মাত্র ৪৮ ঘণ্টায় দেউলিয়া হলো যুক্তরাষ্ট্রের ২য় বৃহত্তম ব্যাংক
চলতি সপ্তাহের বুধবারও আর দশটি সাধারণ ব্যাংকের মতো বাণিজ্যিক ও আর্থিক লেনদেন সম্পন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক (এসভিপি), যা দেশটির দ্বিতীয় বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংক
ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখলের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে রাশিয়া। খারকিভ ও খেরসান শহর ইতিমধ্যেই রুশ বাহিনীর দখলে চলে গিয়েছে। কিন্তু রাজধানী কিয়েভে যেমন চরম প্রতিরোধের মুখে পড়তে হচ্ছে রুশ বাহিনীকে, তেমনই দুই বন্দর শহর ওডেশা ও মারিওপলও দখল করতে পারেনি তারা। স্থলপথে ওই দুই বন্দর শহরে ঢুকতে না পারায় এবার নৌপথে হামলা চালানোর পুরোদমে প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে রাশিয়া।
রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, তাদের সেনারা বেলগোরোড অঞ্চল থেকে ইউক্রেনের বাসিন্দাদের কাছে ৩০ টনেরও বেশি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দিয়েছে। ‘রাশিয়ান সামরিক বাহিনী বেলগোরোড অঞ্চল থেকে খারকিভ অঞ্চলে রাশিয়ান-ইউক্রেনীয় সীমান্তের কাছে ইউক্রেনীয় বসতিগুলোতে মানবিক পণ্যের একটি চালান পৌঁছে দিয়েছে। মন্ত্রণালয় বলেছে, স্থানীয় জনগণের অনুরোধে প্রতিবেশী বেলগোরোড থেকে ভলচানস্ক এবং কস্যাক লোপানে মোট ৩০ টনের বেশি মানবিক সহায়তা পৌঁছে দেয়া হয়েছে। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেয়া তথ্য মতে, মানবিক সহায়তার মধ্যে রয়েছে খাদ্যপণ্য, ডাল, টিনজাত খাবার ও মাছ, মিষ্টান্ন ও বেকারি পণ্য এবং বোতলজাত খাবার পানি। মানবিক কনভয়ের নিরাপত্তা রাশিয়ান সামরিক বাহিনী দ্বারা সরবরাহ করা হয়েছিল। মানবিক সহায়থাগুলো মহিলা, শিশু ও বয়স্কসহ সীমান্ত বসতির বাসিন্দাদের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছিল।
এদিকে, গতকাল আমেরিকা প্রশাসনের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন, রাশিয়ার বেশ কয়েকটি যুদ্ধজাহাজ ক্রিমিয়া থেকে ওডেশার দিকে এগোচ্ছে। ওই যুদ্ধজাহাজ থেকে বন্দর শহরে হামলা চালাতে পারে রুশ সেনারা। ইউক্রেনের তৃতীয় বৃহত্তম শহর ওডেশা। ওই দেশের সবচেয়ে বড় বন্দর শহরও বটে। ইউক্রেনের অর্থনীতির অন্যতম মেরুদণ্ড এই শহর। সোভিয়েত আমলেও এই বন্দর ছিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বুধবারই ইউক্রেনের অন্যতম বন্দর শহর খেরসান দখল করেছে রুশ সেনারা। ওডেশা দখল এখন শুধুমাত্র সময়ের অপেক্ষা বলেই মনে করা হচ্ছে।
যদিও রুশ হামলার পুরোপুরি জবাব দিতে প্রস্তুত এই শহর। এমনটাই দাবি করেছেন শহরের মেয়র গেনাডি ট্রুখানভ। এবিপি এ খবর জানায়। অপরদিকে, ইতোমধ্যে বেশ কয়েকটি শহর দখল করে নিয়েছেন রুশ সেনারা। আরও কয়েকটি শহর নিয়ন্ত্রণে নেয়ার অপেক্ষায়। ৮ম দিনেও হামলা চলমান। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের উপদেষ্টারা ইউক্রেনে হামলার পক্ষে। তারা কিয়েভে সামরিক অভিযান অব্যাহত রাখতে পুতিনকে পরামর্শ দিচ্ছেন।
বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউক্রেনে হামলা শুরুর আগে নিজের নিরাপত্তা পরিষদের ৩০ সদস্যের সঙ্গে বৈঠক করেন পুতিন। সেখানে তাকে ইউক্রেনে হামলার পরামর্শ দেয়া হয়। রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর প্রধান ইউক্রেনে হামলার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়ার ভার পুতিনের ওপর চাপিয়ে দেন। কিন্তু পুতিন নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের ওপরই নির্ভর করেন। পুতিনের পরামর্শক যারা, তাদের বেশিরভাগই রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন। এদিকে জাতিসংঘ জানিয়েছে, রুশ হামলায় ১০ লাখ ইউক্রেনীয় দেশ ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন। আর হামলায় ইউক্রেনের ২২৭ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন।
