Inqilab Logo

সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১৬ বৈশাখ ১৪৩১, ১৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

চাষাবাদের আওতায় আসছে সরকারি জমি

সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারের উদ্যোগ বনবিভাগ, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কৃষিমন্ত্রীর চিঠি

রফিক মুহাম্মদ | প্রকাশের সময় : ৭ জানুয়ারি, ২০২৩, ১২:০০ এএম

বৈশ্বিক মন্দা পরিস্থিতিতে সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমি চাষাবাদের আওতায় আনার নির্দেশ দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এই নির্দেশনার আলোকে বন বিভাগ ৪০ হাজার একর বাংলাদেশ রেলওয়ের ৪ হাজার একরের বেশি পতিত জমি চাষাবাদের আওতায় আনার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া বন্ধ হওয়া চিনিকল, পাটকল ও বস্ত্রকলের পতিত জমিও চাষের আওতায় আনা হচ্ছে।
করোনা মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক সংকটের সৃষ্টি হয়েছে। এ বছর বিশ্বে ভয়াবহ খাদ্যসংকট দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করছে জাতিসংঘ। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষিবিষয়ক সংস্থার (এফএও) প্রধান ডেভিড বিসেøর মতে, খাবারের অভাব এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে শুধু দুর্ভিক্ষই হবে তা নয়, বরং এর জেরে বিভিন্ন দেশে বৈষম্য ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। বাংলাদেশেও খাদ্যাভাব দেখা দিতে পারে এমন আশঙ্কার কথা সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন। তিনি একাধিকবার নির্দেশনা দিয়েছেন যেন এক ইঞ্চি জমিও অনাবাদি রাখা না হয়।
সরকারি যেসব প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ চাষাবাদ যোগ্য জমি আছে, তার মধ্যে বনবিভাগ ও বাংলাদেশ রেলওয়ে অন্যতম। সারা দেশে বনবিভাগের ২ লাখ ৫৭ হাজার ১৫৮ একর বনভ‚মি বেদখল হয়ে আছে। এর মধ্যে প্রায় ৪০ হাজার একর জমি চাষাবাদ যোগ্য। এসব জমি দ্রæত উদ্ধার করে চাষের আওতায় আনার উদ্যোগ গ্রহণ করছে বনবিভাগ।
পরিবেশ-বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেন, সারা দেশের বনভ‚মি দখলদার ও দখলি জমি উদ্ধারের প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। ইতিমধ্যে ৫০০ একরের মতো জমি উদ্ধার করা হয়েছে। এ ছাড়া বনের জমি উদ্ধারের জন্য দেশের সব জেলা প্রশাসককে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের শেষ নাগাদ বেদখল হওয়া জমির বড় একটি অংশ উদ্ধার হবে বলে আশা করি।
অন্যদিকে রেলওয়ের জমি চাষাবাদের জন্য একটি কৌশলপত্র রেল মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্তিক সংসদীয় স্থায়ী কমিটি। গত ২২ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত কমিটির বৈঠকে এ বিষয়ে কৌশলপত্র মন্ত্রণালয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। তাতে বলা হয়, বর্তমানে রেলওয়ের ১৩ হাজার ৭৬৫ একর জমি ইজারা দেওয়া আছে। এর বাইরে ৩ হাজার ৫১৪ দশমিক ২১ একর চাষাবাদযোগ্য কৃষিজমি আছে, যেগুলো ইজারা দেওয়া যাবে। এর মধ্যে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলে আছে ৩৫০ দশমিক ৪৯ একর আর পশ্চিমাঞ্চলে আছে ৩ হাজার ১৬৩ দশমিক ৭২ একর জমি। এসব জমির বাইরে আরও প্রায় ৭৯৫ একর অব্যবহৃত জমি আছে, যেগুলো কৃষিকাজের উপযোগী।
কৌশলপত্রে বলা হয়েছে, রেলেওয়ের জমি চাষাবাদের লক্ষ্যে ইজারা দেওয়া হবে। নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এটি করা হবে। এ ছাড়া স্থানীয় কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে রেলওয়ে কোয়ার্টার, স্টেশন এলাকা, অফিস চত্বর ও ওয়ার্কশপ এলাকায় অব্যবহৃত জমি ও সে সবের পরিমাণ নির্ধারণ করা হবে। রেলওয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পতিত জমিতে চাষাবাদের জন্য উদ্বুদ্ধ করা হবে। জমির গঠন, অবস্থান ও প্রকৃতির ওপর নির্ভর করে গাছ বা শস্য নির্ধারণ করা হবে। বিনা মূল্যে চারাগাছ ও বীজ বিতরণ করা হবে। কৃষি জমি অন্য কোনো বাণিজ্যিক কাজের জন্য ইজারা না দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে কৌশলপত্রে।
রেলপথ মন্ত্রণালয়সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ বি এম ফজলে করিম চৌধুরী বলেন, রেলওয়ের যেসব কৃষি জমি আছে কিন্তু এখন কাজে লাগছে না, সেগুলোতে কৃষিকাজ করা বা ফলজ গাছ লাগাতে বলেছে সংসদীয় কমিটি। মন্ত্রণালয় এখন এই কাজ করবে।
এর আগে গত বছর নভেম্বরে, বনবিভাগ, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলের চাষযোগ্য পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ নিতে সংশ্লিষ্ট তিন মন্ত্রণালয়ে আধা সরকারি পত্র (ডিও) দেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। ওই আধা সরকারি পত্রে বলা হয়, বৈশ্বিক প্রতিক‚ল অবস্থায় সম্ভাব্য খাদ্যসংকট মোকাবিলায় সরকারি মালিকানাধীন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে অব্যবহৃত চাষযোগ্য জমিতে খাদ্যশস্য, শাকসবজি, ডাল ও তেলবীজ চাষের উদ্যোগ গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে। এ বিষয়ে শিল্প মন্ত্রণালয়, রেলপথ মন্ত্রণালয় এবং বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের অধীন প্রতিষ্ঠান, চিনিকল, পাটকল, বস্ত্রকল ও রেলপথের অব্যবহৃত বা পতিত জমিতে আবাদের উদ্যোগ গ্রহণ করলে তা দেশে খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে। আবাদের জন্য কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতরের সংশ্লিষ্ট উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেবেন।
ইতোমধ্যে বন্ধ থাকা পাটকলগুলোর পতিত জমিতে চাষাবাদের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পাটকলগুলো বন্ধ হওয়ায় শ্রমিক কলোনি খালি হয়েছে। এসব খালি জায়গা, ইজারার জন্য নির্ধারিত পাটকলগুলোর ইজারা এলাকার বাইরের খালি জায়গা এবং ইজারার বাইরে থাকা অন্য পাটকলগুলোর খালি জায়গায় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী চাষাবাদ কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: চাষাবাদ

২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২১
২ ডিসেম্বর, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