পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
ঐক্যবদ্ধ ভাবে আন্দোলন করে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করার আহবান জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্টজনেরা। তাদের বক্তব্য সব দলের অংশগ্রহণে এবং জনগণের ভোটের অধিকার আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিশ্চিত করা না গেলে দেশের গণতন্ত্রে বিপর্যয় নেমে আসবে। জনগণের ভোট ছাড়াই বর্তমান সরকার গায়ের জোরে ক্ষমতায় আছে, ব্যাপক দুর্নীতি করছে এবং সাংবিধানিক ভাবেও বৈধ নয় বলে তারা মত দেন। গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স রুমে এই সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। নাগরিক ঐক্য আয়োজিত ‘দুর্নীতি’ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। সেমিনারে সংবিধান বিশেষজ্ঞ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, গবেষক, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ ও পেশাজীবীরা অংশগ্রহণ করেন। বক্তারা বলেন, নানা পন্থায় দেশের জনগণের কথা নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে। সরকার আইনের মাধ্যমে এখন জনগণকে ‘সোফিয়া রোবট’ বানাতে চায়। এ জন্য ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা সংযোজন করা হচ্ছে।
সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ তুলে এবং সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করার দাবি জানিয়ে তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিস্টার মইনুল হোসেন বলেন, আমরা যতই কথা বলি কোনও লাভ নাই। আমাদের কথাবার্তাকে ‘বাকোয়াস’ বলা হয়। দেশে স্বৈরশাসন প্রতিষ্ঠায় আমাদের পুলিশ, আমাদের কর্মকর্তারা সাহায্য করছে। পুলিশ কখনও রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে না। তারা শুধু সন্ত্রাসী ধরতে পারে। একমাত্র রাজনৈতিক দলগুলোই আলোচনা করে রাষ্ট্রে শান্তি আনতে পারে। উগ্র বামপন্থীরা আমাদের রাজনীতি ধ্বংস করে যাচ্ছে। পাকিস্তান আমলে স্বৈরশাসক আমাদের যে অপমান করতে পারেনি, তারচেয়ে বেশি অপমান হচ্ছি এখন। রাজনীতিতে উগ্র বামপন্থীদের প্রভাব ব্যাপক। বামপন্থীরা মাওলানা সাহেবদের মৌলবাদী হতে সহায়তা করছে। জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে না পারলে যে বিপর্যয় নেমে আসবে সরকার সেটা ভ্রæক্ষেপ করছে না।
৬ মাসের মধ্যে জনগণের ভোটের অধিকার আদায় সম্ভব এমন অভিমত ব্যক্ত করেন নাগরিক ঐক্যের আহŸায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ জানুয়ারী যা হয়েছে তা ভোট নয়। অনৈতিক ভাবে সরকার ক্ষমতায় রয়েছে। এখন জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দিতেই হবে। জাফর ইকবালের ওপর হামলা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, ‘এগুলো যারা করে তারা বিপদগামী। এটা করে বেহেশতে যাওয়া যায় না।’ আমার কথা হলো খুন জখম করে বেহেশতে যাওয়া যানা ঠিকই, তাহলে ক্রসফায়ার করে কীভাবে বেহেশতে যাওয়া যায়? মানুষ রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে যান, মাসের পর মাস খোঁজ থাকে না। ছয় মাস পরে এক বছর পরে তার লাশ পাওয়া যায়। যারা এসব করছে তারা বেহেশতে যাবে কীভাবে? কার বা কাদের নির্দেশে ক্রসফায়ার হয়? দেখতে দেখতে সবার ভেতর একটা ভয় ঢুকে গেছে। তিনি আরো বলেন, ‘৭২-এর সংবিধান নিয়ে আমরা অনেক সুন্দর সুন্দর কথা বলি, কিন্তু সেই ৭২-এর সংবিধানে ৫ জানুয়ারির মতো অবৈধ নির্বাচনের কথা বৈধ বলা হয়েছে। এই সরকার টিকে আছে শুধু গায়ের জোড়ে। এই জনগণ যদি কখনো ফুঁসে ওঠে তাহলে এই সরকার এক বিন্দু পর্যন্ত টিকতে পারবে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে যা দুর্নীতি হয়, তার প্রায় সব টাকাই বিদেশে