নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
লর্ডসের ব্যালকনিতে উদোম শরীরে জার্সি উড়িয়েছিলেন সৌরভ গাঙ্গুলী। এবার কলম্বোর প্রেমাদাসা স্টেডিয়ামে জয়ের উত্তেজনায় খালি গায়ে ছুটলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। গোটা বাংলাদেশ নাগিন নাচ শুরু করল। ততক্ষণে ম্যাচ শেষের আগের বলে ছক্কা মেরে মাহমুদউল্লাহ বেঙালুরুর ঋণ শোধ করেছেন। প্রায় হারতে বসা ম্যাচটি জিতিয়ে বাংলাদেশকে তুলে দিয়েছেন নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে। তাও যাদের স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের টুর্নামেন্ট সেই শ্রীলঙ্কা বিদায় করে দিয়ে! দিনটি যে ১৬ মার্চ!
এই তারিখটা কখনো ভুলবে না বাংলাদেশ। মানজারুল ইসলাম রানকে হারিয়ে ফেলেছিল বাংলাদেশ এই ১৬ মার্চ। পরের দিন সেই প্রেরণায় জিতেছিল ২০০৭ বিশ্বকাপে, ভারতের বিপক্ষে। ২০১২ এশিয়া কাপেও শচীন টেন্ডুলকারের শততম সেঞ্চুরিকে ¤øান করে দিয়ে জিতেছিল বাংলাদেশ, এই ১৬ মার্চেই।
রানা ২০০৭ বিশ্বকাপে খেলেননি। কিন্তু সেদিন তিনি মাঠেই ছিলেন! আগের দিন মর্মান্তিক এক সড়ক দূর্ঘটনায় প্রাণ হারানো বন্ধু-সতীর্থকে হৃদয়ে ধারণ করে মাঠে নেমেছিলেন মাশরাফিরা। ওপারে চলে যাওয়ার পরদিন ভারতের বিপক্ষে ম্যাচটা জিতেছিল শুধু মানজারুলের জন্য। ১১ বছর পর সেই মানজারুল গতকালও ছিলেন বাংলাদেশ দলের ছায়াসঙ্গী! দিনটি যে ছিল ১৬ মার্চ!
তবে এতটা কি সহজ ছিল পথটা! কি রাগটাই না দেখিয়েছেন সাকিব আল হাসান! দলকে মাঠ ছেড়ে চলে আসতে বলেছিলেন নিজেদের ইনিংসের ১৮.২ ওভার পর। তখনো জিততে চার বলে ১২ রান দরকার বাংলাদেশের। অধিনায়কের ইশারায় মাহমুদউল্লাহ মাঠ ছেড়ে চলে আসলে বাংলাদেশ নিদাহাস ট্রফিতে হতো ডিসকোয়ালিফাইড। ফাইনালে খেলার সুযোগই থাকতো না। তবে মেজাজ ঠান্ডা করে পরের ৩ বলে মাহমুদউল্লাহ মিলিয়েছেন ১২ রানের সমীকরণ।
শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেটে করেছিল ১৫৯। বাংলাদেশ ৭ উইকেটে ১৪৮ রান করে। এর দুই বল পর মাঠ ও মাঠের বাইরে তুমুল উত্তেজনা। খেলা নিয়ে খেলোয়াড়দের মধ্যে চলে আসে বন্যতা। মোস্তাফিজুর রহমান ছিলেন ব্যাটসম্যান। ২০তম ওভারের প্রথম বলে তাকে বাউন্সার দিলেন উদানা। পরের বলটি তারও চেয়ে সামান্য উপরে। মাহমুদউল্লাহকে স্ট্রাইক দিতে ছুটে রান আউট মুস্তাফিজ। পরপর দুই বল বাউন্সার। কিন্তু আম্পায়ার দেন রান আউট! ক্ষেপে যান