পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
বিশেষ সংবাদদাতা : রাজধানীর কদমতলী থানা পুলিশ গত বৃহস্পতিবার রাতে দোলাইপাড় এলাকায় অভিযান চালিয়ে তিন মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে। রাত আনুমানিক ১০ টার দিকে দুই নাম্বার গলির ১৪১ নং বাড়িতে অভিযান চালিয়ে টাইগার নামে এক সোর্সকে দুশ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে তার স্বীকারোক্তি মোতাবেক পার্শ্ববর্তী এক বাড়ি থেকে এলাকার চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ী ফারুককে গ্রেফতার করা হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্য মতে, ফারুকের ভাড়া বাসায় তল্লাশি চালিয়ে পুলিশ বিপুল পরিমান ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করে। ফারুকের মা নূর বেগম অভিযোগ করে বলেন, অভিযানকারী দলে থাকা এএসআই এরশাদ ও সোর্স সুমন ওই বাড়ি থেকে নগদ ৫০ হাজার টাকা, তিনটি মোবাইল ফোন সেট ও বাড়িভাড়ার জন্য রাখা নগদ ৮ হাজার টাকা নিয়ে যায়। গতকাল শুক্রবার গ্রেফতারকৃত ফারুককে ৫০ পিস ইয়াবাসহ ধরা হয়েছে-এমন অভিযোগে মামলা দিয়ে আদালতে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে কদমতলী থানার অপারেশন অফিসার সাইফুলের কাছে জানতে চাইলে বৃহস্পতিবার রাতে তিনি বলেন, ফারুকের কাছে কোনো মাদকদ্রব্য পাওয়া যায় নি। তবে রাত শেষে কিভাবে ফারুককে ৫০ পিস ইয়াবার মামলায় দেয়া হলো? এর জবাবে কদমতলী থানার ওসি (তদন্ত) সাজু মিয়া বলেন, এ সব মামলার ক্ষেত্রে ‘এই রকমই’ হয়।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ইয়াবাকে কতিপয় পুলিশ সদস্য এখন অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। একদিকে, ইয়াবা দিয়ে নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে টাকা আদায় করা হয়, আবার ইয়াবা ব্যবসার সুযোগ করে দিয়েও অসাধু পুলিশ মাসোহারা আদায় করে থাকে। মাঝে মধ্যে ওই সব ব্যবসায়ীকে আটক করে পুলিশ মোটা অংকের টাকা দাবি করে। চাহিদা মতো টাকা না পেলে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়। একইভাবে অভিযানে বিপুল পরিমান ইয়াবা উদ্ধার হলেও কখনও কখনও পুলিশ তা গোপন রাখে। হাতে গোনা কিছু ইয়াবা দিয়ে মামলা দিয়ে বাকিটা সোর্সের মাধ্যমে অনায়াসে বিক্রি করে দেয়া হয়।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ রয়েছে, যে পুলিশের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা সেই পুলিশের অসাধু একটি অংশ এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। শুধু তাই নয়, বাস্তবতা হলো- মাদককে পুঁজি করে পুলিশের একটি অংশ নিরীহ মানুষকে ফাঁসিয়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। আবার কোনো কোনো এলাকায় পুলিশের ছত্রছায়ায় নির্বিকারে চলছে মাদক ব্যবসা। টাকার বিনিময়ে পুলিশকে ঢাল হিসাবে ব্যবহার করছে মাদক ব্যবসায়ীরা। কিছুদিন আগে রাজধানীর উত্তরায় একটি ফ্ল্যাটে সাবলেট থাকা পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টরের পাশের রুম থেকে উদ্ধার করা হয় ১০ হাজার পিস ইয়াবা। এ সময় গ্রেফতার করা হয় ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়া এনায়েত করিম মিঠুসহ ৪ জনকে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানকারী টিম জানায়, বিমানবন্দর থানায় কর্মরত সাব-ইন্সপেক্টর সুমন শিকদার গত বছরের এপ্রিলে ইয়াবা ব্যবসায়ী এনায়েত করিম মিঠুর মাধ্যমে ওই বাসায় সাবলেটে ওঠেন। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানকারীদল এসআই সুমন শিকদারের ঘরে অভিযান চালিয়ে কোনো মাদকদ্রব্য না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ আনতে পারেনি। তবে পুলিশ সূত্র জানায়, বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।
সারাদেশে ইয়াবা ব্যবসা এখন ফুলে ফেঁপে উঠেছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়া এবং পুলিশের অসাধু কিছু সদস্যের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহযোগিতায় ইয়াবা এখন সহজলভ্য হয়ে গেছে। গত বছরের শেষের দিকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের এক তদন্ত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে মাদক ব্যবসার সাথে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মী ও পুলিশের সংশ্লিষ্টতার কথা। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, যে পুলিশের মাদক ব্যবসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা সেই পুলিশেরই অসাধু একটি অংশ এই মাদক ব্যবসার সাথে জড়িয়ে পড়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, মাদক বেচাকেনা হয় এমন অনেক জায়গায় কিছু অসাধু পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে দায়িত্বরত রয়েছেন। দায়িত্ব পালনের নামে তারা ইয়াবাসহ মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে কোনভাবে বদলি ঠেকিয়ে রেখে তারা একই এলাকায় দীর্ঘদিন রয়ে যাচ্ছেন।
