পশ্চিম তীরে সহিংসতা আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ
জর্ডানের বাদশাহ আবদুল্লাহ মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এই বৈঠকে তিনি বলেছেন, ফিলিস্তিনের
পাকিস্তানে দীর্ঘদিনের মার্কিন প্রভাব যখন ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে, তখন দেশটির সাবেক শত্রæ রাশিয়া ইসলামাবাদের সাথে সামরিক, কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক গড়ে তুলছে। এর ফলে এ অঞ্চলে ঐতিহাসিক জোটের পরিবর্তন ঘটতে এবং মস্কোর জ¦ালানি কোম্পানিগুলোর জন্য দ্রæতবর্ধমান গ্যাস বাজার উন্মুক্ত হতে পারে। বিশ্লেষকদের মতে, গ্যাস ও ক‚টনীতির মধ্য দিয়ে রাশিয়া ঠান্ডা লড়াইয়ের সময়কার শত্রæ পাকিস্তানকে কাছে টানছে।
রাশিয়া ইসলামাবাদের সাথে এমন সময়ে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলছে যখন আফগানিস্তানের যুদ্ধকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্কের ক্রমেই অবনতি ঘটছে। এটা গত শতকের ’৮০-র দশকের সম্পর্কের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন। সে সময় পাকিস্তান সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াইরত আফগান যোদ্ধাদের অস্ত্র সরবরাহ ও মার্কিন গুপ্তচরদের সীমান্ত পেরিয়ে আফগানিস্তানে প্রবেশে সাহায্য করেছিল।
কার্যত মস্কো-ইসলামাবাদ সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা এখনো শৈশবস্থায়ই রয়েছে। এদিকে প্রতিবেশি চীন পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের শূন্যস্থান পূরণে এগিয়ে এসেছে। এর মধ্যে জ¦ালানি চুক্তি ও ক্রমবর্ধমান সামরিক সহযোগিতা বহু বছর ধরে মৃত রাশিয়া-পাকিস্তান সম্পর্ককে নতুন করে জীবনদান করেছে।
পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খুররম দস্তগির খান রয়টারসকে বলেন, এটা কেবল শুর্।ু উভয় দেশকেই অতীত ভুলে ভবিষ্যতের দরজা খোলার জন্য কাজ করতে হবে।
ইসলামিক স্টেটকে পর্যবেক্ষণ
মস্কো-ইসলামাবাদ সম্পর্কের মূল লক্ষ্য এখন পর্যন্ত আফগানিস্তান। সেখানে রাশিয়া তালিবানের সাথে সম্পর্ক লালন করছে যারা মার্কিন সৈন্যদের বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং ইসলামাবাদের সাথে রয়েছে ঐতিহাসিক সম্পর্ক। মস্কো বলছে, তারা শান্তি আলোচনাকে উৎসাহিত করছে।
রাশিয়া ও পাকিস্তান উভয়েই আফগানিস্তানের অভ্যন্তরে ইসলামিক স্টেটের (আইএস) উপস্থিতি বিষয়ে উদ্বিগ্ন। কাবুলের সাথে মস্কোরও উদ্বেগ যে আইএসের যোদ্ধারা মধ্য এশিয়া ও রাশিয়ার কাছাকাছি ছড়িয়ে পড়তে পারে। পাকিস্তানে আইএস ইতোমধ্যেই বড় ধরনের বেশ কিছু হামলা চালিয়েছে।
শহিদ খান আব্বাসি রয়টারসকে বলেন, ক‚টনৈতিক পর্যায়ে অধিকাংশ বিষয়েই আমাদের অবস্থান অভিন্ন। আমাদের সম্পর্ক ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য ভাবে বৃদ্ধি পাবে।
গত মাসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী খাজা আসিফের মস্কো সফরের সময় দু’দেশ এ অঞ্চলে আইএসের হুমকি মোকাবেলায় সামরিক সহযোগিতার ব্যাপারে একটি কমিশন প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন।