সাকিব। উঠে আসেন বাউন্ডারি লাইনের কাছে। তার সাথে খেলোয়াড়নরা। তুমুল উত্তেজনা। খেলা বন্ধ। এর মধ্যে বাংলাদেশের দুজন খেলোয়াড় মাঠে গেছেন পানি তোয়ালে নিয়ে। সাথে বার্তা। তাদের উত্তেজনা লঙ্কান দুই খেলোয়াড়ের সাথে। মাহমুদউল্লাহ তর্কে জড়ান ফিল্ড আম্পায়ারের সাথে। বেশ কিছুক্ষণ খেলা বন্ধ। সাকিব বারবার মাহমুদউল্লাহদের মাঠ ছেড়ে চলে আসতে বলেন। শেষে রেগে মেগে ড্রেসিং রুমে চলে যান। কিন্তু মাহমুদউল্লাহ এরপর চার দ্ ুও ছক্কায় হিসেব মিলিয়ে ফেলেন ১ বল হাতে রেখে। ১৯.৫ ওভারে ১৬০! মাহমুদউল্লাহ ১৮ বলে ৪৩ অপরাজিত। ম্যান অব দ্য ম্যাচ। মাঠে এরপর বাংলাদেশের বুনো উৎসব।
এভাবে কেন জিতল বাংলাদেশ? কারণ, এমন জয় না হলে মনে ঠিক দাগ রেখে যায় না। উত্তেজনায় যদি হাত-পাই না কাঁপল, তবে আর সে জয়ের মূল্য কী! এ কারণেই শেষ ওভারের শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষায় রাখল বাংলাদেশ। মাহমুদউল্লাহর ঠান্ডা মাথা বাংলাদেশকে এনে দিল আরেকটি স্মরণীয় জয়। এর আগেও উত্তেজনার ম্যাচ জিতিয়েছেন মাহমুদউল্লাহ। ২০১৫ বিশ্বকাপে ব্যাক-টু-ব্যাক সেঞ্চুরিই তার প্রমাণ। আছে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতেও অনবদ্য ইনিংসে দলকে জেতানোর সুখানুভুতি। তবে আক্ষেপের গল্পের খলনায়কও হতে হয়েছে তাকে। ২০১২ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে পাকিস্তানের বিপক্ষে পারেননি। ২০১৬ সালে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বেঙ্গালুরুতেও হয়নি। ২০১৮ সালে নিদাহাস ট্রফিতে সেই ক্ষতের কিছুটা হয়তো এবার শুকাবে মাহমুদউল্লাহর।
উত্তেজনা যাই থাকুক সেটা খেলার অংশ হিসেবেই দেখছে দু’দল। ম্যাচশেষে পুরস্কার বিতরণীর সময় লঙ্কান অধিনায়ক থিসারা পেরেরা যা ঘটেছে তার জন্য ‘দুঃখিত’ বলেছেন। আর সাকিবের কণ্ঠেও ছিল দুঃখ প্রকাশের সূর, ‘আসলে টি-টোয়েন্টি ম্যাচে এরও চেয়ে উত্তেজনা আশা করা যায়। অনেক উত্তেজনা। আমরা সবসময় স্বাস্থ্যকর প্রতিযোগিতা করি মাঠে কিন্তু মাঠের বাইরে আমরা বন্ধু।’ এমন একটা ম্যাচের পর উত্তেজনা আর রোমাঞ্চের রেশ নিয়েই বেশি বললেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। প্রতিপক্ষকেও দিলেন কৃতিত্ব, ‘একটা টি-টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে এরচেয়ে বেশি কিছু আশা করা যায় না। কি দারুণ উত্তেজনা, আবেগ। শ্রীলঙ্কাকে কৃতিত্ব দিতে হয়। তারা দ্রুত ৫ উইকেট হারানোর পরও ফিরেছে। আমরা শেষ পর্যন্ত সড়বায়ুচাপ ধরে রাখতে পেরেছি।’ এরপরই নিজের মেজাজ ও আবেগের কথা টেনে সাকিবের উপলব্ধি, ‘আবেগে আক্রান্ত হয়েছিলাম। দলের নেতা হিসেবে আমাকে আরো সতর্ক হতে হবে। পরেরবার আমি আরো সতর্ক হবো।’
