নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : পার্থক্যটা প্রথম দিনই বুঝিয়ে দিল মিরপুর। চট্টগ্রাম টেস্টে যেখানে রাজত্ব করেছে ব্যাটসম্যানরা, ঠিক তার উল্টো চিত্র ঢাকা টেস্টে। প্রথম সেশন থেকেই উইকেটে স্পিনারদের জিভে পানি আসার মত টার্ন আর বাউন্স। লাটিমের মতো ঘুরতে থাকা পিচে আগে বোলিং পেয়ে শ্রীলঙ্কানদের টপাটপ উপড়ে দিয়ে শুরু বাংলাদেশের। এই পিচে শেষ বিকেলে নেমে টাইগার ব্যাটসম্যানরাও করেছেন কাঁপাকাঁপি। শ্রীলঙ্কাকে আড়াই সেশনে অলআউট করে দিয়েও ৪ উইকেট হারিয়ে অস্বস্তি নিয়ে দিন পার করেছে বাংলাদেশ।
গতকাল শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম দিনে উইকেট পড়েছে ১৪টি। দুই সেশনে ৮ উইকেট হারানোর পর তৃতীয় সেশনের প্রথম ঘণ্টাতেই ২২২ রানে গুটিয়ে যায় শ্রীলঙ্কা। জবাবে ব্যাট করতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা হয় ভয়াবহ বিপর্যয়ে। ১২ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বিপর্যয়ে পড়া বাংলাদেশ দিনশেষে তুলেছে ৪ উইকেটে ৫৬ রান। ২৪ রান করে ক্রিজে আছেন লিটন দাস, সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ ব্যাট করছেন ৫ রান নিয়ে।
শেষ সেশনে ব্যাট হাতে পেয়েই বেকায়দায় পড়ে বাংলাদেশ। তৃতীয় বলেই ফিরে যান তামিম ইকবাল। স্পিনারদের পিচে শাই শাই করে বল ভেতরে ঢুকিয়েছেন সুরাঙ্গা লাকমাল। তার প্রথম শিকার তামিম। নিজের বলেই এই ওপেনারের দেওয়া ক্যাচ নিয়েছেন তিনি। পরে মুশফিকুর রহিমকে আউট করেছেন পরিকল্পনা করে। বল ভেতরে ঢুকিয়ে বারবার সমস্যায় ফেলছিলেন মুশফিককে। ইনসুয়িঙ্গার ছেড়ে দেওয়ার মোশনে নিয়ে ফল পান লাকমাল। তার বলে ছেড়ে দিয়ে বোল্ড ১ রান করা মুশফিক। মাঝে মুমিনুল হক তার মহামূল্যবান উইকেট ছুঁড়ে দিয়ে এসেছেন হেলায়। রান নিতে গিয়ে আলসে ভঙ্গিতে ক্রিজে ঢুকতে গিয়ে কোন রান করার আগেই রান আউট মুমিনুল। ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস চেষ্টা করেছিলেন জুটি গড়ে প্রতিরোধের। কিন্তু দিনের শেষ ভাগে আউট ইমরুলও। দিনের শেষটা বাংলাদেশের জন্য হয়েছে তাই বিষাদের ছোঁয়ায়।
বাংলাদেশের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ের ঘটনা না ঘটলে দিনের সব আলো থাকত আব্দুর রাজ্জাকের উপরই। চার বছর পর টেস্ট দলে ফিরে এই বাঁহাতি স্পিনার করেছেন ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ৬৩ রানে চার উইকেট নিয়ে তিনিই লঙ্কান ইনিংসের মূল হন্তারক। ৮৩ রানে ৪ উইকেট নিয়ে সঙ্গ দিয়েছেন আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামও।
দিনের দ্বিতীয় ওভারে বল পাওয়া রাজ্জাক সাফল্য পান নিজের তৃতীয় ওভারে। ১৪ রানে দিমুথ করুনারতœকে ফিরিয়ে শুরু। তার বলে বেরিয়ে আসতে গিয়ে লাইন মিস করেন লঙ্কান ওপেনার। পাঁচ ওভারের প্রথম স্পেলে পরে দিয়েছেন আলগা বল, খেয়েছিলেন মারও। পিচের ভাষা জানা ছিল চন্ডিকা হাতুরুসিংহের। এই পিচে যত দ্রæত রান তোলা যায় ততই সুবিধের। লঙ্কানদের শুরুটাও হয়েছিল আগ্রাসী। উইকেট পড়লেও বাউন্ডারি বের করে রানের চাকা সচল রেখেছিল তারা।
