Inqilab Logo

মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

শোকে স্তব্ধ দেশ

বিমানমন্ত্রীসহ বাংলাদেশের প্রতিনিধিদল নেপালে: তদন্ত শুরু : বিশ্বের বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের শোক প্রকাশ অব্যাহত

ইনকিলাব ডেস্ক | প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১২:৪১ এএম, ১৪ মার্চ, ২০১৮

নেপালের রাজধানী কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোকে স্তব্ধ বাংলাদেশ। নিহত ফয়সাল আহমেদ, আলিফউজ্জামান, বিলকিস আরা,   বেগম হুরুন নাহার বিলকিস বানু, আখতারা বেগম, নাজিয়া আফরিন চৌধুরী, মো. রকিবুল হাসান, সানজিদা হক, মো. হাসান ইমাম, মো. নজরুল ইসলাম, আঁখি মনি, মিনহাজ বিন নাসির, এফ এইচ প্রিয়ক, তামারা প্রিয়মনি, মো. মতিউর রহমান, এস এম মাহমুদুর রহমান, তাহারা তানভীন শশী রেজা, পিয়াস রায়, উম্মে সালামা, অনিরুদ্ধ জামান, মো. নুরুজ্জামান ও মো. রফিকুজ্জামানের পরিবার, আত্মীয় স্বজন তথা দেশবাসী শোকে মুহ্যমান। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভাগ্যাহত যাত্রীদের পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সফর সংক্ষিপ্ত করে গতকাল সিঙ্গাপুর থেকে দেশে ফিরে এসেছেন। আজ বুধবার তার আসার দিনক্ষণ নির্ধারিত ছিল।
এ দুর্ঘটনায় বাংলাদেশের পাইলট, কো-পাইলট, কেবিন ক্রু এবং যাত্রীসহ নিহত হয়েছেন অন্তত ২৬ জন বাংলাদেশী। আহত অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন আরো ১০ জন। বিমানমন্ত্রী শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে বাংলাদেশের একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল গতকাল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। ব্ল্যাকবক্স নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে নেপাল। আসছে বিমানটির প্রস্তুতকারক কোম্পানীর প্রতিনিধিরাও। ইউএস-বাংলার বিমান বিধ্বস্তের সময় এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল টাওয়ারে দায়িত্বরতদের মধ্যে ৬ কর্মকর্তাকে সরিয়ে নিয়েছে নেপালের বিমান কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনা প্রত্যক্ষদর্শী এই কর্মকর্তাদের দুর্ঘটনাজনিত শোক থেকে বের করে আনার জন্য তাদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে দাবি করেছে তারা।
এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার (এটিসি) এবং বিধ্বস্ত ইউএস বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটির পাইলটের কথোপকথনের ফাঁস হওয়া অডিওটি নিয়ে তদন্ত করার ঘোষণা দিয়েছে নেপালি কর্তৃপক্ষ। নেপালের বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (সিএএএন) এবং কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিআইবি) যৌথভাবে অডিওটির সত্যতা যাচাই করবে। সিএএএন কর্তৃপক্ষকে উদ্ধৃত করে নেপালি সংবাদমাধ্যম মাই রিপাবলিকা খবরটি জানিয়েছে।
এদিকে নেপালে ইউএস-বাংলার উড়োজাহাজ বিধ্বস্তের ঘটনায় হতাহত বাংলাদেশি যাত্রী ও ক্রুদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। নেপালে বাংলাদেশ দূতাবাস গতকাল আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকা প্রকাশ করে। ওই ফ্লাইটের বাংলাদেশিদের মধ্যে ৩২ জন যাত্রী এবং চারজন পাইলট ও ক্রু ছিলেন। তাদের মধ্যে ২৬ জন নিহত হয়েছেন। আর ১০ জন আহত অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
