Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

সাভারে গোলাপ চাষে ভাগ্য ঘুরল দুই শতাধিক চাষির

| প্রকাশের সময় : ১৩ মার্চ, ২০১৮, ১২:০০ এএম

সেলিম আহমেদ, সাভার থেকে : ঢাকার সাভারে গোলাপ চাষ করে ভাগ্য বদলেছে দুই শতাধিক ফুল চাষীর। চাহিদা বৃদ্ধি ও সম্মানজনক ব্যবসা হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে গোলাপ চাষীর সংখ্যা। সাভারের গোলাপ দেশের বিভিন্নস্থানে সরবরাহ করে সুনাম কুড়িয়েছে চাষিরা। ফুল ভালবাসেন না জগতে এমন লোক খুঁজে পাওয়া ভার। সাধারণত কোনো অনুষ্ঠান এবং দিবসগুলোতে কাঁচা ফুলের চাহিদা বেড়ে যায় অনেকগুণ। ফুল উৎপাদনে সরকারি কোন পৃষ্ঠপোষকতা না থাকায় ভোগান্তিতে পড়তে হয় এসব ফুল চাষীদের। সার ও গোলাপ বীজের মূল্য বৃদ্ধিতে উৎপাদন ব্যয় কিছুটা বাড়লেও থেমে নেই তাদের পথচলা। তাদের জীবন সংগ্রামে কোন বাধাই যেন বাধা নয়। অদম্য উৎসাহে ক্লান্তিহীন পরিশ্রমও যেন হার মানে তাদের কাছে যখন ফুলে ফুলে ভরে যায় গোটা বাগান। তারপরও সরকারের পক্ষ থেকে কিছুটা সহযোগিতা পেলে এ ব্যাবসাকে আরো বিস্তৃত করে বিশ্ব বাজরে ছড়িয়ে দিয়ে ভূমিকা রাখতে পারে রাজস্ব আয়ে এমনটাই মনে করছেন সাধারণ চাষিরা। সাাভার পাকা মিলন, মেরেন্ডি, লিংকন এবং সাদা জাতের গোলাপের উৎপাদন অনেক ভাল হলেও লাভজনক হওয়ায় মেরেন্ডি জাতের গোলাপই চাষ করে থাকে এখানকার ফুল চাষীরা। তারা জানান, ৮০ দশকে ফুল বীজ সুদূর হল্যান্ড থেকে এনে রাজধানীর মিরপুস্থ বোটানিক্যাল গার্ডেনে এনে রোপন করা হয়। তখন থেকেই এর চাষ শুরু হয়। ৮৫ দশকের গোড়ার দিকে সেখানকার এক গবেষক সাভারের সাদউল্ল্যাহপুর, মোস্তাপাড়া গ্রামে এর বীজ রোপন করেন। তারপর থেকে এখানে বাণিজ্যিকভাবে শুরু হয় গোলাপ ফুলের ব্যবসা। পরবর্তীতে তা সাভারের আশুলিয়া, বিরুলিয়া, রাজাশন, কাতলাপুর, মানিকগঞ্জের সিংগাইরসহ দেশের বিভিন্নস্থানে ছড়িয়ে এ ফুলের চাষ ছড়িয়ে পড়ে। সাভার উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল বিরুলিয়া ইউনিয়নের সাদউল্ল্যাহপুরে প্রায় ৩’শ হেক্টর আবাদি জমি রয়েছে গ্রামটিতে। জমি আবাদি হলেও শাক-শবজি ও অন্যান্য ফুলের তুলনায় এখানকার চাষীরা সিংহভাগ জমিতে গোলাপ ফুলের চাষ করছেন। শ্যামপুরে প্রতি রাতেই বসে গোলাপের হাট। সব বয়সীরাই সেখানে ফুল কাটার পর একে একে তাদের বাগানের ফুলগুলো নিয়ে আসে হাটে। শ্যামপুরে কাশেম মার্কেটের সামনে সন্ধ্যা থেকেই শুরু হয় ফুল ব্যবসায়ীদের আনাগোনা।
রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অসংখ্য ব্যবসায়ী এসে ভীড় জমায় কাশেম মার্কেটের সামনে। ধীরে ধীরে জমে উঠে ফুলের বেচা-কেনা। ক্ষুদ্র চাষীরা তাদের ফুলগুলো বিক্রি করে দেন বড় বড় ব্যবসায়ীদের কাছে। এছাড়া ঢাকার বাইরে থেকে ব্যবসায়ীরা এসেও হাট থেকে ফুল ক্রয় করেন। প্রতি রাতে কমপক্ষে ৩ লাখ টাকার ফুল বেচা-বিক্রি হয় এ হাটে। বড় ব্যবসায়ীরা ফুল কিনে জড়ো করে পরবর্তীতে তা বিক্রির উদ্দেশ্যে ঢাকার শাহবাগে নিয়ে যায়। প্রান্তিক ফুল চাষী শাহজাহান মিয়া জানান, প্রায় দুই যুগ ধরে এ ব্যবসা কর আসছি। এ ব্যবসা তিনি শুরু করলেও এখন তার ছেলে এ ব্যবসার দেখভাল করছেন। তিনি বলেন, গোলাপ ফুল চাষ লাভজনক হলেও প্রতি বছর এর চারা পুলিং কাট করা হয়। পুলিং কাটের মাধ্যমে চারা উৎপাদনের সময় এক ধরণের পোকার আক্রমনে অনেক চারা মারা যায়। অনেক চেষ্টা করেও এর কোন সমাধান পাওয়া যায়নি। ফুল চাষী সমিতি’র সভাপতি আনসার আলী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে তিনি এ ব্যবসা শুরু করেন। তখন উপজেলার হাতে গোনা কয়েকজন ব্যক্তি ফুল চাষে নিয়োজিত ছিল। লাভজনকের পাশাপাশি সম্মানজনক হওয়ায় পরবর্তীতে এ ব্যবসা আরো বিস্তৃত হতে থাকে। এখন কমপক্ষে ৩শ ফুল চাষী এ ব্যবসায় জড়িয়েছেন বলে জানান তিনি। তবে এ ব্যবসাকে স্থায়ীত্ব এবং ধরে রাখতে একটি কোল্ড ষ্টোরেজ স্থাপনের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহবান জানান তিনি। সাভার উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মফিদুল ইসলাম জানান, সাভারে প্রায় ৩৫০ হেক্টর জমিতে ফুল চাষ করছে চাষীরা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হিসেবে তাদের জন্য যতটুকু করা দরকার আমি সবকিছুই করে যাচ্ছি। অনেক সময় আমি নিজে মাঠ পর্যায়ে গিয়ে তাদের যে কেনো সমস্যা সমাধানে কাজ করে যাচ্ছি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাষ

১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২২
২৫ আগস্ট, ২০২২
২৩ জুলাই, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