পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে যাত্রী বিড়ম্বনা, হয়রানি, নিরাপত্তাহীনতা ও যথাযথ সেবা না পাওয়া সম্পর্কে বিভিন্ন সময়ে আলোচনা হয়েছে। যাত্রী হয়রানি ও লাগেজ বিড়ম্বনা এখনো দূর হয়নি। রাজধানী ঢাকায় নানাবিধ নাগরিক সমস্যার পাশাপাশি মশার উপদ্রব, মশার কামড়ে ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া, চিকুনগুনিয়ার প্রার্দুূভাবও পোহাচ্ছে নগরবাসি। বিমানবন্দরে যাত্রীরাও মশার উপদ্রব থেকে রেহাই পাচ্ছেনা। মশার উপদ্রব এমন পর্যায়ে পৌছেছে যে, তা ফ্লাইট বিলম্বেরও কারণ হয়েছে। মশার কারণে উড়োজাহাজের ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা নজিরবিহীন। হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে বিমান রানওয়ে ত্যাগ করার পূর্বে মশার কামড়ে অতীষ্ট যাত্রীদের বিক্ষুব্ধ অভিযোগে প্রায় দুইঘন্টা ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা গতমাসে ঘটেছে। মশার কারণে ফ্লাইট বিলম্বের ঘটনা এভিয়েশনের ইতিহাসে সম্ভবত এটিই প্রথম। স্বাভাবিকভাবেই এই ঘটনার পর বিমানবন্দর এলাকায় মশক নিধনে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের কথা থাকলেও আদতে পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। আভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ও যাত্রীসেবায় গাফিলতি ছাড়াও নিরাপত্তাজনিত অভিযোগের কারণে যুক্তরাজ্যসহ পশ্চিমা কয়েকটি দেশ দু’বছর আগে কার্গো নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। সম্প্রতি বৃটেন কার্গো নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিলেও অষ্ট্রেলিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কার্গো নিষেধাজ্ঞা এখনো বহাল রয়েছে।
গতকাল ইনকিলাবে প্রকাশিত রিপোর্টে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরে মশার উৎপাতে যাত্রিদের অতীষ্ট অবস্থার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। বিমানবন্দরের ওয়েটিংরুম. বিশ্রামাগার, কনর্কোস হল, লাগেজ বেল্ট এরিয়া, ইমিগ্রেশন, কাস্টমস হল, টয়লেটসহ সর্বত্র মশার কামড়ে অতীষ্ট দেশি-বিদেশি যাত্রীরা। মশার পাশাপাশি যোগ হয়েছে ইঁদুরের উপদ্রব। আলোচনায় না আসলেও বিমানবন্দরে ইঁদুরের উপদ্রব নতুন নয়। কিছুদিন আগে পাখির কারণে ফ্লাইট বিড়ম্বনার খবরও প্রকাশিত হয়েছে। আকাশে পাখি আর উড়োজাহাজে ইঁদুরের উপদ্রবের ঘটনা হয়তো নতুন নয়। বিশ্বের বিভিন্ন বিমানবন্দরে এ ধরনের বিড়ম্বনার ঘটনা ঘটেছে। তবে মশার কামড়ে বিমান যাত্রিদের এমন নাজেহাল অবস্থা বিশ্বের আর কোন আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে ঘটে কিনা আমাদের জানা নেই।
সিভিল এভিয়েশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ২৪ ঘন্টা যাত্রী থাকায় এবং আন্তর্জাতিক এভিয়েশন নীতিমালা অনুসরণে বাধ্যবাধকতা থাকায় স্প্রে করে মশা নিধন করা সম্ভব হচ্ছেনা। অথচ বিমান যাত্রীদের মশাসহ অন্যান্য বিড়ম্বনা থেকে মুক্ত রাখা আন্তর্জাতিক এভিয়েশন নীতিমালার অন্যতম শর্ত। এ ক্ষেত্রে মশক নিধনে বিমানবন্দরে আলাদা ইউনিট থাকার থাকার কথা থাকলেও হযরত শাহজালাল বিমানবন্দরসহ দেশের কোন বিমানবন্দরেই মশক, ইঁদুর বা পেস্টিসাইড ইউনিট নেই। বিমান বন্দরের ক্লিনিং শাখা থেকে লোক ধার করে কোন রকমে এ কাজ করানো হচ্ছে, যা আদতে মশক বা ইঁদুর নিধনে তেমন কোন কাজে আসছেনা। প্রায় দু’ হাজার একর আয়তনের বিমানবন্দরের মূল ভবনের প্রতিটি সেকশনে মশার উপদ্রব আর এসব মশার উৎস স্থল হচ্ছে, রানওয়ের আশপাশে থাকা জঙ্গলাকীর্ণ স্থান, নালা-নর্দমা ও জলাশয়গুলো। বিমান যাত্রীদের মশার উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হলে বিমানবন্দরের আশপাশের পুরো এলাকাকেই মশকমুক্ত করা আবশ্যক। দেশের প্রধান আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে দেশের সভ্যতা-সংস্কৃতির প্রতিফলন ঘটে থাকে। দেশের অর্থনীতি, বৈদেশিক বিনিয়োগ ও বাণিজ্যের অন্যতম গেটওয়ে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। বিমানবন্দরকে নিরাপত্তাহীন, অপরিচ্ছন্ন, মশা ও ইঁদুরের দৌরাত্ম্যের মধ্যে রেখে দেশের ভাব-মর্যাদা বৃদ্ধি করা সম্ভব নয়। হযরত শাহজালাল বিমান বন্দরসহ দেশের সব বিমানবন্দরকে মশা ও ইঁদুরমুক্ত করার যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। বলার অপেক্ষা রাখেনা, বিমানবন্দরকেন্দ্রিক শৃঙ্খলা, স্বস্তি, নিরাপত্তা ও সেবার জন্য যাত্রীদের কাছ থেকে প্রতি বছর শত শত কোটি টাকা আদায় করা হয়। এ অর্থ কিভাবে খরচ হয়, কোথায় যায় আমরা জানিনা। ধারণা করি, এ সবের জন্য অর্থাভাব হওয়ার কথা নয়। আমরা আশা করি, সিভিল এভিয়েশন কর্তৃপক্ষ যাত্রী নিরাপত্তা ও যাত্রীসেবায় প্রয়োজনীয় অর্থ বরাদ্দ করবে এবং কর্তব্য পালনে আরও মনোযোগী হবে। বিমানবন্দরের রানওয়েসহ আশপাশের এলাকাকে মশা, ইঁদুরের উপদ্রবমুক্ত রাখতে আইকাও নীতিমালা অনুসারে পৃথক ইউনিট গঠন করতে হবে। সেই সাথে বিমানবন্দর এলাকায় যাত্রীদের লাগেজ বিড়ম্বনা, যাত্রী হয়রানি, বাইরে প্রতারকচক্রের উৎপাত বন্ধ করতে হবে। বিমানবন্দরের বাইরের রাস্তা যানজটমুক্ত রাখতেও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। সর্বোপরি বিমানবন্দরের সার্বিক নজরদারি ও নিরাপত্তার উন্নয়নে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।