নেপালে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনা নিয়ে বিস্তারিত জানতে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী একেএম শাহজাহান কামালের নেতৃত্বে একটি উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দল কাঠমান্ডু পৌঁছেছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরের পর তারা কাঠমান্ডু পৌঁছান বলে জানিয়েছে নেপালি সংবাদমাধ্যম হিমালয়ান টাইমস। গতকাল মঙ্গলবার ত্রিভুবন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র প্রেমনাথ ঠাকুর বাংলাদেশের প্রতিনিধি দলটি পৌঁছানোর খবর নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রীর নেতৃত্বে উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলটিতে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমসহ বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা রয়েছেন। এ দলটির সঙ্গে নিহতদের স্বজনরাও রয়েছেন বলে জানিয়েছেন প্রেমনাথ। তবে একটি সূত্র জানিয়েছে, বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে বিমানটির ত্রিভুবন বিমানবন্দরে নামার কথা থাকলেও ফ্লাইট কন্ট্রোল থেকে বিলম্বে ক্লিয়ারেন্স দেয়ায় বেলা ১টা ৫০ মিনিটে বিমানবন্দরে অবতরণ করে।  
গুরুতর আহতদের চারজন ‘আশঙ্কামুক্ত’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গুরুতর আহত অবস্থায় চিকিৎসাধীন থাকা চার ব্যক্তির অবস্থা ‘আশঙ্কামুক্ত’ বলে জানিয়েছে নেপালের গ্রান্ডে ইন্টারন্যাশনাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালটির মেডিক্যাল ডিরেক্টর চক্র রাজ পান্ডেকে উদ্ধৃত করে নেপালি সংবাদমাধ্যম কাঠমান্ডু পোস্ট জানায়, ওই চার ব্যক্তিকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। সোমবার গুরুতর আহত অবস্থায় নেপালের গ্রান্ডে হাসপাতালে ভর্তি করা হয় কিশোর ত্রিপাথি, দয়ারাম তামরাকার, হরি প্রসাদ সুবেদি এবং বিনোদ রাজ পৌদেলকে। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় কিশোর ত্রিপাথির কাঁধের হাড় ভেঙে যায়। শরীরের বিভিন্ন জায়গায় আঘাত পেয়েছেন তিনি। গ্রান্ডে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তার ভাঙা হাড় জোড়া দিতে অস্ত্রোপচার হয়েছে। একইরকম করে দয়ারামের ক্ষতগুলো পরিষ্কার করে সেলাই দেওয়া হয়েছে।
হরি প্রসাদ সুবেদির অপারেশন শেষ হয়েছে সোমবারই। তিনি মুখে আঘাত পেয়েছিলেন এবং তার পা ভেঙে যায়। আর বিনোদ রাজ পৌদেলের ফুসফুসে জমাট বাঁধা রক্ত শনাক্ত হয়।
তদন্ত শুরু : আসছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের দল
ইউএস-বাংলার বিধ্বস্ত উড়োজাহাজের সংগৃহীত ডেটা রেকর্ডার নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে নেপালের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের মহাব্যবস্থাপক এ তথ্য জানিয়েছেন। খবরে জানানো হয়, বিধ্বস্ত উড়োজাহাজটির নির্মাতা প্রতিষ্ঠান কানাডার বোমবারডিয়ার বলেছে, তারা তদন্তের কাজে নেপালে একটি দল পাঠাচ্ছে। বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার ছেত্রি বলেন, ‘ধ্বংসাবশেষ থেকে ডেটা রেকর্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। আমরা সেটি নিরাপদে রেখেছি।’
