পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
এরশাদের গড়া জাতীয় ছাত্রসমাজের কর্মী আমির হোসেন ঢাকার উত্তরায় মুদি দোকান করতেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে লাঙ্গলের প্রার্থী হিসেবে কুমিল্লার একটি আসনে এমপি হন। এমপিকে অভিনন্দন জানাতে আসেন স্থানীয় থানার ওসি। ঘরে মানুষ গিজগিজ করছে। নতুন এমপি কথা বলার সময় বার বার ‘ওসি স্যার’ বলছেন। এত মানুষের সামনে এমপির মুখে ‘স্যার’ শুনে বিব্রত হন ওসি। বলেন, ‘আমি আপনার স্যার নই, আপনি আমার স্যার’। এমপি মর্যাদা ওসির ওপর বুঝতে পেরে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ধরে ওই ওসির বদলি করে নেন। এই হলো দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে আমাদের অধিকাংশ এমপির চিত্র। মুদি দোকানদার, হোটেলবয়, ট্রলারে বালু বিক্রেতা, ফুটপাথের চাঁদা আদায়ের লাইনম্যানসহ অনেকেই বিগত দু’টি জাতীয় নির্বাচনে এমপি হয়েছেন আমলাদের বদৌলতে। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিভাবে ‘ভোট’ হয়েছে তা কারো অজানা নয়।
জাতীয় সংসদে গত ২৮ জুন আমলাদের দৌরাত্ম্য নিয়ে তুমুল ঝড় উঠেছিল। বর্তমান আমলাদের নিয়ন্ত্রণে প্রশাসন ইস্যুতে উষ্মা প্রকাশ করা হয়। আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও বিএনপির এমপিরা আমলাদের তুলোধুনো করেন। সংসদে আওয়ামী লীগের একজন জাঁদরেল নেতা বলেন, ‘সংসদ সদস্যদের স্থান সচিবদের ওপরে, এটা খেয়াল রাখতে হবে’। কয়েকজন সিনিয়র এমপি প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সংসদ সদস্যদের উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলাদের ওপর সরকার নির্ভরশীল ইত্যাদি কঠোর সমালোচনা করেন। জনগণের ভোট ছাড়াই নির্বাচিতদের নিয়ে গঠিত নিস্তেজ সংসদে হঠাৎ ‘উত্তাপ’ মানুষ উপভোগ করছে। কিন্তু প্রশাসন আমলাদের ওপর নির্ভরশীলতা এবং উপনিবেশিক শাসনামলের মতো এখন আমলাদের দেশ চালানোর ক্ষেত্র কারা তৈরি করেছেন? যারা সংসদে আমলাদের তুলোধুনো করছেন তারা কি আমলাদের সহায়তায় নির্বাচিত হননি? নাকি আমলাদের অনুকম্পায় এমপি হয়ে জনগণের খামখা বাহবা পেতে সংসদে ঝড় তুলছেন?
