাগবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নির্মাণকাজ কোনোভাবেই বর্তমান চুক্তির নির্ধারিত সময়ে শেষ করার অবস্থায় নেই। ২০১৭-১৮ শুষ্ক মৌসুমে নদী শাসন কাজের যে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, তা থেকে অনেকটাই পিছিয়ে পড়েছে ঠিকাদার সিনোহাইড্রো করপোরেশন। এমনকি কোম্পানিটির পক্ষ থেকে এটি সংশোধনের কোনো উদ্যোগও নেয়া হচ্ছে না। এক্ষেত্রে সিনোহাইড্রো করপোরেশনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের চীন থেকে ডেকে আনতে পারে সেতু কর্তৃপক্ষ। বর্তমানে এ অংশের জন্য অতি জরুরি অ্যাকশন প্ল্যান নেওয়া প্রয়োজন। পাশাপাশি নদী শাসনে বিকল্প কৌশল প্রণয়ন করা যেতে পারে।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, জানুয়ারি পর্যন্ত পদ্মা সেতুর মূল অবকাঠামো নির্মাণের অগ্রগতি ৫২ দশমিক ৮৭ শতাংশ। যদিও লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৭৯ দশমিক ৬৬ শতাংশ। অর্থাৎ লক্ষ্যের চেয়ে ২৬ দশমিক ৭৯ শতাংশ পিছিয়ে গেছে নির্মাণকাজ। যদিও এখনও কোনো সংশোধিত পরিকল্পনা গৃহীত হয়নি। এছাড়া জানুয়ারি মাসেও ৩ দশমিক ৩৩ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে এক দশমিক ৫২ শতাংশ কাজ হয়েছে। জানুয়ারি পর্যন্ত নদী শাসন কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৩৩ দশমিক ৩৪ শতাংশ। অথচ লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৬৬ দশমিক ১৩ শতাংশ। নদী শাসনে লক্ষ্যের চেয়ে প্রায় ৩২ দশমিক ৭৯ শতাংশ পিছিয়ে আছে। তবে শুধু জানুয়ারি মাসে অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৮৪ শতাংশ, যেখানে লক্ষ্যমাত্রা ছিল দুই দশমিক ৫১ শতাংশ। উভয় প্যাকেজেই প্রয়োজনীয় উপকরণের মাত্র ১৬ শতাংশ সংগ্রহ করেছে ঠিকাদার।
সূত্র জানায়, এসবের বাইরে পদ্মা সেতুর জাজিরা প্রান্তে নতুন সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে নদী ভাঙন। গত ডিসেম্বরে হঠাৎ নদী শাসনকৃত অংশে ভাঙন ধরে। ঠিকমতো ড্রেজিং না করায় এ অবস্থা তৈরি হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে বোল্ডার ফেলে প্রতিরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, পদ্মা সেতুর ২২টি পিলারের নকশার সমস্যা এখনও সমাধান হয়নি। ১৪টি পিলারের পাইলের তলদেশে কাদার স্তর ধরা পড়ে ২০১৬ সালের শেষ দিকে। পরে আরও ৮টি পিলারের তলদেশের মাটির গুণাগুণেও ভিন্নতা ধরা পড়ে। এ কারনে ২২ পিলারের নকশায় পরিবর্তন আনা হচ্ছে। এগুলো হলো- ৬ থেকে ১২, ১৫, ১৯ ও ২৪ থেকে ৩৬নং পিলার। চলতি মাসের মাঝামাঝি নাগাদ এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে পারে বলে ধারণা করছে ব্যবস্থাপনা পরামর্শক।
সূত্র জানায়, এরই মধ্যে মূল সেতু ও নদী শাসনে বর্ধিত সময় চেয়েছিল দুই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এক্ষেত্রে মূল সেতু নির্মাণে ২৩ মাস অতিরিক্ত সময় দাবি করে চায়না মেজর ব্রিজ ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি। আর নদী শাসনের জন্য অতিরিক্ত ১৮ মাস সময় চেয়েছিল সিনোহাইড্রো করপোরেশন। তবে যুক্তি সঙ্গত কারণ ব্যাখ্যা করতে না পারায় দুটি আবেদনই গ্রহণ করেনি সেতু কর্তৃপক্ষ। ২২ পিলারের নকশা সংশোধনের পর নতুন করে মূল সেতু নির্মাণে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করবে বলে জানিয়েছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
এদিকে, পদ্মা সেতু নির্মাণে ব্যয় তৃতীয় দফায় আবারও বাড়ছে। এর আগেও এই ব্যয় দুই দফায় বাড়ানো হয়। দ্বিতীয় দফায় সর্বশেষ ব্যয় বাড়ানোর পর এর প্রকল্প ব্যয় দাঁড়িয়েছিল ২৮ হাজার ৭৯৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। সেবার ব্যয় বাড়ানো হয় ৮ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর আগে ২০১১ সালে ২০ হাজার ৫০৭ কোটি ২০ লাখ টাকার সংশোধিত প্রকল্প একনেক অনুমোদন পায়। আর ২০০৭ সালে প্রথম অনুমোদনের সময় এ ব্যয় ধরা হয়েছিল ১০ হাজার ১৬১ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। জমি অধিগ্রহণে নতুন ব্যয় যুক্ত হলে তৃতীয়বারে পদ্মা সেতুর ব্যয় বাড়ছে ২০ হাজার ৩১ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। সেতু বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, জমি অধিগ্রহণে বৃদ্ধিপ্রাপ্ত ব্যয় পরিকল্পনা কমিশনের অনুমোদনক্রমে ব্যবহার করা হবে। পরবর্তীতে প্রকল্প সংশোধনের সময় এটি যোগ করে দেওয়া হবে।
সূত্র জানায়, বাড়তি ব্যয় যুক্ত হলে পদ্মা সেতুর নির্মাণব্যয় দাঁড়াবে ৩৬৮ কোটি ২১ লাখ ডলার। বর্তমানে বিশ্বে এর চেয়ে বেশি ব্যয়বহুল সেতু রয়েছে মাত্র দুটি। এগুলো হলো, আমেরিকার ক্যালিফোর্নিয়ার সান ফ্রানসিসকোর বে-ব্রিজ ও ডেনমার্কের স্টোরবেল্টের গ্রেট বেল্ট ব্রিজ। এই ব্রিজ দুটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে যথাক্রমে ৬৪০ কোটি ডলার ও ৪৪০ কোটি ডলার। ব্যয়ের দিক থেকে বর্তমানে বিশ্বে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে আমেরিকার নিউইয়র্কে অবস্থিত ভেরাজানো-ন্যারোস ব্রিজ। দ্বিতল এ ব্রিজটি নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২৪০ কোটি ডলার। তবে পদ্মা সেতু নির্মাণ শেষে ব্যয়ের দিক থেকে এটি নেমে যাবে চতুর্থ অবস্থানে। আর পদ্মা সেতু জায়গা করে নেবে তৃতীয় স্থান।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।