Inqilab Logo

রোববার ১৭ নভেম্বর ২০২৪, ০২ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৪ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ভারতজুড়ে বিতর্কের ঝড়

সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : ‘দিল্লির সঙ্গে ছায়াযুদ্ধের অংশ হিসেবে ইসলামাবাদ পরিকল্পিতভাবে ভারতে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারী পাঠাচ্ছে’- ভারতীয় সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতের এমন মন্তব্যে আসামের রাজনৈতিক অঙ্গনসহ সারা ভারতে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কংগ্রেস ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’ অবস্থান নিলেও সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে বেশকিছু রাজনৈতিক দল। বিপিন রাওয়াতের দাবি ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলকে অস্থির রাখতে চীনের সমর্থন নিয়ে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের ওই এলাকার দিকে ঠেলে দিচ্ছে পাকিস্তান। রাজ্যে মুসলিম জনসংখ্যা বাড়ছে- এমন ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, ‘এআইইউডিএফ বলে একটা দল আছে। খেয়াল করে দেখুন, বিজেপি বছরের পর বছর যে গতিতে বেড়েছে, ওরা আসামে তারচেয়েও দ্রæত বেড়েছে।’ ২১ ফেব্রæয়ারি এক অনুষ্ঠানে দেয়া সেনাপ্রধানের এমন বক্তব্যের সমালোচনা করেছে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্ক্সবাদী (সিপিএম), অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম (এআইইউডিএফ) এবং মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম)। দলগুলো বলছে সেনাপ্রধান তার সাংবিধানিক পরিসরের বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। এ ঘটনায় প্রেসিডেন্টের হস্তক্ষেপও চেয়েছে তারা।
গত নভেম্বরে এক অনুষ্ঠানে জমিয়তে উলামা হিন্দ নেতা মাওলানা আরশাদ মাদানী মন্তব্য করেন, আসাম হতে যাচ্ছে ভারতের রাখাইন। সামগ্রিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগের কথা জানান তিনি। এখন বিপিন রাওয়াতের বিস্ফোরক মন্তব্যের পর ঘুরেফিরে সামনে আসছে আসাদ মাদানীর সেই আশঙ্কা। সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হয়নি বিরোধী দল কংগ্রেস। তবে দলটি বলেছে, রাষ্ট্রায়ত্ত পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংকের (পিএনবি) অর্থ জালিয়াতি থেকে জনগণের দৃষ্টি সরাতে শাসক দল বিজেপি যেকোনও কিছু করতে পারে।
সিপিএম-এর পলিট ব্যুরো সদস্য ব্রিন্দা কারাত বলেন, জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্য যথার্থ নয়। দৃশ্যত সেনাবাহিনীকে ‘রাজনীতিকীকরণ’-এর লক্ষ্যবস্তুুতে পরিণত করা হয়েছে। সংবিধানে সেনাবাহিনী ও রাজনীতির পৃথকীকরণের কথা বলা হয়েছে। তিনি সংবিধানের সীমারেখা অতিক্রম করেছেন। সেনাবাহিনীর সুপ্রিম কমান্ডার হিসেবে ভারতের প্রেসিডেন্টের উচিত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া এবং এর পুনরাবৃত্তি না হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা। সেনাপ্রধানের বক্তব্য নিয়ে দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়ার কাছে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্র্যাটিক ফোরাম (এআইইউডিএফ) নেতা মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল। তিনি বলেন, সংবিধান তাঁকে (বিপিন রাওয়াত) মহান সেনাবাহিনীকে নেতৃত্ব দেয়ার দায়িত্ব দিয়েছে। কোনও রাজনৈতিক দলের উত্থান-পতন নিরীক্ষণের দায়িত্ব তাকে দেয়া হয়নি। তিনি সংবিধানে নির্ধারিত সীমারেখা অতিক্রম করেছেন। মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল আরো বলেন, এআইইউডিএফ মুসলিমদের রাজনৈতিক দল নয়। প্রতিটি নির্বাচনে আমরা ২৫ থেকে ৩০টি আসনে হিন্দু ভাইদের প্রার্থী করে থাকি। নির্বাচন কমিশনে তালিকাভুক্ত প্রকৃত ভোটারদের রায়ে আমাদের বিজয় আসে। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, ‘গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ মূল্যবোধের ভিত্তিতে তৈরি একটি রাজনৈতিক দল বিজেপির চেয়ে দ্রæত এগিয়ে গেলে সেনাপ্রধানের তাতে মাথাব্যথা কেন? জেনারেল বিপিন রাওয়াত রাজনৈতিক বিবৃতি দিয়েছেন। এটা বিস্ময়কর। বড় বড় দলগুলোর অপশাসনের জন্যই বাড়ছে এআইইউডিএফ, আমআদমি’র মতো বিকল্প দলগুলো’।
এআইইউডিএফ বিধায়ক আমিনুল ইসলাম বলেন, তাদের দল শোষিত, নিচুতলার মানুষের জন্য লড়ছে বলেই বিজেপির চেয়ে দ্রæত বাড়ছে। আসামের মানুষ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে এআইইউডিএফকে বিপুল সমর্থন করবে এবং আমাদের দল একদিন রাজ্যে ক্ষমতায় আসবে।
