পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
ঢাকা শহরে ১ কোটি ৭০ লাখ মানুষের বসবাস। ২০৩০ সালে এই জনসংখ্যা হবে ২ কোটি ৭৪ লাখ। একজন লোক প্রতিদিন প্রায় ৫৫০ লিটার অক্সিজেন গ্রহণ করে। তাহলে ঢাকার জন্য প্রতিদিন মোট নয় শ পঁয়ত্রিশ কোটি লিটার অক্সিজেন দরকার। ২০৩০ সালে প্রয়োজন হবে প্রতিদিন এক হাজার পাঁচ শ সাত কোটি লিটার অক্সিজেন। এই বিপুল পরিমাণ অক্সিজেনের অন্যতম প্রধান উত্স হতে পারে ছাদ-বাগান। ঢাকার বায়ুকে সহজে দূষণমুক্ত করার এটিই সবচেয়ে ভালো উপায়। যা বাস্তবায়ন করা সহজ এবং লাভজনক। ঢাকা শহরের ৬০ ভাগ জায়গা দখল করে আছে ফাঁকা ছাদ। রাজউকের হিসাবমতে, ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ৪০ লাখ বিল্ডিং আছে। সবগুলো বিল্ডিংয়ের ছাদের আয়তন প্রায় ৮০ বর্গমাইল হতে পারে। যা একটা ছোটখাটো দেশের আয়তনের প্রায় সমান।
ছাদ-বাগান শখ তো বটেই। পাশাপশি অর্থনৈতিক লাভও আছে। আড়াই কাঠার বাড়ির ছাদে সবজি চাষ করে পরিবারের চাহিদা পূরণের পাশাপশি বছরে ৫০ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। ১৪০০ স্কয়ার ফুটের বাড়ির ছাদে সবজির চাষ করে মাসে গড়ে ২০০০ টাকা আয় সম্ভব। উন্নত কৌশল, বীজ, গাছ, যতœআত্তির ওপর আয় কমবেশি হতে পারে।
ছাদ-বাগান করে শহরের তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ছাদের বাগান বাইরের তাপমাত্রার চেয়ে ঘরের তাপমাত্রা প্রায় ১.৭৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস হ্রাস করতে পারে। এমনটাই পরিবেশবিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন। একটা সবজির গাছ তিন মাসের জন্য তিনজনের অক্সিজেনের সরবারহ করতে পারে। ছাদে বাগান করা হলে ৭ ডিগ্রি পর্যন্ত তাপমাত্রা কমিয়ে আনা সম্ভব। ছাদে বাগানে ছাদের তাপমাত্রা ও ছাদ-বাগান বিহীন ছাদের তাপমাত্রার পার্থক্য প্রায় ৭.৮৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস হয়। সিঙ্গাপুরে এক গবেষণায় দেখা গেছে, পাঁচ তলা বাণিজ্যিক ভবনের ছাদে বাগান দ্বারা বছরে জ্বালানি খরচের ০.৬-১৪.৫% সাশ্রয় হতে পারে।
সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নেই। গাইডলাইন নেই। কোনোরকম সাহায্য-সহযোগিতা নেই বললেই চলে। ব্যক্তি উদ্যোগে ছাদ-বাগানের সংখ্যা বাড়ছে। বেলকনিতে ছোটগাছের পসরা চোখে পড়ে। অধিকাংশ বাগানের আয়োজক ঘরের গৃহিণী। যারা নানারকম প্রতিকূলতার মধ্যে ঢাকাকে একটু সবুজ করতে কাজ করে যাচ্ছেন। আশার কথা হলো, ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন ঘোষণা দিয়েছেন, যে সব বাড়ির ছাদ, আঙিনা, বারান্দায় বাগান গড়ে তোলা হবে সেসব বাড়ি-মালিকদের হোল্ডিংট্যাক্স ১০ শতাংশ মওকুফ করা হবে। সাবেক মেয়র আনিসুল হক সবুজ ঢাকা গড়ার কাজে হাত দিয়েছিলেন। তাঁর উদ্যোগে ফুটওভারব্র্রিজের ওপর ফুলের গাছ লাগানো হয়েছিল। অনেক জায়গার গাছ কাটতে তিনি অনুমতি দেননি। সড়কের মাঝে লোহার বেরিকেড দিয়ে ফুল-ফল-বনজ গাছ লাগানো শুরু হয়েছিল।
ছাদ-বাগানের কোনো নীতিমালা নেই। ছাদ-বাগান বাধ্যতামূলক করে নীতিমালা প্রণয়ন করা হোক। ছাদ-বাগানিরা যাতে ভালো বীজ, মাটি ও চারাসহ অন্যান্য উপকরণ সহজে পেতে পারেন। তাদের উন্নত কৃষির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। তাঁরা আধুনিক কৃষক। সিটি করপোরেশন বছরের সেরা ছাদ-বাগানিকে পুরস্কৃত করতে পারে। আমাদের বুঝতে হবে, ফাঁকা জায়গায় বাড়ি উঠছে। তাই প্রতিটি বাড়ির ছাদ, বেলকনি এমনকী ঘরের মধ্যেও গাছের উপস্থিতি নিশ্চিত করা উচিত। অফিসের মধ্যে ছোট ছোট গাছ রাখা যেতে পারে। যা অক্সিজেন তো দেবেই, উপরন্তু পরিবেশকে ঠান্ডা রাখবে। প্রাকৃতিক আবহ বজায় থাকবে। যা উন্নত কর্মপরিবেশের জন্য সহায়ক।
ছাদে-বাগান করলে ছাদের ক্ষতি হয়। এমন কুসংস্কার থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। ২০৩০ সালে এই নগরীর পৌনে তিন কোটি মানুষের অক্সিজেন কোথা থেকে আসবে সে চিন্তা করার সময় এখনই। দূরদর্শী কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ঢাকার অবস্থা কী হতে পারে তা বিবেচনার ভার আপনাদের ওপরই রইল।
মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, ঢাকা
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।