আলোচনায় বসেছে কিয়েভ ও মস্কো : বেলারুশে রাশিয়া ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে দ্বিতীয় দফায় আলোচনা শুরু হয়েছে। গতকাল আনাদোলুর এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের উপদেষ্টা মাইখাইলো পোডোলিয়াক টুইট বার্তায় জানিয়েছেন, তিনি ও অন্যান্য কর্মকর্তারা রাশিয়ান প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করেছেন। আলোচ্যসূচির মূল বিষয়গুলোও টুইটে উল্লেখ করেছেন তিনি। এগুলো হচ্ছে- অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি, অস্ত্রসংবরণ এবং ধ্বংস হয়ে যাওয়া বা ক্রমাগত গোলাগুলির ভেতর থাকা গ্রাম-শহর থেকে বেসামরিক মানুষকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য মানবিক করিডোর। এক সংক্ষিপ্ত ভিডিও ক্লিপে দেখা গেছে, ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদল একটি কনফারেন্স রুমে প্রবেশ করছে এবং সেখানে রাশিয়ান প্রতিনিধিদল উপস্থিত আছেন। আলোচনা শুরু করার আগে ২ দলকে করমর্দন করতে দেখা গেছে। এর আগে গত সোমবার ২ দেশের প্রতিনিধিরা বেলারুশের গোমেলে প্রথম দফা আলোচনায় বসেন।
রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেবে না চীন : চীন পশ্চিমের নেতৃত্বে রাশিয়ার উপর নিষেধাজ্ঞায় যোগ দেবে না। বুধবার দেশটির ব্যাংকিং নিয়ন্ত্রক এই তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, তিনি বিশ্বাস করেন যে, চীনের উপর পদক্ষেপের প্রভাব সীমিত হবে।জাতিসংঘে ইউক্রেনে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে চীন। তারা বারবার রাশিয়ার উপর পশ্চিমাদের নিষেধাজ্ঞা অবৈধ এবং একতরফা বলে সমালোচনা করেছে।
চীনের ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড ইন্স্যুরেন্স রেগুলেটরি কমিশনের চেয়ারম্যান গুও শুকিং একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘আমরা আর্থিক নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে উদ্বিগ্ন, আমরা এগুলিকে অনুমোদন করি না, বিশেষ করে একতরফাভাবে চালু করা নিষেধাজ্ঞাগুলি কারণ তারা ভালভাবে কাজ করে না এবং এর কোন আইনি ভিত্তি নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা এই ধরনের নিষেধাজ্ঞাগুলোতে অংশগ্রহণ করব না। আমরা প্রাসঙ্গিক পক্ষগুলোর সাথে স্বাভাবিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য বিনিময় বজায় রাখব।’
চীন এবং রাশিয়া সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ক্রমবর্ধমানভাবে ঘনিষ্ঠ হয়েছে, যার মধ্যে ব্যবসায়িক অংশীদারও রয়েছে। চীনের শুল্ক তথ্য অনুযায়ী, গত বছর উভয়ের মধ্যে মোট বাণিজ্য ৩৫ দশমিক ৯ শতাংশ বেড়ে রেকর্ড ১৪ হাজার ৬৯০ কোটি ডলার হয়েছে, যেখানে রাশিয়া তেল, গ্যাস, কয়লা এবং কৃষি পণ্যের প্রধান উৎস হিসাবে কাজ করছে। চীনের সাথে তাদের একটি বাণিজ্য উদ্বৃত্ত চলছে। ‘চীনের অর্থনীতি এবং আর্থিক খাতে নিষেধাজ্ঞার প্রভাব এখন পর্যন্ত খুব বেশি উল্লেখযোগ্য নয়,’ শুকিং যোগ করেছেন, ‘সামগ্রিকভাবে তারা ভবিষ্যতেও (চীনের উপর) খুব বেশি প্রভাব ফেলবে না,’ চীনের অর্থনীতি এবং আর্থিক খাতের স্থিতিস্থাপকতার উল্লেখ করে তিনি বলেছেন।
