Inqilab Logo

শুক্রবার, ০৫ জুলাই ২০২৪, ২১ আষাঢ় ১৪৩১, ২৮ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

বরিশাল নগর ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার হুমকি

| প্রকাশের সময় : ১৪ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

বরিশাল ব্যুরো : বরিশাল সিটি করপোরেশনের অচলবস্থা আরো চরমাকার ধারন করতে যাচ্ছে। আজ থেকে নগর ভবনের কর্মীরা প্রতিটি কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেয়ার পাশাপাশি আগামী ১৮মার্চ থেকে পানি, বিজি বাতি সহ পয়ঃনিস্কাশনও পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়ারও হুমকি দিয়েছে কর্মীরা। গতকাল সকালে বরিশাল ক্লাব মিলনায়তনে সিটি মেয়র নগরীর গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ সহ সুশীল সমাজের সাথে এক মত বিনিময় সভার আয়োজন করেন। কিন্তু সেখানে আন্দোলনরত কর্মীরা কালোপতাকা প্রদর্শন সহ বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। তার মধ্যেই মেয়র নাগরিকবৃন্দের সাথে মত বিনিময় সভা করেন। এক পর্যায়ে তিনি নগরীর গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ ও সাংবাদিকদের আন্দোলনকারীদের সাথে সমঝোতার দায়িত্ব প্রদান করেন। কিন্তু সে উদ্যোগও ব্যর্থ হয়।
পাঁচ মাসের বকেয়া বেতন পরিশোধ সহ ২২মাসের ভবিষ্য তহবিলের অর্থ জমা দেয়ার দাবিতে গত ১৮ফেব্রুয়ারী থেকে বরিশাল সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীগন আন্দোলন করছে। গত ২৫ ফেব্রুয়ারী থেকে তারা সকাল ৯টা থেকে দুপুর দুটা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করলেও কার্যত নগর ভবন পুরোপুরি অচল হয়ে আছে। দুপুর ২টার পরেও পুরো নগর ভবন প্রায় ফাঁকা থাকছে।
এ অবস্থায় সিটি মেয়র আহসান হাবীব কামাল বার বারই কর্মচারীদের কাজে ফেরার আহবান জানিয়ে নগরবাসীর সেবা কার্যক্রম অব্যাহত রাখার পাশাপাশি নগর করসমুহ অদায়ের আহবান জানান। গত ১১মার্চ কয়েকজন কাউন্সিলরের সাথে আন্দোলনরত কর্মচারীদের সাথে এক সমঝোতা বৈঠকে উভয় পক্ষ কিছু সিদ্ধান্তে উপনীত হলেও শেষ পর্যন্ত তা ভেস্তে যায়। ঐ বৈঠকে ১২মার্চের মধ্যে দুমাসের বকেয়া বেতন ও ৩মাসের ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ জমা দেয়া ছাড়াও ২৫মার্চের মধ্যে আরো এক মাসের বেতন ও ৩মাসের ভবিষ্যৎ তহবিলের অর্থ ব্যাংকে জমা দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। পাশাপাশি ১৫এপ্রিলের মধ্যে আরো দুমাসের বেতন ও ৫মাসের ভবিষ্যৎ তহবিলের টাকা জমা দেয়ারও সিদ্ধান্ত হয়েছিল। পাশাপাশি অস্থায়ী শ্রমিকদের দুমাসের বেতন ১ ও ২মার্চের মধ্যে দেয়া সহ সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচালীদের চলমান বেতন অব্যাহত রাখারও সিদ্ধান্ত গ্রহন করা হলেও মেয়রে প্রতিনিধিত্বকারী কাউন্সিলরগন শেষ পর্যন্ত ঐ সমঝোতা স্মারকে স্বাক্ষর করেননি বলে অভিযোগ করেছেন আন্দোলনকারীগন।
এ অচলবস্থার মধ্যে আজ(বুধবার) থেকে নগর ভবনের প্রতিটি শাখা বন্ধ করে দেয়া হলে পরিস্থিতির আরো অবনতি ঘটবে। পাশাপাশি ১৮মার্চ থেকে জরুরী পরিসেবাসমুহও বন্ধ করে দেয়া হলে তা গতবছরের ফেব্রুয়ারী মার্চের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে। গতবছরও একই দাবীতে আন্দোলনের এক পর্যায়ে বিজলি বাতি ও পয়ঃনিস্কাশন ব্যবস্থা সহ পরিস্কার পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হলে গোটা মহানগরী ময়লা আবর্জনার ভাগাড়ে পরিনত হয়। নগর জীবন বিপন্ন হয়ে পড়ে। বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমশ সেদিকে যাচ্ছে বলে ইতোমধ্যে শংকিত বরিশাল মহানগরীর নাগরিক সমাজ।
