Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লাশ ফেরত আসবে কবে

সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন হবে আজ

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৫ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

লাশ প্রাপ্তিতে বিলম্বের শঙ্কা : হাসপাতালের সামনে স্বজনদের কান্না : বিমানবন্দর সংস্কারের উদ্যোগ
নেপালে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত বাংলাদেশিদের কবে দেশে ফিরিয়ে আনা হবে সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন স্বজনরা। লাশ হস্তান্তর নিয়ে দীর্ঘসূত্রিতার আশঙ্কা করছেন তারা। দ্রæত সময়ের মধ্যে লাশগুলো শনাক্ত করে হস্তান্তরের দাবি উঠেছে তাদের পক্ষ থেকে। হস্তান্তর প্রক্রিয়া প্রসঙ্গে নেপালে ত্রিভুবন বিমানবন্দরে গতকাল বিমানমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামাল বলেছেন, ‘ময়নাতদন্ত ও ডিএনএ টেস্ট করে লাশ শনাক্তের পর স্বজনদের কাছে হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হবে।’
ঠিক কতদিন সময় লাগবে এমন প্রশ্নে নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামস বুধবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘বিধ্বস্তের ঘটনায় যাদের শনাক্ত করা গেছে তাদের লাশ ফেরত দিতে কমপক্ষে চার দিন সময় লাগবে। এর মধ্যে ময়নাতদন্ত শেষ করতে প্রয়োজন তিন দিন। আর একদিন যাবে লাশ শনাক্ত করতে।’
নেপালের ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালে গত ১২ মার্চ থেকে নিহতদের ময়নাতদন্ত শুরু হয়েছে। নেপালে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশফি বিনতে শামসের ভাষ্য, ‘ময়নাতদন্ত ও লাশ শনাক্তকরণে আরও চার দিন লাগবে। এরপর শুরু হবে হস্তান্তর প্রক্রিয়া।’ স্বজনদের আশঙ্কা, হস্তান্তর প্রক্রিয়া শুরু হতে আরও অন্তত পাঁচ দিন থেকে এক সপ্তাহ চলে যাবে। লাশ ফেরত আনার জন্য প্রায় এক সপ্তাহ সময় অপেক্ষা করা খুবই কষ্টকর বলে উল্লেখ করেছেন তারা। দ্রæত সময়ের মধ্যে লাশ হস্তান্তর করার দাবি জানিয়েছেন নিহত ক্রু খাজা শফির বোন বাসিমাহ সাইফুল্লাহ। তার কথায়, ‘স্বজনদের আনাই হয়েছে লাশ শনাক্তকরণের জন্য। কিন্তু এখানে (হাসপাতাল) আমাদের একটি ফরম ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা এখনও কোনও লাশ দেখতে পারিনি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের একই কথা ‘সবার ফরেনসিক টেস্ট শেষ হলে দেখতে দেওয়া হবে।’
বাংলাদেশি নিহতদের স্বজনদের পাশাপাশি লাশ হস্তান্তর প্রক্রিয়া দ্রæত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন ইউএস-বাংলা কর্তৃপক্ষ। গতকাল প্রেস ব্রিফিংয়ে এ কথা উল্লেখ করেন ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম। তার ভাষ্য, ‘নেপালের সঙ্গে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। আমাদের বিমানমন্ত্রী সেখানে (নেপাল) আছেন। আমরা আশা করছি, এই দীর্ঘ প্রক্রিয়া দ্রæত সম্পন্ন করতে নেপালের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলবেন আমাদের প্রধানমন্ত্রী। এ বিষয়ে আমরা তার হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’
ইউএস-বাংলার জনসংযোগ বিভাগের মহাব্যবস্থাপক আরও বলেন, ‘মঙ্গলবার থেকে নেপালে লাশগুলোর ময়নাতদন্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে আমরা জানতে পেরেছি। তবে লাশ শনাক্তে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে। কারণ বেশিরভাগ লাশই আগুনে পুড়ে গেছে। তাই শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া অনেক দীর্ঘ হতে পারে। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন, হাসপাতালে ১৫ পাতার একটি ফরম পূরণ করতে হয়। সেটি দেখে লাশ শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ টেস্ট প্রয়োজন হবে। সেক্ষেত্রে নিহত ব্যক্তির স্বজনের সেখানে উপস্থিত থাকা জরুরি। তা না হলে ডিএনএ টেস্টও সম্ভব হবে না। ফলে লাশ হস্তান্তরে দীর্ঘসূত্রিতার আশঙ্কা থাকছে।’
