Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

দখলে দুষনে ম্লান হচ্ছে ক্লিন সিটি রাজশাহী খবর নেই নগর উন্নয়ন কমিটির

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

রেজাউল করিম রাজু : রাজশাহী মহানগরীতে দখলবাজদের দখলবাজি চরমে উঠেছে। সর্বত্র চলছে দখল বাজি। আর এতে করে নাগরীক জীবনে সৃষ্টি হচ্ছে নানা প্রতিবন্ধকতা। রাস্তা, ফুটপাত, ড্রেন, শহররক্ষা বাঁধ, বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন চত্তর এমন কোন জায়গা নেই যেখানে অবৈধ দখল দারিত্ব চলছেনা। যেখানে একটু ফাঁকা সেখানেই হামলে পড়ছে দখলবাজ চক্র।
গড়ে তুলেছে দোকানসহ বিভিন্ন স্থাপনা। আবার বিক্রির মাধ্যমে এর হাত বদলও ঘটছে। চলছে মোটা অংকের চাঁদাবাজি। অভিযোগ রয়েছে এই চাঁদার একটি অংশ দেখভালকারী সংস্থাগুলোর সংশ্লিষ্টদের ম্যানেজ করে রাখা হচ্ছে। তাই তারাও চোখ থাকতে অন্ধ হবার ভুমিকা পালন করছে। পাবলিকের কপাল যত  মন্দ হোক এসব দেখভালকারী কর্তৃপক্ষ রয়েছে আনন্দেই। নগরীর বিভিন্ন পয়েন্ট পর্যবেক্ষন করে দেখা যায় নগরীর ব্যাস্ততম এলাকা সর্বত্র বাস ট্রাক মাইক্রোবাস টেম্পো রিক্সার সাথে সাম্প্রতিক যোগ হওয়া ব্যাটারী চালিত রিক্সা  অটোরিক্সা ও অন্যান্য যানবাহনের স্বঘোষিত ষ্ট্যান্ড গড়ে উঠেছে। ফলে স্বল্প চওড়া রাস্তাগুলো আরো সংকীর্ন হয়েছে। রাস্তার সঙ্গের ফুটপাত চলে গেছে ব্যবসায়ীদের দখলে। এ দখলে পিছিয়ে নেই পেছনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গুলো। নিজেদের মনে করে দখলে নিয়েছে। অবস্থা এমন দাড়িয়েছে দোকানের চেয়ে ফুটপাত মুল দোকান হয়েছে। ফলে পথচারীদের আর উপায় নেই ফুটপাত ব্যবহার করার। এক শ্রেণীর প্রভাবশালী দখলবাজ গুরুত্বপুর্ন সড়ক শহররক্ষা বাঁধ ও আশেপাশের জায়গা দখল করে নির্মান করেছে দোকান ঘর, ক্লাব, ইমারত। ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের অঙ্গসংগঠনের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে শুরুতে দখল করা হলেও এখন রাজনৈতিক কার্যলয় নয় নিজ চেম্বার কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিনত হয়েছে। নৈশবিদ্যালয়ের নামে শহর রক্ষা বাধের জায়গা দখল করে এখন তা বসতবাড়ি হয়ে গেছে। সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন দখলের প্রতিযোগিতা চলছে। ড্রেনের শ্লাবের উপর টাইলস বসিয়ে নিজেদের করে নিয়েছে। ফলে ড্রেন পরিস্কার করতে পারছেনা সিটি কর্পোরেশনের পরিচ্ছণœ কর্মীরা। এতে করে পানি নিস্কাশন ব্যাহত হচ্ছে। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার ড্রেনের সাথে সরাসরি সেফটি ট্যাংকের সংযোগ দিয়ে এক দুর্বিসহ অবস্থা করে তুলেছে।
নগরীর বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায় সাহেব বাজার বড় রাস্তা সোনাদিঘী মোড় পর্যন্ত রাস্তার দু’ধারে ফুটপাত দোকান মালিক হকার দখল করেছে।্ সোনাদিঘী মসজিদ থেকে পূর্বদিকের রাস্তারও একই অবস্থা। এক সময়ের ঐতিহাসিক ভুবনমোহন পার্ক এখন জুতো স্যান্ডেলে ঢাকা পড়েছে। জিরো পয়েন্ট থেকে গণকপাড়া হয়ে নিউমার্কেট অভিমুখি রাস্তাটি চলে গেছে হকারদের দখলে। গণকপাড়ার কাছে রাস্তা চওড়া ও ড্রেনের উপর টাইলস দিয়ে দৃষ্টিনন্দন করা হলেও দখলে তা হারিয়ে গেছে। এখানে রাস্তা চওড়া করে কোন লাভ হয়নি। গোরহাঙ্গা রেলগেট হতে পশ্চিমে বিভিন্ন মোড় পর্যন্ত গ্রেটার রোডের ফুটপাত বিভিন্ন ফার্নিচারের ও মিনি ওয়েলডিং কারখানায় পরিনত