পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
অ্যান্টি-স্ল্যাভেরি ইন্টারন্যাশনাল দাসত্বের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে একে ‘জোরপূর্বক শ্রম দেওয়া’ হিসেবে উল্লেখ করেছে। এই সংজ্ঞা অনুযায়ী, বর্তমান বিশ্বে এখনো ২ কোটি ৭০ লক্ষ দাস রয়েছে। এই সংখ্যা ইতিহাসের যে-কোনো সময়কার দাসের সংখ্যার তুলনায় বেশি। এমন কী প্রায় ৪০০ বছরের ইতিহাসে আফ্রিকা থেকে আমেরিকায় আনা আফ্রিকান দাসের মোট সংখ্যাও এর প্রায় অর্ধেক। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা জোরপূর্বক শ্রম দেওয়াকে দাসত্ব হিসেবে ধরে না। তাদের হিসাব অনুযায়ী এখনো বিশ্বের ১ কোটি ২০ লক্ষ মানুষ জোরপূর্বক শ্রম, দাসত্ব, ও দাসত্ব সংশ্লিষ্ট প্রথার কাছে বন্দী। এই দাসের বেশির ভাগই ঋণ শোধের জন্য দাসে পরিণত হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ায় একটি বৃহৎ জনগোষ্ঠী মহাজনদের কাছ থেকে অর্থ ধার নিয়ে পরবর্তী অর্থ শোধ দিতে না পারায় দাসে পরিণত হয়েছে। এদের মধ্যে কিছু আছে যারা কয়েক প্রজন্মের জন্য দাস। মানুষ পাচার মূলত হয়ে থাকে নারী ও শিশুদের যৌন ব্যবসায় খাটানোর জন্য। এটিকে বর্ণনা করা হয় ‘ইতিহাসের সর্ববৃহৎ দাস বাণিজ্য’ হিসেবে। অবৈধ মাদকদ্রব্য পরিবহনে ব্যবহার করার কারণে একই সাথে এটি বিশ্বের অন্যতম দ্রæত বর্ধনশীল অপরাধ ক্ষেত্র। প্রাচীনকালে এবং মধ্যযুগে সমাজে মানুষ কেনা বেচার একটি প্রথা ছিল যা দ্বারা বিভিন্ন মূল্যের বিনিময়ে মানুষ কেনা যেত। এই প্রচলিত প্রথাটিকেই দাস প্রথা বলা হয়ে থাকে। দাস অথবা দাসী বর্তমান বাজারের পণ্যের মতই বিক্রি হত। বতমার্নে যেমন পণ্য বেচা কেনার বাজার আছে অতীতেও দাসদাসী বিক্রি অথবা ক্রয় এর জন্য আলাদা বাজার ছিল। তখন দাসদাসী আমাদানী এবং রপ্তানীতে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হত এবং এটা দেশের অর্থনীতিতে প্রভাব পড়তো। সাধারণত দাসদাসীরা আফ্রিকান হত। আফ্রিকান দাস এর মধ্যে হাবশি ও কাফ্রির চাহিদা ছিল বেশী। বাংলায় এসব দাসদাসী ৫ থেকে ৭ টাকায় কেনা যেত এবং স্বাস্থ্যবান দাস প্রায় ২০ থেকে ২২ টাকায় কেনা যেত ।দাসদের দিয়ে ২ ধরনের কাজ করানো হতোÑ কৃষি কাজ এবং গার্হস্থ্য কাজ। তখন সমাজে গুটি কয়েক দাস রাখা একটি সামাজিক মযাদার্র ব্যাপার ছিল। তাছাড়া উচ্চবিত্তরা তাদের দাসদের দিয়ে বিভিন্ন কৃষি কাজ করাতেন। যেমন: হালচাষ, সেচ এর পানি, মাটি উর্বর করানো, গবাদী পশু পালন, তাদের রক্ষনাবেক্ষণ ইত্যাদি। দাসীদের সাধারণত রাখা হতে যৌন লোভ লালসা পূরণ করার জন্য। তাদের উপপতিœ করে রাখা হত এবং তাদের সন্তানদেরও দাস রুপে রাখা হত বা বিক্রি করা হত।
বর্তমানে আনুষ্ঠানিকভাবে এ প্রথা চালু না থাকেলও অনানুষ্ঠানিকভাবে টিকে রয়েছে। অস্ট্রেলিয়াভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা ওয়ার্ক ফ্রি ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে সারা বিশ্বের ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ আজও দাসের মতো জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বাংলাদেশেও ১৫ লাখ মানুষের জীবনযাপন দাসদেরই মতো। অস্ট্রেলীয় মানবাধিকার সংস্থা গেøাবাল ¯েøভারি ইনডেক্সের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বিশ্বজুড়ে যে ৪ কোটি ৫৮ লাখ মানুষ ‘আধুনিক দাসের’ জীবন অতিবাহিত করছে তাদের ৫৮ শতাংশই ভারত, চীন, পাকিস্তান, বাংলাদেশ ও উজবেকিস্তানের বাসিন্দা। সংস্থার ২০১৪ সালের সমীক্ষায় বিশ্বজুড়ে ৩ কোটি ৫৮ লাখ মানুষের আধুনিক দাসের জীবনযাপনের কথা বলা হয়েছিল। সে হিসেব এক বছরের ব্যবধানে এ তালিকায় আরও ১ কোটি মানুষের সংযোজন হতাশাব্যাঞ্জক।
দাসের সঙ্গে তুলনীয় অমানবিক জীবনযাপন করতে বাধ্য হচ্ছে এমন মানুষ সবচেয়ে বেশি ভারতে। অর্থনীতির বিচারে ভারত এখন শীর্ষ পর্যায়ের দেশে উন্নীত হলেও সে দেশের ১ কোটি ৮৩ লাখ মানুষের জীবন প্রায় দাস যুগের গÐিতে বাধা। তারপর রয়েছে বিশ্বের এক নম্বর অর্থনৈতিক শক্তি বলে কথিত সমাজতান্ত্রিক দেশ চীন। চীনের ৩৪ লাখ মানুষ এখনো দুর্দশাগ্রস্ত জীবনযাপন করছে। মধ্যযুগের মনমানসিকতায় আবর্তিত পাকিস্তান দাসত্ব জীবনযাপনের দিক থেকে তৃতীয় স্থানে। এ দেশটির ২১ লাখ মানুষ এমন লজ্জাজনক অবস্থানে বাস করছেন। দশম স্থানে বাংলাদেশের অবস্থান এবং এ দেশের ১৫ লাখ অর্থাৎ শতকরা প্রায় এক শতাংশ মানুষ প্রায় দাসের মতো জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছে।
লেখক: বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।