নিহতদের লাশ হস্তান্তরের বিষয়ে বিমানমন্ত্রীর ভাষ্য, ‘নাম-পরিচয় দিয়ে স্বজনরা আমাদের দূতাবাসের মাধ্যমে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি ফরম পূরণ করে দেবেন। আমরা রাষ্ট্রদূতকে দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে তৎপর থাকবেন। যে লাশ আগে শনাক্ত হয়ে যাবে কিংবা যার চেহারা বোঝা যাবে, আমাদের রাষ্ট্রদূত সেই বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। লাশ হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকবে আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ডিএনএ টেস্ট প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও চিকিৎসকদের নেপালে পাঠাবেন।’
এর আগে মঙ্গলবার একান্ত সাক্ষাৎকার দেন ত্রিভুবন ইউনিভার্সিটি টিচিং হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. প্রমোদ শ্রেষ্ঠা। তিনি জানান, ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের ময়নাতদন্তের তথ্যের সঙ্গে স্বজনদের দেওয়া তথ্য মিলিয়ে দেখার পর শনাক্ত করা গেলেই লাশ হস্তান্তর করা হবে। এরপরও শনাক্ত করা না গেলে ডিএনএ পরীক্ষা করে লাশ হস্তান্তর করা হবে। তিনি বলেছেন, ‘বেশিরভাগ লাশ ঝলসে গেছে। শনাক্ত করা খুব কঠিন।’
ডা. প্রমোদ শ্রেষ্ঠার কথায়, ‘বাংলাদেশ থেকে আসা স্বজনদের অ্যান্টিমর্টেম ফরম পূরণ করে দিতে বলেছি। পরিবারের সদস্যরা মৃত ব্যক্তিদের বিষয়ে যে অ্যান্টিমর্টেম ডাটা দিয়েছেন, সেগুলো ধরে ধরে সংগ্রহ করছি। যেমন ধরুন, উচ্চতা, ওজন, চোখের রঙ, কোনও ব্যক্তিগত অলঙ্কার, ট্যাটু বা যেকোনও চিহ্ন। দাঁতের চিকিৎসা করানো থাকলেও ময়নাতদন্তে কাজে আসবে। আমরা ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করার পর অ্যান্টিমর্টেম ডাটার সঙ্গে মেলানোর কাজটি করবো। যদি এটাতেও না হয় তাহলে ফিঙ্গার প্রিন্টের দিকে যাবো। এই প্রক্রিয়া শেষ করতে হয়তো আরও তিন চারদিন লেগে যাবে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টের সঙ্গে স্বজনদের তথ্য মিলিয়ে চিহ্নিত করা গেলে পুলিশকে জানানো হবে। এরপর বাকি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে।’
নেপালে হাসপাতালের সামনে স্বজনদের কান্না
ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলার বিমান কী কারণে বিধ্বস্ত হয়েছে তা এখনও পরিষ্কার নয়। এরই মধ্যে কর্তৃপক্ষ তদন্ত শুরু করেছে। ওদিকে দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিদের চিকিৎসা দেয় হচ্ছে কাঠমান্ডুর বিভিন্ন হাসপাতালে। তাদের স্বজনরা সেখানে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। কাঠমান্ডুর এক হাসপাতালের সামনে দেখা গেছে স্বজনদের একজনকে আরেকজন জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ছেন। এমন ছবি প্রকাশ করেছে কাঠমান্ডু পোস্ট।
ওই পত্রিকার সঙ্গে হাসপাতালের বিছানা থেকে কথা বলেছেন বিমান দুর্ঘটনায় বেঁচে যাওয়া যাত্রী আশিষ রনজিত। তিনি বালাজুতে একটি ট্রাভেল এজেন্সির অপারেটর। তিনিসহ তাদের এজেন্সির বেশ কয়েকজন বাংলাদেশে এসেছিলেন প্রশিক্ষণ নিতে। আশিষ এখন চিকিৎসা নিচ্ছেন নরভিচ ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতালে। সেখান থেকে বলেছেন, বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে আমি কিছু একটা বিপদের আলামত লক্ষ্য করেছিলাম। ওই সময় বিমানটি ভয়ঙ্করভাবে দুলছিল। ভয়ে জড়সড় হয়ে গিয়েছিলাম আমি। এ জন্য একজন বিমানবালাকে ডাকলাম। তিনি আমাকে বুড়ো আঙুল উঁচিয়ে দেখালেন। বোঝাতে চাইলেন সব কিছু ঠিক আছে। এর আগে একই রকম কথা বলেন বসন্ত বহরা। তিনি বলেছেন, আমরা বিমানটির পিছন দিকে বসে ছিলাম। অকস্মাৎ বিমান দুলতে থাকে। এক বন্ধু আমাকে সামনে দৌড়াতে বলে। আমরা পিছনে তাকিয়ে দেখি আগুন জ্বলছে। সেই আগুনে অনেকে পুড়ে পড়ে যাচ্ছেন মেঝেতে। এক পর্যায়ে আমি বিমানের জানালা ভেঙে বেরিয়ে এলাম। এরপরই চেতনা হারাই। আমাকে কেউ একজন উদ্ধার করে।