রাজনীতি জনসেবা হওয়ায় নেতাদের প্রতি দেশের মানুষের প্রত্যাশা বেশি। বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি সব হারাতে পারি, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষের ভালোবাসা হারাতে পারব না।’ অথচ আমলাদের অনুকম্পায় নির্বাচিত এমপি তথা রাজনীতিকদের কি ভোটের অধিকার হারানো দেশের জনগণ ভালোবাসেন? বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়। জনগণের ভোটে নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় বসানোয় টালবাহানা করলে একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে ‘স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ’ অভ্যুদ্বয় ঘটে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ‘সমতা, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার’ হলেও মূলে ছিল জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা। এখন দেশে কি জনগণের ভোটের অধিকার রয়েছে? মুক্তিযুদ্ধ এবং পরবর্তীতে দেশ গঠনে রাজনীতিকদের অসামান্য অবদান অস্বীকার করার উপায় নেই। রাজনীতিক মানেই তো জনগণের সেবক। ’৯০-এর রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর জনগণের সেবা ও গণতান্ত্রিক চর্চা শুরু হয়েছিল। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কি জনগণ ভোট দিতে পেরেছে বা দিয়েছে? বর্তমান আমলাদের সহায়তায় রাজনীতিকরা এমপি, মন্ত্রী হয়েছেন। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ১৫৩ জন এমপি বিনা ভোটে নির্বাচিত হন। অন্য আসনগুলোতে ভোটার যাননি ভোট দিতে। ওই নির্বাচনের পর দীর্ঘ ৫ বছর কতজন এমপি নিজ নির্বাচনী এলাকার জনগণের কাছে গেছেন? নিজ নিজ দলের নেতাকর্মীদের খোঁজখবর নিয়েছেন? বিএনপির বর্জনের মুখে ওই নির্বাচন সম্পন্ন করেছিলেন আমলারাই। মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে বিভাগ, জেলা, উপজেলার দায়িত্বরত আমলা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ‘ভোট করে’ রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় এনেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে আমলারা নিজেরাই ব্যালটে সিল মেরে নির্বাচিত করেছেন বর্তমান এমপিদের। কতজন এমপি জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়েছেন? একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে কয়েক মাস আমরা দেখেছি ক্ষমতাসীন দলের এমপি প্রার্থীরা দলের নেতাকর্মীদের বদলে আমলানির্ভর হয়ে পড়েন। থানার ওসি, উপজেলার ইউএনও, জেলার ডিসি, এসপি তাদের কাছে হয়ে উঠে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। সাধারণ ভোটারদের পাত্তা দেয়া দূরের কথা নিজ দলের নেতাকর্মীদের পাত্তাই দেননি। তৃণমূলে আওয়ামী লীগের বিশাল কর্মী সমর্থক। দলের জন্য নিবেদিতপ্রাণ ওই কর্মীরা দেখা করতে গেলে দূর দূর করে তাড়িয়ে দিয়েছেন। ভোটের আগে আমলারাই তাদের সবচেয়ে পছন্দের ব্যক্তি ছিলেন। সেই আমলাদের ওপর হঠাৎ কেন ক্ষেপে যাচ্ছেন এমপিরা? এখন নিজেদের স্বার্থে আঘাত লেগেছে?
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর অধিকাংশ এমপি ঢাকায় ছিলেন। দেশ ছিল টালমাটাল। প্রথম দুই-তিন বছর এমপিরা নিজের এলাকায় যেতে পারেননি গণপিটুনির ভয়ে। সংসদ ভবনে সংসদীয় দলের বৈঠকে এমপিদের নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়। কেন্দ্র থেকে নানাভাবে নির্বাচনী এলাকায় যাওয়ার তাগাদা দেয়ার পর ইউএনও এবং ওসিদের সহায়তায় গ্রামে যান বেশির ভাগ এমপি। পিটুনির ভায়ে ডিসির সহায়তায় সার্কিট হাউজে রাত কাটিয়েছেন। আওয়ামী লীগের উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের নেতাদের পাত্তা দেননি; যতটুকু পেরেছেন শ্যালক, স্বজনদের মাধ্যমে দলকে আত্মীয়করণ করেছেন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটের আগের রাতে ব্যালটে সিল মারা হয়। টিআইবি, সুজনসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান গবেষণা করে জানিয়েছে ওই নির্বাচনে প্রতিটি আসনে ৪০ থেকে ৫০ শতাংশ ব্যালটে আগের রাতেই সিল মারা হয়। আর সেটা করেছেন আমলাদের নির্দেশে স্থানীয় প্রশাসনে কর্মরত কর্মকর্তা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তখন তো আমলাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াননি? বরং এই এমপিরা আমলাদের তোয়াজ করতে অভ্যস্ত। যারা আপনাদের ক্ষমতায় পাঠিয়েছেন তারা এখন খারাপ হয়ে গেল? এখন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি পদের মর্যাদার কথা আমলাদের স্মরণ করিয়ে দেন।
গত কয়েক বছরে সিটি কর্পোরেশনের মেয়র, পৌরসভার মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান, কাউন্সিলরসহ প্রায় চারশ’ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিকে স্থানীয় সরকারের প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে বরখাস্ত করা হয়েছে। আমলাদের সেসব সিদ্ধান্তের কি প্রতিবাদ করেছিলেন এই জনপ্রতিনিধিরা?
