পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
আনোয়ারুল হক আনোয়ার ও মো. নিজাম উদ্দিন : বহুল আলোচিত ফেনীর মুহুরীর চর। বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে বিরোধপূর্ণ ভ‚মি এটি। পরশুরাম উপজেলার বিলোনীয়া সীমান্তে মুহুরী নদীর পাশে মুহুরীর চরের অবস্থান। চরটির কর্তৃত্ব নিয়ে বহুবার বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এটি দখলে নিতে মরিয়া প্রতিবেশী ভারত। ফেনীস্থ বিজিবি’র ৪ ব্যাটালিয়ন সূত্রে জানা গেছে, মুহুরীর চর দখলে রাখতে ১৯৭৯ সাল থেকে ১৯৯৯ সালের ২২ আগস্ট পর্যন্ত ৫৮ দিন ভারতীয় বিএসএফ ও বিজিবির (বিডিআর) মধ্যে গুলিবিনিময় হয়েছে। ১৯৯৪ সালের ১৫ জানুয়ারি বিএসএফ-এর গুলিতে নিহত হয় বাংলাদেশের বাউর পাথর গ্রামের বিয়াধন বিবি (৪০)। তবে এসব সংঘর্ষে কতজন বাংলাদেশী আহত হয়েছে তার সঠিক হিসাব নেই বিজিবির কাছে। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এযাবত শতাধিক বাংলাদেশী আহত হয়েছে। সীমান্ত দিয়ে বহু বাংলাদেশীকে ধরে নিয়ে গেছে বিএসএফ। বাংলাদেশী জমির মালিকদের জমিজমা সংক্রান্ত দলিলপত্র থাকলেও বিএসএফ এর বাধার কারণে নিজেদের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছেনা কৃষকরা। এদিকে দীর্ঘদিনেও বিরোধপূর্ণ মুহুরীর চরের ২.৫ কি.মি. সীমান্ত চিহ্নিত করা যায়নি। ২০১১ সালে বাংলাদেশ জরিপ অধিদফতর সীমানা চিহ্নিতকরণে জরিপ করলেও তা ফলপ্রসূ হয়নি।
ফেনীর বিলোনিয়ার মুহুরীর চরের সমস্যা সমাধানে দু’দেশের মধ্যে সুরাহা হবে বলে আশাবাদী বিরোধপূর্ণ মুহুরী চর এলাকার অধিবাসীরা। বিভিন্ন তথ্যাবলী থেকে জানা গেছে, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর পাকিস্তান ও ভারত দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠিত হয়। দেশ বিভাগের পর থেকে বিশাল আয়তনের মুহুরীর চর নিয়ে উভয় দেশের মধ্যে উত্তেজনা নতুন কিছু নয়। পরবর্তীতে উভয় দেশের যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) বৈঠকে চরটিকে অমীমাংসিত হিসেবে ঘোষণা করা হয়। কিন্ত এরপরও বিএসএফ মুহুরীর চরের ৬৬ একর জমি ভোগদখল করে আসছে। উল্লেখ্য, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্য থেকে মুহুরী নদীর উৎপত্তি । নদী ভাঙন ও গতিপথ পরিবর্তনের কারণে মুহুরীর চর সৃষ্টি হয়েছে। চরটির মূল আয়তন ৯২.৩৩ একর । এরমধ্যে ৬৬ ভাগ ভারতের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে । বাকি ২৪ ভাগ এলাকা অমীমাংসিত। বিজিবির দাবি এ চরের আয়তন ৭৯ একর। এর মধ্যে ৫০ একর চর অমীমাংসিত। অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ভ‚-রাজনৈতিক ও কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের সার্বভৌম অঞ্চল মুহুরীর চরের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ এলাকা ভারত দখলে নিয়েছে। উন্নততর প্রযুক্তি প্রয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের পূর্বাঞ্চলের মুহুরী নদীতে ¯পার ও গ্রোয়েন নির্মাণ করে নদীর গতিধারাকে ভারত ক্রমান্বয়ে পূর্ব থেকে পশ্চিমে বাংলাদেশের ভ‚-অভ্যন্তরে সু-কৌশলে বিলোনীয়ার পাশে নিজ কালিকাপুর গ্রামের মুহুরী নদীর বাঁকে চরের অংশটি মূল চরের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এ কারণে ক্রমাগত উত্তর অংশে (ভারত) চরের সৃষ্টি হয়ে নদী মোহনা বাংলাদেশের গভীরে প্রবেশ করছে। সীমান্ত অঞ্চলের তথ্যাবলী অনুসন্ধানে জানা যায়, মুহুরী নদীর পাশে ভারত সীমান্তের ওপারে বিলোনিয়া (ত্রিপুরা রাজ্যের মহকুমা) শহর থেকে ৪০ ফুট প্রশস্ত নতুন সড়ক তৈরির কাজ স¤পন্ন করেছে। কৌশলে মুহুরীর চরের অধিকাংশ এলাকা ও তৎসংলগ্ন ভ‚-ভাগ নিজের এলাকাভুক্ত করে নিচ্ছে ভারত। ফলে