ডেটা রেকর্ডার নিয়ে তদন্তের পর এ নিয়ে পরিষ্কার তথ্য পাওয়া যাবে। ইউএস-বাংলার এই উড়োজাহাজ ছিল বোমবারডিয়ার কিউ ৪০০ সিরিজের।
দুর্ঘটনার আগে বিমানের ক্যাপ্টেন ও কাঠমান্ডু এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোল বা এটিসি-র মধ্যকার কথোপকথনের প্রসঙ্গ তুলে আসিফ ইমরান বলেন, বিমানবন্দরের কন্ট্রোল রুম থেকে পাইলটকে ভুল বার্তা দেওয়া হয়েছিল বলে তারা আশঙ্কা করছেন। ওই কথোপকথনের বিবরণ দিয়ে নেপাল টাইমস জানায়, এয়ার কন্ট্রোল রুম-এটিসি থেকে পাইলটকে বলা হচ্ছে, আমি আবার বলছি, রানওয়ে ২০-এর দিকে এগোবেন না। পাইলট অপেক্ষা করছেন বলে জানান। কন্ট্রোল রুম তাকে বিমান অবতরণ না করে অপেক্ষা করতে বলেন। কারণ, আরেকটি বিমান ওই রানওয়ের দিকে এগিয়ে আসছে।
বিমানটি ডানদিকে ঘুরে গেলে এটিসি থেকে জানতে চাওয়া হয়, পাইলট কি রানওয়ে জিরো টুতে (উত্তর প্রান্ত) ল্যান্ড করবেন নাকি রানওয়ে টু জিরোতে (দক্ষিণ প্রান্ত)। ইউএস-বাংলা পাইলট জানান, তারা রানওয়ে টু জিরোতে (২০) ল্যান্ড করবেন। এরপর জানতে চাওয়া হয় তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন কিনা। পাইলট নেতিবাচক উত্তর দেন। এবার এটিসি থেকে তাকে ডানদিকে ঘুরতে বলা হয়। তখন পাইলট জানান, তিনি রানওয়ে দেখতে পাচ্ছেন। বলেন, জিরো টু-তে অবতরণ করার জন্য প্রস্তুত।
কন্ট্রোল টাওয়ার জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশের বিমানটিকে টু-জিরোতে নামার চূড়ান্ত অনুমতি দেয়া হয়েছে (একটু আগেই কথা হয়েছে জিরো টুর বিষয়ে)। এ সময় প্রায় দশ কিলোমিটার দূরে একটি সামরিক বিমানকে অপেক্ষায় রাখা হয়েছিল। এরপর ইউএস-বাংলার পাইলট জানতে চান, স্যার, আমরা কি অবতরণের অনুমতি পেয়েছি? কিছুক্ষণ নীরবতার পরই কন্ট্রোলের চিৎকার শোনা যায়, আমি আবার বলছি, ঘুরে যান। এরপরই ফায়ার ওয়ানকে ডাকা হয়, যার মানে একটি দুর্ঘটনা ঘটেছে। এরপর নেপালি একজন পাইলটের প্রশ্নের জবাবে রানওয়ে বন্ধ বলে জানানো হয়।
একই বিষয়ে খবর প্রকাশ করেছে নেপালি সংবাদমাধ্যম অন্নপূর্ণা পোস্ট। সেখানেও ওই অডিও যোগাযোগের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। অপর একটি অডিও কথোপকথন সূত্রে কাতারভিত্তিক আল জাজিরাও দুর্ঘটনার নেপথ্যে কন্ট্রোল রুমের ভূমিকার আশঙ্কার কথা বলেছে।
বেঁচে আছে হিয়ার মা কেবিন ক্রু নাবিলা
নেপালের কাঠমান্ডুর ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত হওয়া ইউএস বাংলা এয়ার লাইন্সের কেবিন ক্রু শারমিন আক্তার নাবিলা বেঁচে আছেন। কাঠমান্ডু মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের একজন মুখপাত্র তার বেঁচে থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন বলে ঢাকা ট্রিবিউনের এক সংবাদে বলা হয়েছে। ওই হাসাপাতালের মুখপাত্র শর্মিলা বলেন, শারমিন হাসপাতালের প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছেন। বিমানের ফ্লাইট তালিকায় তার নামসহ আরো ছিল পাইলট আবিদ সুলতান, কো পাইলট পৃথুলা রশীদ, ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট খাজা হুসাইন মুহাম্মদ সাফে।