কংগ্রেস নেতা ও রাজ্যসভায় বিরোধী দলীয় নেতা গোলাম নবী আজাদ বলেন, এ বিষয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই না। শুধু এটা বলতে চাই, আসন্ন দিনগুলোতে অনেক ভয়ানক ব্যাপার শুনতে পাবেন। পিএনবি কেলেঙ্কারি থেকে মানুষের দৃষ্টি ভিন্ন দিকে সরাতে তারা যেকোনও কিছু করবে।
মজলিশ-ই-ইত্তেহাদুল মুসলেমিন (মিম) নেতা ব্যারিস্টার আসাদউদ্দিন ওয়াইসি জানতে চেয়েছেন, ভারত সরকার সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যের সঙ্গে সহমত পোষণ করে কিনা। তিনি বলেন, দৃশ্যত সরকারের আদেশে এমন বক্তব্য দেয়া হয়েছে। সেনাবাহিনীকে রাজনীতিকীকরণের মতো বিষবাষ্প না ছড়ানোর আহŸান জানান এই রাজনীতিক। তিনি আরো বলেন, একটি রাজনৈতিক দলের উত্থানের ব্যাপারে মন্তব্য করা সেনাপ্রধানের কাজ নয়। গণতন্ত্রে ও সংবিধানে রাজনীতির অধিকার আছে। সেনাপ্রধানের তাতে হস্তক্ষেপ করা উচিত নয়। সেনাবাহিনীকে সব সময় নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের নেতৃত্বে কাজ করতে হয়।
জেনারেল বিপিন রাওয়াতের ওই বক্তব্য নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। ২৩ ফেব্রæয়ারি শুক্রবার লখনৌতে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোনও একটা বিষয়ে কেউ কিছু বলেছেন বা বলছেন। এসব নিয়ে আমি কোনও মন্তব্য করতে চাই না। আমি মন্তব্য করবই বা কেন?
বিতর্ক বাড়তে থাকায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্যে রাজনীতি বা ধর্মের কোনও ব্যাপার নেই। তিনি সেমিনারে শুধু সেখানকার পরিস্থিতি ও সংহতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করেছেন। তবে মাওলানা বদরউদ্দিন আজমল বলছেন, যদি রাজনৈতিক কিছু না হয় তাহলে সেনাপ্রধান তার ভাষণে কেন রাজনৈতিক দলকে টেনে আনলেন, যার প্রতিনিধিরা ভারতীয় নাগরিকদের দ্বারা গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত হয়েছেন?
উল্লেখ্য, ২১ ফেব্রæয়ারি দিল্লীতে দেয়া ওই বক্তব্যে জেনারেল রাওয়াত বলেন, ‘আমাদের পশ্চিমা প্রতিবেশীর (পাকিস্তান) কারণে পরিকল্পিতভাবে অবৈধ অভিবাসন চলছে। তারা সব সময় এই এলাকাকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার চেষ্টা করবে এবং সেটা নিশ্চিত করতে চাইবে। বিভিন্ন মাত্রায় ছায়াযুদ্ধ চালাতে চায় তারা। আমি মনে করি, আমাদের উত্তরাঞ্চলীয় সীমান্তের (চীন) সমর্থন নিয়ে পশ্চিমা প্রতিবেশী এই ছায়াযুদ্ধের খেলাটা ভালোই খেলে। এ এলাকাকে অস্থির রাখতে চায় তারা।’ এ ব্যাপারে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান অবসপ্রাপ্ত জেনারেল শংকর রায় চৌধুরী ‘ডয়চে ভেলে’কে বলেন, আমি মনে করি না জেনারেল রাওয়াত কোনও রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন। ভারত একটি প্রক্সি ওয়ারের মুখোমুখি। এটি সামরিক যুদ্ধ নয়। এটি রাজনৈতিক-সামরিক যুদ্ধ। উত্তর-পূর্ব ভারতে দ্বিমুখী পরিস্থিতি বিরাজ করছে। একদিকে আমাদের উত্তরের প্রতিবেশী চীন আর একদিকে বাংলাদেশ। বিশেষ কোনও রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আসামে অভিবাসী হিসেবে লোক পাঠিয়ে দেয়া এবং এর মাধ্যমে সেখানকার নৃতাত্তি¡ক জনগোষ্ঠীর কাঠামো বদলে দেয়া পাকিস্তানের দীর্ঘদিনের পরিকল্পনা। (সূত্র: দ্য টাইমস অব ইন্ডিয়া, ডয়চে ভেলে, পার্স টুডে)।



 

Show all comments
  • রিপন ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
    বাংলাদেশের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছে না কেন ?
    Total Reply(0) Reply
  • আশিক ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০০ এএম says : 0
    আমরা এই বক্তব্যে তিব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।
    Total Reply(0) Reply
  • আবু নোমান ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    আর আমরা নিশ্চুপ
    Total Reply(0) Reply
  • তুষার ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ২:০৬ এএম says : 0
    কারণ ভারতে কথা বলা অধিকার আছে
    Total Reply(0) Reply
  • Hasan Mamun ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১১:২৩ এএম says : 0
    Awami league j akta betho sarkar ta tara abar poman korlo so sadaron people amra sudu dekhe jabo ak somoy amrao bolbo
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ভারত


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