ইনজুরি কাটিয়ে এই ম্যাচ খেলতেই বাংলাদেশ থেকে শ্রীলঙ্কা উড়ে গেছেন সাকিব। প্রথম তিন ম্যাচ খেলতে পারেননি। আগামীকালের ফাইনালে ভারতের বিপক্ষে শিরোপা জয়ের আশা এখন বাংলাদেশ অধিনায়কের।
স্কোর কার্ড
নিদাহাস ট্রফি, বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা
টস : বাংলাদেশ, কলম্বো
শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬
গুণাথিলাকা ক সাব্বির ব সাকিব ৪ ৭ ০ ০
মেন্ডিস ক সৌম্য ব মুস্তাফিজ ১১ ১৪ ২ ০
কুশল ক মিরাজ ব সৌম্য ৬১ ৪০ ৭ ১
থারাঙ্গা রানআউট (মিরাজ/মুস্তাফিজ) ৫ ৫ ১ ০
শানাকা ক মুশফিক ব মুস্তাফিজ ০ ১ ০ ০
জীবন ক মুস্তাফিজ ব মিরাজ ৩ ১১ ০ ০
থিসারা ক তামিম ব রুবেল ৫৮ ৩৭ ৩ ৩
উদানে অপরাজিত ৭ ৪ ০ ০
ধনঞ্জয়া অপরাজিত ১ ১ ০ ০
অতিরিক্ত (লেবা ৪, ও ৫) ৯
মোট (৭ উইকেট, ২০ ওভার) ১৫৯
উইকেট পতন : ১-১৫ (গুণাথিলাকা), ২-২২ (মেন্ডিস), ৩-৩১ (থারাঙ্গা), ৪-৩২ (শানাকা), ৫-৪১ (জীবন), ৬-১৩৮ (কুশল), ৭-১৫৪ (থিসারা)।
বোলিং : সাকিব ২-০-৯-১, রুবেল ৪-০-৪১-১, মুস্তাফিজ ৪-১-৩৯-২, মিরাজ ৪-১-১৬-১, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-২৯-০, সৌম্য ২-০-২১-১।
বাংলাদেশ ইনিংস রান বল ৪ ৬
তামিম ক কুশল ব গুণাথিলাকা ৫০ ৪২ ৪ ২
লিটন ক থিসারা ব ধনঞ্জয়া ০ ৩ ০ ০
সাব্বির স্ট্যাম্প ব ধনঞ্জয়া ১৩ ৮ ৩ ০
মুশফিক ক থিসারা ব আপনসো ২৮ ২৫ ২ ০
সৌম্য ক কুশল ব জীবন ১০ ১১ ০ ০
মাহমুদউল্লাহ অপরাজিত ৪৩ ১৮ ৩ ২
সাকিব ক ধনঞ্জয়া ব উদানে ৭ ৯ ০ ০
মিরাজ রান আউট (শানাকা) ০ ১ ০ ০
মুস্তাফিজ রান আউট (কুশল/উদানে) ০ ২ ০ ০
রুবেল অপরাজিত ০ ০ ০ ০
অতিরিক্ত (ও ৯) ৯
মোট (৮ উইকেট, ১৯.৫ ওভার) ১৬০
উইকেট পতন : ১-১১ (লিটন), ২-৩৩ (সাব্বির), ৩-৯৭ (মুশফিক), ৪-১০৫ (তামিম), ৫-১০৯ (সৌম্য), ৬-১৩৭ (সাকিব), ৭-১৪৮ (মিরাজ), ৮-১৪৮ (মুস্তাফিজ)।
বোলিং : ফার্নান্ডো ১-০-১০-০, ধনঞ্জয়া ৪-০-৩৭-২, আপনসো ৩-০-১৯-১, থিসারা ২-০-২০-০, গুণাথিলাকা ৩-০-২৪-১, জীবন ৪-০-২৪-১, উদানে ২.৫-০-২৬-১।
ফল : বাংলাদেশ ২ উইকেটে জয়ী।
ম্যন অব দ্য ম্যাচ : মাহমুদউল্লাহ (বাংলাদেশ)।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।