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের ওই প্রতিবেদনে মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত প্রায় ১০০ জন গডফাদারের নাম উঠে এসেছে। তালিকায় দেখা যায়, যাদের ছত্রছায়ায় মাদক বিশেষ করে ইয়াবা ব্যবসা চলে তাদের বেশিরভাগই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও তার বিভিন্ন সহযোগী সংগঠনের সাথে যুক্ত। সূত্র জানায়, ডিএমপির তালিকাটিতে দুজন বিএনপি ও জাতীয় পার্টির নেতাসহ বেশ কয়েকজন অসাধু পুলিশ ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তার নাম রয়েছে। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের মিশ্রণে তৈরি ইয়াবা সাধারণত বড়ি আকারে সেবন করা হয়। বর্তমানে এর ব্যবহার এতটাই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে যে, ডিএমপির ছয়টি ক্রাইম ডিভিশন উত্তরা, গুলশান, রমনা, তেজগাঁও, মিরপুর ও মতিঝিলে প্রতিদিন ৩৮ হাজার ইয়াবা বড়ি সেবন করা হচ্ছে বলে প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। অন্য দুটি ক্রাইম ডিভিশন ওয়ারি ও লালবাগে কি পরিমাণ ইয়াবা সেবন হচ্ছে সে ব্যাপারে পুলিশের গোয়েন্দারা অনুমান করে উঠতে পারেনি। তবে এই দুটি এলাকাও ইয়াবা বেচাকেনার দিক থেকে ব্যতিক্রম নয়।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, ২০১১ সালে দেশে ১৩ লাখ ৬০ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করা হয়েছিল। আর সর্বশেষ বার্ষিক প্রতিবেদন বলছে পুলিশ, র্যাব, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর, বিজিবি ও অন্যান্য বাহিনী ২০১৬ সালে দুই কোটি ৯৬ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট জব্দ করেছে। এই হিসাব অনুযায়ী গত পাঁচ বছরে জব্দ হওয়া ইয়াবার পরিমাণ ২২ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, ধারণা করা হয় বাংলাদেশে প্রতি বছর ২৯ কোটি ৪৫ ইয়াবা ট্যাবলেট সেবন করা হচ্ছে। যার মূল্য প্রায় সাত হাজার ৩৬৩ কোটি টাকা যা বঙ্গবন্ধু সেতু নির্মাণ খরচের প্রায় দ্বিগুণ। প্রতিটির দাম ২৫০ টাকা ধরলে প্রতিদিন ৮ লাখের বেশি ইয়াবা সেবন করা হয় বাংলাদেশে।
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, চোরাচালানের মাধ্যমে দেশে যে পরিমাণ ইয়াবা ঢোকে তার মধ্যে মাত্র ৮ থেকে ১০ শতাংশ ধরা পড়ে। এর বেশিরভাগই আসে মিয়ানমার থেকে। তবে গত কয়েক বছরে বাংলাদেশের ভেতরেও স্বল্প পরিমাণে ইয়াবা তৈরি করা হয়েছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা। এদিকে, ডিএমপির তথ্য মতে, ঢাকার ইয়াবা ব্যবসায়ীদের মধ্যে ১৬ জন ওয়ার্ড কাউন্সিলর রয়েছেন। এর মধ্যে ১৫ জনই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ও একজন বিএনপির। আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিগুলোর তিনজন সভাপতি, একজন সাধারণ সম্পাদক ও থানা কমিটির একজন সাধারণ সম্পাদক মাদক ব্যবসা চক্রের সাথে যুক্ত। শুধু এরাই নয়, থানা পর্যায়ে যুবলীগের দুজন সভাপতি, ৬জন সাধারণ সম্পাদক ও থানা কমিটি ছাত্রলীগের দুজন সাধারণ সম্পাদকের নাম রয়েছে পুলিশের তালিকায়। থানা, ওয়ার্ড ও নগর কমিটি স্বেচ্ছাসেবকলীগের অন্তত সাতজন নেতাসহ বাস্তুহারালীগ ও তাঁতীলীগের নেতাদের নামও মাদক ব্যবসায়ীর তালিকায় উল্লেখ করেছে পুলিশ। আর পুলিশের মধ্য থেকে যারা ইয়াবা ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছেন তাদের মধ্যে দুজন সাব-ইন্সপেক্টর রয়েছেন। এদের মধ্যে একজন সে সময় নগরীর একটি থানার ও অন্যজন খোদ মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরে দায়িত্বরত ছিলেন। টহল পুলিশেরও কিছু সদস্য হোতাদের তালিকায় রয়েছেন। এসব বাদেও যাদের হাত দিয়ে ইয়াবা বিক্রি হয় এমন প্রায় এক হাজার একশ জনের নামসহ বিস্তারিত তথ্যসম্বলিত তালিকা বানিয়েছে ডিএমপি। সূত্র জানিয়েছে, তালিকাটি পুলিশ সদর দপ্তরসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।