পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী শহীদ খাকান আব্বাসীর সা¤প্রতিক নেপাল সফর ভূ-রাজনৈতিক ঢেউ তুলেছে। সফরকালে বেশ কিছু আঞ্চলিক বিষয়ে নেপালে সমর্থন চেয়েছেন আব্বাসী, যে সময়ে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে দেয়ালের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করছে।
নেপালে পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রীর সফর অনেকটা নাটকীয় ও আকস্মিক মনে হয়েছে কিন্তু এটা ঘটেছে অনেকটা উপযুক্ত সময়ে। কে.পি শর্মা ওলির নেতৃত্বে সিপিএন-ইউএমএল বাম জোটের শক্তিশালী সরকার গঠনের মুহূর্তে এই সফরে গেছেন তিনি। মজার ব্যাপার হলো আব্বাসী ও ওলির মধ্যে কিছু বিষয়ে মিল রয়েছে। দুই প্রধানমন্ত্রীকেই একইসাথে বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক শক্তিগুলোর মোকাবেলা করতে হচ্ছে। দু’জনই চীনকে গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু মনে করেন যারা বিপদের সময় তাদের দেশকে সাহায্য করেছে। দ্য রাইজিং নেপালের সহযোগী সম্পাদক রিতু রাজ সুবেদী এক নিবন্ধে এ কথা বলেছেন। নিবন্ধটি একটি চীনা নিউজ ওয়েবসাইটে বৃহস্পতিবার প্রকাশিত হয়।
বাইরের দিক থেকে দেখলে আব্বাসী কাঠমান্ডুতে গেছেন নেপাল একটি সেক্যুলার, ফেডারেল এবং প্রজাতান্ত্রিক রাষ্ট্র হওয়ায় পর প্রধানমন্ত্রী হওয়ায় ওলিকে অভিনন্দন জানাতে। কূটনীতির ক্ষেত্রে এটা গুরুত্বপূর্ণ একটা মুহূর্ত। তবে গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক উদ্দেশ্যে সফরে এসেছিলেন পাকিস্তানী প্রধানমন্ত্রী।
সাউথ এশিয়ান অ্যাসেসিয়েশান ফর রিজিওনাল কোঅপারেশানকে (সার্ক) পুনরুজ্জীবিত করার জন্য নেপালের সরকার প্রধানের প্রতি আহŸান জানান তিনি। ভারত ও পাকিস্তানের বিরোধের কারণে যেটা প্রায় অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ২০১৬ সালে সার্কের ১৯তম সম্মেলন পাকিস্তানে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভারত নিজ থেকে এতে অংশগ্রহণ না করার সিদ্ধান্ত নেয়ায় সম্মেলন স্থগিত করা হয়। জম্মু ও কাশ্মীরের উরির সামরিক ঘাঁটিতে হামলার প্রতিবাদে তারা এ সিদ্ধান্ত নেয়।
অনেকেই মনে করেন যে, সার্ক ভারতের জন্য মাথাব্যাথার কারণ হয়ে উঠেছে, কারণ এতে তার শত্রু ও মিত্র সব ধরনের দেশই রয়েছে। উপ-আঞ্চলিক ফোরামগুলোকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার মধ্য দিয়ে ভারত সার্ককে দুর্বল করে ফেলেছে বলে অভিযোগ রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল (বিবিআইএন) এবং বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশান (বিমসটেক)।
এ প্রেক্ষিতে, নিজেদের কূটনৈতিক অবস্থানের উন্নয়নের জন্য সার্ককে আবারও সক্রিয় করে তুলতে চায় পাকিস্তান। এর মাধ্যমে আঞ্চলিক শক্তি হিসেবে নিজেদের অবস্থান তুলে ধরতে চায় দেশটি। সার্কের বর্তমান চেয়ার হলো নেপাল এবং সার্ক প্রক্রিয়া শুরুর জন্য পাকিস্তানের অনুরোধে তারা ইতিবাচক সাড়া দিয়েছে। এটা কখনই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না যে, দারিদ্র বিমোচন, অনুন্নত এলাকার উন্নয়ন এবং অবকাঠামোগত ঘাটতি পূরণের ব্যাপারে যে সার্কের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে, দুটো দেশের দ্বিপাক্ষিক উত্তেজনার কারণে সেটার তৎপরতা বন্ধ হয়ে যাবে।