এদিকে শারমিনের মৃত্যুর খবর শুনে সোমবার তার দুইবছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে পালিয়ে যায় বাসার কাজের বুয়া। এ নিয়ে উত্তরার পশ্চিম থানায় একটি জিডিও হয়। অবশ্য মঙ্গলবার মেয়েটিকে উদ্ধার করে আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী।
‘তখন সবাই চিৎকার করছিল আর দোয়া পড়ছিল’
‘দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাংলাদেশের ঢাকা থেকে আমরা টেক অফ করি। আড়াইটার দিকে কাঠমান্ডু পৌঁছে পাইলট প্রথমে ল্যান্ড করার চেষ্টা করে। কিন্তু পারেনি। পরে ঘুরে ঘুরে আবার যখন দ্বিতীয়বার ল্যান্ড করার চেষ্টা করে, বাম দিকটা উঁচু হয়ে যায়। তখনি আমি বললাম, বাম দিকটা উঁচু হল কেন, আর তখনি ক্রাশ হয়ে গেল।’
বিবিসি নেপালি সার্ভিসকে দেয়া একটি সাক্ষাৎকারে সেই দুর্ঘটনার ভয়ঙ্কর অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছিলেন বাংলাদেশ থেকে বেড়াতে যাওয়া শাহরীন আহমেদ। একটি দুর্ঘটনা ঘটতে যাচ্ছে, এরকম সতর্কবার্তাও পাইলট, কেবিন ক্রু বা অন্য কেউ দেয়নি। তারা নিজেরাও কিছু বুঝতে পারেননি। মিজ আহমেদ বলছেন, ‘তখন সবাই ভয়ে চিৎকার করছিল আর আল্লাহর কাছে দোয়া পড়ছিল।’
এর আগে কি আপনাদের কোন আভাস দেয়া হয়েছিল? আপনার কিছু টের পেয়েছিলেন?
শাহরীন আহমেদ বলছেন, ‘একেবারে স্বাভাবিকভাবেই বিমানটি নামছিল। একদম হঠাৎ করে সবকিছু হয়ে গেল।’
একজন বন্ধুর সঙ্গে সোমবার নেপালে বেড়াতে গিয়েছিলেন ঢাকার একটি স্কুলের শিক্ষক ২৯ বছরের শাহরীন আহমেদ। শুক্রবারই আবার তাদের ঢাকায় ফিরে যাওয়ার কথা। কিন্তু সেই বন্ধু দুর্ঘটনায় মারা গেছেন। প্রথমবারের মতো তারা নেপালে বেড়াতে এসেছিলেন। তাদের পোখারা যাবার কথা ছিল। তিনি বলছেন, ‘আগুন লাগার পর আনুমানিক প্রায় বিশ মিনিট পর সাহায্য আসে। সে পর্যন্ত আমি আর আরেকজন বিমানের ভেতরেই বসে ছিলাম। প্রচন্ড ভয় লাগছিল আর হেল্প হেল্প বলে চিৎকার করছিলাম। কারণ আমি জানতাম, আগুন লাগার পর অনেকে দমবন্ধ হয়েই মারা যায়।’
উদ্ধারকারীরা আগুন নেভানোর পর জাহাজের একটি অংশ খুলে যায় আর বাইরে থেকে পরিষ্কার বাতাস ভেতরে আসতে শুরু করে। বাইরে আসার সময় তিনি দেখতে পান যে, আরেকজন কাছেই বিমানের ফ্লোরে পড়ে ছিল, তার হাত ঝুলছিল। তিনি বেচে আছেন কিনা, শাহরীনের তা জানা নেই। ওই দুর্ঘটনার পর একেবারেই সচেতন ছিলেন শাহরীন আহমেদ। লোকজন তাকে ধরে বাইরে নিয়ে আসে। তখন আমি বলি, আমি হাঁটতে পারবো। এমনকি অ্যাম্বুলেন্স পর্যন্ত হেঁটেও আসি। কিন্তু তখন পায়ে ব্যথা শুরু হয়ে যায়। আসতে আসতে শুধু আগুন দেখতে পাই। তার শরীরের অনেক জায়গায় আগুনে পুড়ে গেছে। বর্তমানে কাঠমান্ডুর মেডিকেল কলেজ টিচিং হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন রয়েছেন। নিজে বেঁচে ফিরলেও, হাসপাতালের বিছানায় শুয়েও বন্ধুর জন্য তার দুঃখ রয়ে গেল।
পাইলট আবিদ ও কো-পাইলট মারা গেছেন
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে বিধ্বস্ত ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের পাইলট আবিদ সুলতান ও তিনজন কেবিন ক্রুও মারা গেছেন। ওই তিনজন ক্রু হলেন কো-পাইলট পৃথুলা রশিদ, খাজা হোসেন মোহাম্মদ শফি ও শামিম আখতার। নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের জেনারেল ম্যানেজার রাজকুমার ছেত্রী এ খবর নিশ্চিত করেছেন। এর আগে পাইলট আবিদ হাসানের পরিবার তার মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে।