এটা ঠিক বর্তমান প্রশাসন আমলাদের ওপর নির্ভরশীল। উপনিবেশিক শাসনামলে এ উপমহাদেশের জনগণকে দমিয়ে রাখার জন্য ইংরেজরা আমলাদের ওপর নির্ভরশীল ছিলেন। তারা একদিকে আমলাদের বেতন-ভাতা ও নানান সুবিধা দিয়েছেন; অন্যদিকে জনগণের ওপর ট্যাক্স বাড়িয়েছেন। কারণ ‘জনগণকে দমিয়ে রাখা’র দায়িত্ব ছিল আমলাদের ওপর। ইংরেজদের সেই থিওরি এখনো চলছে। প্রশাসনে কর্মরত আমলাদের কাছে মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, এমপি, স্থানীয় তথাকথিত নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি কেউ কোনো পাত্তা পাচ্ছেন না। এটাই স্বাভাবিক। আমলারা তো জানেন কি প্রক্রিয়ায় বর্তমানের জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচিত হয়েছেন। সে জন্য তারা জনপ্রতিনিধিদের পাত্তা দিচ্ছেন না।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসের প্রথম ঢেউ ঠেকাতে ২০২০ সালে দেশে লকডাউনসহ নানান কর্মসূচি দেয়া হয়। এসব কর্মসূচির আগে গরিব, নিম্নবিত্ত মানুষকে ত্রাণ সহায়তা দেয়া হতো। এমনকি সামাজিক কারণে যারা লাইনে দাঁড়িয়ে ত্রাণ নিতে পারেন না অথচ কষ্টে ছিলেন সেই মধ্যবিত্তদের বিকাশের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী অর্থ সহায়তার ব্যবস্থা করেন। অতঃপর দেখা যায় প্রতিদিন পত্রিকার পাতায় নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ চুরির খবর আসতে থাকে। এমনকি একজন জনপ্রতিনিধি ২০ থেকে ৩০ জনের নামে টাকা তুলতে একটি মোবাইল নম্বর দেন। তারা কেউ টাকা তুলে নেন; কেউ ধরা পড়েন। ফলে যে জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৫০ লাখ পরিবারকে মোবাইলে আর্থিক সহায়তার উদ্যোগ নেন তা সফল হয়নি। জনপ্রতিনিধিদের ত্রাণ চুরির কারণে সচিবদের প্রধান করে ৬৪ জেলায় ত্রাণ সহায়তা কমিটি গঠন করতে হয়।
সংসদে তুলোধুনো হওয়া বর্তমান আমলাদের অবস্থা হয়েছে ‘যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর’ প্রবাদের মতো। গভীর রাতে ব্যালটে সিল মেরে যাদের নির্বাচিত করেছেন তারাই এখন আমলাদের বিরুদ্ধে উল্টো সুর তুলছেন। এ ঘটনা অপ্রাসঙ্গিক হলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বিখ্যাত ‘দুই বিঘা জমি’ কবিতার কথা স্মরণ করা যেতে পারে। গ্রামের গরিব কৃষক উপেনের দুই বিঘা জমির ওপর জমিদারের চোখ পড়ে। পরে মিথ্যা দেনার দায়ে উপেনের দুই বিঘা জমি হাতিয়ে নেয়। কয়েক বছর পর উপেন ফিরে আসেন গ্রামে। তাঁর জমিতে দাঁড়িয়ে থাকা আমগাছের নিচে কুড়িয়ে পান দু’টি পাকা আম। এ কারণে উপেনের বিরুদ্ধে জমিদার আম চুরির অভিযোগ তোলেন। এ প্রেক্ষাপটে উপেন আফসোসের সুরে বলেন : ‘তুমি মহারাজ সাধু হলে আজ/আমি আজ চোর বটে।’
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।