পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মালেক মল্লিক : উচ্চ আদালতে দীর্ঘদিন যাবত নতুন করে বিচারপতি নিয়োগ বন্ধ। প্রতিবছরই স্বাভাবিক নিয়মে অবসরে যাচ্ছেন বিচারপতিরা। আবার আপিলের দুইজন বিচারপতি পদত্যাগও করছেন। এতে করে উচ্চ আদালতে বিচারপতির সংকট দেখা দিয়েছে। সুুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগে বর্তমানে মোট ৮৪ জন বিচারপতি রয়েছেন। আপিলে ৪ জন ও হাইকোর্টে ৮০ বিচারপতি রয়েছেন। গত বছরের শেষে দিকে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ও চলতি বছর ২ ফেব্রæয়ারী আপিল বিভাগের সিনিয়র বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা হঠাৎ পদত্যাগের পর আপিলে বিচারপতির সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠে। বিচারপতির অভাবের ইতোমধ্যে আপিলের একটি বেঞ্চে বিচারকার্য বন্ধ রয়েছে। চলতি বছরের শুরুতেই অবসরে যান হাইকোর্টের দুই বিচারপতি। অথচ উচ্চ আদালতে প্রায় ৫ লক্ষাধিক মামলার বিচাররের জন্য অপেক্ষা রয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবীরদের মতে, বিচারপতি নিয়োগ না হওয়ার এতে করে ব্যাহত হচ্ছে উচ্চ আদালতের বিচারকার্য। বাড়ছে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি। বিচারিক সেবার মান বৃদ্ধি ও মামলার জট নিরসণে দ্রæত বিচারক নিয়োগ দেয়া প্রয়োজন।
২২তম প্রধান বিচারপতি নিয়োগ হওয়ার পর পরই উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগের কার্যক্রম শুরু হওয়ার কথা ছিল। তবে এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন অগ্রগতি দেয়া যায়নি। তবে বিশ্¦স্ত সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসেই বিচারপতি নিয়োগ প্রক্রিয়ার কার্যক্রম শুরুর সম্ভাবনা রয়েছে। প্রস্তাবিত বিচারপতিদের যোগ্যতার পাশাপাশি অতীতের রাজনৈতিক ভূমিকা গভীরভাবে খতিয়ে দেখছে সরকার এমনটাই জানিয়েছে একটি সূত্র।
সংবিধানে উচ্চ আদালতে বিচারকের কোনো সংখ্যা নির্ধারণ করা নেই। প্রধান বিচারপতির পরামর্শ এবং প্রয়োজন অনুযায়ী প্রেসিডেন্ট সময়ে সময়ে বিচারপতি নিয়োগ দিয়ে থাকেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইন মন্ত্রী ব্যরিস্টার শফিক আহমদে ইনকিলাবকে বলেন, বিচারপতি সংকট ঠিক এটা বলা যাবে না। জনসংখ্যার অনুপাতে অপরাধ যেমন বাড়ছে মামলাও বাড়ছে। তবে আমার মনে হয় দ্রæত সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালতে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া উচিত। যদি লজিস্ট্রিক সার্পোটসহ সব ঠিক থাকে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল বাসেত মজুমদার ইনকিলাবকে বলেন, বিচারক নিয়োগে (্আইনজীবীরা) আমরা তো কিছু বলতে পারি না। এটা সরকারের বিষয়। বিচারিক সেবা বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিচ্ছেন। এতে করে মামলার জট ও বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি কমছে। দ্রæত পর্যাপ্ত সংখ্যাক বিচারক নিয়োগ দেয়া উচিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।
সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি জয়নুল আবেদীন ইনকিলাবকে বলেন, দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিচারপতি সংকট রয়েছে। দীর্ঘদিন যাবত নিয়োগও বন্ধ রয়েছে। তিনি আরো বলেন, আপিল বিভাগে আগে দুটি বেঞ্চে মামলা পরিচালনা হতো। বিচারপতির কম থাকায় বর্তমানে একটি বেঞ্চ বন্ধ রয়েছে। এতে উচ্চ আদালতে মামলাজট তীব্র আকার ধারণ করছে। আমরা আইনজীবীরা চাই সৎ দক্ষ বিচারপতি নিয়োগ করা হোক। এতে করে সাধারণ মানুষের ন্যায় বিচার পাবে।