তারা দু’দেশের মধ্যে ২০১৬ সালে শুরু বার্ষিক সামরিক প্রশিক্ষণ মহড়া অব্যাহত রাখতে সম্মত হয়েছেন। পাকিস্তান ৪টি রুশ হেলিকপ্টার বিক্রির পাশাপাশি মস্কো ইসলামাবাদকে পাকিস্তান বিমান বাহিনীর জেএফ-১৭ জঙ্গি বিমানের জন্য রুশ ইঞ্জিন বিক্রি করতে সম্মত হয়েছে। পাকিস্তান জেএফ-১৭ জ্িঙ্গ বিমান দেশে সংযোজন করে।
ভারতের উদ্বেগ
মস্কো-ইসলামাবাদ দাঁতাতকে সন্দেহের চোখে দেখছে পাকিস্তানের প্রতিবেশি ও প্রধান শত্রæ ভারত। ভারত শীতল যুদ্ধের দিনগুলোতে ব্যাপক ভাবে সোভিয়েত শিবিরে ছিল। বিগত দু’টি দশকে রুশ-ভারত ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের গুরুত¦পূর্ণ দিক ছিল নয়াদিল্লীর কাছে মস্কোর বিপুল পরিমাণ অস্ত্র বিক্রি। রাশিয়া তখন ভারতকে বলত কৌশলগত অংশীদার।
নয়াদিল্লী ভিত্তিক অবজার্ভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সাথে ভারতের সম্পর্ক বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সুশান্ত সারিন বলেন, রাশিয়া যদি রাজনৈতিক পর্যায়ে পাকিস্তানিদের ব্যাপক ভাবে সমর্থন করতে শুরু করে তাহলে তা আমাদের জন্য সমস্যা সৃষ্টি করবে।
পাকিস্তানের সাথে রাশিয়ার সম্পর্ক বিষয়ে মন্তব্য করতে অনুরোধ করা হলে ভারতের পররাষ্ট্র মস্ত্রণালয় জবাব দেয়নি। তবে আেেগ তারা বলেছিল যে মস্কোর সাথে নয়াদিল্লীর সম্পর্ক সময়ের পরীক্ষায় উত্তীর্ণ। দু’দেশ ভারতে পারমাণবিক চুল্লি বিষয়ে সহযোগিতাসহ প্রতিরক্ষা ও জ¦ালানি সম্পর্ক গড়ে তুলছে।
ঐতিহাসিক ভুল
পাকিস্তানের প্রতি রাশিয়ার আগ্রহ জঙ্গিদের সাথে কথিত সংযোগের জন্য অভিযুক্ত দেশটিকে পাশ্চাত্যের সাথে বিরোধে জড়িয়ে পড়ার মুখে অতি প্রয়োজনীয় ক‚টনৈতিক জীবনসূত্র প্রদান করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের আহবানে ও ব্রিটেন, ফ্রান্স ও জার্মানির সমর্থনে বৈশি^ক আর্থিক তদারককারী প্রতিষ্ঠান ফিন্যান্সিয়াল অ্যাকশন টাস্কফোর্স (এফএটিএফ) গত মাসে সন্ত্রাসীদের অর্থায়ন যথেষ্ট ভাবে নিয়ন্ত্রণ না করা দেশগুলোর তালিকায় পাকিস্তানের নাম অন্তর্ভুক্ত করে। এটা দেশটির দুর্বল অর্থনীতির জন্য সম্ভাব্য ক্ষতিকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ইসলামাবাদের বিরুদ্ধে যে ব্যবস্থা নিয়েছে পাকিস্তান তাকে হয়রানিকর বলে প্রত্যাখ্যান করেছে। ওয়াশিংটন জানুয়ারিতে ২শ’ কোটি ডলারের সামরিক সাহায্য প্রদান স্থগিত করে।
পররাষ্ট মন্ত্রী আসিফ বলেন, তার দেশের পাশ্চাত্যের দিকে শতকরা ১০০ ভাগ ঝুঁকে পড়া ঐতিহাসিক ভুল। আমরা এখন ঘরের কাছে মিত্র গড়ে তুলতে আগ্রহী। যেমন চীন, রাশিয়া ও তুরস্ক। তিনি বলেন, আমরা ৭০ বছর ধরে আমাদের পররাষ্ট্র নীতির ভারসাম্যহীনতা শুধরাতে চাই। আমরা পশ্চাত্যের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করতে চাই না, তবে তাতে ভারসাম্য আনতে চাই। আমরা এ অঞ্চলে আমাদের বন্ধুদের সাথে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক স্থ’াপনে আগ্রহী।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী খান বলেন, ঐতিহ্য্রগত ভাবে মার্কিন অস্ত্রশস্ত্র ও বিমানের উপর নির্ভরশীল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর হয়ত রাশিয়ার মত দেশগুলো থেকে অস্ত্রশস্ত্র কেনা ছাড়া আর উপায় থাকবে না।
শীতল সম্পর্ক