ওদিকে কী কারণে বিমানটি দুর্ঘটনায় পড়েছে তা কেউই বলতে পারছেন না। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের সাবেক মহাপরিচালক ত্রিরতœ মানান্ধার বলেছেন, বছরের এ সময়টা (ফেব্রæয়ারি থেকে এপ্রিল) এটা স্বাভাবিক ঘটনা যে, বাতাসের বেগ থাকবে অনেক। ঘূর্ণাকারে বাতাস বইতে থাকে। তা উড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে বিমানকে।
বিধ্বস্তের আগে আরেকটি বিমানের সঙ্গে সংঘর্ষ এড়ান পাইলট
নেপালে ইউএস-বাংলার বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে মালিন্দো এয়ার লাইন্সের একটি বিমানের সঙ্গে ধাক্কা এড়াতে সক্ষম হন বাংলাদেশি পাইলট। প্রত্যক্ষ্যদর্শীরা এসব তথ্য জানিয়েছেন। বিধ্বস্ত বিমানের বø্যাকবক্স থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, নিয়ন্ত্রণকক্ষের ভুল তথ্য ও সময়ক্ষেপণের কারণেই কাঠমান্ডুতে বাংলাদেশের বিমান পরিবহন সংস্থা ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজটি বিধ্বস্ত হয়েছে। বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার আগে বিভ্রান্ত করা হয়েছিলো পাইলটকে।
প্রত্যক্ষদর্শী সুশীল চৌধুরি জানান, রানেওয়েতে অবতরণের আগে বিমানটিতে অস্বাভাবিক গতি এবং তীব্র ঝাঁকুনি লক্ষ্য করেন তিনি। এসময় মালিন্দো এয়ারলাইনসের একটি বিমানে আঘাত হানার আশঙ্কাও তৈরি হয়। তবে পাইলট তা এড়াতে সক্ষম হন, কিন্তু অবতরণের আগেই তার ডানা মাটিতে লাগে।
ক্যাপ্টেন আবিদ সুলতান একজন দক্ষ পাইলট ছিলেন। ১৫ বছরের অভীজ্ঞতায় ৫ হাজার ঘন্টারও বেশি সময় বিমান চালিয়েছেন তিনি। আর শুধুমাত্র এ বিমানটিই তিনি ১৭’শ ঘন্টার বেশি সময় চালিয়েছেন বলে জানিয়েছে ইউএস-বাংলা। অপরদিকে, ভুল বোঝাবুঝির কারণে বিমানটি বিধ্বস্ত হওয়ার কথা স্বীকার করেছেন নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষও। বাংলাদেশ সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষের তিন সদস্যর একটি দল নেপালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেছেন।
সংস্কার করা হবে নেপালের ঝুঁকিপূর্ণ ত্রিভুবন বিমানবন্দর
পাহাড় ঘেরা নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন বিমানবন্দরটি কাঠমান্ডু উপত্যকায় এবং শহরের কেন্দ্র থেকে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে। গত সোমবার এই বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হয়েছে ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি। একের পর এক বিমান দুর্ঘটনার কারণে এই বিমানবন্দরটির নিরাপত্তা নিয়ে প্রায়শই আলোচনা হয়। বিশ্লেষকরা বলছেন, নেপালে বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগে বিভিন্ন সময়ে তাদের সমালোচনা হয়েছে। নেপালের সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ এখন বলছে, ছয় বছর আগে ন্যাশনাল প্রাইড নামে যে প্রকল্পের আওতায় বিমানবন্দরের পরিসর বাড়ানোর কাজ শুরু হয়েছিল সেটা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোম্পানির অবহেলার কারণে সম্পন্ন হয়নি। স্প্যানিশ একটি কোম্পানি সানহাআস কন্সট্রাক্টর এর সাথে তিন মাস আগেই চুক্তি বাতিল করে নেপালের সরকার। ঐ কোম্পানি ৬ বছরে মাত্র ২০% কাজ সম্পন্ন করতে পেরেছে। কিন্তু এসব তথ্য এতদিন প্রকাশ্যে আসেনি।
নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী উড়োজাহাজ দুর্ঘটনার পর নেপালের বিমান পরিবহন নিরাপত্তা রেকর্ড নতুন করে আলোচনায় এসেছে। হিমালয়ের দরিদ্র এ দেশটিতে বিমানভ্রমণ বেশ জনপ্রিয়। কিন্তু পাহাড়ঘেরা দেশটির দুর্বল ব্যবস্থাপনা এবং উড়োজাহাজ ও অবকাঠামোতে বিনিয়োগের অভাবে কয়েক বছর ধরে বড় দুর্ঘটনা ঘটছে।
