পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
আর কে চৌধুরী : রাজধানীর বিপুলসংখ্যক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখলদারদের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। এসব স্কুলের হালহকিকত পরিদর্শনে গঠন করা হয়েছিল উপকমিটি। বিভিন্ন স্কুল সরেজমিন ঘুরে ২০১৪ সালের ২২ অক্টোবর প্রতিবেদন দেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির পাঁচ সদস্যের ওই উপকমিটির সদস্যরা। কিন্তু প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো অপদখলমুক্ত করার ক্ষেত্রে তা কোনো অবদান রাখতে পারেনি।
কারণ প্রতিবেদন দাখিলের তিন বছরের বেশি সময় ধরে তা ফাইলবদ্ধ হয়ে পড়ে আছে। বেদখল হওয়া বিদ্যালয়গুলোর জায়গা উদ্ধারে নেই কোনো পদক্ষেপ। দখলের খপ্পরে পড়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর একটি পুরান ঢাকার হয়বতনগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাবুবাজার জামে মসজিদের সন্নিকটে মেঘনা হাসপাতালের পেছনের এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আশপাশের ওষুধ ব্যবসায়ীরা বেশির ভাগই দখলে নিয়েছেন। জবরদখলের শিকার হয়েছে ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। পুরান ঢাকার কাপ্তানবাজারের খোদাবক্স সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঠাটারীবাজার বনগ্রাম রোডের ইসলামিয়া ইউপি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাংলাবাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ও একই অবস্থার শিকার। পুরান ঢাকার কোতোয়ালি থানার সুরিটোলা মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের জমিতে ওয়াসার পাম্প বসানো হয়েছে। বিদ্যালয় ভবনের প্রথম, তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ব্যবহার করছে রমনা রেলওয়ে উচ্চবিদ্যালয়। এফ কে এম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ তলায় কার্যক্রম চালাচ্ছে বংশাল উচ্চবিদ্যালয়। তৃতীয় ও চতুর্থ তলা ব্যবহৃত হচ্ছে কমিউনিটি সেন্টার হিসেবে। ছোট কাটরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় দখল করে রেখেছে আবদুল হামিদ কালান্দর উচ্চবিদ্যালয়।
রাজধানীর বিপুলসংখ্যক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দখলদারিত্বের থাবা বিস্তার হওয়ায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোয় পড়াশোনার পরিবেশ বিঘিœত হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সুনিশ্চিতভাবেই সরকারি সম্পত্তি। সরকারি অর্থে যে প্রশাসন চলে তারা এগুলো সুরক্ষার কোনো পদক্ষেপই নিচ্ছে না। এসব দেখার যেন কেউ নেই। সংসদীয় স্থায়ী কমিটির উপকমিটি বিদ্যালয়গুলো অপদখলমুক্ত করার পক্ষে প্রতিবেদন দিলেও তিন বছরের বেশি সময় ধরে তা ফাইলবদ্ধ থাকা দুর্ভাগ্যজনক। এই জোর যার মুল্লুক তার অবস্থার অবসান কাম্য।
সারাদেশে অবৈধ দখলদারদের কবল থেকে সরকারি সম্পত্তি উদ্ধারে সুষ্ঠু ভূমিনীতি প্রণয়ন করে ভূমি সংক্রান্ত জটিলতা নিরসন করার দাবি রয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও বার বার বলেছেন ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে শক্ত হতে। কিন্তু এই নির্দেশনার কোনো ইতিবাচক ফলাফল না ঘটায় অবৈধ দখলদারদের দৌরাত্ম্য যে এতটুকু কমেনি, তা এই প্রতিবেদনে স্পষ্ট। এই ঘটনা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, শিক্ষা বিষয়ে আমরা সামাজিকভাবে এখনো কতটা উদাসীন। এই ভূমিগ্রাস যেন বলতে চায়, শিক্ষাদীক্ষা চুলোয় যাক, দখলদারির জয় হোক।