পাচার হয়ে যায়। বিদেশে টাকা পাচার হওয়া রোধে সরকারকে অবশ্যই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কারণ এই টাকা জনগণের। দুর্নীতি বিশ্বের অনেক দেশেও হয়, সেসব দেশে এর বিরুদ্ধে কঠিন শাস্তির ব্যবস্থাও আছে। সেখানে বাংলাদেশে এই শাস্তির ব্যবস্থা না থাকায় দুর্নীতির মাত্রা অহরহ বাড়ছে। এর লাগাম এখন টেনে না ধরলে বাংলাদেশের অবস্থা ভবিষ্যতে করুণ হবে। তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক কারণে ব্যাংকে বিভিন্ন কারণে প্রতিনিয়ত বিধান পরিবর্তন হচ্ছে। এটি দেশের অর্থনীতির জন্য সুখকর নয়। ব্যাংকের বিরুদ্ধে যখনই কোনো অভিযোগ আসবে, তখনই দ্রæত তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। এতে করে দুর্নীতিবাজরা সহজে পার পাবে না।
তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন আহমেদ বলেন, যে দেশে প্রধানমন্ত্রী সংসদে বলতে পারে প্রশ্নফাঁস আগেও হয়েছে তার এমন কথার বলার পর প্রশ্নফাঁস বন্ধ করা যাবে। মনে করছিলাম ফ্যাসিবাদ দেখবো না। নিজেকে সৌভাগ্য মনে করেছি। সেই ফ্যাসিবাদ সরকার একেবারে আমাদের দেশেই হুবহুব দেখছি। সেতু ও সড়ক মন্ত্রী তো মন্ত্রীত্ব থাকার কথা নয় সড়কের যে আবস্থা। নির্বাচন কমিশন কি করবে তা আমরা বুঝতে পারছিনা। এই নির্বাচন কমিশনের উপর আস্থা রাখা যায় না। নির্বাচন কমিশন যদি নিরপেক্ষভাবে সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত না করতে পারে তাহলে দেশে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে র্যাগিংয়ের দায়ে ছাত্রলীগের যে কর্মীদের বহিষ্কার করা হয়েছিল তাদেরই। কেউ হাবাগোবা দাড়িওয়ালা এই ছেলেকে দিয়ে জাফর ইকবালের ওপর ছুড়িকাঘাতের ঘটনা ঘটিয়েছে কিনা দেখতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, যে দেশে স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার নেই, গণতন্ত্র নেই, জবাবদিহিতার জায়গাটুকু নেই, সে দেশে দুর্নীতি হবেই। বাংলাদেশে অসীম ক্ষমতা আছে, কিন্তু জবাবদিহিতা নেই। সাংবিধানিকভাবে অবৈধ এই সরকার জনগণের সব অধিকার হরণ করে নিচ্ছে। যে দেশে একটি রায়কে কেন্দ্র করে প্রধান বিচারপতিকে দেশ থেকে বিতারিত করে দেয়া হয়, সে দেশে কী গণতন্ত্র আছে, তা দেশের মানুষ ভালো করেই জানে। বেগম জিয়ার রায়ের আগেই যদি দেশের প্রধানমন্ত্রী গণমাধ্যমে বলেন এতিমদের টাকা মেরে খাওয়ার অপরাধে তার কঠিন শাস্তি হবে; তাহলে যে বিচারপতি রায় দেবেন, তার রায় বদলানোর কোনো সুযোগ থাকে না। বাংলাদেশের মতো দুর্নীতিবাজ এই দেশে অবশ্যই জবাবদিহিতার ব্যবস্থা করতে হবে। তা হলো অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন। কারণ এতে করে দুর্নীতিবাজদের মনে একটা ভয় থেকে যাবে। অন্তত দুর্নীতি করতে গেলেও তাদের হাত কাঁপবে। দুর্নীতির পেছনে যে শক্তিধর মানুষ আছে, তাদের খুঁজে বের করে আনতে হবে। যারা দুর্নীতি করেন, তাদের মুখে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার কথা শুনলে আমার প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হয়। তারাই মূলত সবচেয়ে বড় চেতনা ভঙ্গকারী। দুর্নীতি কোনও সমস্যা না, সমস্যার আলামত। যে দেশে সুশাসন নাই, সেদেশে দুর্নীতি হবে না তো কী হবে? বাংলাদেশ হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে জনবহুল এককেন্দ্রিক সরকারের দেশ। নেপালের মতো অপেক্ষাকৃত কম জনসংখ্যার দেশেও প্রাদেশিক সরকার আছে। আমাদের দেশে ১৬ কোটি মানুষের জন্য একটি সরকার। এক ব্যক্তির কাছেই সব ক্ষমতা। একটি দৈনিক পত্রিকায় জাফর ইকবালের স্ত্রী ইয়াসমিন হকের সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম। সেখান থেকে জানতে পারলাম, একজন ছুরিকাহত লেখককে ২৪ ঘণ্টা কারও সঙ্গে দেখা করতে দেওয়া হবে না, সেটাও প্রধানমন্ত্রী নির্ধারণ করে দেন। আজকে আমাদের আদালতের অবস্থা দেখেন। ইনভেস্টিগেশন এবং প্রসিকিউশন কুক্ষিগত করা থাকে। নিম্ন আদালত এবং উচ্চ আদালতে কী হয় তা বলার অধিকার আইন দিয়ে খর্ব করা হয়েছে। এর উদাহরণ দিতে গেলে এক বিচারকের কথা বলতে হয়। তিনি র্যাবের বিরুদ্ধে মামলা আমলে নিয়েছিলেন, ফলশ্রæতিতে তার মামলা আমলে নেওয়ার ক্ষমতাই কেড়ে নেওয়া হয়েছে।