ভারতের ভ‚মি আগ্রাসনে পরশুরামের বিলোনীয়া ক্রমান্বয়ে ছোট হয়ে যাচ্ছে। কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী জেলার পরশুরাম থানার সীমান্তবর্তী বিশাল উত্তর-পশ্চিমের ভ‚-ভাগের সাথে দেশের প্রায় এক অষ্টমাংশ সার্বভৌম অঞ্চল বৃহত্তর চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সাথে ভারতের কৌশলগত প্রশ্ন ও সুযোগ-সুবিধা জড়িত। একারণে ভারত মুহুরীর নদী চর কৌশলে দখল করে তাদের অবস্থান নিশ্চিত করেছে। ত্রিপুরা রাজ্যকে নিরাপদ রাখাসহ নানা কারণে ভারত মরিয়া হয়ে মুহুরীর চরকে নিজেদের আয়ত্তে রাখতে মরিয়া।
১৯৪৮ সালে মুহুরীর চরের সীমানা র্যাডক্লিফ রোয়েদাদ নীতিমালার ভিত্তিতে চিহ্নিত করা হয়। এক্ষেত্রে দু-দেশের সীমানা হিসেবে মুহুরী নদীর মধ্য স্রোতকে নির্ধারণ করা হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ নদী কমিশন (জেআরসি) আবারও মধ্য স্রোতকে উভয় দেশের সীমানা হিসেবে নির্ধারণ করে। এরপর ১৯৭৬ সালে ভারত নিজ অঞ্চলের সীমান্ত শহরে বিলোনীয়াকে নদী ভাঙন থেকে রক্ষার কথা বলে প্রথমে বাংলাদেশ সীমান্তের কয়েকশ মিটার উজানে গ্রোয়েন নির্মাণ করে। আর তখন থেকে মুহুরী নদীর গতিপথ পূর্ব থেকে পশ্চিমে মোড় নিতে শুরু করে। মুহুরী নদীর পানি তাত্তি¡ক ও ভ‚-রূপ তাত্তি¡ক পরিস্থিতি বিশ্লেষণে দেখা যায়, ভারত মুহুরী নদীর উজানে ড্যাম, গ্রোয়েন ও ¯পার নির্মাণের ফলে ক্রমান্বয়ে মুহুরী নদীর স্রোতধারা বাংলাদেশের ভ‚-ভাগে অভ্যন্তরে অর্থাৎ পশ্চিম দিকে থেকে ক‚ল ভেঙে অবস্থান পরিবর্তন করছে। ভারত জোরপূর্বক মধ্যস্রোত সীমান্তনীতির অজুহাতে বাংলাদেশের মূল ভ‚খন্ডে প্রায় ১ কি. মি. অভ্যন্তরে ঢুকে পড়েছে। জানা গেছে, ১৯৭৯ সালে আবার বাংলাদেশ ভারত যৌথ নদী কমিশনের (জেআরসি) বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ সময় উভয়পক্ষ সিদ্ধান্ত নেয় যে, দু-দেশের যৌথ জরিপ পরিচালিত না হওয়া পর্যন্ত সংবেদনশীল এ নতুন চরাঞ্চলে যে কোনো দখল বা চাষাবাদ নিষিদ্ধ থাকবে। এ এলাকাকে অমীমাংসিত বলে ঘোষণাও দেয়া হয়। ১৯৭৯ সালের বৈঠকের পর বিলোনীয়ার মুহুরীর চর নিয়ে কোনো বৈঠক বা উল্লেখযোগ্য আলোচনা হয়নি। আর এ সুযোগ নিয়েছে ভারত। নানা কৌশলে মুহুরীর চরকে তাদের দখলে রাখতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে বিএসএফ-এর বাধার কারনে নিজকালিকাপুরে মুহুরী নদীর ভাঙন কবলিত অংশে সিসি বøক ফেলা সম্ভব হয়নি। এছাড়া জমির কাগজপত্র থাকা সত্তে¡ও বাংলাদেশীরা তাদের নিজের জমিতে চাষাবাদ করতে পারছে না। নিজ কালিকাপুর গ্রামের বাসিন্দা জয়নাল, হাফেজ, আব্দুল করিমসহ কয়েকজন ইনকিলাবকে জানান, জমির দলিল থাকা সত্তে¡ও তারা জমিতে যেতে পারছে না। এদিকে জরিপের ফলে চিহ্নিত হওয়া বাংলাদেশের মালিকানাভুক্ত ৭১.৯৪ একর ভ‚মির সীমানা নির্ধারণী ৪৪টি কাঠের সাব-পিলারের স্থলে পাকা পিলার স্থাপনের চেষ্টা করা হলে আপত্তি জানায় ভারত। জানাগেছে, ত্রিপুরার সাবেক রাজস্ব বিষয়কমন্ত্রী বাদল চৌধুরীর আপত্তির কারণে সীমানা পিলার স্থাপন করা যাচ্ছে না। তিনি আরেক দফা মুহুরীর চরে জরিপ চালাতে চান। তার দাবি, নিরাপত্তার কারণেই বাংলাদেশের কাছে তারা এ চরটি হস্তান্তর করতে রাজি নন। এই মুহুরীর চরের মধ্যেই রয়েছে এসডিএম, এসডিপিও এর কার্যালয় ও বিলোনিয়ার একাংশ। তাই বাংলাদেশের সঙ্গে এই ভূমি কখনই লেনদেন হতে পারেনা।
