Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

মিসের মহড়ায় দিনজুড়ে হতাশা

স্পোর্টস রিপোর্টার | প্রকাশের সময় : ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

আহ্! আরেকটি হতাশার দিন।
নির্বিষ বোলিং, গা ছাড়া ফিল্ডিং, সুযোগ হাতছাড়া করা আর বাজে শরীরী ভাষা-সব কিছু মিলিয়ে দিনজুড়ে হতাশা। সারা দিনে বাংলাদেশের প্রাপ্তি বলতে কুসল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার উইকেট। তবে তার আগে দুজনই করেছেন বড় সেঞ্চুরি। দুজনের জুটিতে হয়েছে রেকর্ড। বাংলাদেশের বড় রান টপকেও তাই অনায়াসে লিড নেওয়ার খুব কাছে শ্রীলঙ্কা।
গতকাল চট্টগ্রাম টেস্টের তৃতীয় দিন শেষে শ্রীলঙ্কার রান ৩ উইকেটে ৫০৪। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছিল ৫১৩। বাংলাদেশের লিড নেওয়ার আশা শেষ অনেক আগেই। এখন সেখানে শঙ্কার ঘনঘটা, কোথায় থামবে শ্রীলঙ্কা! দুর্দান্ত প্রথম দিনটিকে এখন মনে হচ্ছে বুঝি সুদূর কোনো অতীত!
রান উৎসবের দিনে শ্রীলঙ্কার খানিকটা আক্ষেপের গল্প জড়িয়ে প্রাপ্তির সঙ্গেই। ডাবল সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও করতে পারেননি ধনঞ্জয়া ও মেন্ডিস। ১৭৩ রানে ফিরেছেন ধনঞ্জয়া। মেন্ডিসের ইনিংস যেমন আরেকটু বড়, আক্ষেপও বেশি। আউট হয়েছেন ১৯৬ রানে! তবে ৩০৮ রানের জুটিতে দুজন উঠেছেন একটি চূড়ায়। বাংলাদেশের বিপক্ষে দ্বিতীয় উইকেটে সবচেয়ে বড় জুটি এটিই। পেছনে পড়ে গেছে ২০০২ সালে গ্রায়েম স্মিথ ও গ্যারি কারস্টেনের ২৭২ রানের জুটি।
দ্বিতীয় দিন শেষে মুমিনুল বলে গিয়েছিলেন, ‘তৃতীয় দিনে স্পিনাররা আরেকটু বেশি সাহায্য পেতে পারেন’। দিনের শুরুতে তাও একটু মিলেছিল, বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে উইকেট চট্টগ্রামের উইকেট যেন ব্যাটসম্যানদের দিকে আরও বেশি বন্ধুতার হাত বাড়িয়ে দিল। শ্রীলঙ্কা ব্যাটসম্যানরা সেটার এতোটাই সদ্ব্যবহার করলেন, তৃতীয় দিন শেষে এখন বরং বাংলাদেশই ব্যাক ফুটে। সাত উইকেট হাতে রেখে মাত্র ৯ রানে পিছিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা। ৩ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলেছে ৫০৪ রান, শ্রীলঙ্কাই এখন উলটো বাংলাদেশকে রানে চাপা দিতে যাচ্ছে!
কাগজে কলমে দুই দলের জয়ের সম্ভাবনা হয়তো এখনো বেঁচে আছে, তবে উইকেট এমন আচরণ করলে ড্র ছাড়া অন্য কিছুর সম্ভাবনা ক্ষীণই। তবে শেষ দুই দিনে রোমাঞ্চ থাকলে তা আলাদা কথা। তৃতীয় দিনে সেটির ছিটেফোঁটাও মিলল না। অন্তত বাংলাদেশের দৃষ্টিকোণ থেকে তো নয়ই। সারাদিন মুস্তাফিজদের খাটিয়ে মেরেছেন লঙ্কান ব্যাটসম্যানরা। শুরুতে ধনঞ্জয়া ডি সিলভা ও কুশল মেন্ডিস ছিলেন, বিদায়ের আগে তারা ব্যাটন দিয়ে গেছেন রোশন সিলভা ও দীনেশ চান্দিমালকে।
এমন দীর্ঘ দিন বাংলাদেশের বোলারদের আগে দেখতে হয়নি তা নয়। সারা দিনে কোনো উইকেট পায়নি, টেস্টে এমন দিনও গেছে বাংলাদেশের। গতকাল প্রথম সেশনে সেই সম্ভাবনা যে উঁকি দিয়ে যায়নি, তাও নয়। আগের দিন যেখানে শেষ করেছিলেন, সেখান থেকে শুরু করেছিলেন ধনঞ্জয়া-মেন্ডিস। তবে এর মধ্যে বাংলাদেশের ফিল্ডারদের কাছ থেকে দাক্ষিণ্যও পেয়েছেন মেন্ডিস। আগের দিন দুই বার জীবন পেয়েছিলেন ৪ ও ৫৭ রানে। দিনের তৃতীয় ওভারেই আউট হতে পারতেন ৮৩ রানে। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে খোঁচা দিয়েও বল চলে গেছে দুই ¯িøপের মধ্যে।