আরেকটি কারণ রয়েছে যে কারণে ভারত মুমূর্ষু সার্ককে জীবিত করার ব্যাপারে আগ্রহী নয়। নেপাল ও পাকিস্তান চায়, চীন সার্কের সাথে যুক্ত হোক। যারা এ অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব নিয়ে সবসময় শঙ্কিত থাকে সেই ভারতের জন্য এ প্রস্তাবটি খুবই তিক্ত।
জাতিসংঘের সমর্থনপুষ্ট বিআরআই প্রকল্প এশিয়ার সাথে ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার সংযোগ ঘটাতে চায়। এজন্য অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বিশাল বিনিয়োগ করা হচ্ছে। শতাব্দির এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প থেকে লাভবান হতে পাকিস্তান ও নেপাল এর সাথে যুক্ত হয়েছে।
চায়না-পাকিস্তান ইকোনমিক করিডোর (সিপিইসি) এই বিআরআইয়েরই একটি মডেল প্রকল্প। এর মাধ্যমে এরই মধ্যে কর্মসংস্থান শুরু হয়েছে এবং উপকূলীয় এলাকায় ব্যাপক অবকাঠামো উন্নয়ন শুরু হয়েছে। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সিপিইসি প্রকল্পের সাফল্য সম্পর্কে ওলিকে জানান এবং বিআরআই প্রকল্প থেকে উপকৃত হওয়ার আহŸান জানান।
স্থানীয় একটি ইংরেজি দৈনিককে আব্বাসী বলেন, “বিআরআই প্রকল্পের উদ্দেশ্যই হলো সংযোগ স্থাপন। এটা হলো চীনের পশ্চিম দিকে যাওয়ার চেষ্টা এবং সবগুলো আঞ্চলিক দেশই এর সাথে যুক্ত হতে পারে। সুযোগ সামনেই রয়েছে। আমাদের শুধু সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে হবে।” তিনি বলেন, সিপিইসির মাধ্যমে মধ্য এশিয়ার সবগুলো দেশ এবং পশ্চিম চীনের সমুদ্রসীমার সাথে যোগাযোগের সুযোগ রয়েছে। এই সংযোগের সাথেই আসবে বিদ্যুৎ, সড়ক পরিবহন, মোটরওয়ে, বন্দর, বিমানবন্দর ও রেল যোগাযোগ খাতে বিনিয়োগ।
বিআরআই-এর অংশগ্রহণকারী নেপাল বিআরআইয়ের তহবিল দিয়ে অবকাঠামো নির্মাণের জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। নেপাল ও পাকিস্তানের সাথে ভৌগলিক সংযোগ নেই। কিন্তু ১৯৬০ সালে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের পর থেকেই তাদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। বিআরআই প্রকল্পের কারণে এখন সিপিইসির মাধ্যমে দুই দেশ যুক্ত হতে পারবে, যেটা সহযোগিতা, সংযোগ, বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের নতুন দুয়ার খুলে দেবে।
কমিউনিস্ট পার্টি অব নেপাল-মাসাল এক প্রেস বিবৃতিতে বলেছে, “ভারতের স¤প্রসারণবাদী নীতির মোকাবেলার জন্য চীন ও পাকিস্তানের সাথে নেপালের সম্পর্ক রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ। এ কারণে আমাদের দল আব্বাসীর সফরকে অত্যন্ত ইতিবাচক এবং অর্থপূর্ণ হিসেবে দেখছে। কারণ এটা নেপালের সার্বভৌমত্ব, অখÐতা এবং জাতীয়তা রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।” সূত্র : সাউথ এশিয়ান মনিটর।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।