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, সরকার এখন জনগণের কথা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। তারা এখন জনগণকে ‘সোফিয়া রোবট’ বানাতে চায়। তারা চায় সরকার যাই শিখাবে জনগণ তা শুনবে এবং বলবে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৩২ ধারা হওয়ার মানে হচ্ছে বর্তমানে আমরা যা খবর পাচ্ছি তা সামনে আমরা পাবো না। যারা এই সরকারকে আন্তর্জাতিক পুরস্কার দেয় তারা হয়তো রসিক নয়তো উদার। সরকার এসব করে মানুষকে বোকা বানাতে চায়। যে দেশের একজন অর্থমন্ত্রী বলেন ব্যাংকের লোপাট হওয়া ৪ হাজার কোটি টাকা কোনো টাকা নয়, সে দেশে দুর্নীতি হয় না এটি একটি ভুয়া কথা। বাংলাদেশে এখন প্রতিটি সেক্টরে দুর্নীতি হচ্ছে। দেশের ব্যাংকগুলো এখন তলাবিহীন ঝুড়িতে পরিণত হচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটি দেশে সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংক হচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আর বাংলাদেশের সেই কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে বিশাল অংকের রিজার্ভ চুরি হয়ে যাচ্ছে। সেই থেকে বুঝা যাচ্ছে দেশে কী পরিমাণ দুর্নীতি হচ্ছে। দেশের অর্থনীতি এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছে। শুধু প্রবাসীদের টাকায় এখন দেশের অর্থনীতি কোনোরকম চলছে। দেশে এতো লুটপাট হচ্ছে, তাও এই টাকা দিয়ে দেশ এগুচ্ছে। বিশ্ব বাজারে তেলের দাম কমলেও এই দেশে তেলের দাম না কমার কারণ হলো ব্যালেন্স করা। দেশে এতো লুটপাট হচ্ছে ব্যাংক থেকে টাকা চলে যাচ্ছে। সেই টাকা সমান অনুপাতে রাখার জন্যই দেশীয় বাজারে কখনোই তেলের দাম কমে না।
গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা বলেন, আমাদের দেশে আইন করা হয় ফাঁক রেখে, যাতে উকিল সাহেবরা সুবিধা করতে পারেন। প্রক্রিয়াগতভাবে দুর্নীতি আমাদের ভেতরে ঢুকিয়ে দেওয়া হচ্ছে। এই যে নির্বাচনের বছর এলেই নানা রকম আন্দোলন, দাবি-দাওয়া আমরা এই প্রেসক্লাবের সামনেই দেখি। এর কারণ কী? কারণ, আন্দোলনকারীরা জানে শেষ সময়ে এসে চাপ না দিলে হবে না। অথচ এই দাবি দাওয়া একটি সুনির্দিষ্ট জায়গায় যাওয়ার কথা ছিল। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় ব্যর্থ হওয়ার কারণেই আমরা রাস্তায় আন্দোলন দেখতে পাই। আমাদের কর্মকর্তারা প্রজেক্টের কাজ খুব ভালোবাসেন। কারণ সেখানে অনেক দুর্নীতি করা যায়। প্রজেক্টে ট্রান্সফার করা হলে একজন কর্মকর্তা খুব খুশি হন। কিন্তু তাকে যদি কুতুবদিয়ায় পাঠানো হয়, তার খুব মেজাজ খারাপ হয়।
সেমিনারে দেশের বিভিন্ন পর্যায়ের দুর্নীতি চিত্র তুলে ধরে ৯ পাতার একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন নাগরিক ঐক্যের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহেদ-উর-রহমান। সেমিনারে বক্তৃতা করেন তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ব্যারিষ্টার মইনুল হোসেন, আরেক সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান, গণস্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আসিফ নজরুল, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন আহমেদ, তেল গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ, গবেষক গওহর নাঈম ওয়ারা প্রমূখ।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।