পরে ইউএস-বাংলার জনসংযোগ শাখার মহাব্যবস্থাপক কামরুল ইসলাম তার মৃত্যুর খবর সাংবাদিকদের নিশ্চিত করেন। সোমবারের ওই বিমান দুর্ঘটনায় বাংলাদেশীসহ কমপক্ষে ৫১ জন নিহত হয়েছেন। রাজকুমার ছেত্রী বলেছেন, সোমবার ইউএস-বাংলার ফ্লাইটটি বিধ্বস্ত হওয়ার পর পরই সব ক্রু মারা গেছেন। তবে তারা ঘটনাস্থলেই নাকি হাসপাতালে মারা গেছেন তা নিশ্চিত করতে পারেন নি তিনি। তিনি আরো জানিয়েছেন, এখন যেসব বাংলাদেশী জীবিত আছেন তার মধ্যে তিন থেকে চার জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।
বিশ্বনেতাদের শোক
নেপালের ত্রিভুবন বিমানবন্দরে ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় শোক জানিয়েছেন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা। দুর্ঘটনায় নিহতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেছেন তারা।
গত সোমবার ৭১ আরোহী নিয়ে নেপালের ত্রিভুবন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণের সময় ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৫১ জনের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হওয়া গেছে। আহতদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে নেপালের বিভিন্ন হাসপাতালে।
সোমবারের এ ভয়াবহ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় একের পর এক বিশ্বনেতা তাদের শোক জানিয়ে যাচ্ছেন। এর মধ্যে রয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন, ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী, সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব, দেশটির প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং এবং কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতরের পক্ষ থেকেও শোক জানানো হয়েছে।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি শোকবার্তা দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন। রুশ বার্তা সংস্থা তাস জানায়, ক্রেমলিন ওয়েবসাইটে ওই শোক বার্তাটি প্রকাশ করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়, ‘কাঠমান্ডুর বিমানবন্দরে বাংলাদেশি বিমান বিধ্বস্ত হয়ে মানুষের প্রাণহানির ঘটনায় গভীর শোক জানাচ্ছি। নিহতদের পরিবার ও স্বজনদের প্রতি আমার সমবেদনা ও শোক কাটিয়ে ওঠার কামনা জানিয়ে দেওয়া বার্তাটি পৌঁছে দেওয়ার জন্য আমি আপনাদের অনুরোধ জানাচ্ছি। আহতদের দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি।’
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গভীর বেদনা প্রকাশ করে সোমবার একটি টুইট করেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সেখানে তিনি লিখেছেন, ‘কাঠমান্ডুতে বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গভীরভাবে বেদনা বোধ করছি। নিহতদের পরিবারের প্রতি সমব্যথা জানাচ্ছি এবং আশা করছি আহতরা দ্রæত সেরে উঠবেন।’
টুইটারে শোক প্রকাশ করেছেন ভারতের কংগ্রেস পার্টির সভাপতি রাহুল গান্ধীও। তিনি লিখেছেন, ‘নিহতদের পরিবারের প্রতি শোক জানাচ্ছি।’ আহতদের দ্রæত আরোগ্য কামনা করেছেন তিনি।
