পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
লাখ লাখ মুরীদান ভক্ত ও দর্শনার্থী মুসলমানদের পদচারণায় পূণ্যভূমি ফুরফরার জমিন ছিল কানায় কানায় পূর্ণ। প্রতিবছর এই শেষের দিনটি লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। সুন্নতী লেবাসে আদবের সাথে মাজার জিয়ারত, নামায আদায়, বয়ান শ্রবন ও জিকিরি আজগর সুসম্পন্ন হয় অত্যন্ত শৃঙ্খলার সাথে। লাখ লাখ মানুষের খাওয়া- নাওয়া ও ইবাদাত যেন এক বিশাল কর্মযজ্ঞ। মানুষ মানুষের জন্য আর সকল গুনগান মহান আল্লাহর জন্য এমনই এক অঘোষিত মন্ত্রে উজ্জিবিত ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের ৩ দিনের ইবাদাত যেন এক যুগান্তকারী ঘটনা। লাখ লাখ ধর্ম প্রাণ মুসলমান ফুরফুরা দরবার শরীফে দিন ব্যাপী জামায়াতের সাথে ৫ ওয়াক্ত নামায আদায় করেন। ভারতের একাধিক টিভি চ্যানেলে গতকালের মাহফিলে ১৫-২০ লাখ লোকের জমায়েতের খবর প্রচার করেছে। ভারতীয় বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত খবর থেকে জানা যায়, ফুরফুরা দরবার শরীফের মাহফিলে গতবছরের তুলনায় এবার মানুষের বেশি সমগম ঘটেছে। আজ শুক্রবার বাদ ফজর আখেরি মোনাজাতের মধ্য দিয়ে ঈসালে ছাওয়াবের সমাপ্তি হবে।
আল্লামা হযরত মাও: জবিহুল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) বলেন, ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক এবং ইসলাম প্রচারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ছিলেন দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:)। দাদা হুজুর কোটি কোটি মুসলমানের বড় আদরের পীর সাহেব ছিলেন। তিনি আজ নেই। কিন্তু তিনি যে বিপুল আদর্শ দীর্ঘ জীবনের গৌরব ইতিহাস রেখে গেছেন, যুগের মানুষ তা কোনদিন ভুলিতে পারিবে না। ফুরফুরার মাটি দিয়া খালেকুল মখলুক যে কি অনবদ্য রতœ সৃষ্টি করেছিলেন, আমরা হয়তো পূর্বে তা উপলব্ধি করতে পারিনি। সংসারের কোলাহল আধ্যাত্মিক পথে প্রতিকুল আবহাওয়া সৃষ্টি করতে পারে না, দাদা হুজুর দীর্ঘ জীবনের প্রতি ক্ষেত্রে তা দেখিয়ে গেছেন। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন আদর্শ ধর্ম্ববীর, অন্যদিকে সেইরূপ অপরাজেয় কর্ম্মনীতির পরিচয় দিয়ে গেছেন। ধর্মের সাথে কর্মের যে কি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক, দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:) সুদীর্ঘ জীবনব্যাপী সাধনা হতে আমরা তার পরিচয় পেয়েছি। তিনি তার জীবনের বেশি সময় ব্যয় করেছে ইসলামের পথে। ভারতীয় উপমহাদেশে ইসলাম প্রচারে তার ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ন। দাদা হুজুর মোজাদ্দেদে জামান হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:) আমাদের জীবনের আদর্শ। তিনি ছিলেন ইসলামের পথের দিক নির্দেশক। তার আদর্শ মেনেই আমরা ইসলামের পথে চলব।
হুজুর আরো বলেন, দাদা হুজুর হযরত আবু বক্কর সিদ্দীকি (রহ:) এর নসিয়ত অনুযায়ী তার ভালবাসার টানে আজ আমরা দূর দূরান্ত থেকে এসে একসাথে সম্মিলিত হয়ছি এবং একসাথে পাঁচ ওয়াক্ত নামায আদায় করেছি একমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য তার ইবাদাতের জন্য। আল্লাহ তায়ালা ইবাদাতার সর্বোত্তম পন্থা সালাত আদায় করা। তাই কখনই আমরা সালাত আদায় করতে ভুলবোনা। সালাত বেহেশতের চাবি। আর সকল মুসলমানের আখিরাতে বড় চাওয়া বেহেশত। তাই বলে শুধু সালাত আদায় করলেই হবে না কোরাআনের আলোকে চলতে হবে এবং জীবন যাপন করতে হবে। দাদা হুজুরের মত একজন মোজাদ্দেদ জামানের আদর্শ অনুযায়ী আমাদের ভবিষ্যত জীবন পরিচালিত করতে হবে। সুদ ঘুষকে বর্জন করে মানুষের সাহায্যে এগিয়ে আসতে হবে। মানুষের সেবাই বড় ধর্ম। যে কারণে দাদা হুজুর মানব কল্যানে অনেক সেবামুখী প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। হযরত মরহুম বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকীও সায়াদাতীয়া জে কে ইসলামী মিশন ও জমিয়াতে জাকিরীন নামক সেবা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। যার মাধ্যমে মানুষ ইহকাল ও পরকালের জন্য উপকৃত হচ্ছে। দিনব্যাপী আলোচনা ও বয়ান হয়। মাগরীব থেকে এশা পর্যন্ত জিকির আজগর হয় এবং মুসলিম উম্মহার শান্তি কামনা করে বিশেষ দোয়া অনুষ্ঠিত হয়। ঈসালে ছাওয়াবে ভারতবর্ষে বিভিন্ন ভাষাভাষি ও ধর্মবর্ণের লোক উপস্থিত হন।
এদিকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এবং বিশেষ করে মূখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জীর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ইসয়ালে সাওয়াবের জন্য নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করে । এ ব্যাপারে হুগলী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সমন্বয়ে ৫টি উপকমিটি গঠন করে। এ সব কমিটি ইসয়ালে সাওয়াব চলাকালে সার্বক্ষণিকভাবে বিভিন্ন সেবাদান কার্যক্রম বাস্তবায়নে নিয়োজিত ছিল। এ ছাড়া, বর্জ্য নিষ্কাশন, ব্লিচিং পাউডার ও মশার ঔষধ সরবরাহ করে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করছে জেলা প্রশাসন ও স্থানীয় পঞ্চায়েত। তারা ইসয়ালে সাওয়াবের জন্য পর্যাপ্ত পানি সংযোগ ও ব্যবস্থাপনা জোরদার করেছেন। হুগলি জেলা প্রশাসন এবং পুলিশ প্রশাসন স্বরাস্ট্র মন্ত্রণালয়ের দিক-নিদের্শনায় বিভিন্ন কার্যাদি তদারকি করে। ইসয়ালে সাওয়াবে আগত মুসল্লিদের স্বাস্থ্য সেবা দিতে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা কাজ করছে। এবার প্রায় ৫০টি স্বেচ্ছাসেবী, সরকারি ও বেসরকারী সংস্থা স্বাস্থ্য সেবা প্রদান করছে বলে জানা গেছে। উল্লেখ্য, ১৮৯১ সালে দাদা হুজুর এই ইসয়ালে ছাওয়াবের প্রবর্তন করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।