মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
শ্রীলঙ্কার ক্যান্ডিতে চলমান বৌদ্ধ-মুসলিম দাঙ্গা ঠেকাতে দেশজুড়ে জারি করা ১০ দিনের জরুরি অবস্থার মধ্যেই আবারও দাঙ্গাকারীরা মাঠে নামে। পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাসের শেল ছুড়েছে। দেশটির এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে।
পুলিশের মুখপাত্র রুয়ান গুনাসেকারা গতকাল বুধবার বলেন, ক্যান্ডির শহরতলি ম্যানিকিন্নাতে গত মঙ্গলবার রাতভর এ সংঘর্ষ চলে। এতে অন্তত তিন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছেন। কারফিউ ভঙ্গ ও অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরির দায়ে সাতজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কলম্বো থেকে ১১৫ মাইল পূর্বে ক্যান্ডির সব স্কুল গতকাল বন্ধ রাখা হয়েছে। শহরে কারফিউর পাশাপাশি ভারী অস্ত্রবাহী পুলিশ মোতায়েন থাকবে। মূলত চা-চাষ ও বৌদ্ধ প্রতœতত্তে¡র জন্য পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় ক্যান্ডি শহর। এ অবস্থায় যুক্তরাজ্য সরকার শ্রীলঙ্কায় থাকা নিজের দেশের নাগরিকদের প্রতি ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। তাদের সাবধানতা অবলম্বন করতে, সব ধরনের বিক্ষোভ ও মিছিল এড়িয়ে চলতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আদেশ মেনে চলতে বলা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শ্রীলঙ্কায় থাকা নিজ দেশের নাগরিকদের পরিস্থিতি সম্পর্কে সজাগ থাকতে স্থানীয় গণমাধ্যমে নজর রাখতে বলেছে। গত দুই দিনের এ দাঙ্গায় ১৫০টির বেশি বাড়ি, দোকান ও যানবাহন পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। দুজন নিহত হয়েছে।
ঘটনার সূত্রপাত গত সপ্তাহে। ক্যান্ডির মুসলিম মালিকানাধীন দোকানে বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সিংহলিদের খাবারে গর্ভনিরোধক কিছু মিশিয়ে দেওয়া হয়েছে- এ অভিযোগ তুলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। বৌদ্ধ জঙ্গিরা স্থানীয় একটি মসজিদেও হামলা চালায়। সরকার এ ধরনের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে নাকচ করে দেয়। যারা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছে, তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেয়। এরই মধ্যে ক্যান্ডিতে এক সিংহলি খুন হন। এর জের ধরে গত সোমবার মুসলমানদের বাড়ি, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদে ব্যাপক ভাঙচুর চালানো হয়। পরিস্থিতি সামাল দিতে কারফিউ জারি করা হয়। কিন্তু কারফিউ না মেনে সহিংসতা চলতে থাকে। জ্বালিয়ে দেওয়া বাড়ি থেকে গত মঙ্গলবার একজন মুসলিমের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এতে সহিংসতা আরও বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কায় কারফিউর মেয়াদ বাড়ানোর পাশাপাশি ভারী অস্ত্রবাহী বিশেষ টাস্কফোর্স মোতায়েন করা হয়েছে। এ ঘটনায় ২০ জনের বেশি মানুষকে আটক এবং তদন্ত কমিটি গঠন করেছে পুলিশ।
গত মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার পার্লামেন্ট মুসলিম স¤প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চেয়েছে। ২ কোটি ১০ লাখ মানুষের এই দেশের ১০ শতাংশ মুসলিম।
এন্টারপ্রাইজ ডেভেলপমেন্ট মন্ত্রী ল²ণ কিরেইলা পার্লামেন্টে বলেন, ‘বর্বর এই ঘটনার জন্য আমরা মুসলিম স¤প্রদায়ের কাছে ক্ষমা চাইছি।’ নগরপরিকল্পনামন্ত্রী রাউফ হাকিম দাঙ্গার এ ঘটনাকে ‘নিরাপত্তার ব্যাপক ঘাটতি’ বলে উল্লেখ করেন এবং এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সরকারি বাহিনীর সঙ্গে তামিল বিদ্রোহীদের গৃহযুদ্ধের সময় প্রায় তিন দশক জরুরি অবস্থার মধ্যে ছিল এই দ্বীপরাষ্ট্র। ২০০৯ সালে গৃহযুদ্ধের অবসান হয়। এরপর এই প্রথম শ্রীলঙ্কায় আবার জরুরি অবস্থা জারি করা হলো। এ জন্য দেশজুড়ে ১০ দিনের জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছে।
গত নভেম্বরে দাঙ্গায় একজন নিহত এবং বাড়ি-গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছিল। ২০১৪ সালে বৌদ্ধ ও মুসলমানদের দাঙ্গায় চারজন নিহত হয়। এসব ঘটনার জন্য বৌদ্ধ জঙ্গি গোষ্ঠীকে অভিযুক্ত করে এর কয়েকজন নেতাকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে। সিংহলিরা দেশটির মোট জনসংখ্যার তিন-চতুর্থাংশ এবং মুসলিমরা মাত্র ১০ শতাংশ।
ফেসবুক-ভাইবার বন্ধ
এদিকে দেশটিতে ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়্যাটস অ্যাপসহ কিছু সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তিন দিনের জন্য দেশজুড়ে এসব সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম বন্ধ রাখা হবে। গতকাল বুধবার এ সিদ্ধান্তের কথা জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার টেলিকমিউনিকেশনস রেগুলেটরি কমিশনের (টিআরসি) কর্মকর্তারা।
খবরে বলা হয়েছে, সা¤প্রদায়িক সহিংসতা ঠেকানোর জন্য দেশটির সরকার এ পদক্ষেপ নিয়েছে। শ্রীলঙ্কার মন্ত্রিসভার মুখপাত্র রাজিথা সেনারতেœ বলেন, সোশ্যাল মেসেজিং নেটওয়ার্কগুলো বন্ধ করার জন্য সেবাপ্রদানকারী প্রতিষ্ঠানের প্রতি আহŸান জানিয়েছে সরকার। তিনি আরও জানান, মুসলিমদের ওপর হামলা চালানোর জন্য ফেসবুকে কিছু উসকানিমূলক পোস্ট দেখার পর সরকার এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
ওদিকে টিআরসির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, ‘ফেসবুক, ভাইবার ও হোয়্যাটস অ্যাপ ৭২ ঘণ্টার জন্য বন্ধ রাখার কথা সব গ্রাহককে জানাবেন টিআরসির মহাপরিচালক।’ সূত্র : এএফপি, রয়টার্স ও বিবিসি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।