মেয়র আহসান হাবিব কামাল সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ১১ মার্চ নগর ভবনের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়েছে। এতে তাদের দাবী মেনে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্তও হয়েছে। কিন্তু তার পরেও কাজে যোগ দিয়ে নাগরিক সেবা নিশ্চিত না করে উল্টো আন্দোলনের হুশিয়ারী দিচ্ছে তারা। এটি এক ধরনের অপরাধ এবং উদ্দেশ্যমূলক বলেও অভিযোগ করেন মেয়র। তিনি জানান, বর্তমানে বিসিসি’র আয় এবং আদায়ের অবস্থা খুবই খারাপ। তার মধ্যেও তাদের দাবীর প্রেক্ষিতে মেয়র ও নগর পরিষদ আন্দোলনকারীদের ১২ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে স্থায়ী কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দু মাসের বেতন এবং ১৩ মার্চ থেকে মজুরী ভিত্তিক অস্থায়ী কর্মচারিদের দুই মাসের বেতন দেয়া কথা জানান। মেয়র জানান, ৩০ মার্চের মধ্যে এক মাসের বেতন ও সাথে ৩টি প্রভিডেন্ট ফান্ডের বকেয়া টাকা পরিশোধ করা হবে। সেই সাথে ৩০ এপ্রিল এর মধ্যে এক মাসের বেতন এবং প্রভিডেন্ট ফান্ডে তিন মাসের টাকা জমা দেয়া দেয়া হবে। তিনি বলেন, অনেক মজুরি ভিত্তিক কর্মচারী নিয়মিত দায়িত্ব পালন করেনি। এজন্য তাদের দৈনিক মজুরী কর্তন করা হয়েছে। কর্মচারীরা সেই বাবদ তারা ২২ লাখ টাকা পাবে বলে দাবী করেছে। সেখানেও পাওনা থাকলে সেই ২২ লাখ টাকা চলতি মার্চ ও এপ্রিলের মধ্যে প্রদানের বিষয়ে লিখিত অঙ্গিকার করেছেন।
তাছাড়া আগামী মাসিক সভায় বেতন বৈষম্য দুর করা, বর্তমান আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে আন্দোলনের জন্য কোন ব্যবস্থা নেয়া হবে না বলে সমঝোতা বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয় এবং নাগরিক সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে সবাইকে কাজে যোগদানের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে।
মেয়র বলেন, এসব সিদ্ধান্তের কারনে নগর ভবনে চলমান সংকট নিয়ে দুরত্ব কমে আসলেও এক অদৃশ্য ইশারায় সিদ্ধান্তসমুহ বাস্তবায়নে এগিয়ে না এসে উল্টো আন্দোলনের আল্টিমেটাম দেয়া হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্য প্রনোদিত এবং কতিপয় কর্মকর্তা-কর্মচারির স্বার্থ হাসিলের আল্টিমেটাম বলে তিনি অভিযোগ করেন মেয়র। মেয়র বলেন, আন্দোলনকারীরা বলছে, থোক বরাদ্দ থেকে তাদের বকেয়া বেতন পরিশোধ করার জন্য। কিন্তু সরকারি ভাবে সিটি কর্পোরেশনে যে থোক বরাদ্দ আসে তা শুধুমাত্র উন্নয়ন কাজের বিপরীতে দেয়া হয়। তা অন্য কোন খাতে ব্যয়ের সুযোগ নেই।
তাই কর্মকর্তা-কর্মচারিদের অপর একটি বরাদ্দ এবং হাট বাজার ইজারা খাত থেকে বকেয়া বেতন ও প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পরিশোধ করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এর পরে আয়ের উপর নির্ভর করে তা দিয়ে বকেয়া পরিশোধ করা হবে। কিন্তু কর্মকর্তা-কর্মচারিরা রাজস্ব আদায় না করে কাজ না করেই বসে বসে পাওনা টাকা আদায় করতে চাইছে। এটা সম্ভব নয় বলেও জানান তিনি।
মেয়র কামাল বলেন, আমার সময়ে কর্মকর্তা-কর্মচারিদের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা নিয়মিত জমা হয়েছে। যা বকেয়া ছিলো তা সবই পূর্বের মেয়রদের আমলের। তার পরেও আমি সেই বকেয়া পরিশোধ করে এখন মার্চ মাস সহ ২৩ মাসের বকেয়া রয়েছে। তাছাড়া যে বেতন বকেয়া রয়েছে তার মধ্যে অর্ধেকই সাবেক মেয়র-এর আমলের। তার পরেও সেই বকেয়া পরিশোধে আমি তাদেরকে আশ্বস্ত করেছি। কিন্তু তা মানছে না কর্মকর্তা-কর্মচারিরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নগর

২৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
১৭ জানুয়ারি, ২০২২
২৮ ডিসেম্বর, ২০২১

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