হয়েছে। গোরহাঙ্গা থেকে ভদ্রামোড় পর্যন্ত একই অবস্থা। হাসপাতাল পাড়া খ্যাত লক্ষীপুর মোড়ের দুপাশের রাস্তা ফুটপাত সব দখলে চলে গেছে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সামনের রাস্তার ফুটপাত বসেছে খাবার দোকানসহ বিভিন্ন দোকান। রাস্তাজুড়ে রয়েছে লাশ ও রোগী পরিবহনকারী এ্যাম্বুলেন্স ও মাইক্রোবাসের বহরের দখলে। সদর হাসপাতালের মোড়ে ডেন্টাল কলেজের সামনে প্রতিনিয়ত চলছে দখলের খেলা। কেউ কেউ পাকা ঘর নির্মাণ করছে। নগরীর সাগরপাড়া বটতলায় ও পলেটেকনিক ইনস্টিটিউটের সামনে মাইক্রোবাসের ষ্ট্যান্ড। আর ইজিবাইক নামক যানবাহনের পুরো রাস্তায় তাদের ষ্টপেজ। কোন নিয়ম কানুনের বালাই নেই। যত্রতত্র যাত্রী ওঠানামা চলছে। নগরীর প্রধান বাজার সাহেব বাজারের কাপড় পট্টির দোকান গুলো সামনে বাড়তে বাড়তে এমন অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে যে সামনের চলাচলের রাস্তাটুকু একেবারে সংকীর্ন হয়ে পড়েছে। এখানে চলছে মানুষে মানুষে টক্কর। সাহেব বাজার কাঁচা বাজারের একই অবস্থা। কেউই নিজ ঘরে সীমাবদ্ধ নেই। মাষ্টারপাড়া আরডিএ মার্কেটের রাস্তায় একই অবস্থা। লক্ষীপুর বাজারেও হাঁটা দায়। সিটি কর্তৃপক্ষ ছোট বড় সব রাস্তার পাশের ড্রেনের উপর ফুটপাত নির্মান ও দৃষ্টি নন্দন করার জন্য টাইলস বসাচ্ছে কোটি কোটি টাকা ব্যায় করে। যাতে নগরবাসী ফুটপাত ধরে হাটতে পারে। উদ্দেশ্য ভাল হলেও এসব ফুটপাত দখলবাজদের দখলে চলে যাওয়ায় নগরবাসীর খুব একটা কাজে আসছেনা। কোথাও কোথাও দামী টাইলস পর্যন্ত ভেঙ্গে ফেলা হয়েছে। দখলের কবলে পড়ে শহর রক্ষা বাঁধ তার অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। বাঁধের বিপন্ন অবস্থা দেখে নগরবাসী উদ্বিগ্ন। বাধের মালিক পানি উন্নয়ন বোর্ড দখলবাজদের তালিকা করে তাদের দায় সেরেছেন। নাগরিক সমস্যার সমাধান কল্পে রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন, রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন মেট্রোপলিটন পুলিশ, সড়ক জনপথ, পানি উন্নয়ন বোর্ড, রেলওয়ে, এনজিও প্রতিনিধিসহ বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে নগর উন্নয়ন কমিটি নামে একটি কমিটি রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান গুলোয় মধ্যেই কোন সমন্বয় নেই। হয়না কোন সভা । ফলে এসব নাগরিক সমস্যা সমাধানে যৌথভাবে কোন পদক্ষেপ নেয়া যায়না। অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে গেলে পুলিশের সহযোগিতার উপর নির্ভর করতে হয়। উচ্ছেদ অভিযান সমন্বিতভাবে না হলে কোন অভিযান চালানো সম্ভব হচ্ছেনা। তাছাড়া দখলদারদের পেছনে রয়েছে ভোটের রাজনীতিকরা। অতিতে তত্বাবধায়ক সরকারের সময় এসব অবৈধ দখলদারদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে সাফ সুতরো করেছিল। তারা চলে যাবার পর ফের নিজ নিজ অবস্থানে ফিরে আসে দখলবাজরা। মঈন উদ্দিন ফকরুদ্দিন সময় শহরে থেকে উপজেলা পর্যন্ত অবৈধ দখলমুক্ত অভিযান চালিয়ে দখলবাজদের হঠানো হলেও পরবর্তীতে এর তৎপরতা না থাকায় অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ হওয়ারা আরো জোরদার হয়েছে। এদিকে অবৈধ দখলকারীদের কাছে থেকে বিভিন্ন সংস্থার নামে প্রতিদিন মোটা মোটা অংকের টাকা আদায় হয়। যার বখরা নাকি যায় অনেক ক্ষেত্রে। ফলে যাদের এসব দেখভাল করার কথা তারা রহস্যজনক নীরবতা পালন করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