২০১৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ জরিপ দল যে জরিপকার্য চালিয়েছে তাতে ত্রিপুরা রাজ্য সরকার বা স্থানীয় জেলা প্রশাসনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। ফল হিসেবে মুহুরী নদীর উজানের জমি বাংলাদেশের বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। এ অবস্থায় উক্ত এলাকায় আইন-শৃঙ্খলা নিয়ে মারাত্মক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। তাই তিনি কেন্দ্রীয় সরকারকে এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার আহŸান জানিয়েছেন। মুহুরীর চর সীমান্ত সমস্যা হলেও তিনি এটিকে ত্রিপুরার দক্ষিণাঞ্চলে মুহুরীর চর হিসেবে পরিচিত ছিটমহল হিসেবে উল্লেখ করেছেন। যদিও দু-দেশের বৈঠকে কখনো মুহুরীর চরকে ছিটমহল হিসেবে দেখানো হয়নি। সীমানা নির্ধারণের পর বাংলাদেশীরা মুহুরীর চরে আবারো চাষাবাদ করে জীবন-জীবিকার সংস্থান করবেন এবং নিজেদের হারানো জমিতে ভোগ-দখলের অধিকার ফিরে পাওয়ার আশায় আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু ভারতীয় বিএসএফ এবং ভারত সরকার কর্তৃক স্থায়ী পিলার নির্মিত না হওয়ায় জমির অধিকার ফিরে পাচ্ছে না। মীমাংসিত ইস্যু নিয়ে ভারতের পিছুটানে হতবাক হয় বাংলাদেশের মুহুরীর নদী ও চর সংলগ্ন অঞ্চলের অধিবাসীরা। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এক হাজার ১৪৪টি নকশাচিত্র স্বাক্ষরিত হয়েছে ইতিমধ্যে। ফেনীর মুহুরী নদীর একটি নকশাচিত্র স্বাক্ষর করা বাকি ছিল। এবার এ সমস্যা মিটিয়ে রাষ্ট্রের মানচিত্র পূর্ণাঙ্গ করতে চায় বাংলাদেশ।
বিগত ২০১৬ সালের ৫-৬ ডিসেম্বর ভারতের রাজধানী দিল্লিতে অনুষ্ঠিত হয় দুই দেশের স্বরাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক। বৈঠকে মুহুরী নদীর নকশাচিত্রের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। মুহুরী নদীর ভাঙন ও চর জাগার কারণে এ সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের দিকে চর জেগে নদী সরে আসে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। নির্ধারিত সীমানায় জেগে ওঠা চরের মালিকানা দাবি করেছে বাংলাদেশ। আর ভারত বলছে, পানির বাইরে বাংলাদেশের জায়গা নেই। ফেনীস্থ বিজিবির ৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্নেল মোঃ সহিদুর রহমান দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, মুহুরির চর সমস্যা দীর্ঘদিনের। এটি এখন দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে চলে গেছে। দু’দেশের সরকারি পর্যায়ে আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান করা সম্ভব। সীমান্ত পরিস্থিতি বর্তমানে স্বাভাবিক রয়েছে। বিজিবির তৎপরতা বাড়ানো হয়েছে। এদিকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, ফেনীর বিলোনিয়া সীমান্তবর্তী মুহুরীর চরের সীমানা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিরোধ দুই দেশের উচ্চপর্যায়ের বৈঠকের মাধ্যমেই শিগগিরই মীমাংসা হবে। বিগত ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর মুহুরীর চর পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী একথা বলেন। তিনি আরো বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে একটি চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। এছাড়া স্বাধীনতার পর ইন্দিরা-মুজিব চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। সেগুলো বাস্তবায়িত হয়েছে। ভারত আমাদের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র এবং তারা সব সময় আমাদের পাশে থাকে। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট সব চুক্তি এ সরকারের আমলেই বাস্তবায়ন হবে। পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ রুহুল আমিন দৈনিক ইনকিলাবকে জানান, আমি যতটুকু জানি, মুহুরীর চরের সমস্যাটি সমাধানের পর্যায় চলে এসেছে। এটি উভয় দেশের মধ্যে ম্যাপিং পর্যায়ে রয়েছে। তবে এব্যাপারে ভালো বলতে পারবে বিজিবি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।