পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
জাতীয় গ্রন্থাগার দিবস ছিল গত সোমবার। দিন আসে দিন যায়, মাস ঘুরে বছর ফুরায়। কতো দিবসকে আমরা ‘বিশেষ দিবস’ হিসেবে পালন করে থাকি। কিন্তু বইপ্রেমী, গ্রন্থসুহৃদ এবং গ্রন্থাগার সংগঠকদের কাছে জাতীয় গ্রন্থগার দিবসটি বিশেষ তাৎপর্যের। দিবসটির প্রতিপাদ্য ছিল ‘বই পড়ি, স্বদেশ গড়ি’।
গ্রন্থাগার সভ্যতার বাহন। গ্রন্থাগারের ইতিহাস বহু পুরনো। হাজার বছরের বেশি। আমাদের দেশে বেশ ক’টি শতাব্দী প্রাচীন গ্রন্থাগার রয়েছে। এগুলো আমাদের শিক্ষা-সংস্কৃৃতি চর্চার ধারক ও বাহক। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি এবং সভ্যতার চাকা একই সুতোয় গাঁথা। প্রতি মুহূর্তে প্রযুক্তির নতুন নতুন উদ্ভাবনে জীবন বদলে যাচ্ছে। তবে কথায় বলে, ‘বিজ্ঞান দিয়েছে বেগ (গতি), কেড়ে নিয়েছে আবেগ (অনুভূতি)। প্রযুক্তির অগ্রযাত্রা যেমন থামানো যাবে না, তেমনি সেটি করাও উচিত নয়। তবে এর অপপ্রয়োগ রোধ এবং সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।
মানুষ সবকিছু সহজে, হাতের কাছে পেতে চায়। আজকের ইন্টারনেট প্রযুক্তি, স্মার্টফোন মানুষে মানুষে যোগাযোগ স্থাপনকে করেছে অতি সহজ। এটি যেন জাদুর কাঠি। আঙুল চাপতেই ভাগ্যের বরপুত্রের কাছে আলাদীনের দৈত্য এসে হাজির, ‘হুকুম দিন জাঁহাপনা, কী করতে পারি’। কী নেই মোবাইলে, সকল রকম তথ্যই মেলে। যেখানে যাই সেখানেই মোবাইল, ছোট-বড় সবার হাতে মোবাইল। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা, রাত-সারাক্ষণ হাতে মোবাইল, ফেসবুকে চোখ। ফেসবুক চর্চায় অনেকেরই বিনিদ্র রাত কাটে। এতে ঘুম ব্যাহত হয়। দিনের কাজে এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। শ্রমশক্তির অপচয় হয়। কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী, যুব-যুবমহিলা সবাই ব্যস্ত। বছরে একশ’ টাকার বই হাতে উঠবে না, কিন্তু দশ, বিশ, পঞ্চাশ হাজার টাকার মোবাইল সেট কিনতে টাকা যেন ভূতে যোগায়! অতিরিক্ত মোবাইল ব্যবহারে ¯œায়ু চাপ বাড়ছে, বিষণœতা ভর করছে, দৃষ্টি ও শ্রবণশক্তির ক্ষতি হচ্ছে। সস্প্রতি কাগজে দেখলাম, অতিরিক্ত ফেসবুক চালাতে গিয়ে এক মেয়ে দৃষ্টি শক্তি হারিয়েছে। আগে শুনতাম, ‘তাস খেলে কতো ছেলে পড়া নষ্ট করে, পরীক্ষা আসিলে তাই চোখে জল ঝরে’। এখন কেউ আর পরীক্ষা-টরীক্ষার তোয়াক্কা করে না। কারণ ফেসবুকে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রও মেলে! এভাবেই অনেকে জীবন নষ্ট করে। মনে রাখতে হবে, ‘সব নেশা খারাপ নেশা, বই পড়া ভাল নেশা’। অমরা অবশ্যই বইয়ের প্রিন্টেড/হার্ডকপির কথা বলছি।
আশায় বসতি। আমরা আশাবাদী হতে চাই, পাঠক আবার বইমুখী হবে, গ্রন্থাগারে গিয়ে বই পড়বে, যদি গ্রন্থাগারগুলোকে পাঠকের প্রয়োজন মাফিক সাজানো যায়। যুগের চাহিদার কারণেই সেটি করতে হবে। একাডেমিক শিক্ষার বাইরে সামাজিক জ্ঞানচর্চার মূল কেন্দ্র হিসেব গড়ে তুলতে হবে গ্রন্থাগারকে। জাতি, বর্ণ, ধর্ম, বয়স নির্বিশেষে সকলের জ্ঞানচর্চার কেন্দ্র্রবিন্দু হবে সাধারণ বা গণগ্রন্থাগার।
কতিপয় ভাবনা : ১. পারিবারিক গ্রন্থাগার: ‘পারিবারিক গ্রন্থাগার আলোকিত পরিবারের প্রতিচ্ছবি’। শিশুকে শুরু থেকেই বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে হবে। ২. প্রাথমিক স্তর: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গ্রন্থাগার বাধ্যতামূলক করতে হবে। গ্রন্থাগারিক নিয়োগ দিতে হবে। ৩. মাধ্যমিক (হাইস্কুল) স্তর: গ্রন্থাগার বাধ্যতামূলক, কিন্তু অনেক স্কুলে নেই। সরকার সহকারি গ্রন্থাগারিকের পদ (এমপিওভুক্ত) সৃষ্টি করেছে। অনেক স্কুলে পদটি খালি পড়ে আছে। যেসব স্কুলে ইতিমধ্যে নিয়োগ দেয়া হয়েছে সেখানে লাইব্রেরিয়ানকে দিয়ে অন্য কাজ করানো হয়। ৪. উচ্চ মাধ্যমিক (কলেজ) স্তর: লাইব্রেরি বাধ্যতামূলক। তবে গুরুত্বহীন। বেশিরভাগ কলেজে নামকাওয়াস্তে আছে। সমৃদ্ধ করার উদ্যোগ নেই ৫. বিশ্ববিদ্যালয় স্তর: লাইব্রেরি কতোটা সমৃদ্ধ, তার উপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নির্ভর করে। ৫. ক্লাব-সমিতি: দেশের সকল সাহিত্য, সংস্কৃতি, ক্রীড়া, সমাজসেবা, সমবায়, সাধারণ ক্লাব-সমিতিগুলোতে লাইব্রেরি সংযুক্ত করা যেতে পারে। সেখানে দৈনিক, সৃজনশীল সাপ্তাহিক, মাসিক ম্যাগাজিন থাকবে। এতে বাজে আড্ডা, তাস-জুয়া-মাদকের বিস্তার এবং অসামাজিক কার্যকলাপ কমবে। আলোকিত, যুক্তিনির্ভর ও জ্ঞানভিত্তিক সমাজ গড়ে উঠবে।
লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ গ্রন্থসুহৃদ সমিতি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।