প্রেসিডেন্ট মো. আবদুল হামিদ এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে শোকবার্তা পাঠিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রেসিডেন্ট হালিমা ইয়াকুব। সেখানে হালিমা লিখেছেন, বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার খবর পেয়ে তিনি ‘গভীরভাবে মর্মাহত’ হয়েছেন। এই মর্মান্তিক ঘটনায় যারা প্রিয়জন হারিয়েছেন তাদের প্রতি সিঙ্গাপুরের জনগণের পক্ষ থেকে গভীর শোক ও সমবেদনা জানান হালিমা।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে আলাদা করে বিবৃতি পাঠিয়েছেন সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রী লি সেইন লুং। বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ‘গভীর দুঃখ’ প্রকাশ করেছেন তিনি। লুং লিখেছেন, ‘সিঙ্গাপুর সরকারের পক্ষ থেকে আমি আপনাদের প্রতি, নিহতদের পরিবারের প্রতি গভীর শোক জানাচ্ছি। এ শোকাতুর সময়ে আমরা তাদের পাশে আছি।’
নেপালে বিমান দুর্ঘটনায় নিহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। সোমবার  মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক মুখপাত্র বলেন, ‘ঘটনার শিকার ব্যক্তিদের পরিবার ও প্রিয়জনদের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।’
ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সের বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় গভীর শোক জানিয়েছেন কুয়েতের আমির শেখ সাবাহ আল-আহমদ আল-জাবের আল-সাবাহ। প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদের কাছে পাঠানো এক তারবার্তায় তিনি শোক প্রকাশ করেন বলে জানিয়েছে কুয়েতি বার্তা সংস্থা কুনা। বার্তা সংস্থাটি জানায়, শো প্রকাশের পাশাপাশি আহতরা দ্রæত সুস্থ হয়ে উঠবেন বলেও আশা প্রকাশ করেছেন কুয়েতি আমির।     
বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় শোক জানাল স্প্যানিশ লিগ
বাংলাদেশের আবেগের লাল-সবুজ পতাকা মঙ্গলবার বিকেলে তাদের ভেরিফায়েড ফেসবুকে পোস্ট করেছে স্প্যানিশ ফুটবল লিগ লা লিগা। তাতে লিখেছে, ‘সোমবার কাঠমান্ডুতে বিমান দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত সবার প্রতি সমবেদনা লা লিগার।’
যদিও ফেসবুকের কাস্টম পোস্ট, শীর্ষ স্প্যানিশ লিগের এই সৌজন্য ভালোবাসায় আবেগকে ছুঁয়েছে বাংলাদেশের মানুষের। বিশ্বের এ সময়ের সেরা দুই খেলোয়াড় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো ও লিওনেল মেসির এই লিগ বাংলাদেশকে তার ইতিহাসের অন্যতম এক শোকাবহ সময়ে মনে রেখেছে, এ ধন্য ধন্যবাদ পেয়েছে বিশেষভাবে।
গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ২০ মিনিটে এই পোস্ট দেয় লা লিগার ফেসবুক পেজ। দুই ঘণ্টার মধ্যে এই পোস্ট ২৪ হাজার প্রতিক্রিয়া ও ৪ হাজার ২০০ শেয়ার হয়। ততক্ষণে প্রায় ১১০০ মন্তব্যও ছিল। বেশির ভাগ মানুষ এই ভালোবাসাকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করেন। সূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, হিমালয়ান টাইমস ও এএফপি।



 

Show all comments
  • মারুফ ১৪ মার্চ, ২০১৮, ২:৪৩ এএম says : 0
    শোকের ভাষাও হারিয়ে ফেলেছি........
    Total Reply(0) Reply
  • Mdabdulhalim ১৪ মার্চ, ২০১৮, ৭:০৬ এএম says : 0
    স্বাভাবিক জীবন শরীর সুস্থতার বড় মাধ্যম
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: শোক

২০ অক্টোবর, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