Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

ফুরফুরা দরবার শরীফে এখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা জিকির আজগারে মশগুল

১২৬তম ঈসালে ছাওয়াবের মাহফিলের প্রথম দিন

| প্রকাশের সময় : ৬ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম


কলকাতা থেকে আবু হেনা মুক্তি : ফুরফুরা দরবার শরীফে এখন ধর্মপ্রাণ মুসলমানেরা জিকির- আজগারে মশগুল। এখান থেকে একদিন ভারতীয় উপমহাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দ্বীন প্রচারে বিপ্লব ঘটেছিল। দিন কায়েমের জন্য শত শত মানুষ শহীদ হয়েছিল।
শহীদানদের সেসব কবর এখনও কালের সাক্ষী দেয়। সেই ইসলাম প্রচারের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক মোজাদ্দেদে জামান ও ভারতীয় উপমহাদেশের প্রখ্যাত আলেম ইসলামী চিন্তাবিদ, সমাজ সংস্কারক হযরত আবু বক্কর সিদ্দিকী (রহ:)-এর নসিয়ত অনুযায়ী গতকাল রবিবার কলকাতার হুগলী জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৪ দিনব্যাপী ১২৬তম  ঈসালে সাওয়াবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হয়। এই ঐতিহ্যবাহী দোয়া মাহফিল এবং গোটা ঈসালে সাওয়াবের সার্বিক তত্ত¡াবধানে রয়েছেন আল্লামা পীরজাদা হযরত মাওলানা জাবিউল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:)। এর পূর্বে ঈসালে সাওয়াব পরিচালনা করতেন পীরজাদা  জাবিউল্লাহ সিদ্দিকীর পিতা মরহুম আল্লামা পীর বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকী (রহ:)। গতকাল রবিবার থেকে ঈসালে সাওয়াবের পূর্ণাঙ্গ কার্যক্রম জিকির-আজগার ও আলেমদের বয়ান এবং ওয়াজ নসিয়ত শুরু হয়। আগামী ৮ মার্চ ফজর বাদ আখেরী মোনাজাতের মাধ্যমে ঈসালে সাওয়াবের সমাপ্তি হবে। প্রতি বছর এখানে লাখ লাখ দেশি-বিদেশি ধর্মপ্রাণ মুসলমান ঈসালে সাওয়াবে অংশগ্রহণ করেন।
গতকাল কলকাতার হুগলী জেলায় অবস্থিত ফুরফুরা দরবার শরীফে ৪ দিনব্যাপী ১২৬তম  ঈসালে সাওয়াবের প্রথম দিন দোয়া ও ওয়াজ মাহফিল এবং জিকির-আজগারের মাধ্যমে অতিবাহিত হয়। সাথে সাথে বিভিন্ন দেশ-বিদেশি মুসল্লিদের ভিড়ও বাড়তে থাকে। জোহরের নামাজ আদায় করার জন্য গোটা ফুরফুরার ময়দানে ১০ লক্ষাধিক লোকের সমগাম ঘটে। মাগরিব নামাজ শেষে বিশ্ব মুসলিম উম্মাহর শান্তি কামনা, মুসলমানদের ওপর সকল নির্যাতনের বিরুদ্ধে আল্লাহর দরবারে বিচার প্রার্থনা এবং আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠায় বিশেষ দোয়া করা হয়। রবিবার বাদ ফজর থেকেই ধর্মপ্রাণ মুসল্লিদের জিকির-আজকার, ইবাদত-বন্দেগিতে ফুরফুরা দরবার শরীফ এক পবিত্র পুণ্যভূমিতে পরিণত হয়। জোহরের নামাজ ঘিরে সকাল থেকেই ফুরফুরার ময়দানে জনস্রোত নামে।
আল্লামা পীরজাদা হযরত মাওলানা জাবিউল্লাহ সিদ্দিকী (মাদ্দা:) হুজুর বলেন, ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ’ এই কলেমার বার্তা নিয়ে পৃথিবীতে আগমন করেন সর্বশেষ্ঠ রাসূল, আমাদের প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ ছাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। তিনি এসে তাঁর স¤প্রদায়কে কলেমার দাওয়াত দেন। সারাবিশ্বকে জানিয়ে দেন আল কোরআন হচ্ছে পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। সেই প্রিয় নবীর আহŸান অনুযায়ী অর্থাৎ কোরআন ও হাদিসের আলোকে আমাদের জীবন পরিচালনা করতে হবে। হুজুর বলেন, ইলমে মারেফাত শরীয়ত তরিকত হাকিকাত হাসিলের মাধ্যমে একজন মানুষ সঠিক ও সুন্দরভাবে জীবন পরিচালনা এবং এশকে ইলাহী অর্জন করতে পারে।  
আয়োজকরা জানান, মুসল্লিদের অবস্থানের জন্য প্রায় ৯-১০ বর্গকিলোমিটারব্যাপী রাস্তা ও ছোট ছোট কয়েকটি মাঠ প্রস্তুত রাখা হয়েছে যাতে প্রায় ২৫-৩০ লাখ লোক একসাথে অবস্থান করতে পারবে। এছাড়া প্রতিদিন নতুন নতুন ২০-৩০ লাখ লোকের আগমন ঘটবে এবং ওই পরিমাণ লোক প্রতিদিন মাহফিল থেকে বিদায় নেবেন। এতে প্রায় ৭-৮ হাজার  স্বেচ্ছাসেবক কাজ করছে।
এছাড়া পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সহযোগিতায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থার পাশাপাশি অন্তত নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ২৫-৩০টি হাইভোল্টেজ অটোজেনারেটর রয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার মুসল্লিদের খাবার পানি ও অজুু-গোসলের জন্য বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের ব্যবস্থা নিয়েছে। মুসল্লিদের চিকিৎসাসেবায় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের তত্ত¡াবধানে কয়েকটি দাতব্য চিকিৎসাসেবা কেন্দ্র খোলা হয়েছে। যেখান থেকে ফ্রি চিকিৎসাসেবা ও ওষুধ প্রদান করা হবে। গরমের জন্য জাকেরীনরা নিজ খরচায় ৪ দিনব্যাপী ফ্রি লেবুর শরবত প্রদান করবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুসল্লিদের পাশাপাশি এবারের মাহফিলে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ, বাংলাদেশ, সউদী আরব, ওমান, দুবাই, বাহরাইন, মালয়েশিয়া, লন্ডন ও আমেরিকাসহ বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট আলেম-ওলামা ও  মেহমানগণ উপস্থিত হচ্ছেন। দেশ-বিদেশের বিশিষ্ট  মেহমানদের জন্য রয়েছে আলাদা মেহমানখানা।



 

Show all comments
  • সাকিব ১ এপ্রিল, ২০১৮, ৮:৩৫ পিএম says : 0
    বাকী বিল্লাহ সিদ্দিকী (রহ:) এর ইন্তেকাল কবে হয়েছিল ???
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