পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টাফ রিপোর্টার
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিশ্চিত না গেলে দেশের আবার রাজনৈতিক বিপর্যন নেমে আসবে; এবং মহাসংকট সৃষ্টি হবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছেন দেশের বুদ্ধিজীবী, নির্বাচন বিশেষজ্ঞ, রাজনীতিক ও আইনজীবীরা। তাদের বক্তব্য হলো দেশ-বিদেশ সবাই চায় সব দলের অংশ গ্রহণে গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। আর সেটা করতে হলে সব দলকে প্রচরণায় সমান সুযোগ দিতে হবে। সেদিকে না গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নির্বাচন প্রচারণা চালাবে আর মাঠের বিরোধী দল বিএনপিসহ অন্যান্য দলগুলোকে সভা সমাবেশ করতে দেয়া হবে না এমন পরিস্থিতি দেশকে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারীর মতো পাতানো নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেবে। আর ৫ জানুয়ারীর ওই নির্বাচনকে ফোরটুয়েন্টি নির্বাচন হিসেবে অবিহিত করে তারা বলেন, এ ধরণের চেস্টা গণতন্ত্রকে অন্ধকারে ঠেলে দেবে।
স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস উপলক্ষে শুক্রবার জাতীয় প্রেসক্লাবে এক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। স্বাধীনতার পতাকা উত্তোলন দিবস জাতীয় উদযাপন কমিটি আয়োজিত সভায় বক্তারা স্পষ্ট করে বলেছেন, জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়াই হলো মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা। জনগণের ভোটের অধিকার নিয়ে যারা কথা বলবেন তিনি দেশী হোক আর বিদেশী হোক তাদের পক্ষ্যেই মানুষ থাকবে। দেওয়ালের লেখা ও বাতাসের আওয়াজ তাই বলে। একই ধরনের বক্তব্য বিভিন্ন টিভির টকশোতে আলোচকরা বলছেন। এর আগে চট্টগ্রামে এক সেমিনারে স্থানীয় সরকার ও নির্বাচন বিশেষজ্ঞ সুজনের সাধারণ সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সব দলের অংশগ্রহণ ব্যাতিরেখে যদি ৫ জানুয়ারীর মতো এবারও নির্বাচন করার চেস্টা হয়; তাহলে দেশে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে। দেশের গণতন্ত্র চরম বিপদসীমার চলে যাবে। এ ছাড়াও গত কয়েক দিনে রাজধানী ঢাকায় ও ঢাকার বাইরে যেসব সভা সেমিনার সিম্পোজিয়াম হয়েছে তাকে সব দলের অংশগ্রহণে আসন্ন নির্বাচন নিশ্চিত করার প্রতি জোর দিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করা হয় যদি ক্ষমতাসীনরা আবারও ফাঁকা মাঠে গোল দেয়ার নির্বাচনের স্বপ্ন দেখেন তা হলে আত্মঘাতির নামান্তর। এ ধরনের চেস্টা দেশকে বিপজ্জনক পথে ঠেলে দেবে।
পতাকা উত্তোলন দিবসে সাবেক প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেছেন, পাকিস্তান আমলে গণতন্ত্র অবাধ বিচরণের অধিকার থেকে আমাদের বঞ্চিত করেছিল বলেই আমরা তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছিলাম। কিন্তু এখন এ কী গণতন্ত্র আছে? মন্ত্রী, এমপির পদে থেকে সরকারি গাড়ি ও হেলিকপ্টার ব্যবহার করে মিছিল-সমাবেশ ও ভোট করবেন; আর অন্যদের মিটিং-মিছিল করতে দেবেন না, তা হয় না। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে নির্বাচন দিন। তা না হলে আবার বিপর্যয় নেমে আসবে। গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এই দেশ এক দল বা এক নেত্রী নয়। তাই এদেশে একদলীয় শাসন বা রাজতন্ত্র হতে পারে না। জনগণকে ভোটের অধিকার থেকে বঞ্চিত করার ক্ষমতা কারো নেই। অতীতে সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তত্তাবধায়ক সরকারের দাবিতে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আন্দোলন করেছিলেন। কিন্তু এখন সুষ্ঠু নির্বাচনই হুমকির মুখে। নিরপেক্ষতা কী তা আমরা সবাই জানি। বিচারক নিরপেক্ষ না হলে সুষ্ঠু বিচার হয় না। বাঙালি অনেক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে, মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে, প্রতিটি পরিবার কাউকে না কাউকে হারিয়ে এই সচেতনতা অর্জন করেছে। কিন্তু আমাদের একটা স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। স্বাধীনতা এলেও স্বপ্ন পূরণ হয়নি। নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত