Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

সমন্বিত লড়াইয়ের ডাক ট্রাম্পের

অভিবাসন সংস্কারে চার স্তম্ভের রূপরেখা, চালু থাকবে গুয়ানতানামো বে

| প্রকাশের সময় : ১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮, ১২:০০ এএম

ইনকিলাব ডেস্ক : যুক্তরাষ্ট্রের শ্রেষ্ঠত্বকে উপজীব্য করে নিজের প্রথম স্টেট অব ইউনিয়ন ভাষণে ডেমোক্র্যাট-রিপাবলিকান ঐক্যের ডাক দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। অভিবাসন-সীমান্ত আর জাতীয় নিরাপত্তা প্রশ্নে কঠোর অবস্থানের মধ্য দিয়ে বিভক্তিকে স্পষ্ট করে তিনি ডাক দিলেন রিপাবলিকান-ডেমোক্র্যাট সমন্বিত লড়াইয়ের। ঐতিহাসিক ভাষণে তিনি আহ্বান জানালেন, মতভেদ ভুলে অভিবাসন ও অবকাঠামোগত কর্মকান্ডে একসঙ্গে কাজ করার। অভিবাসন সংস্কারে চার স্তম্ভের রূপরেখা প্রদান করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তিশালী নাগরিকদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী এক দেশ আখ্যা দিয়ে ট্রাম্প দাবি করেছেন, স্বপ্ন-সম্ভাবনায় বিশ্বের আর কোনও দেশ আমেরিকার মতোন নয়। ভাষণে নিজের চলমান শাসনকালকে ‘আমেরিকান স্বপ্ন’ বাস্তবায়নের শ্রেষ্ঠ সময় বলে দাবি করেন ট্রাম্প। আর সেই আমেরিকান স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে সন্ত্রাসবাদকে বাধা আখ্যা দিয়ে তিনি সীমান্তের বিভক্তিকে স্পষ্ট করতে চেয়েছেন। অভিবাসনে এনেছেন কঠোরতা। ঘোষণা দিয়েছেন গুয়ানতানামো বে চালু রাখবেন। খবরে বলা হয়, বিশ্লেষকদের ধারণাকে সত্য প্রমাণ করে ৮০ মিনিটের স্টেট ইউনিয়ন ভাষণে ‘অভিবাসন সংস্কার’র প্রশ্নটিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ‘ড্রিমার কর্মসূচি’র আওতাধীন ও আওতাভুক্ত হওয়ার অপেক্ষায় থাকা ১৮ লাখ অভিবাসীকে ক্রমান্বয়ে শর্তযুক্ত নাগরিকতা দেওয়ার প্রস্তাব করেছেন তিনি। বাতিল করতে চেয়েছেন পারিবারিক সূত্রে অভিবাসন (চেইন মাইগ্রেশন)। সীমিত করার পরিকল্পনা নিয়েছেন লটারি-ভিত্তিক অভিবাসন পদ্ধতি। সীমান্তে কঠোর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠারও প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের পরিকল্পনাকে ‘কঠোর অভিবাসন নীতি’ আখ্যা দিয়েছে। গত মঙ্গলবার দিবাগত রাতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রথম স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণ দেন ট্রাম্প। তার ভাষণের বিষয়বস্তু আলাদা হলেও শৈলীর দিক দিয়ে এতে আগের প্রেসিডেন্টদের মতো করেই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ে বারবার ফেরার প্রবণতা অনুসরণ করতে দেখা গেছে। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, অর্থনৈতিক ও কর সংস্কার কিংবা প্রতিরক্ষা ও সন্ত্রাসবাদবিরোধী লড়াইকে ছাপিয়ে ট্রাম্পের ভাষণে অভিবাসন ইস্যুটি ঘুরেফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক টেলিভিশন চ্যানেল সিএনবিসি বলছে, প্রায় ৮০ মিনিটের বক্তব্যের বেশিরভাগটাই এ ইস্যুতে ব্যয় করেছেন ট্রাম্প। এ নিয়ে প্রায় ৬৫০ শব্দ উচ্চারণ করেছেন তিনি। চার স্তম্ভে উপস্থাপিত তার অভিবাসন পরিকল্পনায় ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকানদেরকে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে ট্রাম্প বলেন, সব ধরনের পারিবারিক ইতিহাস, বর্ণ ও ধর্ম বিশ্বাসসম্পন্ন আমাদের সব নাগরিকের সুরক্ষায় একসঙ্গে কাজ করতে আজ রাতে আমি ডেমোক্র্যাট ও রিপাবলিকান দুই দলের প্রতিই