পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা শহরকে যানজটমুক্ত রাখতে ইতিমধ্যে অনেক ধরনের পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। পরিকল্পনার আওতায় হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভার, ওভারপাস নির্মান করা হয়েছে। নর্থ-সাউথ এক্সপ্রেসওয়ে,এমটিপি’র(মাস ট্রানজিট প্লান) মত পরিকল্পনাও বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। সেই সাথে ঢাকার চারপাশের নদীগুলোকে ঘিরে চক্রাকার নৌপথ ও সার্কুলার সড়কপথ নির্মানের পরিকল্পনা এক দশকের বেশী সময় ধরে আলোচিত হলে তা বাস্তবায়নে তেমন কোন কার্যকর উদ্যোগ দেখা যাচ্ছেনা। বলাবাহুল্য, ঢাকা যানজট মোটেও কমেনি, বরং আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এক দশক আগে যেখানে ঢাকার রাজপথে গণপরিবহনের গড় গতিবেগ ছিল ২১ কিলোমিটার, বর্তমানে তা ৭ কিলোমিটারে এসে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের আর কোন রাজধানী শহরে যানবাহনের এমন শম্বুক গতি কল্পনা করা যায়না। ঘন্টার পর ঘন্টা রাস্তার যানজটে বসে থেকে প্রতিদিন কোটি কোটি কর্মঘন্টা নষ্ট হচ্ছে নগরবাসির। ঢাকা শহরকে যানজট নিরসনে নগরবিদরা যে সব উদ্যোগের কথা বলছেন তার সবগুলো বাস্তবায়নের চেষ্টাও করা হয়নি। নগরীর ব্যস্ততম এলাকায় রাস্তায় গাড়ি পার্কিং বন্ধ করা। যেখানে সেখানে গণপরিবহনের স্টপেজ বন্ধ করা, রাস্তা পারাপারে ওভারপাস ব্যবহার করা, ট্রাফিক আইন মেনে চলা, উন্নয়ন ও সংস্কারের নামে রাস্তা খোঁড়াখুড়ির দুর্ভোগ কমিয়ে আনা, ফুটপাত দখলমুক্ত করার মত প্রস্তাবগুলোর খুব কমই বাস্তবায়িত হয়েছে।
দেশের রাজধানী শহরের রাজপথ যদি যানজট, বিশৃঙ্খলা ও অব্যবস্থাপনায় প্রতিদিন ঘন্টার পর ঘন্টা স্থবির হয়ে থাকে সেখানে বিদেশি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের সম্ভাবনা মুখ থুবড়ে পড়তে বাধ্য। এহেন বাস্তবতাকে সামনে রেখেই ঢাকার যানজট এড়িয়ে সরকারের মন্ত্রী, বিদেশি অতিথি, সামরিক-বেসামরিক আমলাসহ ভিআইপিদের জন্য রাস্তায় আলাদা লেন বরাদ্দ করার প্রস্তাব করেছে মন্ত্রী পরিষদ। মন্ত্রী পরিষদের এ ধরনের প্রস্তাবের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করছে নাগরিক সমাজ। দীর্ঘ আলোচিত যানজট সমস্যা সমাধানে কার্যকর উদ্যোগগুলো বাস্তবায়নের বদলে শুধুমাত্র ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন করলে যানজট পরিস্থিতির আরো অবনতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ঢাকা শহরে যানজটের জন্য যে সব বিষয়কে দায়ী করা হয় তার অন্যতম হচ্ছে, দুইকোটি নগরবাসির একটি শহরে যে পরিমান রাস্তা, পার্কিং এরিয়া এবং উন্মুক্ত স্থান থাকা প্রয়োজন ঢাকায় তা নেই। একটি আধুনিক নগরীতে রাস্তার জন্য অন্তত ২৫ ভাগ জায়গা বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা থাকলেও ঢাকায় তা ১০ ভাগেরও কম। এহেন বাস্তবতায় ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন বরাদ্দের সুযোগ আছে কিনা তা ভেবে দেখতে হবে। প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি, সিনিয়র মন্ত্রী, প্রধান বিচারপতি, রাষ্ট্রীয় সফরে আমন্ত্রিত বিদেশি মেহমান তথা ভিআইপিদের যানজটমুক্ত চলাচল নিশ্চিত রাখতে গিয়ে ভিআইপি রাস্তার সাথে সংযোগ রাস্তাগুলো বন্ধ করে দেয়ায় প্রতিদিনই বাড়তি যানজটের সম্মুখীন হতে হয় নাগরিকদের। আলাদা লেন করা সম্ভব হলে এই দুর্ভোগ হয়তো কমিয়ে আনা সম্ভব হতো। তবে চলমান বাস্তবতায় ঢাকায় আলাদা ভিআইপি লেন করার ব্যবস্থা নেই বললেই চলে।
বিদ্যমান বাস্তবতায় ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন বরাদ্দের প্রস্তাব ও সম্ভাব্যতা নিয়ে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে মন্ত্রী পরিষদ। এ ধরনের ব্যবস্থা করা গেলে ভিআইপি চলাচলে নগরবাসিকে প্রতিদিন যে ধরনের বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে তা থেকে হয়তো মুক্তি পাওয়া যেত। বিশেষত: অ্যাম্বুলেন্সসহ ইমার্জেন্সি সার্ভিসের জন্য আলাদা লেন রাখার যুক্তি অগ্রাহ্য করা যায়না। তবে সর্বাগ্রে নজর দিতে হবে কোটি কোটি নগরবাসির যানজটের দুর্ভোগ থেকে মুক্তির সম্ভাব্য উপায় অবলম্বন করা। সম্প্রতি ট্রাফিক পুলিশের এক বিশেষ অভিযানে দেখা যায়, ট্রাফিক আইন অমান্য এবং উল্টোপথে গাড়ী চালনার দায়ের আটককৃত গাড়ীর বেশীরভাগই ভিআইপিদের। গণপরিবহন, সাধারণ নাগরিক ও ভিআইপি নির্বিশেষে ট্রাফিক আইন মেনে চললে, যত্রতত্র পার্কিং, ফিটনেস বিহীন, একই লেনে যান্ত্রিক ও অযান্ত্রিক গাড়ী চলাচল, রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধ করার পাশাপাশি, ফুটপাত দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন রাখতে পারলে যানজট অনেকটা কমিয়ে আনা অসম্ভব নয়। ভিআইপিদের জন্য আলাদা লেন বরাদ্দের চিন্তা বাদ দিয়ে যানজট নিরসনের সম্ভাব্য বিকল্প পন্থা সমুহ কাজে লাগানোর উদ্যোগ নিতে হবে। দুই কোটি নাগরিকের মেগা সিটি ঢাকা নগরীকে বাসযোগ্য, পরিবেশবান্ধব ও অর্থনৈতিকভাবে সচল রাখাই এখন সবচে বড় চ্যালেঞ্জ। কোন এডহক ভিত্তিক পদক্ষেপ নয়, বাস্তব সম্মত ও সময়োপযোগি পদক্ষেপের মধ্য দিয়ে এই চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।