ওয়াশিংটনের সাথে শীতল সম্পর্ক ইসলামাবাদকে চীনের কাছে নিয়ে গেছে। চীন পাকিস্তানে অবকাঠামো খাতে প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে। তবে ক‚টনীতিকরা বলছেন, বেইজিংয়ের উপর ক‚টনৈতিক ভাবে অতিরিক্ত নির্ভর হয়ে পড়া পাকিস্তানকে দুঃশ্চিন্তায় ফেলেছে।
স্টকহোম আন্তর্জাতিক শান্তি গবেষণা কেন্দ্রের সিনিয়র গবেষক পেটর টোপিচকানভের মতে, ওয়াশিংটনের সাথে শীতল সম্পর্কের প্রেক্ষিতে কিছু দেশকে মস্কো নিজের কাছে টেনেছে। যেমন ফিলিপাইন ও কাতার। পাকিস্তানও অনুরূপ দেশ। পাকিস্তানের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাশিয়ার দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্য স্পষ্ট নয়।
ইসলামাবাদের সাথে ক্রমবর্ধমান ঘনিষ্ঠতা বিষয়ে মন্তব্য করার জন্য রাশিয়ার পররাষ্ট্র মস্ত্রণালয়কে অনুরোধ করা হলেও তাৎক্ষণিক কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
বিদ্যুত প্রকল্প
পাকিস্তানের জ¦ালানি কর্মকর্তারা বলেন, রাশিয়া ও পাকিস্তান ১ হাজার কোটি ডলারের সম্ভাব্য কয়েকটি জ¦ালানি চুক্তি স্বাক্ষরের ব্যাপারে আলোচনা করছে।
আসিফ বলেন, ৪ থেকে ৫টি বৃহৎ বিদ্যুত প্রকল্প আমাদের সম্পর্ক আরো দৃঢ় করবে।
রাশিয়া গত মাসে খাইবার পাখতুনখাওয়া প্রদেশে একজন অনারারি কন্সাল জেনারেল নিযুক্ত করেছে। রাশিয়ার কোম্পানিগুলো সেখানে একটি ক্তেল শোধনাগার ও একটি বিদ্যু কেন্দ্র নির্মাণের জন্য আলোচনা করছে।
কিšুÍ বড় চুক্তিগুলোতে পাকিস্তানে গ্যাস সরবরাহ ও অবকাঠামো নির্মাণ বিষয়ে গুরুত¦ আরোপ করা হয়েছে। পাকিস্তান এখন বিশে^র অন্যতম দ্রæত বিকাশমান তরলিকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস আমদানির বাজার।
একজন সিনিয়র পাকিস্তানি জ¦ালানি কর্মকর্তা বলেন, কৌশলগত ভিত্তিতে রাশিয়া খুব দ্রæত জ¦ালানি বিষয়ে এগিয়ে আসছে।
অক্টোবরে রাশিয়া ও পাকিস্তান জ¦ালানি বিষয়ে একটি আন্তঃসরকার চুক্তি (আইজিএ) স্বাক্ষর করেছে। এর ফলে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় প্রক্তিষ্ঠান গ্যাজপ্রমের পাকিস্তানে এলএনজি সরবরাহ বিষয়ে পথ প্রশস্ত হয়েছে।
তিন মাসের মধ্যে আলোচনা শেষ হবে বলে আশা করা হচ্ছে। পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের মতে, একটি দীর্ঘমেয়াদী সরবরাহ চুক্তি লাভের ক্ষেত্রে গ্যাজপ্রমকেই অগ্রগণ্য বলে বিবেচনা করা হচ্ছে।
৯শ’ কোটি ডলার চুক্তি
দ্বিমাসিক এলএনজি কার্গো সরবরাহের ভিত্তিতে ১৫ বছর মেয়াদে এটি হবে ৯শ’ কোটি ডলারের চুক্তি।
এদিকে লাহোর থেকে বন্দর নগরী করাচি পর্যন্ত ১১ শ’ কিমি (৬শ’ মাইল) দীর্ঘ রাশিয়ার নির্মিতব্য গ্যাস পাইপ নির্মাণের কাজ বাস্তবায়নের সম্ভাবনা জোরদার হয়েছে।
রাশিয়ান কংগেøামারেট রোজটেকের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা , সে সাথে উত্তর-দক্ষিণ পাইপ লাইন বিষয়ে বিতর্কের কারণে ২০১৫ সালে স্বাক্ষরিত ২শ’ কোটি ডলারের এ প্রকল্প স্থগিত রেেয়ছে।
১৯৭০-এর দশকের গোড়ার দিকে রুশ প্রকৌশলিরা পাকিস্তান স্টিল মিলস ইঞ্জিনিয়ারিং কমপ্লেক্স নির্মাণের পর উত্তর-দক্ষিণ পাইপ লাইনই হবে রাশিয়ার সাথে চুক্তি করা সর্ববৃহৎ প্রকল্প।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী খান বলেন, একটি রুশ কোম্পানি অব্যবহৃত সোভিয়েত নির্মিত ইস্পাত কারখানাটি গ্রহণের জন্য চুক্তির ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।