আমন্ত্রণের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছি। তবে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো তার ভাষণকে উদ্ধৃত করে বলছে, যুক্তরাষ্ট্রে এক কোটির বেশি অবৈধ অভিবাসী থাকলেও ১৮ লাখ ড্রিমার অভিবাসী ও ড্রিমারের জন্য আবেদনকারীকে সুরক্ষার প্রস্তাবই পুনরুচ্চারিত করেছেন ট্রাম্প। সেখানেও আবার ভিসা লটারি এবং চেইন মাইগ্রেশন বন্ধের প্রস্তাবের পাশাপাশি মেক্সিকো সীমান্তে দেয়াল নির্মাণে ২৫ বিলিয়ন ডলার তহবিল বরাদ্দের শর্ত আরোপ করেছেন তিনি। প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের সময় থেকেই অবৈধ অভিবাসী ঠেকাতে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তোলার কথা বলে আসছেন ট্রাম্প। অন্যদিকে, ডেমোক্র্যাটরা অভিবাসীদের বিরুদ্ধে নির্বিচারে কোনও পদক্ষেপ নেওয়ার বিরোধী। এ ইস্যুতে ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতাদের দীর্ঘদিন ধরে টানাপড়েন চলছে। ২০১৫ সালের এক হিসাব অনুযায়ী,যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসী ১ কোটি ১০ লাখ। ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনা অনুযায়ী,১৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে মার্কিন নাগরিকত্ব দানে ১০ থেকে ১২ বছরের একটি রূপরেখা তৈরি করা হয়েছে। ওই অভিবাসীদের মধ্যে রয়েছে প্রায় সাত লাখ ‘ড্রিমার’,যারা ছোটবেলায় বাবা-মায়ের সঙ্গে অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে অনুপ্রবেশ করেছিল। তারা সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলের ডেফারড অ্যাকশন ফর চাইল্ডহুড অ্যারাভাইলস (ডাকা) কর্মসূচির অধীনে প্রত্যাবাসন থেকে রেহাই পেয়ে আসছে। বাকি ১১ লাখ হচ্ছে ‘ডাকা’র জন্য আবেদন করেনি,কিন্তু এর আওতাভুক্ত হওয়ার যোগ্য এমন অভিবাসী। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো ট্রাম্পের অভিবাসন পরিকল্পনাকে ‘কঠোর’ হিসেবেই দেখছে। পলিটিকো বলছে, বৈধ অভিবাসনের পথও রুদ্ধ করছেন তিনি। রয়টার্স বলেছে, খুবই শক্ত অভিবাসন পরকল্পনা। সিএনবিসি বলছে, লাখ লাখ অভিবাসীর ভাগ্যকে কংগ্রেসের হাতে তুলে দিয়েছেন ট্রাম্প। প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রচলিত দুটি অভিবাসন পদ্ধতি বাতিলও করতে চাইছেন। এর একটি হচ্ছে, চেইন ইমিগ্রেশন। যার আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পাওয়া একজন অভিবাসী তার পরিবারের সব সদস্যকে (মা, বাবা, ভাই, বোন ও তাদের পরিবারের সদস্য) নিজের কাছে নিতে পারেন এবং তারা মার্কিন নাগরিকত্ব পান। ট্রাম্প এই পদ্ধতির ঘোর বিরোধী। তার নতুন পরিকল্পনা অনুযায়ী, একজন নাগরিকত্ব পাওয়া অভিবাসী শুধু তার স্বামী/স্ত্রী ও সন্তানদের যুক্তরাষ্ট্রে নিতে পারবে। এছাড়া, ট্রাম্প ডিভি লটারি পদ্ধতিটিও বাতিল করতে চান। বর্তমানে প্রতি বছর বিভিন্ন দেশ থেকে এ লটারির মাধ্যমে ৫০ হাজার মানুষ গ্রিন কার্ড নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেন। ২০১৬ সালে এমএস-থার্টিন গ্যাংয়ের হাতে নিহত দুইজনের মা-বাবাকে মঙ্গলবারের অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্টের অতিথি হিসেবে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। তাদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে অবৈধ অভিবাসীদের প্রবেশ ঠেকানোর বিষয়টি জোরালো করেন ট্রাম্প। সিএনএন, সিএনবিসি, রয়টার্স, বিবিসি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: ট্রাম্প


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