রাশিয়া নিরাপত্তা গ্যারান্টি নিয়ে পশ্চিমের সাথে সংলাপে প্রস্তুত: রাশিয়া নিরাপত্তা গ্যারান্টি এবং কৌশলগত স্থিতিশীলতার বিষয়ে পশ্চিমাদের সাথে আলোচনায় প্রস্তুত। গতকাল বৃহস্পতিবার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ আরবিসিকে একথা বলেছেন। ‘আমরা এসব বিষয় এবং সেইসাথে কৌশলগত স্থিতিশীলতার সাথে সম্পর্কিত বিষয়গুলোতে সংলাপের জন্য প্রস্তুত। আমরা দুঃখিত যে, ওয়াশিংটনে আমাদের সহকর্মীরা এসব যোগাযোগ স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন এবং বেশ কয়েক দিন আগে এটি ঘোষণা করেছিলেন’ -তিনি উল্লেখ করেন, সংলাপ স্থগিত করার জন্য সম্পূর্ণরূপে যুক্তরাষ্ট্র দায়ী।
তিনি জোর দিয়ে বলেন, ‘আমরা শান্তভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সাথে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি, আমাদের অর্জন করার জন্য নির্দিষ্ট লক্ষ্য রয়েছে। কেউ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সংলাপ বন্ধ করে দিচ্ছে না, তবে সংলাপের চ্যানেল একটি পৃথক সমস্যা যা আমরা যেসব লক্ষ্যের মুখোমুখি হচ্ছি তার ওপর নির্ভর করে’। রিয়াবকভের মতে, রাশিয়া এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বর্তমানে বেশিরভাগ দূতাবাসের মাধ্যমে সংলাপ বজায় রাখে। ‘আমাদের বিশ্বাস করার কোনো কারণ নেই যে, এ অ্যালগরিদম অদূর ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হবে’ -তিনি উল্লেখ করেন।
২০২১ সালের ১৭ ডিসেম্বর রাশিয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিরাপত্তা গ্যারান্টির বিষয়ে খসড়া চুক্তি প্রকাশ করেছে যা মস্কো ওয়াশিংটন এবং ন্যাটো থেকে পাওয়ার আশা করে। নথিগুলো বিশেষ করে ন্যাটোকে তার পূর্বমুখী সম্প্রসারণ বন্ধ করতে এবং ১৯৯৭ সীমান্তে তার সামরিক অবকাঠামো ফিরিয়ে দিতে বাধ্য করে। রাশিয়া ফেব্রুয়ারিতে তাদের নিজস্ব প্রতিক্রিয়ায় বলেছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটো রাশিয়ার নিরাপত্তা প্রস্তাবের জন্য তাদের লিখিত প্রতিক্রিয়া ২০২২ সালের ২৬ জানুয়ারি মস্কোর কাছে হস্তান্তর করেছে। পশ্চিমারা গুরুত্বপূর্ণ ছাড় দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
তুরস্ককে ইউক্রেনের মতো করে দেখা হোক: ইউক্রেনকে যেভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য করা হয়েছে, তুরস্কের বিষয়টিকেও সেভাবে দেখার আহবান জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েফ এরদোগান। মঙ্গলবার রাজধানী আঙ্কারায় এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ইউক্রেনের ক্ষেত্রে আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে সংবেদনশীলতা দেখতে পাচ্ছি, তা তুরস্কের ক্ষেত্রেও দেখানো হোক। খবরে জানানো হয়, ১৯৮৭ সাল থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সদস্য পদ চেয়ে আসছে তুরস্ক। তবে এখনো দেশটিকে সদস্য পদ দেয়নি ইইউ। এ নিয়ে এরদোগান বলেন, ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কিকে ইউরোপীয় পার্লামেন্টে করতালি দেয়া হচ্ছে, এটি খুবই ভাল। এ জন্য তার দেশকে বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছে। তুরস্ক সেই বিপর্যয়ের জন্য অপেক্ষা করতে পারে না। এসময় তিনি মনে করিয়ে দেন যে, তুরস্ক একটি ন্যাটোভুক্ত রাষ্ট্র। এরপর এরদোগান প্রশ্ন করেন, তারপরেও কেনো তুরস্কের প্রয়োজন অনুযায়ী সামরিক সরঞ্জাম দেয়া হয় না? সূত্র : বিবিসি, আল-জাজিরা, রয়টার্স, তাস, টিআরটি ওয়ার্ল্ড।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।