এটা সত্য যে, সরকারের সেবা সম্প্রসারণ ও ব্যক্তির উন্নয়নপ্রসারণ উভয় কারণেই অধিক জমির প্রয়োজন। কিন্তু রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের যে চিত্র তাতে সরকারি শূন্য জমি অবশিষ্ট আছে কিনা এটাই জিজ্ঞাস্য। যে যার মতো দখলদারিত্ব ও ভূমিগ্রাসের প্রতিযোগিতায় নামবে আর সংশ্লিষ্টরা উদাসীনতার পরিচয় দেবে, এমনটি হতে পারে না। নদী, চর, খাসজমি, রেল ও সড়কের পাশের জমি ইত্যাদি দখলের পর ভূমিগ্রাসীদের দখলের লক্ষ্যবস্তু এখন বিদ্যালয়গুলো, কারণ বিদ্যালয়গুলোতে কিছু ফাঁকা স্থান এখনো রয়েছে। যা শিশুদের খেলার মাঠ বা শিশু শিক্ষার্থীদের চলাচলের এক চিলতে পরিসর। এর ওপরেই এখন বদনজর পড়েছে প্রভাবশালী, উন্নয়নসেবী, উন্নয়নকামী ও উন্নয়নগ্রাসীদের। কিন্তু কারো ধারণা নেই যে, আজ যা খালি দেখা যাচ্ছে প্রকৃতপক্ষে তা খালি নয়। ওই শূন্যস্থানেই রয়েছে জাতির ভবিষ্যৎ নাগরিকদের বিকশিত হওয়ার পূর্ণ স্থান। বিদ্যালয় কেবল একটি দাঁড়িয়ে থাকা দালান নয়, বিদ্যালয়ের ধারণায় অবশ্যম্ভাবীরূপে রয়েছে একটি উন্মুক্ত সবুজ মাঠ, বৃক্ষরাজি ঘিরে থাকা এক কোলাহলমুক্ত নিরাপদ স্থান। কিন্তু বাস্তবতা হলো, বিদ্যালয়গুলোতে সেই কোলাহলমুক্ত শিক্ষা-পরিবেশ আজ আর নেই। পাশের বাজারের হট্টগোল, যানবাহনের ভেঁপু, কিংবা উচ্চশব্দে নানান ঘোষণা, গান-বাজনার পীড়নে নীরবতা চিরতরে বিদায় নিয়েছে। সবুজ গাছপালারও দেখা নেই। আর যে শূন্য জমিটুকু রয়েছে তাও দখলদারের কবলে।
সার্বিক বিবেচনায় বলতে চাই, এই পরিস্থিতির অবসান হওয়া দরকার। বিদ্যালয়ের দখলকৃত স্থান বিদ্যালয়কে ফিরিয়ে দেয়া দরকার। এজন্য দলখদারদের কবল থেকে মুক্ত করতে হবে সরকারি সম্পত্তি। আমরা ভেবে পাই না, প্রশাসন সক্রিয় থাকতেও এসব সরকারি সম্পত্তি অবৈধ দখলদারদের আয়ত্তে কীভাবে যেতে পারে। অভিযোগ রয়েছে, সরকারি কর্মকর্তাদের যোগসাজশে কিংবা রাজনৈতিক পরিচয় দিয়েও এসব সরকারি সম্পত্তি দখলে নেয়া হয়। দেশের বিভিন্ন খাতের দুর্নীতির কথা এখন বহুল উচ্চারিত। ফলে এটা স্পষ্ট, শেকড়ের দুর্নীতি উচ্ছেদ না করা গেলে তা কোনো কাজে আসতে পারে না। আমরা মনে করি, এগুলো বিচক্ষণতার সঙ্গে বিবেচনা করেই কার্যকর উদ্যোগ নেয়া বাঞ্ছনীয়। এছাড়া প্রভাবশালীর ব্যক্তিগত কিংবা গোষ্ঠীগত, রাজনৈতিক দখলদারিত্বের উচ্ছেদও সরকারকেই করতে হবে। শিশুদের পাঠদানের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি জাতি গঠনের জন্য অতীব জরুরি, এটা মাথায় রেখে বিদ্যালয়গুলোর বেদখল হওয়া সম্পত্তি যেমন দখলমুক্ত করতে হবে, তেমনি অবৈধ দখলকৃত সরকারি অন্যান্য সম্পত্তি মুক্ত করার ক্ষেত্রেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকার ভূমিখেকোদের বিরুদ্ধে কঠোর হবে বলেই আমাদের প্রত্যাশা।
লেখক: মুক্তিযোদ্ধা ও শিক্ষাবিদ, সাবেক চেয়ারম্যান রাজউক, প্রতিষ্ঠাতা ও সভাপতি আর কে চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, সভাপতি বাংলাদেশ ম্যাচ ম্যানুফ্যাকচারার এসোসিয়েশন, সদস্য এফবিসিসিআই, মহান মুক্তিযুদ্ধে ২ ও ৩ নং সেক্টরের রাজনৈতিক উপদেষ্টা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।