Inqilab Logo

রোববার, ১২ মে ২০২৪, ২৯ বৈশাখ ১৪৩১, ০৩ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

প্রথম সন্তানের মুখ দেখলেন নৌবাহিনী সদস্য চার বছর পর দেশে ফিরল দু’টি যুদ্ধজাহাজ

| প্রকাশের সময় : ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম


চট্টগ্রাম ব্যুরো: লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে জাহাজে দায়িত্ব পালনকালে পিতা হওয়ার সুসংবাদটি শুনেছিলেন। কিন্তু সন্তানের মুখ দেখা হয়নি। তাই সাত মাস পর দেশে ফিরেই প্রথম সন্তানকে বুকে জড়িয়ে আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন নৌবাহিনীর সদস্য আমজাদ হোসেন। তার মতো অনেকেই দেশের মাটিতে পা দিয়ে স্বজনদের বুকে টেনে নেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে নৌবাহিনী সদস্যদের এ মিলিত হওয়াকে ঘিরে চট্টগ্রামের নেভাল জেটিতে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। লেবাননের ভূ-মধ্যসাগরে ৪ বছর দায়িত্ব পালন শেষে গতকাল (রোববার) সকালে দেশে ফিরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘আলী হায়দার’ ও ‘নির্মূল’। মাল্টিন্যাশনাল মেরিটাইম টাস্কফোর্সের আওতায় জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের কার্যক্রম শেষে জাহাজ দু’টি চট্টগ্রাম নগরীর নেভাল জেটিতে এসে পৌঁছে। ২০১৪ সালের মে মাসে নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ দুটি লেবানন যায়। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষা মিশনের দায়িত্ব পালন শেষে লেবানন থেকে দেশের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে ৭ জানুয়ারি। প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার সমুদ্রপথ পাড়ি দিয়ে যুদ্ধজাহাজ দু’টি বাংলাদেশে এসে পৌঁছে। নেভাল জেটিতে পৌঁছলে যুদ্ধজাহাজ দুটি ও জাহাজে থাকা নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যদের স্বাগত জানান নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের কমান্ডার রিয়ার অ্যাডমিরাল এম আবু আশরাফ। এসময় নৌবাহিনীর চট্টগ্রাম নৌ-অঞ্চলের আঞ্চলিক কমান্ডার, উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তা ও জাহাজে থাকা কর্মকর্তা ও নাবিকদের পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। পরিবারের সদস্যদের সাথে মিলিত হন নৌবাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা। তাদের মধ্যে নৌবাহিনীর সদস্য আমজাদ হোসেনের কন্যাকে কোলে নিয়ে উচ্ছ¡াস প্রকাশের দৃশ্য সকলের নজর কাড়ে। জাহাজ থেকে নেমে আমজাদ হোসেন স্ত্রী তানজিলা সুলতানার কোল থেকে বুকে জড়িয়ে নেন মেয়েকে। আমজাদের জন্য আগেই নগরীর হালিশহরের বাসা থেকে এসে মেয়ে ওয়াজিহা ইবনাত চৌধুরীকে কোলে নিয়ে অপেক্ষায় ছিলেন স্ত্রী। ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট তার জন্ম। তখন জাহাজ আলী হায়দারে কর্মরত আমজাদ হোসেন। সন্তান জন্মের সুসংবাদ পেলেও সন্তানকে দেখেননি। দেশে ফিরে সন্তানকে কোলে নিয়ে তাই আদর সোহাগে ভরিয়ে দিচ্ছিলেন তিনি। তার মতো অন্যদেরও পরিবারের সদস্য ও সন্তানদের জড়িয়ে ধরতে দেখা যায়। আনুষ্ঠানিকতা শেষে জাহাজ থেকে নেমে নৌ-বাহিনীর কর্মকর্তা ও সদস্যরা যার যার পরিবার-পরিজন নিয়ে বাড়ির দিকে রওয়ানা হন। লেবাননে থাকাকালীন ৪ বছরে নৌবাহিনীর ১১৪০ জন সদস্য অত্যন্ত দক্ষতা, পেশাদারিত্ব, আন্তরিকতা ও শৃঙ্খলার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। লেবাননের স্থিতিশীলতা ও নৌসীমার নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখায় গত বছরের ২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত ব্যানকন-৮ এর মেডেল প্যারেডে জাহাজ দু’টির ২৭০ জন নৌ সদস্যকে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা পদক দেওয়া হয়। জাহাজ ২টি আন্তর্জাতিক মেরিটাইম টাস্কফোর্সের অধীনে উন্নত বিশ্বের অন্যান্য দেশের জাহাজের সঙ্গে নিয়মিত শান্তিরক্ষা টহল ও বিভিন্ন আভিযানিক কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। এতে অন্যান্য দেশের নৌবাহিনী সম্পর্কে ধারণা লাভের পাশাপাশি জাহাজের কর্মকর্তা ও নাবিকদের পেশাগত দক্ষতা বেড়েছে। এছাড়া যুদ্ধজাহাজ দু’টি ভূ-মধ্যসাগরে সাফল্যের সঙ্গে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে বাংলাদেশের মর্যাদা উজ্জ্বল করেছে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: যুদ্ধজাহাজ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