পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
স্টালিন সরকার : ১৭শ বছর আগের কথা। বিশ্বব্যাপী তখন আলেকজান্ডারের জয়জয়কার। পারস্য জয়ের পর ম্যাসিডনের তরুণ স¤্রাট আলেকজান্ডার ভারতবর্ষ অভিমুখে যাত্রা করে হাজির হন গান্ধার (বর্তমানে রাওয়ালপিন্ডি) রাজ্যে। রাজধানী তক্ষশিলায় ছাউনি ফেলে তিনি যুদ্ধ করে প্রতিবেশি রাজ্য ঝিলাম এবং চেনার নদীর পাশে এলাকা দখল করে রাজা পুরুকে করেন বন্দী। রাজ্য দখলের পর পরাজিত যুদ্ধবন্দী রাজা পুরুকে বিজয়ী স¤্রাটের সামনে হাজির করা হয়। আলেকজান্ডার জিজ্ঞাসা করেন ‘পুরু আপনি বন্দী। আমার কাছে কেমন ব্যবহার আশা করেন? উত্তরে পরাজিত রাজা পুরু বলেন, ‘একজন রাজা আরেকজন রাজার কাছে যে ব্যবহার আশা করে; আমিও আপনার কাছে তেমন ব্যবহারই আশা করি’। বন্দী রাজার জবাব শুনে স¤্রাট আলেকজান্ডার খুশি হন এবং পুরুকে তার রাজ্য ফিরিয়ে দেন। এই হলো রাজনীতি এবং নেতাদের একে অপরের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ইতিহাস। দেশের সংকট-সমস্যা রাজনৈতিক বিরোধ নিয়ে মানুষ যতই নেতাদের দোষারোপ করুক; দেশের যা অর্জন তা রাজনীতিকদের জন্যই হয়েছে। রাজনীতিকদের জন্যই স্বাধীন দেশ পেয়েছি। তাই রাজনীতিকদের দেশের মানুষ অন্য চোখে দেখেন; মর্যাদা দেন অন্যরকম। সে জন্যই হয়তো পুরনো ঢাকার পরিত্যাক্ত কারাগারে বেগম খালেদা জিয়াকে রাখা নিয়ে ব্যাপক সর্বত্রই বিতর্ক শুরু হয়ে গেছে।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর বেগম খালেদা জিয়াকে পুরান ঢাকার পরিত্যাক্ত কারাগারে নেয়ার পর শুরু হয় এই বিতর্ক। তাঁকে কারাদÐ দেয়া নিয়ে যেমন বিতর্ক হচ্ছে; তার মুক্তির দাবিতে আন্দোলন হচ্ছে; তেমনি তিন বারের একজন সাবেক প্রধানমন্ত্রীকে পরিত্যাক্ত কারাগারে রাখা নিয়েও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। সর্বত্রই একই প্রশ্ন তাকে কেন পরিত্যাক্ত কারাগারে নেয়া হলো? ফেসবুক, বøগ, টুইটারে এ নিয়ে চলছে বিতর্কের ঝড়। টিভির টকশোগুলোতেও আলোচকদের অনেকেই এ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। গতকাল এলডিপির সভাপতি ড. কর্ণেল (অব) অলি আহমদ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন যে, বেগম জিয়াকে বসবাসের অযোগ্য পুরান কারাগারে রাখার পিছনে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ দূত এইচ এম এরশাদের প্রতিহিংসা কাজ করতে পারে। কারাগারে বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করে ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আইন অনুযায়ী কারাগারে তিন ক্যাটাগারিতে বেগম জিয়া ডিভিশন পান। দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন, সংসদ সদস্য ছিলেন, একটি দলের প্রধান। অথচ তাকে সাধারণ কয়েদীর মতো রাখা হয়েছে। একদম নির্জন এক সেলে। সম্পূর্ণ একা। জনমানবহীন পরিবেশে রাখা হয়েছে। ডিভিশন দেওয়া হয়নি। তাকে খাবারও দেয়া হচ্ছে নি¤œমানের। খালেদা জিয়া অসুস্থ। হাঁটুর ব্যথায় একা একা কষ্ট পাচ্ছেন। অথচ ডিভিশন দেওয়া হয়েছে বলে প্রাগান্ডা করা হচ্ছে। যে গৃহ পরিচারিকাকে খালেদা জিয়ার সঙ্গে রাখার কথা বলা হয়েছে, যাকে ছাড়া ম্যাডাম ১৫-২০ বছর চলতে পারেন না, সেই ফাতেমাকেও এখনো থাকার অনুমতি দেওয়া হয়নি।
