Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লাশ আসছে মঙ্গলবার

নেপালে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১:৪৭ এএম, ১৭ মার্চ, ২০১৮

ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় যেসব বাংলাদেশিকে শনাক্ত করা সম্ভব হবে, তাদের লাশ আগামী মঙ্গলবার আনা হবে। এদিকে ইউএস-বাংলা ট্র্যাজেডির শিকার হতভাগ্য নিহতদের লাশের ময়না তদন্ত গতকাল সম্পন্ন হয়েছে বলে জানিয়েছে নেপালের চিকিৎসকরা।
গতকাল শুক্রবার কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশ দূতাবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস, ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সোহেল আহমেদ। উপস্থিত ছিলেন সিআইডির ডিএনএ ল্যাবের কর্মকর্তা এএসপি আবদুস সালাম।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শুক্রবারের মধ্যেই নিহত ব্যক্তিদের ময়নাতদন্ত শেষ হবে। শনিবার থেকে শনাক্তকরণের কাজ শুরু হবে। যেসব লাশ খালি চোখে দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হবে, সেগুলো আগামী মঙ্গলবারের মধ্যে একযোগে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থাপনায় দেশে পাঠানো হবে। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে গত সোমবার ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হয়। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি।
সংবাদ সম্মেলনে সোহেল আহমেদ বলেন, যেসব লাশ দেখে শনাক্ত করা সম্ভব হবে না, সেগুলোর ডিএনএ প্রোফাইলিং করা হবে। প্রোফাইলিংয়ের জন্য এসব মৃতদেহের দাঁত, চুল, নখ বা পোশাকের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে ।
রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বলেন, নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনেরা চান, সবার লাশ একসঙ্গে পাঠানো হোক। সে জন্য সবার লাশ একসঙ্গে পাঠানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে রোববার ঢাকার সিআইডির ডিএনএ ল্যাবে গিয়ে নিহত ব্যক্তিদের আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগের জন্য অনুরোধ করা হয়।
এদিকে নেপালে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়েছে। ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগ জানায়, গতকাল সবগুলো লাশের ময়নাতদন্ত শেষ হয়েছে।
নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেছে ফরেনসিক বিভাগ। বিভাগের প্রধান ড. প্রমোদ শ্রেষ্ঠ বলেন, ‘আটটি দেহ ছাড়া আমরা কারও পরিচয় শনাক্ত করতে পারিনি। আমাদের আরও কিছুদিন সময় লাগবে।
ফরেনসিক বিভাগের ড. হারিহার ওয়াস্তি বলেন, বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের শনাক্ত করা কঠিন। তাদের অনেকগুলো অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পরীক্ষা করেই নিশ্চিত হওয়া যাবে।
গত সোমবার ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায় বিমানটি। অবতরণের সময় বিমানটিতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে বিধ্বস্ত হয় এটি। দুর্ঘটনায় ৫১ জন নিহত হন। এর মধ্যে ২৬ জন বাংলাদেশি। প্রমোদ শ্রষ্ঠ বলেন, ‘আমরা মাত্র আটজনের পরিচয় শনাক্ত করতে পেরেছি। বাকি লাশ ঝলসে যাওয়ায় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’ তবে এখনও তাদের পরিচয় প্রকাশ করা হয়নি।
কাঠমান্ডু পোস্টের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, যাত্রী ও পাইলটের টক্সিসিটি পরীক্ষা করা হচ্ছে এখন। ডা. প্রমোদ বলেন, যেকোনও বিমান দুর্ঘটনার পরে এই টক্সিসিটি পরীক্ষা করা হয়। এতে নিশ্চিত হওয়া যায় তারা কোনও বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত ছিলেন কিনা।