সূত্রে জানা যায়, সুপ্রিম কোর্ট আপিল বিভাগের মোট বিচারপতি নয়জন। এর মধ্যে গত বছর গত ১লা জানুয়ারী বিচারপতি মোহাম্মদ বজলুর রহমান চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। এরপর আপিলে থাকেন আটজন বিচারপতি। গত ১৪ মার্চ মো. নিজামুল হক অবসরে যান। এতে করে সাতজন থাকেন দায়িত্ব পালন করেন। গত ৭ জুলাই বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা বিদায় নেন। তখন বার বার তাগাদা সত্তে¡ও আপিল বিভাগে কোনো বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হয়নি। এরপর আপিলে ছয়জন বিচারপতি ছিলেন। দ্রæত মামলাজট নিরসনে আপিল বিভাগে আবার দুটি বেঞ্চ সচল করার কথা উঠেছে। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত দুটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। এরপর প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা পদত্যাগ করলে থাকেন ৫ জন। গত ২ ফেব্রæয়ারি প্রধান বিচারপতি হিসেবে আপিল বিভাগের বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে নিয়োগ দেন প্রেসিডেন্ট। তার নিয়োগের পরই আপিল বিভাগের সিনিযর বিচারপতি আবদুল ওয়াহ্হাব মিঞা পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগের পর এখন আপিল বিভাগে বিচারকের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে চারজন।
অপরদিকে ২০১৪ সালে হাইকোর্ট বিভাগে ১০৫ জন বিচারপতি ছিলেন। অবসর, মৃত্যুবরণ, অসুস্থ ও কয়েক বছর ধরে বিচারক নিয়োগ বন্ধ থাকায় বিচারপতি সঙ্কট দেখা দেয়। ২০১৭ সালে এসে বিচারপতির সংখ্যা কমে দাঁড়ায় ৮২ জনে। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্যুয়ারি মাসে বিচারপতি মো. ফজলুল রহমান ও বিচারপতি এম. মোয়াজ্জাম হোসেন অবসরে যান। ফলে হাইকোর্টে এখন বিচারপতির সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৮০ জন।
বর্তমানে আপিল বিভাগে ১৬ হাজার ৫৬৫টি মামলা বিচারাধীন রয়েছে বলে জানা গেছে। গত বছরের বছরের শুরুতে সুপ্রিম কোর্ট উভয় বিভাগে মামলা ছিল চার লাখ ২৭ হাজারের বেশি। আইনজীবীরা মনে করেন, শূন্য পদে প্রয়োজনীয় সংখ্যক বিচারক নিয়োগ দেয়া এবং আরো একটি বেঞ্চ গঠন করলে মামলা নিষ্পত্তির হার আরো বৃদ্ধি পেত। হ্রাস পেত মামলার জট। এজন্য আইন প্রনয়ণে কথাও বলেছেন তারা। সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির নেতারাও বহুবার সৎ ও দক্ষ বিচারকে নিয়োগের দাবি জানিয়েছে আসছে।
স্বয়ং প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাও বিচার বিভাগের সেবার মান বৃদ্দির জন্য সরকারের সুনজর কামনা করেছিলেন। গত ২৪ ডিসেম্বর বিচার বিভাগীয় সম্মেলনে প্রধান বিচারপতি বলেছিলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে ১০ লাখ মানুষের জন্য ১০৭, কানাডায় ৭৫, যুক্তরাজ্যে ৫১, অস্ট্রেলিয়ায় ৪১ এবং ভারতে ১৮ বিচারক রয়েছেন। অথচ বাংলাদেশে ১০ লাখ মানুষের জন্য মাত্র ১০ জন বিচারক আছেন। জনসংখ্যা এবং মামলার সংখ্যা অনুপাতে বিচারক নিয়োগ করা এখন সময়ের দাবি।
বিচারকের অভাবে আপিলের ১টি বেঞ্চ বিচারকার্য বন্ধ: দ্রæত মামলাজট নিরসনে সাবেক প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন আপিল বিভাগে দুটি বেঞ্চ গঠন করেন। পদত্যাগী প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ছুটিতে যাওয়ার আগ পর্যন্ত নিয়মিত দুটি বেঞ্চে মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। বিচারপতি কম থাকায় পরবর্তীতে দুই বেঞ্চের মধ্যে একটি বন্ধ হয়ে যায়। যদিও মামলাজট নিরসনে আপিল বিভাগে ফের দুটি বেঞ্চ সচল করার কথা বরে আসছিল আইনজীবীরা।
দুই বছর যাবত বিচারক নিয়োগ বন্ধ : সাবেক প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার আমলে হাইকোর্টে দুই বছরের বেশি সময় বিচারক নিয়োগ বন্ধ ছিল ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রæয়ারি সরকার ১০ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে দু’বছরের জন্য নিয়োগ দেয় সরকার। গত দুই বছরে উচ্চ আদালতে আর কাউকে বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয়নি। যদিও গতবছরের আগস্টে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর উভয় পক্ষের সম্মতিক্রমে সেপ্টেম্বরে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় থেকে হাইকোর্টে নিয়োগের জন্য আটজনের নাম প্রস্তাব করে সুপারিশ পাঠানো হয়। এ তালিকা আইন মন্ত্রণালয় হয়ে বর্তমানে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে রয়েছে বলে জানা যায়। তবে পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে এই সুপারিশ প্রেরণ করা হলেও নিয়োগ প্রক্রিয়া আলোর মুখ দেখেনি এখনো।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।