দেশের সাধারণ মানুষ, বুদ্ধিজীবী, সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা নির্বাচনের এই বছরে (২০১৮) খালেদা জিয়ার কারাদÐ নিয়ে যেমন রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আগামী নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ নিয়ে সংশয় প্রকাশ করছেন; তেমনি বেগম খালেদা জিয়াকে পরিত্যাক্ত কারাগারে রাখা নিয়েও বিতর্ক করছেন। তাদের বক্তব্য দেশের দুই বৃহৎ রাজনৈতিক দলের একটির প্রধান এবং তিন বারের প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক অবস্থান, বয়স, সামাজিক মর্যাদা এবং দেশের জন্য তার অবদানের কথা বিবেচনা করে ‘বিশেষ কারগারে’ বন্দী করে রাখা যেত। কিন্তু তাতে রাখা হয়েছে পরিত্যাক্ত কারাগারে। বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগারে রাখা নিয়ে বিভিন্নজন অসন্তোষ প্রকাশ করছেন। আওয়ামী লীগ ও ১৪ দলীয় জোটের নেতারা বাদে দেশের ডান-বাম-মধ্যপন্থী-ইসলামী ধারার প্রায় সব দলের নেতাই বেগম জিয়াকে সম্মানজনক ভাবে রাখার দাবি করেছেন। তাদের বক্তব্য হলো ’৯০ এর গণঅভ্যূত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রেসিডেন্ট স্বৈরশাসক এইচ এম এরশাদের মতো ব্যাক্তিকেও বন্দী করে প্রথমে গুলশানে তার বাড়িকে ‘বিশেষ কারগার’ ঘোষণা করে রাখার ব্যবস্থা করা হয়। পরবর্তীতে জাতীয় সংসদের তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগের সদস্যদের প্রতিবাদ ও চাপের মুখে বাধ্য হয়ে সেখান থেকে বন্দী এরশাদকে কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। এমনকি ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন সরকারের সময় মাইন্যাস টু ফর্মূলা বাস্তবায়নে রাজনৈতিক সংস্কারের নামে শেখ হাসিনা বিদেশ থেকে দেশে ফেরার চেষ্টা করলে তাকে দেশে প্রবেশে বাধা দেয়া হয়; আর বেগম খালেদা জিয়াকে জোর করে দেশ থেকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়। রাজনীতিকদের প্রতি ঘৃণা ছড়ানো ফখুরুদ্দিন মঈনুদ্দিনের সরকার এক পর্যায়ে দুই নেত্রীর বিরুদ্ধে কয়েকটি করে মামলা দায়ের করে তাদের গ্রেফতার করেন। রাজনীতিকদের প্রতি ঘৃর্ণা প্রকাশ করলেও দুই নেত্রীকে গ্রেফতারের পর কেন্দ্রীয় কারাগারে না রেখে জাতীয় সংসদ ভবনে দু’টি বাড়ি ‘সাব জেল’ ঘোষণা করে সেখানে রাখা হয়। দুই নেত্রীকে গ্রেফতারের প্রতিবাদে মানুষ প্রতিবাদী হলেও ফখরুদ্দিন-মঈনুদ্দিন নেতৃত্বাধীন সরকারের বন্দী দুই নেত্রীকে সম্মান জানানোয় মানুষ সাধুবাদ জানায়। অথচ জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়ের পর বেগম খালেদা জিয়াকে সাব জেল ঘোষণা করে তার বাসায় রাখা দূরের কথা; সাধারণ কারাগারেও রাখা হয়নি। তাতে রাখা হয়েছে পরিত্যাক্ত কারাগারের একটি রুমে। অথচ ’৪৭ সালের দেশভাগের পর পঞ্চাশ ও ষাটের দশকে পাকিস্তানের স্বৈরশাসকরাও সে সময় আমাদের নেতাদের গ্রেফতার করলে তাদের বয়স, সামাজিক ও রাজনৈতিক মর্যাদার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কারাগারে সুযোগ সুবিধার ব্যবস্থা করতেন। অথচ এখন---।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।