এছাড়া কেউ জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন কিনা সেটাও জানা সম্ভব হবে। এই পরীক্ষার প্রতিবেদন তৈরি করতে বেশ কিছুদিন সময় লাগবে বলে জানান তিনি। কেউ মদ্যপ ছিলেন কিনা বা হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছিলেন কিনা সেটা পরীক্ষা করবেন চিকিৎসকরা।
নেপালে উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় এটিসির গাফিলতি ছিলো না : ছেত্রী
উড়োজাহাজ দুর্ঘটনায় নেপাল এয়ার ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ এটিসির কোনো গাফিলতি ছিল না বলে দাবি করেছেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক রাজকুমার ছেত্রী। গত সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে অবতরণের সময় বিধ্বস্ত হয় ইউএস-বাংলার বিএস-২১১ ফ্লাইট। এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫১ জন। আহত হয়েছেন ২০ জন। দুর্ঘটনার বিষয়ে গতকাল শুক্রবার কাঠমান্ডুতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন ত্রিভুবন বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার ছত্রী। ওই সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, ‘আমাদের একজন ভাই প্লেনটিতে ছিলেন, তিনি এখন চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি আমাকে বলেছেন, প্লেনটি বাম্পিং করছিল। ল্যান্ড করার আগেই আমরা কাঁদতে শুরু করি বাঁচাও বাঁচাও বলে। এ ছাড়া কন্ট্রোল প্যানেল এবং অনেকেই আমাকে বলেছে, ইট ওয়াজ নট নরমাল ল্যান্ডিং।
দুর্ঘটনার পর টাওয়ারের একটি অডিও লিক হয়েছে, যেখানে পাইলটকে শেষ মুহূর্তে বলা হয়েছে এটা আপনার রানওয়ে না, রানওয়ে বদলান, সেটার কারণে কী পাইলট রানওয়ে পাল্টাতে চাচ্ছিলেন - সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে রাজকুমার ছত্রী বলেন, ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ৯০ ভাগ বিমান দক্ষিণ থেকে অবতরণ করে। ইউএস-বাংলাকেও দক্ষিণ থেকে অবতরণ করতে বলা হয়। যখন পাইলট দক্ষিণ থেকে ল্যান্ড না করে দক্ষিণ পার হয়ে যাচ্ছিলেন, তখন কন্ট্রোলার বলেন, আপনাকে তো ০২ বলেছিলাম, কেন আপনি ২০-তে আসছেন, এটা তো উত্তর। তখন পাইলট বলেছেন, আমরা ২০-ই ব্যবহার করব। তখন কন্ট্রোল প্যানেল থেকে পাইলটকে পূর্বে অপেক্ষা করতে বলা হয়, একটা বিষয় হচ্ছে সব সময় শেষ সিদ্ধান্ত পাইলটের। নির্দেশনা পাইলটের ওপর নির্ভর করে।’
এ সময় সাংবাদিকেরা ছত্রীর কাছে জানতে চান, উড়োজাহাজ নিচে নামার পর যদি রানওয়ে পাল্টাতে বলা হয়, তখন পাইলটের কী কিছু করার থাকে কি না? তিনি বলেন, না কিছু করার থাকে না।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল রুমের ত্রুটি ছিল কি না - এমন প্রশ্নের জবাবে ছত্রী বলেন, ‘সেটা আমরা অস্বীকার করছি না, স্বীকারও করছি না। আমাদের উচ্চপর্যায়ের তদন্তকারী দল কাজ করছে।’
দুর্ঘটনার পর উদ্ধার তৎপরতায় কোনো ত্রুটি ছিল না জানিয়ে রাজকুমার ছত্রী বলেন, দুর্ঘটনার পর উদ্ধার অভিযানে কোনো ত্রুটি হয়নি। প্রথমে ধারণা করা হচ্ছিল কাউকে জীবিত উদ্ধার সম্ভব হবে না। তবে উদ্ধারকারীদের দক্ষতায় জীবিত উদ্ধার সম্ভব হয়। উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার তদন্ত কাজ এক মাসের মধ্যে শেষ হবে বলে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি। সূত্র : বিবিসি, এএফপি ও রয়টার্স।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