তবে লাঞ্চের ঠিক আগে দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে আরও বিষাক্ত রাজ্জাক। তার বলে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে মিড অফে ক্যাচ দেন দানুশকা গুনাথিলেকা। পরের বলেই দারুণ এক ডেলিভারিতে দিনেশ চান্দিমালকে বোল্ড করে দেন রাজ্জাক। ৯৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে লাঞ্চে যাওয়া লঙ্কানদের অস্বস্তি বেড়েছে লাঞ্চের পরই। এক পাশে উইকেট পড়লেও স্বচ্ছন্দে খেলছিলেন ওপেনার কুশল মেন্ডিস। ৬৮ রানে তাকে ফিরিয়ে চার নম্বর উইকেট তুলেন রাজ্জাক। অফ স্টাম্পে পিচ করা বল একটু টার্ন করে স্টাম্প ঘেঁষে ফিরিয়ে দেয় মেন্ডিসকে। দলের ১০৯ রানে মেন্ডিসের একারই রান তখন ১০ চার ও ১ ছক্কায় ৬৮।
৬ উইকেট হারিয়ে দিকভ্রান্ত শ্রীলঙ্কা। দিশা খুঁজে পায় তারা রোশেন সিলভা ও দিলরুয়ান পেরেরার জুটিতে। পরিস্থিতির বিবেচনায় দুর্দান্ত খেলেছেন দুজন। যথারীতি চেষ্টা ছিল দ্রæত রান বাড়ানোর। আগের টেস্টের সেঞ্চুরিয়ান রোশেন সিলভা আবারও খেলেছেন দারুণ। মাত্র তৃতীয় টেস্ট খেলতে নামা ব্যাটসম্যান দেখিয়েছেন দারুণ পরিণতিবোধের প্রমাণ। সপ্তম উইকেট জুটিতে পেরেরার সঙ্গে রোশেনের জুটি ৫২ রানের, অষ্টম উইকেটে আকিলা দনঞ্জয়ার সঙ্গে ৪৩ রানের। মহামূল্য এই দুই জুটিই শ্রীলঙ্কাকে এগিয়ে নেয় দুইশ ছাড়িয়ে।
অপর প্রান্তে পাশে মার খেলেও উইকেট তুলতে ভুল করেননি তাইজুল ইসলামও। ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে দিয়ে শুরু। পরে নিয়েছেন রোশান সিলভা, দিলরুয়ান পেরেরা ও নিরোশান ডিকভেলার উইকেট। স্পিনারদের নিয়ে কাটার নিয়ে হাজির ছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। তার বলে হাঁসফাঁস করেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। ¯িøপে ক্যাচ ফেলেছেন সাব্বির রহমান। তবু ১১ ওভার বল করে মাত্র ১৭ রান দিয়ে ২ উইকেট ঠিকই পকেটে পুরে নিয়েছেন তিনি।
বাংলাদেশের বিপক্ষে আগের সর্বনিম্ন ২৯৩ থেকে অনেক কমে এবার আটকে গেছে শ্রীলঙ্কা। তবে বোলারদের সৌজন্যে লঙ্কান ড্রেসিং রুমের দম আটকানো পরিস্থিতিটা আর থাকেনি। সেই অনভূতি দিন শেষে চেপেছে বাংলাদেশের আঙিনায়।
স্কোর কার্ড
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা ২য় টেস্ট, মিরপুর
টস : শ্রীলঙ্কা
শ্রীলঙ্কা ইনিংস রান বল ৪ ৬
মেন্ডিস ব রাজ্জাক ৬৮ ৯৮ ১০ ১
করুনারতেœ স্টা. লিটন ব রাজ্জাক ৩ ১২ ০ ০
ধনাঞ্জয়া ক সাব্বির ব তাইজুল ১৯ ৩০ ২ ১
গুনারতেœ ক মুশফিক ব রাজ্জাক ১৩ ২৬ ২ ০
চান্দিমাল ব রাজ্জাক ০ ১ ০ ০
রোশান ক লিটন ব তাইজুল ৫৬ ১২৪ ৩ ১
ডিকভেলা ব তাইজুল ১ ৩ ০ ০
দিলরুয়ান ক মুমিনুল ব তাইজুল ৩১ ৫৫ ৪ ০
দনাঞ্জয়া ক মুশফিক ব মুস্তাফিজ ২০ ২৬ ২ ০
হেরাথ ক মুশফিক ব মুস্তাফিজ ২ ৪ ০ ০
লাকমাল অপরাজিত ৪ ১৪ ০ ০
অতিরিক্ত (লে বা ৫) ৫
মোট : (৬৫.৩ ওভারে অল আউট) ২২২
উইকেট পতন : ১-১৪ (ধনাঞ্জয়া), ২-৬১ (ধনাঞ্জয়া), ৩-৯৬ (গুনারতেœ), ৪-৯৬ (চান্দিমাল), ৫-১০৯ (মেন্ডিস), ৬-১১০ (ডিকভেলা), ৭-১৬২ (দিলরুয়ান), ৮-২০৫ (দনাঞ্জয়া), ৯-২০৭ (হেরাথ), ১০-২২২ (রোহান)।
বোলিং : মিরাজ ১৩-০-৫৪-০, রাজ্জাক ১৬-২-৬৩-৪, তাইজুল ২৫.৩-২-৮৩-৪, মুস্তাফিজ ১১-৪-১৭-২।
বাংলাদেশ ইনিংস
তামিম ক ও ব লাকমল ৪ ৩ ১ ০
ইমরুল এলবিডবিøউ ব পেরেরা ১৯ ৫৫ ৩ ০
মুমিনুল রান আউট (ধনাঞ্জয়া/ডিকভেলা) ০ ৩ ০ ০
মুশফিক ব লাকমল ১ ২২ ০ ০
লিটন অপরাজিত ২৪ ৪৩ ৩ ০
মিরাজ অপরাজিত ৫ ৭ ১ ০
অতিরিক্ত (লে বা ১, নো ১, ও ১) ৩
মোট (২২ ওভার, ৪ উইকেট) ৫৬
উইকেট পতন : ১-৪ (তামিম), ২-৪ (মুমিনুল), ৩-১২ (মুশফিক), ৪-৪৫ (ইমরুল)।
বোলিং : লাকমল ৭-৩-১৫-২, দিলরুয়ান ৮-৩-২৫-১, হেরাথ ৪-০-১১-০, ধনঞ্জয়া ৩-১-৪-০।
*প্রথম দিন শেষে
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।