হয়নি। গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি। আমরা আর ২০১৪ সালের মতো নির্বাচন চাই না। আওয়ামী লীগ একা নির্বাচন একা করতে চাইলে হবে না। গ্রহণযোগ্য নির্বাচনে দিতে হবে। না হলে দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকবে না। ভারত বাংলাদেশে তল্পিবাহক সরকার চায়। তা হতে দেয়া হবে না। জেএসডি’র সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেছেন, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য না হলে জাতি মহাসংকটে পড়বে। নির্বাচন গ্রহণযোগ্য করতে হলে এখন থেকেই তার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সরকারের বক্তব্য ও কর্মকান্ড দেশকে কার্যত এক পাক্ষিক নির্বাচনের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। মন্ত্রী, এমপিরা সরকারি কোষাগারের টাকা খরচ করে, সরকারি যানবাহন, হেলিকপ্টার ব্যবহার করে জনসভা করে ভোট চেয়ে বেড়াচ্ছেন। অথচ বিরোধী দলকে রাস্তায় দাঁড়াতেও দিচ্ছে না। সবার অংশগ্রহণে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড এ নির্বাচন না হলে দেশে মহাবিপর্যয় নেমে আসবে।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন হবে কিনা তা নিয়ে এখনো জাতি বিভ্রান্তিতে। একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিনা সেই সংকট বিদ্যামান। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থেকে যাওয়ার জন্য নির্বাচন করলে কী দেশে শান্তি আসবে? সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তিনি জাতীয় ঐক্যের আহবান জানান। নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ৫ জানুয়ারী নির্বাচনের নামে ফোরটুয়েন্টি করা হয়েছে। বিএনপিকে নির্বাচনে আসতে দেয়া হয়নি। দেশে এখন সবচেয়ে বিপদে আছে গণতন্ত্র। আমরা একটা অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চাই। তা না হলে বিশৃংখলা অনিবার্য।
এর আগে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদা বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া গ্রহণযোগ্য নির্বাচন সম্ভব নয় বলে মন্ত্রব্য করেন। বিএনপির পক্ষ্য থেকে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণা চিত্র তুলে ধরে বিএনপিকে সভা সমাবেশ করতে দেয়ার আবেদন জানিয়ে চিঠি দেয়া হয়েছে। বিগত ৫ জানুয়ারীর নির্বাচন ভারত ছাড়া প্রভাবশালী দেশ এবং জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। এ জন্য তারা জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে দেয়ার জন্য চাপ অব্যাহত রেখেছেন। আবার ঢাকায় কর্মরত বিদেশী কূটনীতিকরাও সব দলের অংগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে পরামর্শ দিয়েই যাচ্ছেন। গত দুই মাসে বিভিন্ন দেশের মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, ইউরোপীয় ইউনিয়নের পার্লামেন্টের প্রতিনিধিসহ দাতা দেশ ও সংস্থার যারাই ঢাকায় এসেছেন তাদের প্রায় সবাই বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজের সঙ্গে আলোচনার পাশাপাশি নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করে সব দলের অংশগ্রহনের নির্বাচনের ব্যাপারে কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে তা জানতে চান। এমনকি মার্কিন রাষ্ট্রদূত ও ভারতের হাইকমিশনারও সব দলের অংশগ্রহণে নির্বাচনের ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। সম্প্রতি মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শা ব্লুম বার্নিকাটা সচিবালয়ে বৈঠক করেন বাণিজ্য মন্ত্রী তোফায়েল আহমদের সঙ্গে। এ সময় আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা তোফায়েল আহমদ আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি যাতে অংশগ্রহণ করে সে ব্যাপারে মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে ভূমিকা রাখার অনুরোধ করেন। এ সময় বার্নিকাট বলেন, এ ক্ষেত্রে নির্বাচনী পরিবেশ সষ্টি করতে হবে। একই সঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনী পরিবেশ শুধু ভোটের দিন নয়; সব সময় থাকতে হবে। কেউ প্রচারণা চালাবে কেউ তা করতে পারবে না সেটা নির্বাচনী পরিবেশ নয়।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।