গত ১২ মার্চ চার ক্রু ও ৬৭ যাত্রীসহ ৭১ জন আরোহী নিয়ে ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইট ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে নেপালের স্থানীয় সময় দুপুর ২টা ২০ মিনিটে কাঠমান্ডু বিমানবন্দরে পৌঁছায়। অবতরণের সময় এতে আগুন ধরে যায়। এরপর বিমানবন্দরের কাছেই একটি ফুটবল মাঠে সেটি বিধ্বস্ত হয়। এই দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৫০ জন। এর মধ্যে বাংলাদেশের নাগরিক ২৬ জন। এছাড়া বেঁচে আছেন আরও ১০ বাংলাদেশি। সূত্র : বিবিসি, এএফপি, রয়টার্স।
ইউএস-বাংলা দুর্ঘটনা : সারাদেশে রাষ্ট্রীয় শোক পালন হবে আজ
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে হতাহতের ঘটনায় সারাদেশে একদিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা দিয়েছে সরকার। গতকাল বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে তার কার্যালয়ে এক জরুরি সভায় এই সিদ্ধান্ত হয় বলে তার মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান জানান।
এদিকে গতকাল বিকালে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম স্বাক্ষরিত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
বৈঠক শেষে মুখ্য সচিব বলেন, আজ বৃহস্পতিবার সারাদেশে একদিনের শোক ঘোষণা করা হয়েছে। সারা দেশে সব সরকারি, আধা-সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে এদিন জাতীয় পাতাকা অর্ধনমিত থাকবে। এছাড়া শুক্রবার মসজিদ, মন্দির, গির্জা, প্যাগোডাসহ সকল ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও উপাসনালয়ে দোয়া ও প্রার্থনার কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে। মুখ্য সচিব বলেন, প্রধানমন্ত্রী দেশবাসীকে ধৈর্য ধরার আহŸান জানিয়েছেন। তিনি আহতদের দ্রæত সুস্থ করে তোলার ওপর গুরুত্ব দিচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে নজিবুর রহমান বলেন, দুর্ঘটনায় মৃত বাংলাদেশিদের দেশে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে এবং আহতদের উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ লক্ষ্যে বার্ন ইউনিটের দক্ষ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে একটি চিকিৎসা দল কাঠমান্ডুতে পাঠানোর হচ্ছে। মৃতদের ডিএনএর নমুনা সংগ্রহের জন্য পুলিশের একটি দলকেও নেপাল পাঠানো হচ্ছে। তিনি বলেন, তারা (আহতরা) যদি রাজি হন তাহলে তাদেরকে আমাদের বার্ন ইউনিটে এনেও চিকিৎসা দেওয়া হবে। কারণ আমাদের বার্ন ইউনিটে খুবই উন্নত চিকিৎসা হয়। ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পক্ষ থেকে গুরুতর আহত দুজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য তৃতীয় কোনো দেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হবে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগকে অ্যাভিয়েশন নিরপত্তা আইন যথাযথভাবে অনুসরণ করার জন্যও প্রধানমন্ত্রী নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সোমবার নেপালের কাঠমান্ডুতে ইউএস-বাংলার একটি উড়োজাহাজ বিধ্বস্ত হয়ে ৭১ আরোহীর মধ্যে ৪৯ জনের মৃত্যু হয়। তাদের মধ্যে চার ক্রুসহ ২৬ জন ছিলেন বাংলাদেশি। এই দুর্ঘটনার পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার সিঙ্গাপুর সফর সংক্ষিপ্ত করে একদিন আগেই মঙ্গলবার দেশে ফিরে আসেন। এরপর সংশ্লিষ্টদের নিয়ে গতকাল বুধবার সকালে তিনি নিজের কার্যলয়ে জরুরি বৈঠকে বসেন। দুর্ঘটনার পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে উচ্চ পর্যায়ের এ বৈঠকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, প্রধানমন্ত্রীর রাজনীতি বিষয়ক উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, তিন বাহিনীর প্রধান, বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।



 

Show all comments
  • লাবনী ১৫ মার্চ, ২০১৮, ২:৩৪ এএম says : 0
    এই শোকের আসলে কোন শান্তনা হয় না।
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লাশ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