মেন্ডিস সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েছেন ভালোমতোই। দিনের শুরুতে একটু নড়বড়ে ছিলেন, পরে খোলস ছেড়ে বেরিয়েছিলেন ধীরে ধীরে। তবে শুরুতে বেশি সপ্রতিভ ছিলেন ধনঞ্জয়াই। সেঞ্চুরি পেয়ে গিয়েছিলেন আগের দিনই, গতকাল শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে সবচেয়ে কম ইনিংসে টেস্টে ১০০০ রানও হয়ে গেছে। মেন্ডিস সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন এর মধ্যেই, দুজনের জুটিতে ৩০০ রানও চলে আসে। শুন্য রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর টেস্ট ইতিহাসেই এত রান করতে পারেনি কোনো জুটি। প্রথম সেশনটা শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশকে হতাশ করে ব্যাট করে গেছেন দুজন।
ধনঞ্জয়া যখন ১৭০ এর ঘরে পৌঁছেন, লাঞ্চের পর নতুন বলেই বাজিমাত করলেন মুস্তাফিজ। খানিকটা খাটো লেংথের বলটা পুল করতে গিয়েছিলেন ধনঞ্জয়া, টাইমিংয়ের গড়বড়ে সেটি উঠে যায় আকাশে। দৌড়ে এসে ক্যাচটা ধরতে ভুল করেননি লিটন। ৩০৮ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় দ্বিতীয় উইকেট। রোশেন আউট হয়ে যেতে পারতেন এক রানে, কিন্তু স্টাম্পিংয়ের সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি লিটন। এমন উইকেটে যখন সুযোগই আসে না, সেটির জন্য লিটনকে বাকি সময়টা মাশুলই দিয়ে যেতে হয়েছে।
মেন্ডিস অবশ্য এরপর হঠাৎই খোলস ছেড়ে বেরিয়ে এলেন। প্রথম ১০০ করেছিলেন ২০০ বলে, ২৮৬ বলে হলো ১৫০। এরপরেই যেন টি-টোয়েন্টির মতো রান তোলা শুরু করলেন, পরের ৪৬ রান এলো মাত্র ৪১ বলে। ১৯৬ রান করে ক্যারিয়ারের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি যখন উঁকি দিচ্ছে, তখনই যেন আত্মঘাতী হলেন। তাইজুলের বলটা ছিল অফ স্টাম্পের বাইরে নির্বিষ ডেলিভারি, কিন্তু মেন্ডিস সেটা এগিয়ে এসে খেলতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দিলেন। মিড অন থেকে অনেকটা দৌড়েই তা হাতে জমালেন মুশফিক, দারুণ ক্যাচের জন্যই তাকে ঘিরে সতীর্থদের উদযাপনটা হলো আরও প্রলম্বিত। ২৩তম জন্মদিনের আনন্দ কিছুটা ¤øান হলো বৈ-কি!
কিন্তু ওই পর্যন্তই। এরপর সাফল্য আবার মরিচীকা হয়ে থেকেছে বাংলাদেশের কাছে, দিনের শেষ সেশনে আর কোনো উইকেটই পায়নি। এবার রোশন সিলভার সঙ্গে অধিনায়ক চান্দিমাল যোগ করে ফেলেছেন ৮৯ রান। ৮৭ রান করে সেঞ্চুরির সুবাস পাচ্ছেন রোশন, অধিনায়ক অপরাজিত ৩৭ রানে। তার চেয়েও বড় কথা, বাংলাদেশকে অশনী সংকেত দিচ্ছে আরও একটি লম্বা দিন।
বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা, ১ম টেস্ট ৩য় দিন
টস : বাংলাদেশ, চট্টগ্রাম
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস : ১২৯.৫ ওভারে ৫১৩
(তামিম ৫২, ইমরুল ৪০, মুমিনুল ১৭৬, মুশফিক ৯২, মাহমুদউল্লাহ ৮৩*, মিরাজ ২০, সানজামুল ২৪; লাকমাল ৩/৬৮, পেরেরা ১/১১২, হেরাথ ৩/১৫০, সান্দাকান ২/৯২)
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস রান বল ৪ ৬
করুনারতেœ ক ইমরুল ব মিরাজ ০ ৯ ০ ০
মেন্ডিস ক মুশফিক ব তাইজুল ১৯৬ ৩২৭ ২২ ২
ধনঞ্জয়া ক লিটন ব মুস্তাফিজ ১৭৩ ২২৯ ২১ ১
রোশন ব্যাটিং ৮৭ ১৭৩ ৫ ১
চান্দিমাল ব্যাটিং ৩৭ ৯০ ১ ০
অতিরিক্ত (বা ৭, লেবা ৩, ও ১) ১১
মোট (১৩৮ ওভার, ৩ উইকেট) ৫০৪
উইকেট পতন : ১-০ (করুনারতেœ), ২-৩০৮ (ধনঞ্জয়া), ৩-৪১৫ (মেন্ডিস)
বোলিং : মুস্তাফিজ ২৫-৫-৮৮-১, সানজামুল ৩৭-২-১২৮-০, মিরাজ ১৯-০-৯৭-১, তাইজুল ৫১-১৩-১৪৪-১, মোসাদ্দেক ৩-০-২৪-০, মুমিনুল ২-০-৬-০, মাহমুদউল্লাহ ১-০-৭-০। তৃতীয় দিন শেষে*



 

Show all comments
  • hossain ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১০:১৪ পিএম says : 0
    These weak Bangladeshi cricket player and management team never full fill expactation for the people of Bangladesh and for their country, shame on them. They are paid by tax payer money . I thing it is time to bring them for justify of their action.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: টেস্ট


আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